‘মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন থেকে সরে এসেছে সরকার। এ সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাব বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরের প্রাক-বাজেট বরাদ্দের কার্যতালিকাতেও প্রকল্পটি অন্তর্ভুক্ত হয়নি। 
মেহেরপুরের মুজিবনগর কমপ্লেক্সটি আরও বিস্তৃত করে আন্তর্জাতিক মানে গড়ে তুলতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রকল্প গ্রহণ করেছিল মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ব্যয় ধরা হয়েছিল ৫৭০ কোটি ২ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটি সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উত্থাপিত হয়েছিল। তখন চলতি অর্থবছরে প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রকল্পের কিছু বিষয় পুনঃপর্যালোচনার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু এ পর্যায়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রকল্পের আওতায় প্রকল্প এলাকায় আরও ৫১ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। এতে ৩০টি ইতিহাস পরিক্রমা, ৬টি শপথ চত্বর, বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার গুচ্ছ ভাস্কর্য, ১২ প্রকোষ্ঠের ডিওরোমা, একটি স্বাধীনতা স্মারক ভাস্কর্য, ৬টি ভাস্কর্য উদ্যান, ১০টি ম্যুরাল, মুক্তিযুদ্ধ স্মারক ভাস্কর্য, আরবরিকালচার, মানচিত্র (পরিমার্জন), ৭টি চিলড্রেনস পার্ক রাইড স্থাপন ও নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৃক্ষ ও উদ্ভিদ সংরক্ষণের পাশাপাশি  নতুন করে ৪৯ হাজার ৭৯৪ দশমিক ৩০ বর্গমিটার অনাবাসিক ভবন এবং ১৯ হাজার ৫৯ দশমিক ৭৪ বর্গমিটার আবাসিক ভবন নির্মাণ 
করার কথা ছিল। 

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী বলেন, ‘নতুন প্রকল্পটি আপাতত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সরকারের সিদ্ধান্ত থাকলে পরবর্তী সময়ে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’ কমপ্লেক্স সংস্কার প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। কমিটির মতামতের আলোকে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গত বছর আগস্টে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মেহেরপুরের মুজিবনগর কমপ্লেক্সে কয়েক দফা হামলা হয়েছে। অন্তত ৪০০ ছোট-বড় ভাস্কর্য ভেঙে ফেলা হয়। লুটপাট করা হয় দরজা-জানালাসহ নানা সরঞ্জাম। 

একজন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সম্প্রতি মুজিবনগর কমপ্লেক্স পরিদর্শন করেছে। কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘কমপ্লেক্সের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শত শত ভাস্কর্য ও স্থাপনা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছিল। এগুলোর সংস্কারে কী পরিমাণ অর্থ লাগবে, সেটি নিরূপণের জন্য চারুকলার নেতৃত্বে আলাদা কমিটি করতে হবে। তবে আমরা ভাস্কর্য ছাড়া অন্যান্য অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি চিহ্নিত করেছি। সেগুলো মেরামতে ৫৫ থেকে ৭০ লাখ টাকা লাগবে বলে প্রাথমিক হিসাব তৈরি করা হয়েছে।’
অবকাঠামোগত ক্ষতির মধ্যে রয়েছে– দরজা-জানালা, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, সীমানা প্রাচীর, লোহার গেট। গণপূর্ত বিভাগের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কমপ্লেক্সের বিভিন্ন ভবন ও স্থাপনায় শতাধিক ইলেকট্রনিক ও আলোকসজ্জার সরঞ্জাম চুরি হয়েছে। এছাড়া ভেঙে ফেলা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ফেন্সিং, দরজা-জানালা ও অন্যান্য স্থাপনা। প্রতিবেদনে ঘটনাগুলোর বিবরণ তুলে ধরে যথাযথ তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

মুজিবনগর কমপ্লেক্সে বর্তমানে ৬০ জন অস্ত্রধারী ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব আছেন। এ ছাড়া পর্যটন পুলিশ সদস্যরাও দিনে দায়িত্ব পালন করেন। মেহেরপুরের জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ সমকালকে বলেন, ‘মুজিবনগর কমপ্লেক্সের ভাস্কর্যগুলো পুনর্নির্মাণের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় সংস্কারের বিষয়টি দেখছে।’ 

দর্শনার্থী কমছে
এ কমপ্লেক্সে দর্শনার্থী অর্ধেক সংখ্যায় নেমে এসেছে। কমপ্লেক্সের কেয়ারটেকার সুভাষ মল্লিক সমকালকে বলেন, ‘৫ আগস্টের আগে ছুটির দিনে কয়েক হাজার দর্শনার্থী আসতেন। এখন সে সংখ্যা অনেক কম।’ মুক্তিযুদ্ধকালীন গার্ড অব অনার প্রদানকারী আনসার সদস্য আজিমুদ্দিন শেখ (৮৮) বলেন, ‘মুজিবনগর কমপ্লেক্স মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। যে সরকারই থাকুক, তারা যেন এটি রক্ষা করে। ভাঙা ভাস্কর্যগুলো দ্রুত মেরামত করা হোক।’
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বলেন, ‘দ্রুত সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্থাপনাগুলো ঐতিহাসিক বস্তুনিষ্ঠতার ভিত্তিতে নির্মিত বা সংস্কার করা হবে। এখানে ভুল কিছু আরোপিত হবে না; সত্যিকারের ইতিহাস মোচনও হবে না।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: কমপ ল ক স র ভ স কর য প রকল প হয় ছ ল র জন য সরক র সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হোক

রাজধানীর বনশ্রী ও আফতাবনগর এলাকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও, দেড় দশকের বেশি সময় ধরে তাঁদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা চারটি নড়বড়ে বাঁশের সাঁকো। নগর-পরিকল্পনার এক চরম ব্যর্থতাই বলতে হয় একে। প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষের ভোগান্তি, বিশেষ করে শিক্ষার্থী ও অসুস্থদের দুর্দশা আমাদের নগর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

প্রথম আলোর এই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বনশ্রী আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে থেকে মেরাদিয়া পর্যন্ত প্রায় আড়াই কিলোমিটার জুড়ে থাকা এই বাঁশের সাঁকো দিয়ে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হচ্ছে। বনশ্রী ও আফতাবনগরে অর্ধশত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্তত ২০টি হাসপাতাল-ক্লিনিক রয়েছে। যেহেতু বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল বনশ্রীতে অবস্থিত, তাই আফতাবনগরের বাসিন্দাদের এই সাঁকোগুলো ব্যবহার করে এপারে আসতে হয়। কিন্তু এই নড়বড়ে সাঁকোতে প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে। ঝড়-বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও অসহনীয় হয়ে ওঠে। সাঁকো ভেঙে গেলে বাঁশের কাঠামোর ওপর কাঠের নৌকা সাজিয়ে পারাপারের ব্যবস্থা করা হয়, তখন প্রতিবার পাঁচ টাকা করে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়।

ভাবা যায়, ঢাকার মতো একটি আধুনিক শহরের প্রাণকেন্দ্রে মানুষ এখনো বাঁশের সাঁকোর ওপর নির্ভরশীল! আফতাবনগরের কোনো বাসিন্দাকে বনশ্রী আসতে চাইলে রামপুরা সেতু ঘুরে চার থেকে পাঁচ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হয়। আর বনশ্রীর বাসিন্দাদের আফতাবনগরে যেতে হলে বাড্ডা ইউলুপ ঘুরে আসা মানে দূরত্ব দ্বিগুণ বৃদ্ধি। এই ভোগান্তি শুধু সময় নষ্ট করছে না, অর্থনৈতিক চাপও সৃষ্টি করছে।

স্থানীয় লোকজন দেড় দশক ধরে কংক্রিটের সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন। এই দীর্ঘ অপেক্ষার কারণ কী? কেন নগর কর্তৃপক্ষ এত দিন এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিকে অবহেলা করে আসছে?

তবে আশার কথা হলো, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ফারুক হাসান মো. আল মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন যে সিটি করপোরেশন থেকে তিনটি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দুটি হবে গাড়ি ও মানুষের হাঁটার উপযুক্ত সেতু এবং একটি হবে পদচারী–সেতু। তিন থেকে চার মাসের মধ্যে এগুলোর কাজ শুরু হওয়ার কথা।

আমরা আশা করব, এবার আর শুধু আশ্বাসে সীমাবদ্ধ থাকবে না, সিটি করপোরেশন দ্রুততার সঙ্গে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করবে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই তা সম্পন্ন করবে। তবে সেতুগুলো নির্মাণের সময় খাল সুরক্ষার বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে। সেতু করতে গিয়ে খাল সংকুচিত হয়ে না পড়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে, সেটিই কাম্য।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হোক