সিদ্ধিরগঞ্জে অবৈধ ড্রেজারে জনদুর্ভোগ, ক্ষোভ
Published: 19th, May 2025 GMT
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক মতিউর রহমান মতির ঘনিষ্ট সহযোগী দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, আতাউর রহমান ও মেজবাহ ভূঁইয়া এখন বিএনপির নাম ভাঙিয়ে দাপটের সাথে অবৈধভাবে ড্রেজার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
নাসিক ১০ নং ওয়ার্ডের গোদনাইল পদ্মা জ¦ালানি তেল ডিপো সংলগ্ন বাগপাড়া এলাকায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে চালিয়ে যাচ্ছে ড্রেজার ব্যবসা। ড্রেজারের পানিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন এলাকাবসী।
জানা গেছে, গোদনাইল পদ্মা ডিপো সংলগ্ন শীতলক্ষ্যা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজার বসিয়েছে দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, আতাউর রহমান ও মেজবাহ ভূঁইয়া। সেখান থেকে ড্রেজারের পাইপ নিয়েছে জালকুড়ি দশপাইপ এলাকায়। ড্রেজার চলার সময় পাইবের বিভিন্ন স্থানে লিক হয়ে পানিতে তলিয়ে যায় বাসাবাড়ি।
এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এলাকাবাসীর। বাদ যাচ্ছেনা মসজিদের মুসল্লিরাও। গত শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায় করতে মসজিদে যাওয়ার সময় একজন মসুল্লি ড্রেজারের পাইপ দিয়ে লিক হওয়া পানিতে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে তাদের ড্রাজারের গর্তে পড়ে আদর কাজী (৬) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছিল।
স্থানীয়রা জানায়, নারায়ণগঞ্জের শীর্ষ সাবেক এক ছাত্রদল নেতার নাম ভাঙিয়ে দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া, আতাউর রহমান ও মেজবাহ ভূঁইয়া দাপটের সাথে অবৈধভাবে ড্রেজার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ তারা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা যুবলীগের আহ্বায়ক ও নাসিক ৬ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতির ঘনিষ্ট সহযোগী।
মতির আয়োজিত আওয়ামী লীগের বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিতে তাদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষনীয়। আওয়ামী লীগের দোসর দেলোয়ার হোসেনগং বীর দর্পে অবৈধভাবে এলাকায় ড্রেজার ব্যবসা করায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন স্থানীয় একাধিক বিএনপি নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ড্রেজারের বৈধতা আছে। আমরা অবৈধভাবে কিছু করছিনা। ড্রেজারের কারণে মানুষের দুর্ভোগ নয় বরং উপকার হচ্ছে। আওয়ামী লীগ কিংবা মতি আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানে তিনি কখনো অংশ গ্রহণ করেন নি বলে দাবি করেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ড র জ র ব যবস আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
সাম্য হত্যাকাণ্ড: রাজনীতি নয়, বিচার চাই
আবারও ঝরেছে প্রাণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাস-সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এলাকায় খুন হলেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য। শুধু সাম্য নন; নথিপত্র বলছে, এর আগে আরও পৌনে একশ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে। সেগুলোর বিচার শেষ হয়নি। বরং অনেক ক্ষেত্রে চিহ্নিত আসামিদের বেকসুর খালাস দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। যে বিচারহীনতার শৃঙ্খলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ছে, এ থেকে কি মুক্তি মিলবে?
২০১০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের কর্মীদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে খুন হয়েছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বকর। তাঁর হত্যাকাণ্ডের পর ছাত্রলীগের ১০ কর্মীকে বহিষ্কারও করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কিন্তু রাজনৈতিক শক্তি খাটিয়ে, আদালতকে ব্যবহার করে সেই বহিষ্কারাদেশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। সাত বছর পর সেই আসামিরা বেকসুর খালাস পেয়ে যায়। আসামিরা প্রমাণ করতে সমর্থ হয়– আবু বকরকে কেউ খুন করেনি!
১৯৭৪ সালে কুখ্যাত ৭ খুনের ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিত কালো ইতিহাস। মুহসীন হলের সেই ৭ খুন হত্যায় প্রমাণিত– মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন তৎকালীন ছাত্রলীগ সভাপতি। জিয়াউর রহমান এসে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলে তাঁকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন। এভাবে সে ঘটনাও চাপা পড়ে যায়।
একে একে ছাত্রলীগ, ছাত্রদলসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সংশ্লিষ্টতায় বারবার রক্তাক্ত হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে একটিরও বিচার হয়নি। এ যেন দুর্বৃত্তের জন্য নিরাপদ আখড়া। বরং শিক্ষার্থীদের জন্যই অনিরাপদ এই শিক্ষায়তন।
এবার তার ব্যতিক্রম হবে কি? শাহরিয়ার সাম্যের হত্যাকাণ্ড নিয়ে যে আন্দোলন হওয়ার কথা ছিল, তা এখন গড়িয়েছে উপাচার্যের পদত্যাগ বনাম উপাচার্য বহালের আন্দোলনে। সাম্যের হত্যাকাণ্ড নিয়ে রাজনীতি হচ্ছে, টকশো হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে। হচ্ছে না কেবল বিচার।
আমরা যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গর্ব করে ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ বলতে যাই, তখন কোথাও একটু থামতে হয়। প্রাচ্য বা প্রতীচ্য– পৃথিবীর কোথাও কি এত ঐতিহ্যময় একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা এত অনিরাপদ? যেখানে ন্যূনতম আবাসন সুবিধা নেই; খাবারের করুণ অবস্থা; পড়াশোনা-গবেষণা তো বাদই দিলাম।
রাজনৈতিক দলগুলোর কোন্দলে পড়ে যত অপরাধ-সন্ত্রাস এ বিশ্ববিদ্যালয়ে চলেছে, তার কোনোটিই বিচারের মুখ দেখেনি। এই দায় প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নিতে হবে। তাদের অপরাজনীতি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কোন পর্যায়ে এসে দাঁড় করিয়েছে, তা তাদের বোঝা দরকার। একই সঙ্গে পুলিশ প্রশাসনের যারপরনাই অবজ্ঞা ও অবহেলার বিরুদ্ধে সরব হওয়া উচিত। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলগুলোর পদলেহন ও অপরাধীদের বাঁচাতে গিয়ে পুলিশ যেভাবে একেকটি হত্যাকাণ্ডের ক্লু অনুসন্ধানে ক্রমাগত ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তা ন্যক্কারজনক। এসব হত্যাকাণ্ডে পুলিশের শৈথিল্য এবং অনেকাংশে পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকার গুরুতর অভিযোগের তদন্ত করা উচিত।
আপাতত সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচারের দিকে মুখিয়ে আছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে বেশ কিছু তৎপরতা দেখিয়েছে। সম্প্রতি সাম্য হত্যার তদন্তের অগ্রগতি নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার। তিনি বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্পন্ন ও জড়িতদের হত্যাকাণ্ডে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার করার আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা বিচারে আর সময়ক্ষেপণ চাই না। একই সঙ্গে এটিও মনে করি, বিগত দিনের মতো যারা লাশের রাজনীতি করতে চান, তাদের জন্য এটি সুসময় নয়। কারণ সাধারণ শিক্ষার্থীরা একতাবদ্ধ। সঠিক এবং দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়ার মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে মুক্ত হবে দেশের প্রাচীনতম এই বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর মধ্য দিয়েই বিশ্ববিদ্যালয়ে অপরাধকর্মের ইতি টানা হবে– এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
শাফায়াত স্বচ্ছ: শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়