রাবিতে ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে শিক্ষার্থী আহত
Published: 20th, May 2025 GMT
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
সোমবার (১৯ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের পাশের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত শিক্ষার্থী আরাফাত শাওন বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তার স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে।
আরো পড়ুন:
যবিপ্রবিতে ভর্তিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার দাবি
ডাকসু নির্বাচনে ব্যক্তিতেই আস্থা শিক্ষার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে সৈয়দ আমীর আলী হলের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হলে ফিরছিলেন শাওন। এ সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী তার পথ রোধ করে। তার মুঠোফোন কেড়ে নিতে চাইলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা তার পেটের দুই জায়গায় ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।
আহতাবস্থায় তিনি নিজেই দ্রুত রাবির চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) স্থানান্তর করেন। রামেকে অস্ত্রোপচার শেষে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন, আরাফাতের পেটে দুই জায়গায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। কাল রাতেই তার অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন তিনি এখন বিপদমুক্ত। এ ঘটনায় তারা প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তাদের প্রক্টরিয়াল বডি কাজ করছে।
এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রদল ও ছাত্র ফেডারেশন।
পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ৭৫৩ একরের এই ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় থাকলেও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, নিয়মিত নিরাপত্তা টহল এবং গেট নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্রুত উন্নয়ন করতে হবে।
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ নত ই আহত
এছাড়াও পড়ুন:
রাকসু নির্বাচনে বামদের প্যানেলে নারী একজন, শক্তি ‘ধারাবাহিক লড়াই’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে বাম সংগঠনগুলোর একটা বড় অংশ এক ছাতার নিচে এসেছে। তারা যে প্যানেল দিয়েছে, তাতে জায়গা পেয়েছেন মূলত জোটে থাকা সংগঠনগুলোর শীর্ষ নেতারাই। নারী আছেন মাত্র একজন। তবে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। অধিকার আদায়ের লড়াইয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিতি তৈরি হওয়াকে এই প্যানেলের ‘বড় শক্তি’ বলে মনে করা হচ্ছে।
রাকসুর ২৩ পদের বিপরীতে ১৬টিতে প্রার্থী দিয়েছে বাম সংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। তাদের প্যানেলের নাম ‘গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদ’। এই প্যানেলে আছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ছাত্র গণমঞ্চ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র যুব আন্দোলন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা-কর্মীরা। রাজনৈতিক–সংশ্লিষ্টতা নেই, এমন শিক্ষার্থী আছেন দুজন। তবে প্যানেলে থাকা দুজন সদস্য সরে দাঁড়িয়েছেন।
এই প্যানেল থেকে সহসভাপতি (ভিপি) পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল। সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্র ইউনিয়নের (একাংশ) কোষাধ্যক্ষ কাউছার আহম্মেদ এবং সহসাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে প্রার্থী করা হয়েছে ছাত্র গণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকারকে।
বাম জোটের নেতারা বলছেন, ক্যাম্পাসে ধারাবাহিকভাবে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের জন্য লড়াই-সংগ্রাম করে আসছেন তাঁরা। এর মাধ্যমেই তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরিচিত। শিক্ষার্থীদের ‘প্রধান কণ্ঠস্বর’ হিসেবে কাজ করেছেন, করছেন। তাঁদের দাবি, এটাই তাঁদের বড় শক্তি।
প্রার্থীদের প্রায় সবাই জোটের নেতাবামদের এই প্যানেলে সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে লড়বেন বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের আহ্বায়ক তারেক আশরাফ। মহিলাবিষয়ক সহসম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের শ্রেয়সী রায়, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হাসান শাহরিয়ার খন্দকার আলিফ এবং তথ্য ও গবেষণা সহসম্পাদক পদে লড়বেন ছাত্র ফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক মো. সজীব আলী।
এ ছাড়া সহবিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক রিসার্চ চাকমা এবং সহপরিবেশ ও সমাজসেবা সম্পাদক পদে একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শামীন ত্রিপুরাকে প্রার্থী করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক পদে ছাত্র ফ্রন্টের সদস্য মুনতাসির তাসিন, পরিবেশ ও সমাজসেবা–বিষয়ক সম্পাদক পদে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজমাইন আতিক ও নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন ছাত্র ইউনিয়নের দপ্তর সম্পাদক আহমেদ ইমতিয়াজ।
এই প্যানেল থেকে জোটের বাইরে দুজনকে প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সহমিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক প্রার্থী ফাহিম মুনতাসির এবং নির্বাহী সদস্য পদে লড়বেন আসাদ সাদিক।
দাবি আদায়ের মাঠে থাকা ‘বড় শক্তি’শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়ার আন্দোলনে বাম সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সব সময় মাঠে দেখা গেছে। বিভিন্ন জাতীয় ইস্যুতেও তাঁরা তৎপর থেকেছেন। সংখ্যায় কম থাকলেও আন্দোলনের জায়গায় পিছিয়ে ছিলেন না। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ছাত্রলীগের বিভিন্ন অপকর্ম ও শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিরুদ্ধেও বাম নেতারা ছিলেন সোচ্চার।
শিক্ষার্থীদের আবাসন, খাদ্য, পরিবহনসংকট, ফি কমানো, নারীদের নিরাপত্তাসহ নানা ইস্যুতে আন্দোলন করে আসছে বাম সংগঠনগুলো। জুলাই আন্দোলনেও সক্রিয় ছিল তারা। এই প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়কদের একজন।
বাম নেতারা বলছেন, নব্বই–পরবর্তী বাম রাজনীতির ক্রান্তিকাল চলছে। এর পর থেকে আত্মকেন্দ্রিকতা বেড়ে গেছে। সেই ছায়া পড়েছে প্রগতিশীল রাজনীতিতে। অন্য সংগঠনগুলোতে ব্যক্তিগত স্বার্থ বা লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু বাম রাজনীতি করলে সেই সুবিধা পাওয়া যায় না। কিন্তু শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে বাম সংগঠনগুলো যে সব সময় সক্রিয় থেকেছে, এটাকেই রাকসু নির্বাচনে একটা বড় শক্তি মনে করছেন তাঁরা।
বামদের প্যানেলের ভিপি প্রার্থী ও ছাত্র ফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন করায় আমরা ক্যাম্পাসে পরিচিত। সে হিসেবে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে পরীক্ষিত। বিগত দিনে আমরা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের প্রধান কণ্ঠ ছিলাম। আমাদের তারা মূল্যায়ন করবে। আমাদের এই লড়াই–ই বড় শক্তি।’