হালদায় এবার পরিপক্ব ডিমে ভর্তি মা মৃগেল মাছের মৃত্যু, শরীররে আঘাতের চিহ্ন
Published: 15th, May 2025 GMT
প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদায় আবারও কার্পজাতীয় মা মাছ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা মাছটি মা মৃগেল বলে জানিয়েছে উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর। ময়নাতদন্তের পর মাছটিতে প্রচুর পরিমাণ পরিপক্ব ডিম দেখা গেছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রামের রাউজানের পশ্চিম গুজরা ইউনিয়নের আজিমের ঘাট এলাকা থেকে মাছটি উদ্ধার করেন নদীর স্বেচ্ছাসেবকেরা। মাছটির শরীরে আঘাতের চিহ্ন ছিল বলে স্বেচ্ছাসেবকেরা জানিয়েছেন।
উদ্ধার হওয়া মাছটির ওজন প্রায় ছয় কেজি বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। একই স্থান থেকে গত ৪ মে ৫ কেজি ওজনের আরেকটি মরা মা কাতলা মাছ উদ্ধার করেছিলেন স্বেচ্ছাসেবকেরা। এ ছাড়া গত বছরের জুন ও জুলাই মাসে ১২ দিনে ৬টি বড় মা মাছ ও ৩টি ডলফিন মরে ভেসে ওঠার ঘটনা ঘটেছিল।
রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, মৃত মা মাছটির মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারালো কিছু দিয়ে এটির মাথায় আঘাত করা হয়েছে। ৪ মে উদ্ধার হওয়া মা মাছটির গায়েও ধারালো কিছু দিয়ে আঘাত করা হয়েছিল বলেও জানান তিনি।
উদ্ধারের পর আজিমের ঘাট এলাকায় মাছটির সুরতহাল করার পর মাটি চাপা দেওয়া হয় বলে জানান রাউজান উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা আলমগীর হোসাইন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মৃত মা মাছটির পেটে প্রায় পৌনে এক কেজি ডিম ছিল। এই পরিমাণ ডিম থেকে দেড় লাখ রেণু উৎপন্ন হতে পারত।
মৎস্য অধিদপ্তর ও হালদার স্বেচ্ছাসেবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বেশ কিছু দিন ধরে নদীতে একের পর এক মরা মা মাছ ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে ভেসে যাওয়া সব মা মাছ উদ্ধার করা সম্ভব হয় না। কারণ, সব সময় স্বেচ্ছাসেবীরা থাকেন না। প্রায় সময় মৃত মাছ জোয়ারে ভেসে চলে যায়। হালদার মা মাছ ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় ১০ কিলোমিটার জুড়ে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) বসানো হয়েছে। এ ছাড়া নদীর হাটহাজারীর রাম দাশ মুন্সিরহাট অংশে একটি নৌ পুলিশ ফাঁড়িও রয়েছে। তবে এরপরও মা মাছের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় লোকজন জানান নৌ পুলিশের তেমন তৎপরতা না থাকায় নদীতে জাল পাতা, মাছ শিকারসহ নানা অবৈধ কার্যক্রম চলছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারীর উত্তর মাদার্শা ইউনিয়নের রামদাশ মুন্সিরহাটের হালদা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা প্রশাসন, মৎস্য অধিদপ্তর সপ্তাহে কয়েকবার অভিযান চালায়। তারা নিরাপত্তা দিয়ে সহযোগিতা করেন। সিসিটিভি ফুটেজে কোনো অবৈধ কার্যক্রম চোখে পড়লে তাঁরা নদীতে নামেন। তবে শতভাগ হালদাকে সুরক্ষিত রাখতে গেলে স্পিডবোটের জালানি বরাদ্দ এবং জনবলে বাড়াতে হবে।
এদিকে হালদায় প্রজনন মৌসুমের শুরু হতে চলল গত প্রায় দেড় মাস। এর মধ্যে নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা। তবে সরঞ্জাম নিয়ে কয়েক শ ডিম সংগ্রহকারী নদীতে দিন রাত অবস্থান করছেন মা মাছেরা কখন ডিম ছাড়ে সে অপেক্ষায় এর ভেতর নদীতে মা মাছ মরার এমন দুঃসংবাদে উদ্বিগ্ন নদী গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, প্রজনন মৌসুমের প্রায় এক মাস পার হয়ে গেল। এখনো নমুনা ডিমও ছাড়েনি মা মাছেরা। এর মধ্যে গত বছরের মতো একের পর এক মা মাছ মরা উদ্বেগের। কারণ, হালদার একেকটা মা মাছের ডিম থেকে কোটি টাকার মাছের উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা থাকে প্রতিবছর।
হালদার ডিম সংগ্রহকারী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রোশাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, নদীতে মা মাছ মরে ভেসে যেতে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরে। তবে সব মরা মাছ উদ্ধার করা যায় না। তাঁদের চোখে যেগুলো পড়ে সেগুলো তাঁরা উদ্ধার করে প্রশাসনকে জানান। এভাবে মা মাছ মরলে হালদায় ডিম ছাড়ার মাছই থাকবে কি না সেই সন্দেহ তাঁর।
নদী গবেষক এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান মনজুরুল কিবরিয়া প্রথম আলোকে বলেন, এপ্রিল থেকে জুনের শেষ হালদার মা মাছের প্রজনন মৌসুম। এখন জো চলছে। জোতে মা মাছ ডিম ছাড়ার পরিবেশ পায়। বজ্রসহ বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল হলে পুরোদমে ডিম ছাড়তে পারে মা মাছ। তবে এর মধ্যে ১০ দিনের ব্যবধানে ২টি মা মাছ মরে ভেসে ওঠা দুশ্চিন্তার বিষয়। গত বছর প্রজনন মৌসুমেও একের পর এক মা মাছ মরে ভেসে উঠেছিল নদীতে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রজনন ম স ম প রথম আল উপজ ল মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
অস্বাভাবিকভাবে ইলিশের দাম বাড়ানো যাবে না: মৎস্য উপদেষ্টা
ইলিশের দাম যেন কোনো অবস্থাতেই অস্বাভাবিকভাবে না বাড়ে, সে বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। তিনি বলেন, দেশের সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে ইলিশের মূল্য ধরে রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর মৎস্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে ‘ইলিশসহ সকল ধরণের মাছের সরবরাহ ও মূল্য শৃঙ্খলে বিদ্যমান প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণের লক্ষ্যে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশসহ অন্যান্য মাছের দাম সরাসরি ঘোষণা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। বরং বাজারে দাম বৃদ্ধির পেছনের কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে, তাতে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করা যায়। ইলিশের আহরণ, মজুদ ও বিপণন ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা আনতে হবে। সরকার নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ উপায়ে মাছ ধরা ও নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে। বহু ক্ষেত্রেই আইন অমান্যকারী জেলেদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপও গ্রহণ করা হয়েছে। অবৈধ জাল উৎপাদনকারী কারখানাগুলোর বিরুদ্ধেও সরকারের বিভিন্ন বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে।
উপদেষ্টা বলেন, নাব্যতা কমে যাওয়ার ফলে ইলিশের প্রাকৃতিক চলাচল ও প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক। এ সংকট নিরসনকে গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
সভায় বক্তারা ইলিশের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, সরবরাহ ব্যবস্থা উন্নয়ন, প্রজনন মৌসুমে সুরক্ষা, নদীর নাব্যতা রক্ষা এবং অবৈধ উপায়ে আহরণ রোধে সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।