অভ্যুত্থানে মেহনতি মানুষের প্রাণ ঝরেছে বেশি, কিন্তু তাঁদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হচ্ছে না
Published: 16th, May 2025 GMT
চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে গরিব মেহনতি মানুষের প্রাণ ঝরেছে বেশি। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার তাঁদের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন করতে পারছে না। মেহনতি মানুষের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন না হলে আবার মানুষ রাস্তায় নেমে আসবে। এই সতর্কবার্তা দিয়ে সরকারকে মেহনতি মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নজর দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির একাদশ জাতীয় সম্মেলন থেকে।
আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ক্ষেতমজুর সমিতির এই সম্মেলন হয়। সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ও বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলার প্রবীণ ক্ষেতমজুর নেতা মৃন্ময় মণ্ডল। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ও মৃন্ময় মণ্ডল এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি ডা.
সম্মেলন উদ্বোধনের পর আলোচনায় অংশ নেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, শিক্ষকনেতা নূর মোহাম্মদ তালুকদার, বাংলাদেশ কৃষক সমিতির সভাপতি এস এম সবুর, সমাজতান্ত্রিক ক্ষেতমজুর ও কৃষক ফ্রন্টের সভাপতি বজলুর রশীদ ফিরোজ, জাতীয় কৃষক ক্ষেতমজুর সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ ও আহ্বায়ক অর্ণব সরকার। সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন রেজা।
আলোচনায় নেতারা বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের পরেও ধনী-গরিবের বৈষম্য বেড়েই চলেছে। মানুষ কাজ চেয়েও কাজ পায় না। আবার অনেক সময় ন্যায্য মজুরি থাকে না। একজন খেতমজুর যা আয় করেন, তা দিয়ে তাঁর সংসারের খাবারই ঠিকমতো জোটে না। ফলে তাঁর সন্তান শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। কারণ, টাকা ছাড়া স্বাস্থ্য, শিক্ষা কিছু্ পাওয়া যায় না। তাই খেতমজুরসহ গ্রামীণ মজুরের সন্তান আরেকজন গ্রামীণ মজুর হয়েই বেড়ে ওঠে। এর পরিবর্তন ঘটাতে হবে।
দেশে যত খাসজমি ধনীদের দখলে আছে, সেগুলো দখলমুক্ত করে প্রকৃত ভূমিহীনদের বরাদ্দ দেওয়ার দাবি জানান ক্ষেতমজুর সমিতির নেতারা। একই সঙ্গে রেশনিং চালু করে দুর্নীতিমুক্তভাবে তা বণ্টনের ব্যবস্থা করার দাবি জানান তাঁরা।
বাংলাদেশ ক্ষেতমজুর সমিতির একাদশ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধন অধিবেশনের আলোচনায় বক্তারা। আজ শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম হনত
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’
ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।
এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’
ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।
কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?
কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা