রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।

সোমবার (১৯ মে) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ আমীর আলী হলের পাশের রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।

আহত শিক্ষার্থী আরাফাত শাওন বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৮-১৯ বর্ষের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি তার স্নাতকোত্তর শেষ হয়েছে।

আরো পড়ুন:

যবিপ্রবিতে ভর্তিতে ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করার দাবি

ডাকসু নির্বাচনে ব্যক্তিতেই আস্থা শিক্ষার্থীদের

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে সৈয়দ আমীর আলী হলের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে হলে ফিরছিলেন শাওন। এ সময় কয়েকজন ছিনতাইকারী তার পথ রোধ করে। তার মুঠোফোন কেড়ে নিতে চাইলে তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। একপর্যায়ে ছিনতাইকারীরা তার পেটের দুই জায়গায় ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়।

আহতাবস্থায় তিনি নিজেই দ্রুত রাবির চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (রামেক) স্থানান্তর করেন। রামেকে অস্ত্রোপচার শেষে তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেওয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান জানিয়েছেন, আরাফাতের পেটে দুই জায়গায় ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। কাল রাতেই তার অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। চিকিৎসক জানিয়েছেন তিনি এখন বিপদমুক্ত। এ ঘটনায় তারা প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তাদের প্রক্টরিয়াল বডি কাজ করছে।

এদিকে এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও জড়িতদের বিচারের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির, শাখা ছাত্রদল ও ছাত্র ফেডারেশন।

পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ৩২ হাজার শিক্ষার্থীর এই ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনের প্রধান দায়িত্ব হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না। ৭৫৩ একরের এই ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা নেই। নিরাপত্তা কর্মীর সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। নিরাপত্তা ঘাটতির বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় থাকলেও, প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো যথেষ্ট কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা মনে করেন, শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রথম অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। ক্যাম্পাসের প্রতিটি স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা, নিয়মিত নিরাপত্তা টহল এবং গেট নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্রুত উন্নয়ন করতে হবে।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ নত ই আহত

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ