খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) তিন মাস আগের সংঘর্ষ ও শিক্ষক লাঞ্ছিতের ঘটনায় বিচারিকপ্রক্রিয়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করার দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী প্রশাসনিক ভবনে অবস্থান করেন শিক্ষক সমিতির সদস্যরা। এ সময় সেখানে একাত্ম প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীদের একাংশ।

এর আগে গতকাল সোমবার প্রশাসনিক ভবনে এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন শিক্ষকেরা। গত রোববার শিক্ষক সমিতি সব ধরনের প্রশাসনিক কাজ থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দেয়। ৪ মে থেকে শিক্ষকেরা একাডেমিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা থেকেও বিরত রয়েছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে না এবং স্বাভাবিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হচ্ছে না।

আজকের অবস্থান কর্মসূচি শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় দিনের মতো আমরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করলাম, কিন্তু ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয়কে আমরা এখনো পাইনি। আগামীকাল বুধবার বেলা একটার মধ্যে উপাচার্য যদি ক্যাম্পাসের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পন্ন করে শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরানোর মতো সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত না করতে পারেন, তাহলে শিক্ষকেরা আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন। সাধারণ সভা করে ওই কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

ফারুক হোসেন আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার জানিয়েছেন, দাপ্তরিক কাজ শেষ করে উপাচার্য (দায়িত্বপ্রাপ্ত) ক্যাম্পাসে ফিরবেন। আমরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছি। তিনি (উপাচার্য) সিদ্ধান্ত না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম ফেলে রেখে দপ্তরের বাইরে অবস্থান করছেন অথচ আমরা ক্লাসে ফিরতে পারছি না। আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সূত্রগুলো জানিয়েছে, ৫ মে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় গত ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া অপ্রত্যাশিত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে দাবি জানানো হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক সমিতির দাবির সঙ্গে সংগতি রেখে প্রশাসন কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিশ পাঠানো হয়।

শিক্ষক সমিতি প্রশাসনের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা এটিকে প্রহসনমূলক পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। পরে একাডেমিক কার্যক্রম আবার চালু করা, একটি নতুন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা এবং আগে ঘোষিত পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের একটি সুস্পষ্ট রূপরেখা ঘোষণার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে উপাচার্য শৃঙ্খলা কমিটির সভা আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তের কথা আন্দোলনকারীদের জানান। উপাচার্যের এই সিদ্ধান্ত শিক্ষক সমিতিকে ক্ষুব্ধ করে তোলে। এর ফলে শিক্ষক সমিতি আরও কঠোর অবস্থানে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।

এসব বিষয়ে কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য মো.

হযরত আলীর সঙ্গে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন। সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা শুরুতে পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলন করলেও পরে তা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত করেন। তাঁদের আন্দোলনের মুখে সরকার উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপ চ র য ন র মত

এছাড়াও পড়ুন:

মালিকের সম্পদ বিক্রি করে পাওনা পরিশোধের সিদ্ধান্ত

বকেয়া বেতন-ভাতার দাবিতে আন্দোলনরত গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের আটটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শ্রম মন্ত্রণালয়। গতকাল মঙ্গলবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনায় গিয়ে সরকারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে। 

বিবৃতিতে জানানো হয়, টিএনজেড শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিট বিষয়ে শ্রম এবং কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। টিএনজেড গ্রুপের ওয়াশিং প্লান্ট ও মহাখালীর ডিওএইচএসে মালিকের বাড়ি বিক্রি করে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন ও অন্যান্য পাওনা আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করা হবে। পাওনা পরিশোধের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে ঐকমত্য হওয়ায় শ্রম ভবন ঘেরাও কর্মসূচি শ্রমিক নেতারা প্রত্যাহার করবেন। টিএনজেড গ্রুপের মালিক বিদেশে থাকায় ইতোমধ্যে তাঁকে দেশে আনতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া টিএনজেডের পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িতদের বিদেশ গমনেও দেওয়া হয়েছে নিষেধাজ্ঞা। টিএনজেডের ডিরেক্টর ফিন্যান্স শ্রমিকদের বকেয়া পরিশোধ না করা পর্যন্ত সরকারের হেফাজতে থাকবেন।

এর আগে বকেয়া বেতনসহ নানা দাবিতে গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে বিজয়নগরে শ্রম ভবন থেকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে ‘মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি শুরু করেন টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকরা। কাকরাইল মসজিদসংলগ্ন মোড়ে তাদের আটকে দেয় পুলিশ। শ্রমিকরা পরে রাস্তাতেই বসে পড়েন। এর পর দিনভর কাকরাইল মসজিদের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন তারা। 
টিএনজেড গ্রুপের কয়েকশ শ্রমিক বকেয়া বেতন-ভাতা ও ঈদ বোনাসের দাবিতে ১১ দিন ধরে শ্রম ভবন অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করছিলেন। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন আশুলিয়ার চেইন অ্যাপারেলস গার্মেন্টস লিমিটেডের শ্রমিকরা। 
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শ্রমিকদের আট সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যমুনায় প্রবেশ করে। রাত পৌনে ৮টায় শ্রমিক অবস্থানে আসেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক ওমর ইমরুল মহসিন এবং শিল্প পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন অ্যান্ড ক্রাইম) আবুল কালাম সিদ্দিক। সরকারের পক্ষ থেকে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য দু-এক দিন সময় চান তারা। এ সময় শ্রমিকদের মধ্য থেকে ‘না না’ ধ্বনি আসে। 

এজাজকে অপসারণের আলটিমেটাম
নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহ্‌রীরের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ। দাবি বাস্তবায়িত না হলে আগামী শনিবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাওর হুঁশিয়ারি দিয়েছে দলটি। গতকাল বিকেলে গুলশানে ডিএনসিসি নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে এ ঘোষণা দেন গণঅধিকার পরিষদের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ফারুক হাসান। প্রাথমিক শিক্ষকদের অর্ধদিবস কর্মবিরতির ডাক
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা তিন দফা দাবি আদায়ে টানা কর্মবিরতি পালন করছেন। আজ বুধবার থেকে তারা অর্ধদিবস কর্মবিরতিতে যাচ্ছেন। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। পরিস্থিতি বিবেচনায় ছয়টি সংগঠনের মোর্চা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ নেতাদের সঙ্গে গতকাল বৈঠকে বসেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজি আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। রাজধানীর মিরপুরে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠকে শিক্ষকরা তাদের দাবি তুলে ধরেন। তবে সরকারের তরফে দাবি পূরণের কোনো প্রতিশ্রুতি না মেলায় শিক্ষকরা অসন্তুষ্ট।

শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে অবস্থান ও বিক্ষোভ
শিক্ষা জাতীয়করণের দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা। গতকাল সকাল ৮টা থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এ অবস্থান কর্মসূচি শুরু হয়। দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। 

রাজউক ভবন ঘেরাও করে বিক্ষোভ
ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধনের দাবিতে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্রধান কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ করেছে ঢাকা সিটি ল্যান্ড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। গতকাল সকালে এ সংগঠনের ব্যানারে কয়েকশ মানুষ রাজউক ভবনের সামনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়ান। তারা রাজউকের ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির’ প্রতিবাদ এবং ড্যাপ ও ইমারত নির্মাণ বিধিমালা সংশোধনের দাবিতে নানা স্লোগান দেন। দাবি না মানলে চেয়ারম্যানকে পদত্যাগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তারা।

২৫ ক্যাডার কর্মকর্তাদের মানববন্ধন
প্রশাসন ক্যাডার কর্তৃক বৈষম্যমূলকভাবে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলার প্রতিবাদসহ নানা দাবিতে মানববন্ধন করেছেন সিভিল সার্ভিসের ২৫টি ক্যাডারের কর্মকর্তারা। এ সময় তারা কৃত্য পেশাভিত্তিক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা, ডিএস পুলের কোটা বাতিল ও সব ক্যাডারের সমতা বিধানেরও দাবি জানান। গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ