মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা মরিচ চাষের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে উৎপাদিত মরিচ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। চলতি মৌসুমে উপজেলার দুটি আড়তসহ হাট-বাজারে প্রতিদিন গড়ে ২০০ টন মরিচ বিক্রি করছেন চাষিরা। অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় মরিচের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা। 

কৃষি উন্নয়ন অধিদপ্তরের হরিরামপুর উপজেলা কার্যালয় জানিয়েছে, এ উপজেলায় চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরে তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি। এ অঞ্চলে বিন্দু মরিচ ও কারেন্ট মরিচের চাষ বেশি হয়। 

হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নেই প্রচুর পরিমাণে মরিচের চাষ হয়। এ উপজেলার মরিচের আড়ত হিসেবে পরিচিত ঝিটকা বাজার। তবে, সম্প্রতি ভাদিয়াখোলাতে আরেকটি মরিচের আড়ত চালু হয়েছে। বর্তমানে ভাদিয়াখোলা আড়তে ৮০ থেকে ৯০ টন এবং ঝিটকা বাজার আড়তে ৭০ থেকে ৮০ টন মরিচ বিক্রি হয়। এছাড়াও অন্যান্য হাট-বাজারে আরো ৪০ থেকে ৫০ টন মরিচ বিক্রি হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ২০০ টন মরিচ ১২ থেকে ১৩টি জেলায় সরবরাহ করেন আড়তদাররা। 

মৌসুমের শুরুতে জাত ভেদে প্রতি কেজি মরিচ ৫৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। হঠাৎ করে দাম অর্ধেকে নেমে আসায় হতাশ হয়ে পড়েছেন উপজেলার শত শত মরিচচাষি।

বাল্লা ইউনিয়নের সরফদীনগর এলাকার মো.

নাসির উদ্দীন বলেছেন, “আমরা তিন বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রথমদিকে, মরিচ একটু কম ধরলেও এখন অনেক মরিচ তোলা যায়। কিন্তু, মরিচের দাম কম হওয়ায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে। প্রথমদিকে বিন্দু মরিচ ৪০-৫০ টাকা ও কারেন্ট মরিচ ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এখন বিন্দু মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা দরে এবং কারেন্ট মরিচ ৩০-৩২ টাকা দরে। ক্ষেত থেকে এক কেজি মরিচ তুলতেই খরচ হয় ১০ টাকা। এরপর লাগে গাড়ি ভাড়া। সব মিলিয়ে দাম আর একটু না বাড়লে সব কৃষকই মরিচে ধরাশায়ী হবেন।” 

খেরুপাড়া গ্রামের বিশ্বজিৎ শীল বলেন, প্রথমদিকে মরিচের দাম বেশ ভালই ছিল। হঠাৎ করেই মরিচের দাম কমে গেছে। এভাবে থাকলে কৃষকের লোকসান হবে। সর্বনিম্ন দাম ৪০-৪৫ টাকা হলে কৃষক মোটামুটি বাঁচবে। খরার কারণে সেচ দিয়ে মরিচ ক্ষেতে পানি দেওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেড়েছে। এক কেজি মরিচ তুলতেই ১০ টাকা খরচ আছে। এরপর বাজারে নেওয়ারও একটা খরচ আছে। মরিচ বাজার পর্যন্ত আনতেই প্রতি কেজিতে ১২ থেকে ১৩ টাকা খরচ হয়।

আড়তদার রজ্জব আলী বলেন, এখন দাম একটু কম। এতে আমাদের আসলে কিছু করার নেই৷ কারণ, আমরা যেসব জেলায় মরিচ পাঠাই, সেখানে অনেক জেলা থেকেই মরিচ আমদানি হচ্ছে। ফলে, যে আড়তে আমরা মাল পাঠাই, সেখানেই দাম কম। এতে কৃষকের যেমন লোকসান, তেমনি আমাদেরও ক্ষতি। তবে, খুব তাড়াতাড়িই হয়ত বাজার দর বাড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেছেন, এ উপজেলা বরাবরই কৃষিনির্ভর। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কাঁচা মরিচের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছরই মরিচের আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। খরা তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে কারো হাত নেই। তাই, সেচের মধ্যেই যতটুকু সম্ভব গাছ সতেজ রাখছেন কৃষকরা। এতে খরচের পরিমাণ কৃষকদের একটু বেশিই লাগে। চাহিদার ওপর মূল্য নির্ভর করে। ফলন ভাল হয়েছে, তাই মরিচের দাম একটু কম। তবে, হয়ত সামনে দাম আরেকটু বাড়বে। এতে কৃষকদের সুবিধা হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব সময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

ঢাকা/চন্দন/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপজ ল র ক ষকদ র আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

হরিরামপুরে কাঁচা মরিচের বাম্পার ফলন, দামে হতাশ চাষিরা 

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলা মরিচ চাষের জন্য বিখ্যাত। এ অঞ্চলে উৎপাদিত মরিচ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়। চলতি মৌসুমে উপজেলার দুটি আড়তসহ হাট-বাজারে প্রতিদিন গড়ে ২০০ টন মরিচ বিক্রি করছেন চাষিরা। অনুকূল আবহাওয়া ও সঠিক পরিচর্যায় মরিচের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে হতাশ চাষিরা। 

কৃষি উন্নয়ন অধিদপ্তরের হরিরামপুর উপজেলা কার্যালয় জানিয়েছে, এ উপজেলায় চলতি অর্থবছরে ১ হাজার ৮৬৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ করা হয়েছে, যা গত অর্থবছরে তুলনায় ৫০ হেক্টর বেশি। এ অঞ্চলে বিন্দু মরিচ ও কারেন্ট মরিচের চাষ বেশি হয়। 

হরিরামপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নেই প্রচুর পরিমাণে মরিচের চাষ হয়। এ উপজেলার মরিচের আড়ত হিসেবে পরিচিত ঝিটকা বাজার। তবে, সম্প্রতি ভাদিয়াখোলাতে আরেকটি মরিচের আড়ত চালু হয়েছে। বর্তমানে ভাদিয়াখোলা আড়তে ৮০ থেকে ৯০ টন এবং ঝিটকা বাজার আড়তে ৭০ থেকে ৮০ টন মরিচ বিক্রি হয়। এছাড়াও অন্যান্য হাট-বাজারে আরো ৪০ থেকে ৫০ টন মরিচ বিক্রি হয়। সে হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ২০০ টন মরিচ ১২ থেকে ১৩টি জেলায় সরবরাহ করেন আড়তদাররা। 

মৌসুমের শুরুতে জাত ভেদে প্রতি কেজি মরিচ ৫৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়। হঠাৎ করে দাম অর্ধেকে নেমে আসায় হতাশ হয়ে পড়েছেন উপজেলার শত শত মরিচচাষি।

বাল্লা ইউনিয়নের সরফদীনগর এলাকার মো. নাসির উদ্দীন বলেছেন, “আমরা তিন বিঘা জমিতে মরিচের আবাদ করেছি। ফলন অনেক ভালো হয়েছে। প্রথমদিকে, মরিচ একটু কম ধরলেও এখন অনেক মরিচ তোলা যায়। কিন্তু, মরিচের দাম কম হওয়ায় আমাদের সমস্যা হচ্ছে। প্রথমদিকে বিন্দু মরিচ ৪০-৫০ টাকা ও কারেন্ট মরিচ ৭০-৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এখন বিন্দু মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৮-২০ টাকা দরে এবং কারেন্ট মরিচ ৩০-৩২ টাকা দরে। ক্ষেত থেকে এক কেজি মরিচ তুলতেই খরচ হয় ১০ টাকা। এরপর লাগে গাড়ি ভাড়া। সব মিলিয়ে দাম আর একটু না বাড়লে সব কৃষকই মরিচে ধরাশায়ী হবেন।” 

খেরুপাড়া গ্রামের বিশ্বজিৎ শীল বলেন, প্রথমদিকে মরিচের দাম বেশ ভালই ছিল। হঠাৎ করেই মরিচের দাম কমে গেছে। এভাবে থাকলে কৃষকের লোকসান হবে। সর্বনিম্ন দাম ৪০-৪৫ টাকা হলে কৃষক মোটামুটি বাঁচবে। খরার কারণে সেচ দিয়ে মরিচ ক্ষেতে পানি দেওয়ায় কৃষকদের উৎপাদন খরচ অনেকটাই বেড়েছে। এক কেজি মরিচ তুলতেই ১০ টাকা খরচ আছে। এরপর বাজারে নেওয়ারও একটা খরচ আছে। মরিচ বাজার পর্যন্ত আনতেই প্রতি কেজিতে ১২ থেকে ১৩ টাকা খরচ হয়।

আড়তদার রজ্জব আলী বলেন, এখন দাম একটু কম। এতে আমাদের আসলে কিছু করার নেই৷ কারণ, আমরা যেসব জেলায় মরিচ পাঠাই, সেখানে অনেক জেলা থেকেই মরিচ আমদানি হচ্ছে। ফলে, যে আড়তে আমরা মাল পাঠাই, সেখানেই দাম কম। এতে কৃষকের যেমন লোকসান, তেমনি আমাদেরও ক্ষতি। তবে, খুব তাড়াতাড়িই হয়ত বাজার দর বাড়বে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. তৌহিদুজ্জামান খান বলেছেন, এ উপজেলা বরাবরই কৃষিনির্ভর। অন্যান্য ফসলের পাশাপাশি কাঁচা মরিচের জন্য বিখ্যাত। প্রতি বছরই মরিচের আবাদের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। খরা তো প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এখানে কারো হাত নেই। তাই, সেচের মধ্যেই যতটুকু সম্ভব গাছ সতেজ রাখছেন কৃষকরা। এতে খরচের পরিমাণ কৃষকদের একটু বেশিই লাগে। চাহিদার ওপর মূল্য নির্ভর করে। ফলন ভাল হয়েছে, তাই মরিচের দাম একটু কম। তবে, হয়ত সামনে দাম আরেকটু বাড়বে। এতে কৃষকদের সুবিধা হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কৃষকদের সব সময় প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

ঢাকা/চন্দন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ