কুয়েটে দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষক সমিতির অবস্থান কর্মসূচি, আবারও ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম
Published: 20th, May 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) তিন মাস আগের সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচারিকপ্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান করেন শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। এ সময় সেখানে একাত্ম প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীদের একাংশ।
এর আগে গতকাল সোমবার প্রশাসনিক ভবনে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষকেরা। গত রোববার শিক্ষক সমিতি সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয়। ৪ মে থেকে শিক্ষকেরা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত রয়েছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।
আজকের অবস্থান কর্মসূচি শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলাম, কিন্তু ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়কে আমরা এখনো পাইনি। আগামীকাল বুধবার বেলা একটার মধ্যে উপাচার্য যদি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরানোর মতো সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না করতে পারেন, তাহলে শিক্ষকেরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। সাধারণ সভা করে ওই কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
ফারুক হোসেন আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, দাপ্তরিক কাজ শেষ করে উপাচার্য (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ক্যাম্পাসে ফিরবেন। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছি। তিনি (উপাচার্য) সিদ্ধান্ত না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ফেলে রেখে দপ্তরের বাইরে অবস্থান করছেন অথচ আমরা ক্লাসে ফিরতে পারছি না। আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৫ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠানো হয়।
শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এটিকে প্রহসনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পরে একাডেমিক কার্যক্রম আবার চালু করা, একটি নতুন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং আগে ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য শৃঙ্খলা কমিটির সভা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা আন্দোলনকারীদের জানান। উপাচার্যের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমিতিকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এর ফলে শিক্ষক সমিতি আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
এসব বিষয়ে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য মো.
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন। সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা শুরুতে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করলেও পরে তা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত করেন। তাঁদের আন্দোলনের মুখে সরকার উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করল যুক্তরাজ্য, বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা
ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করেছে যুক্তরাজ্য। একই সঙ্গে অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটি। ইসরায়েল নতুন করে শুরু করা হামলা বন্ধ ও ত্রাণ যেতে না দিলে দেশটির বিরুদ্ধে ‘পদক্ষেপ’ নেওয়া হবে—যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার এমন হুমকির পরই এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো।
৫ মে থেকে গাজায় নতুন করে অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল। গতকাল সোমবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ‘পুরো গাজার নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে তাঁর সরকার। দীর্ঘ ১১ সপ্তাহ অবরোধের পর এদিনই উপত্যকাটিতে পাঁচ ট্রাক ত্রাণ ঢুকতে দিয়েছে ইসরায়েল। তবে গাজা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রতিদিন সেখানে ৫০০ ট্রাক ত্রাণ প্রয়োজন।
আজ মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার পর দেশটির আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন দিয়েছে যুক্তরাজ্য। তবে এই সংঘাত এখন এক ‘কালো অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে’। ১১ সপ্তাহ ধরে গাজা অবরোধ করে রেখেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে উপত্যকাটিতে কাজ করা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) হাতে খাবারের মজুত শেষ হয়ে গেছে।
যুক্তরাজ্যের আইনপ্রণেতাদের ডেভিড ল্যামি আরও বলেন, আজ পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কারণে তিনজন ব্যক্তি ও চারটি প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাজ্য। যারা নৃশংসভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে যাবে ব্রিটিশ সরকার।
আরও পড়ুনইসরায়েলের ওপর থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার হুমকি ট্রাম্পের, কী বলেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা৭ ঘণ্টা আগেএর মধ্যে আজ যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গাজায় ইসরায়েলের হামলা, পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপন বৃদ্ধি এবং বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার ঘটনার জেরে যুক্তরাজ্যে ইসায়েলের দূত জিপুরা হোতোভেলিকে তলব করেছে ব্রিটিশ সরকার।
বসতি স্থাপনকারীদের ওপর যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞাকে ‘বিভ্রান্তিকর, অযৌক্তিক ও দুঃখজনক’ বলেছে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় বলেছে, নিজেদের অস্তিত্ব ও নিরাপত্তার জন্য ইসরায়েলের ধ্বংস চাওয়া শত্রুদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে দেশটি। বাইরের চাপের কারণে এই সংগ্রাম থেকে সরে যাবে না ইসরায়েল।
আর বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করা নিয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ইসরায়েলবিরোধী আবেগ ও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশের কারণে যুক্তরাজ্য যদি নিজেদের অর্থনীতির ক্ষতি করতে চায়, তাহলে সেটি তাদের সিদ্ধান্ত।’
আরও পড়ুনইসরায়েলি পণ্য বর্জন করতে যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের বৃহৎ খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান কো-অপ১১ ঘণ্টা আগে