পুশইন নিয়ে প্রশ্ন ভারতের মানবাধিকারকর্মীদের
Published: 18th, May 2025 GMT
ভারত থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে লোকজনকে ঠেলে পাঠানোর (পুশইন) ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, আদালতের রায় ছাড়া কাউকে ঠেলে পাঠানো বেআইনি। আর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক ধরনের চাপ তৈরি করতে হঠাৎ পুশইন। এটিকে উস্কানি মনে করছেন কেউ কেউ।
গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করে ভারত। উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলাও হয়। এরই মধ্যে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর অনুপ্রবেশকারী ধরতে অভিযান শুরু করে ভারত। অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারীদের আটক করা হয়। এদের অনেককে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। ফিরে আসার পর অনেকে নির্যাতনের অভিযোগ করছেন। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। গত ৪ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ৩৪৬ জনকে ঠেলে পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কয়েকজন রোহিঙ্গাও রয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিমত, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কার্ডধারী কয়েকজন রোহিঙ্গা ভারতে বসবাস করতেন। তাদের ব্যাপারে জাতিসংঘের কাছে প্রতিবাদ জানানো জরুরি।
গতকাল রাতে ভারতের সংগঠন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক কিরীটি রায় সমকালকে বলেন, যদি কোনো নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করে, তাহলে তাঁকে আইনিভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এখানে ফরেনার্স অ্যাক্ট রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে অবৈধ বিদেশি নাগরিক শনাক্ত হওয়ার আগে তাঁকে জোর করে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে– এটি বেআইনি। গুজরাট ও উত্তর প্রদেশে অভিযান চালিয়ে ধরা হচ্ছে। এরপর কাউকে আবার বিমানে উড়িয়ে সীমান্তে নিয়ে ওপারে ঠেলে পাঠানো হয়। আদালতের কাজ এখন পুলিশ করছে। পুলিশ ও প্রসিকিউশন একই হলে কীভাবে চলবে? পুশইনের ঘটনায় আমরা রোববার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেব।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.
তিনি আরও বলেন, এর আগে ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রতিবাদের মুখে তাদের মিজোরামে জড়ো করে সেখান থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের যদি বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়, তাহলে জাতিসংঘের কাছে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়।
সীমান্ত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন– এমন একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, ঠেলে পাঠানোর ঘটনায় সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। কয়েকটি সীমান্তে এরই মধ্যে পুশইন ঠেকানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং আইনি পথকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ।
ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী ‘বাংলাদেশি’ ও ‘বাংলাভাষী’ সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে পুশইনের কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সাড়ে তিনশর বেশি পুশইন করা হয়েছে।
পুশইনের প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের কাছে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ। এটি বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে ৯ মে এই চিঠি পাঠানো হয়।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায়ও পুশইনের বিষয়টি ওঠে। সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। পরে তিনি পুশইন নিয়ে সাংবাদিকদের জানান, ৭ ও ৮ মে বিএসএফ ২০২ জনকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করেছে। এরা ২ থেকে ২৫ বছর আগে ভারতে গিয়েছিল। তাদের সন্তানাদিও আছে। ভারতের আধার কার্ড ও অন্যান্য ডকুমেন্ট পেয়েছিল। ভারতের পুলিশ বা বিএসএফ আধার কার্ড ও অন্যান্য ডকুমেন্ট রেখে দিয়ে পুশইন করেছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় ৩০০ জন
পশ্চিমবঙ্গে ভোটার তালিকার নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) শুরু করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে আতঙ্ক চরমে পৌঁছেছে।
বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় ভারতীয় সীমান্তে জড়ো হচ্ছে শত শত মানুষ। পশ্চিমবঙ্গের বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থানা এলাকার হাকিমপুর সীমান্তে এমন ঘটনা দেখা গেছে। বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য শুধুমাত্র এই সীমান্তেই জড়ো হয়েছেন নারী শিশু সহ অন্তত ৩০০ জন বাংলাদেশি নাগরিক।
আরো পড়ুন:
সৌদিতে বাস-ট্যাংকার সংঘর্ষ, ৪২ ভারতীয় হজযাত্রীর মৃত্যুর আশঙ্কা
দিল্লির আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর সহযোগী গ্রেপ্তার
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে, শহর থেকে বিভিন্ন সময়ে ভারতে অনুপ্রবেশকারী এই বাংলাদেশিরা ফের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার জন্য হাকিমপুর সীমান্তে এসে পৌঁছেছেন। কেউ দালালের মাধ্যমে কেউ আবার নিজেরাই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এসেছেন সীমান্তে। কিন্তু বিএসএফের বাধায় সীমান্তেই আটকে পড়েছেন এই বাংলাদেশিরা।
আটকে পড়া ব্যক্তিরা বলছেন, বিভিন্ন সময়ে ভারতে অনুপ্রবেশের পর তারা কলকাতা, দিল্লি, ব্যাঙ্গালুরু থেকে মুম্বাইয়ের মতো শহরে পরিযায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি ভারত জুড়ে শুরু হওয়া এসআইআরের কারণে জেল ও জরিমানা এড়াতে দেশে তারা ফিরতে চাইছেন।
অফিসিয়াল বিবৃতি জারি না করলেও বিএসএফ সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে এমন ছবি শুধুমাত্র হাকিমপুর সীমান্তের নয়। এই সীমান্তে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সংখ্যাটা অনেক বেশি। বিএসএফ জানিয়েছে, আটকে পড়া এই বাংলাদেশিদের মানবিক বিবেচনায় গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাদের বাংলাদেশি নাগরিকত্বের দাবির স্বপক্ষে নিথিপত্র বিএসএফের ১৪৩ নম্বর ব্যাটালিয়ন খতিয়ে দেখছে। পরবর্তীতে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগের ভিত্তিতে আগামী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ