ভারত থেকে বাংলাদেশ সীমান্তে লোকজনকে ঠেলে পাঠানোর (পুশইন) ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। তাদের মতে, আদালতের রায় ছাড়া কাউকে ঠেলে পাঠানো বেআইনি। আর নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক ধরনের চাপ তৈরি করতে হঠাৎ পুশইন। এটিকে উস্কানি মনে করছেন কেউ কেউ।

গত আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশিদের জন্য ভিসা সীমিত করে ভারত। উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনে হামলাও হয়। এরই মধ্যে গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর অনুপ্রবেশকারী ধরতে অভিযান শুরু করে ভারত। অবৈধভাবে ভারতে বসবাসকারীদের আটক করা হয়। এদের অনেককে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ)। ফিরে আসার পর অনেকে নির্যাতনের অভিযোগ করছেন। তাদের শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখা গেছে। গত ৪ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ৩৪৬ জনকে ঠেলে পাঠানোর খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে কয়েকজন রোহিঙ্গাও রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট অনেকের অভিমত, জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনারের (ইউএনএইচসিআর) কার্ডধারী কয়েকজন রোহিঙ্গা ভারতে বসবাস করতেন। তাদের ব্যাপারে জাতিসংঘের কাছে প্রতিবাদ জানানো জরুরি।

গতকাল রাতে ভারতের সংগঠন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চের সম্পাদক কিরীটি রায় সমকালকে বলেন, যদি কোনো নাগরিক অবৈধভাবে ভারতে বসবাস করে, তাহলে তাঁকে আইনিভাবে চিহ্নিত করতে হবে। এখানে ফরেনার্স অ্যাক্ট রয়েছে। আদালতের মাধ্যমে অবৈধ বিদেশি নাগরিক শনাক্ত হওয়ার আগে তাঁকে জোর করে ঠেলে পাঠানো হচ্ছে– এটি বেআইনি। গুজরাট ও উত্তর প্রদেশে অভিযান চালিয়ে ধরা হচ্ছে। এরপর কাউকে আবার বিমানে উড়িয়ে সীমান্তে নিয়ে ওপারে ঠেলে পাঠানো হয়। আদালতের কাজ এখন পুলিশ করছে। পুলিশ ও প্রসিকিউশন একই হলে কীভাবে চলবে? পুশইনের ঘটনায় আমরা রোববার আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেব।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর (অব.

) এমদাদুল ইসলাম সমকালকে বলেন, যদি অবৈধভাবেও বসবাস করে, আইনি কাঠামোয় তাদের পুশইন করার সুযোগ নেই। কাউকে আটক করলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নিয়ম আছে। পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়া বসবাস করলে গ্রেপ্তার করে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করতে হয়। যদি ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হয়, তাহলে তার সাজা হবে। সাজা শেষে যে দেশ থেকে এসেছেন, সেই দেশে তাকে ফেরত পাঠানোর নিয়ম। সীমান্তে এক ধরনের চাপ তৈরি করতে হঠাৎ পুশইন। অশুভ উদ্দেশ্যে এটি করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে ভারত থেকে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পুশইনের চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রতিবাদের মুখে তাদের মিজোরামে জড়ো করে সেখান থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হয়। ভারতে বসবাসকারী রোহিঙ্গাদের যদি বাংলাদেশে ঠেলে পাঠানো হয়, তাহলে জাতিসংঘের কাছে জোরালো প্রতিবাদ জানানো হয়।

সীমান্ত পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছেন– এমন একজন কর্মকর্তা সমকালকে জানান, ঠেলে পাঠানোর ঘটনায় সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে। কয়েকটি সীমান্তে এরই মধ্যে পুশইন ঠেকানো হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কূটনৈতিক পদক্ষেপ এবং আইনি পথকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ।

ভারতে অবৈধভাবে বসবাসকারী ‘বাংলাদেশি’ ও ‘বাংলাভাষী’ সন্দেহে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকে বাংলাদেশে পুশইনের কয়েকটি ঘটনা সামনে এসেছে। এরই মধ্যে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে সাড়ে তিনশর বেশি পুশইন করা হয়েছে।

পুশইনের প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতের কাছে কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে বাংলাদেশ। এটি বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে ৯ মে এই চিঠি পাঠানো হয়।

সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভায়ও পুশইনের বিষয়টি ওঠে। সভায় উপস্থিত ছিলেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী। পরে তিনি পুশইন নিয়ে সাংবাদিকদের জানান, ৭ ও ৮ মে বিএসএফ ২০২ জনকে বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পুশইন করেছে। এরা ২ থেকে ২৫ বছর আগে ভারতে গিয়েছিল। তাদের সন্তানাদিও আছে। ভারতের আধার কার্ড ও অন্যান্য ডকুমেন্ট পেয়েছিল। ভারতের পুলিশ বা বিএসএফ আধার কার্ড ও অন্যান্য ডকুমেন্ট রেখে দিয়ে পুশইন করেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প শইন প শইন র

এছাড়াও পড়ুন:

চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ

চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার বেনীপুর সীমান্ত থেকে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সদস্যরা এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছেন বলে তার পরিবার অভিযোগ করেছে।

ওই ব্যক্তির নাম বদরউদ্দীন (৩০)। তিনি জেলার জীবননগর উপজেলার বেনীপুর গ্রামের স্কুল পাড়ার আব্দুল করিমের ছেলে।

আরো পড়ুন:

পাহাড় থেকে পা পিছলে পড়ল শিশুটি, বিজিবির সহায়তায় জীবনরক্ষা 

দুর্গাপূজা বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য ও মিলনমেলার প্রতীক: বিজিবির মহাপরিচালক

বুধবার (১ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ভারতের নোনাগঞ্জ ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাকে ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বদরউদ্দীন মানব পাচারে জড়িত। বুধবার সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে পাঁচ থেকে ছয় জনকে ভারতে পাচার করছিলেন। এ সময় বিএসএফ সদস্যরা ধাওয়া করলে বদরউদ্দীনের সঙ্গে থাকা লোকজন পালিয়ে যায়। তবে, ধরা পড়েন তিনি। পরে বিএসএফ সদস্যরা তাকে নোনাগঞ্জ ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘‘বিএসএফ সদস্যরা এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বলে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে বিজিবি পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’’

জীবননগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মামুন হোসেন বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিএসএফ এক জনকে ধরে নিয়ে গেছে বলে লোকমুখে শুনেছি।’’

মহেশপুর ব্যাটালিয়নের (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রফিকুল আলম বলেন, ‘‘অসমর্থিত সূত্রে জানতে পেরেছি, বিএসএফ এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে। এ বিষয়ে বিএসএফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে।’’

ঢাকা/মামুন/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাতক্ষীরা সীমান্তে ১৫ বাংলাদেশিকে হস্তান্তর, সবাই কয়রার বাসিন্দা
  • সীমান্তের শূন্যরেখায় শেষবারের মতো মৃত বাবার মুখ দেখলেন মেয়ে
  • জীবননগর সীমান্ত থেকে এক বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ
  • চুয়াডাঙ্গা সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ