মাদারীপুরে এক আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক এক কাউন্সিলরসহ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির দুই শতাধিক সদস্য জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) যোগ দিয়েছেন। 

শনিবার (১৭ মে) দুপুরে রাজৈর উপজেলার টেকেরহাট বন্দরে যোগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপজেলা এনসিপি নেতাদের হাতে ফুলের তোড়া দিয়ে দলটিতে যোগ দেন খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও টেকেরহাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আমিনুল হাওলাদার এবং রাজৈর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রাহিম হাওলাদারসহ মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা।

যোগদান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- রাজৈর উপজেলা এনসিপি প্রতিনিধি মহাসিন ফকির, জাবের হাওলাদার, আজগর শেখ, তরিকুল ইসলাম, মৎস্য ব্যবসায়ী বাচ্চু বাঘা, স্থানীয় বাসিন্দা মনির ফকিরসহ উপজেলা এনসিপির নেতাকর্মীরা।

আরো পড়ুন:

হাসনাত আবদুল্লাহ
আ.

লীগের অর্থ কাঠামো ধ্বংস ও সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে

ইউপি চেয়ারম্যানকে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ

এনসিপিতে যোগ দেওয়া খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হাওলাদার বলেন, “আমি ৫ আগস্টের আগেই আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেছি। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের লক্ষ্যে আমার ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া দুই ছেলে আন্দোলন করেছে। আমি তাতে সমর্থন করেছি।” 

তিনি বলেন, “এনসিপি দল গঠনের পর থেকে দেখছি, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজসহ বিভিন্ন দুর্নীতি অপকর্মের বিরুদ্ধে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। দেশকে ভালো একটা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে তারা কাজ করছে। তাদের এই আদর্শে আদর্শিত হয়ে আজকে এনসিপিতে যোগ দিলাম।”

আমিনুল হাওলাদার বলেন, “আমাদের মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির যত নেতাকর্মী ও সদস্য আছে সবাইকে নিয়ে এনসিপির একটা দুর্গ গড়ে তুলব। আমি তাদের সবধরনের সহযোগিতা করব।”

এনসিপির রাজৈর উপজেলার এক প্রতিনিধি মহাসিন ফকির বলেন, “আমাদের সততা ও আদর্শ দেখে আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আজ খালিয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হাওলাদার এবং রাজৈর পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর রাহিম হাওলাদারসহ টেকেরহাট মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সবাই এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন।”

এনসিপির রাজৈর উপজেলার অপর প্রতিনিধি জাবের হাওলাদার বলেন, “১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হয়েছে ভারতের গোলামি করার জন্য না।” 

তিনি আরো বলেন, “এদেশে যেন ফ্যাসিস্ট তৈরি না হয়, কেউ যেন এক নায়কতন্ত্র কায়েম করতে না পারে, জুলুম-নির্যাতন, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজি করতে যাতে কেউ না পারেন সেজন্য আমরা সব ছাত্র-জনতা, আলেম-ওলামাকে ঐক্যবদ্ধ করব। আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত গড়ে তুলতে চাই বাংলাদেশে। আজকে দুইশ’র বেশি সাধারণ মাছ ব্যবসায়ী আমাদের দলে যোগ দিয়েছেন।”

ঢাকা/বেলাল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আওয় ম ল গ মৎস য ব যবস য় র জ র উপজ ল এনস প ত এনস প র র বল ন আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

জেন্ডার বাজেট কিছু সরল ভাবনা

জেন্ডার বাজেট বা বাজেট জেন্ডার সংবেদনশীল কিনা– তা দেখা এখন মোটামুটি সবার কাছে পরিচিত একটি বিষয়। দেশের অর্থনীতি ঠিক রাখতে হলে সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বিভিন্ন খাতে উপযুক্ত বাজেট বরাদ্দ দেওয়া। সরকারের উন্নয়নমূলক কাজে বাজেট বরাদ্দ সন্তোষজনক হয় না। উন্নয়নমূলক কাজ জনগণের জন্য করা হয়, সেই জনগণের একটি অংশ নারী। বাজেট বরাদ্দ নারীর ক্ষমতায়ন ও তার অধিকার প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে কিনা, সেটি দেখা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি পদ্ধতি। এটি সবাই জানেন নারীর জন্য কিছু বাড়তি বরাদ্দ দিয়ে দিলেই জেন্ডার বাজেট হবে না, বরং সার্বিকভাবে সব অর্থনৈতিক খাতের বাজেট বরাদ্দ দেওয়ার সময় নারীর জন্য যে কাজ করা হবে, যার মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন হবে, এমন কাজের জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ হলে তাকে সুষ্ঠু জেন্ডার বাজেট হয়েছে বলা যেতে পারে। এটি পরিষ্কার যে কেবল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বাজেট বাড়ালেই জেন্ডার বাজেট হয়ে যাবে না। 
সব মন্ত্রণালয়ের কাজই নারীর জন্য প্রয়োজন; এমনকি অর্থ, পরিকল্পনা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজও নারীর ক্ষমতায়নের দৃষ্টিতে বিচার করা যায় জেন্ডার বাজেট হলো কিনা। ধরেই নেওয়া হয় যেসব কাজে সরাসরি নারীর সংশ্লিষ্টতা আছে, কেবল সেখানে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। এর মধ্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ছাড়াও স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা বা স্থানীয় সরকার ইত্যাদি আসে। নারীরা এখন সবখানে এগিয়ে আসছে; খেলাধুলায় বিশেষভাবে গ্রামের মেয়েরা এগিয়ে আসছে। বিষয়টি মাথায় রেখে কি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বাজেটে নির্দিষ্টভাবে বরাদ্দ দেওয়া হয়? আমার জানা নেই। শ্রমিকদের বিষয়ে কথা বলতে গেলে ডে-কেয়ার ইত্যাদির বরাদ্দ, অনেক সংগ্রাম করে কিছু বরাদ্দ পাচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নারী বিজ্ঞানী, শিক্ষক, চিকিৎসক কর্মরত আছেন। অথচ তাদের সন্তানদের জন্য কোনো ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা নেই, এর জন্য কোনো বাজেট বরাদ্দও নেই। তারা মধ্যবিত্ত পরিবারের; তারা চাকরি রক্ষা করতে চাইলেও মনের মধ্যে সন্তানের জন্য তার হাজার কষ্ট হলেও কোনো মতে ব্যবস্থা করে অফিসে যেতে হয় এবং ৯টা-৫টা সময় পার করতে হয়। ফলে তার কাজে মনোযোগের অভাব হলে তার দায় কি সেই নারীর, নাকি তার জন্য যে বরাদ্দ থাকা উচিত ছিল, সেটা নেই বলে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে? এসব প্রশ্ন আমাদের করতে হবে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে জেন্ডার বাজেটের সঠিক প্রয়োগের কথা চিন্তা করে বিশেষ খাতে বাজেট বরাদ্দ কমিয়ে দেওয়া যেতে পারে। যেমন– সাধারণভাবে কৃষিতে সার-কীটনাশক, হাইব্রিড বীজ ইত্যাদির জন্য বরাদ্দ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এটিকে খুব বাহবাও দেওয়া হয়। উন্নত জাতের গরু, মুরগি ইত্যাদি পালনের জন্য বরাদ্দ থাকে। এসব করে নারীর সুবিধা হয় কিনা দেখা হয় না। সার-কীটনাশক বরাদ্দ বাড়ানোর চেয়ে কমিয়ে দিলে ভালো হয় কিনা ভেবে দেখা যেতে পারত, কিন্তু তা করা হয় না। গাছ লাগানোর কথা বলে ইউক্যালিপটাস, একাশিয়া লাগিয়ে যে সর্বনাশ করা হয় তার ভুক্তভোগী নারীরাই বেশি হয়।  
বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে প্রচুর কাজ হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা সমাধানে নারীর কথা আগেই ওঠে এবং নারীকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট খাতে বাজেট বরাদ্দ নারীর জন্য ততটা হয় না। বড় বড় প্রকল্প নিলে তা হয়ে যায় পুরুষের, আর নারীর জন্য অল্প টাকার প্রকল্প, এটিই চিন্তায় থাকে। 
প্রয়োজনের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি দরকার নারীর চলাফেরার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, নারীর মর্যাদা রক্ষা হয়– এমন কাজে বরাদ্দ যথেষ্ট পরিমাণে দেওয়া। গণপরিবহন, রাস্তাঘাট নারীর জন্য এখনও যথেষ্ট নিরাপদ নয়। জননিরাপত্তা বিভাগের বাজেট বরাদ্দের সময় এ বিষয়গুলো নিয়ে আসতে হবে। 
নাগরিক সেবা পেতে গিয়ে নারীকে অনেক বৈষম্যের শিকার হতে হয়। নিম্ন আয়ের মানুষ, গরিব ভূমিহীন নারীর সরকারি সেবা শুধু ভিজিএফ চালের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা সংকীর্ণ চিন্তা। সেবার ধরন এমন হওয়া উচিত যেন নারী তার অধিকার নিশ্চিত করার সুযোগ পায়। 
সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়ের কাজে সম্পর্ক দেখা জেন্ডার বাজেটের জন্য বড় প্রশ্ন। দেখা গেছে এক মন্ত্রণালয়ের কাজের কারণে অন্য মন্ত্রণালয়ের কাজের ব্যাঘাত ঘটেছে। যেমন সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সেতু নির্মাণের কাজের কারণে মৎস্যজীবীদের জীবিকার ক্ষতি হতে পারে; সে বিবেচনা করা হয় না। নারীর জীবন-জীবিকার কী ক্ষতি হতে পারে, সেটিও দেখা হয় না। কৃষিতে কীটনাশকের ব্যবহার নারীর স্বাস্থ্য, বিশেষ করে প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে বিষয়টি উপেক্ষা করা হলে তা জেন্ডার বাজেটের দৃষ্টিতে ঠিক হবে না। 
জেন্ডার বাজেট অনেক বিষয়ের সমন্বিত চিন্তা, অনেক কাজের সমন্বিত ফলাফল। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় একটি সঠিক জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আমরা সেই আশাই করি। v

সম্পর্কিত নিবন্ধ