বকেয়া বেতন ও বোনাসের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে মার্চ টু যমুনা কর্মসূচি করছেন গার্মেন্টস শ্রমিকেরা। গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা এ কর্মসূচি পালন করছেন। তবে কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে পুলিশের বাধার মুখে পড়েন পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। পরে সেখানেই তারা অবস্থান নেন।

আজ মঙ্গলবার বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরে শ্রম ভবনের সামনে থেকে শ্রমিকেরা মিছিল বের করেন। পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের দিকে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় তারা ‘যাব না রে, যাব না, বেতন ছাড়া যাব না’, ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’, ‘বাঁচার মতো বাঁচতে দাও, নইলে গদি ছাইড়া দাও’ নানা স্লোগান দেন।

টিএনজেড গ্রুপের বেতন বোনাসের দাবি আদায়ের শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ৯ দিন ধরে শ্রম ভবনের সামনে বেতন বোনাসের দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। উপদেষ্টাসহ বিভিন্ন দপ্তরে আমাদের কথা হয়েছে। তাঁরা আমাদের বিভিন্ন আশ্বাস দিয়েছেন কিন্তু বেতন বুঝিয়ে দিতে পারেননি। ফলে আজকে আমরা বাধ্য হয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের অভিমুখে এসেছি। বেতন নেওয়া ছাড়া আমরা এখান থেকে যাব না।’

শ্রমিকেরা জানান, টিএনজেড গ্রুপের কাছে তাদের পাওনা ৫৪ কোটি টাকা। ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রত্যেক শ্রমিক ৯ হাজার ১০০ টাকা পান। বাকি টাকা গত মাসের ৮ তারিখে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তারা টাকা পাননি।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র ম ন টস উপদ ষ ট

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করার হুমকি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যায় জড়িতদের বিচারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একাধিক বিক্ষোভ হয়েছে। হত্যার দ্রুত বিচার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টরের পদত্যাগের দাবিতে রোববার কালো পতাকা মিছিল করেছে ঢাবি ছাত্রদল। পাশাপাশি বিচারের দাবিতে পৌনে দুই ঘণ্টা শাহবাগ অবরোধ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। খুনিদের গ্রেপ্তারে স্পষ্ট বক্তব্য পাওয়া না গেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা ঘেরাও করার হুমকি দিয়েছেন দলটির নেতারা।

এদিকে সাম্য হত্যা মামলার তদন্ত ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া আজ ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে ফের শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা। 

শাহবাগ অবরোধ ছাত্রদলের

সাম্য হত্যার তদন্তে ‘গাফিলতির’ প্রতিবাদ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদল। এদিন বিকেল পৌনে ৪টার দিকে তারা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। এ সময় শাহবাগ এলাকা দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

অবস্থান কর্মসূচিতে ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে ছাত্রদলের যেসব নেতাকর্মী গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের প্রতি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সামান্যতম সহানুভূতির কোনো বক্তব্য দেননি। সেই পরিবারগুলোর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সামান্যতম সহমর্মিতা তিনি দেখাননি। আমরা তাঁর এ অবস্থানের নিন্দা জানাচ্ছি, ধিক্কার জানাচ্ছি।

অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস অতিবাহিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে ছাত্রদল সভাপতি বলেন, আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, যদি ছাত্রদল শাহবাগ চত্বর থেকে যমুনায় পদযাত্রা শুরু করে, এই পদযাত্রা রোখার ক্ষমতা কারও নেই। আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই, যদি এ ধরনের ষড়যন্ত্রমূলক এবং সদিচ্ছার অভাব আগামীতে আমরা লক্ষ্য করি, তাহলে ছাত্রদল যমুনায় যাবে এবং দাবি আদায় করেই বাসায় ফিরবে। আমরা যতক্ষণ চাইব, ততক্ষণ যমুনা অবরোধ করে রাখব।

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে যমুনায় একদল আন্দোলন করলে তাদের পানি ছিটিয়ে স্বাগত জানানো হয়। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশি হামলা করে আন্দোলনকে নস্যাৎ করার অপচেষ্টা করা হয়।

তিনি বলেন, শাহরিয়ারের প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করার কোনো নমুনা আমরা এখন পর্যন্ত দেখছি না। দ্রুত সময়ের মধ্যে যদি শাহরিয়ারের প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হয়, তাহলে দেশের প্রতিটি শিক্ষাঙ্গনে ছাত্রদল অবস্থান গ্রহণ করবে এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে প্রকৃত হত্যাকারীদের বিচার করার প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে আমরা আজকে এখানে ঘোষণা করছি।

এ কর্মসূচিতে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা, ঢাকা মহানগরসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। পৌনে দুই ঘণ্টা পর শাহবাগ মোড় থেকে সরে যান ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা।

এর আগে সাম্য হত্যার বিচার, উপাচার্য-প্রক্টরের পদত্যাগ ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে কালো পতাকা নিয়ে মিছিল করেছেন ঢাবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশ থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ভিসি চত্বর হয়ে কলা অনুষদের সামনে অপরাজেয় বাংলায় এসে শেষ হয়। 

শাহবাগ থানা ঘেরাও শিক্ষার্থীদের

শুক্রবার দুপুরে দেওয়া ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম শেষে মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে রোববার ফের শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন সাম্যের সহপাঠী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা।

দুপুরে তারা শাহবাগ থানার সামনে অবস্থান নেন। পরে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বিত একটি প্রতিনিধি দল মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে থানার ভেতরে যায়। এর আগে বেলা ১১টায় আন্দোলনকারীরা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সামনে জড়ো হন। তার পর মিছিল নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে কিছুক্ষণ অবস্থান করেন এবং পরে তারা শাহবাগ থানা ঘেরাও করেন।

নিহত সাম্যের বড় ভাই এস এম শরিফুল আলম বলেন, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের উদ্দেশ্যে আমার ভাইয়ের মৃত্যু নিয়ে বিচারের নামে যেন কোনো প্রহসন বা কালক্ষেপণ না করা হয়। তা ছাড়া কোনো নিরপরাধ ব্যক্তি যেন কোনোভাবেই ফেঁসে না যায়। প্রকৃত অপরাধীরা যেন সর্বোচ্চ শাস্তি পায়, সেই দাবি জানান তিনি।

রাজু ভাস্কর্যে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ বলেন, আমরা চাই বিষয়টি রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এই মর্মান্তিক ঘটনার বিচার নিশ্চিত করব। ন্যায়বিচারের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে এই হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বাইরের যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বহিরাগত নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আমাদের ১৭ জন নিরাপত্তাকর্মীর পাশাপাশি কিছু স্বেচ্ছাসেবকও যুক্ত হয়েছে। এখন আমাদের টিমে প্রায় ৩০-৩৫ জন কাজ করছেন। এ সময় প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমেদও উপস্থিত ছিলেন। 

সাম্য হত্যা মামলা ডিবিতে হস্তান্তর

সাম্য হত্যার দ্রুত সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিতের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাবি উপাচার্য। রোববার দুপুরে উপাচার্যের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মো. খোদা বকস চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. হোসনে আরা বেগম, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ, নিহত সাম্যের বন্ধু ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আশরাফুল আলম রাফি এবং আরেক বন্ধু এস এম নাহিয়ান ইসলাম।

এ বিষয়ে উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, সাম্য হত্যার সুষ্ঠু বিচার আমরা চাই। এই বিচার ত্বরান্বিত করার জন্য আমাদের ধারাবাহিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। সাম্য হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার দ্রুত শেষ করতে উপদেষ্টার সহায়তা চেয়েছি।
উপাচার্য আরও বলেন, এই হত্যা মামলা ডিবিতে হস্তান্তর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ ছাড়া অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তারে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।

সাদা দ‌লের আ‌লটি‌মেটাম

সাম্য হত্যাের বিচা‌রের দা‌বি‌তে ৪৮ ঘণ্টার আ‌লটি‌মেটাম দি‌য়ে‌ছে ঢাকা বিশ্ব‌বিদ্যাযলয়ের বিএনপিপন্থি শিক্ষকদে‌র সংগঠন সাদা দল। এই সম‌য়ের ম‌ধ্যে সাম্য৮ হত্যা র ‘প্রকৃত’ আসামিকে না বের কর‌তে পার‌লে তারা ক‌ঠোর আন্দোল‌নে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

বেলা সা‌ড়ে ১১টার দি‌কে বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদ‌দে‌শে আ‌য়োজিত এক মানববন্ধনে এ আলটিমেটাম দেন সংগঠনটির নেতারা। মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দ‌লের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান বলেন, সাম্য হত্যার পাঁচ দিন পূর্ণ হয়েছে। এই পাঁচ দিনে আমরা একটি ‘আইওয়াশ অ্যারেস্ট’ দেখেছি। সাম্য হত্যার প্রকৃত হত্যাকারীকে বের করার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছি। আমরা ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছি, এর মধ্যে যদি সাম্য হত্যার প্রকৃত খুনিকে খুঁজে বের করা না হয়, তাহলে আমরা আরও জোরালো আন্দোলনে যাবো।

মানববন্ধ‌নে আরও উপ‌স্থিত ছি‌লেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, সাদা দ‌লের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আবদুস সালাম, অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার প্রমুখ। 
এ ছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ এবং দিনাজপুরে প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে ছাত্রদল।


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যমুনা অভিমুখে পোশাকশ্রমিকদের মিছিল, পুলিশের বাধা
  • প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাও করার হুমকি