বৃষ্টির মধ্যে কাকরাইলে টিএনজেড পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ
Published: 20th, May 2025 GMT
মুষলধারে বৃষ্টি। এর মধ্যেই চলছে স্লোগান। আন্দোলনকারীদের ঘোষণা, যত ঝড়বৃষ্টিই হোক, বকেয়া বেতন–বোনাসের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরবেন না। কথাগুলো বলেন গাজীপুরের টিএনজেড গ্রুপের কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা। বকেয়া বেতনের দাবিতে আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কাকরাইল মোড়ে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন তাঁরা।
এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় শ্রম ভবনের সামনে থেকে শ্রমিকেরা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে রওনা হন। কাকরাইল মসজিদের সামনের মোড়ে এলে তাঁরা পুলিশের বাধার মুখে পড়েন। এরপর সেখানে বসে পড়েন আন্দোলনকারীরা। এতে কাকরাইল থেকে মগবাজার হয়ে মহাখালী যাওয়ার সড়কে যানজটের সৃষ্টি হয়।
কাকরাইলে অবস্থান নিয়ে বকেয়া বেতন–বোনাসের দাবিতে নানা স্লোগান দেন শ্রমিকেরা। দুই দফা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত তাঁদের স্লোগান দিতে দেখা যায়। ‘যাব না রে যাব না, বেতন ছাড়া যাব না’, ‘কেউ খাবে কেউ খাবে না, তা হবে না তা হবে না’, ‘বাঁচার মতো বাঁচতে দাও, নইলে গদি ছেড়ে দাও’ ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা।
আট বছর টিএনজেড গ্রুপের পোশাক কারখানায় কাজ করেন মিজানুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন মাসের বেতন ও বোনাস পাব। কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে মালিক। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে আছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘৯ দিন ধরে শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন করেছি। আজ বেতনের জন্য এখানে এসেছি। বেতন দেওয়া ছাড়া আমরা এখান থেকে যাব না।’
বৃষ্টিতে ভিজে জবুথবু অবস্থা। তবু সড়কে বসে স্লোগ্লানের সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন টিএনজেড গ্রুপের একটি পোশাক কারখানায় অপারেটর হিসেবে তিন বছর কাজ করা সবিতা রানী দাস। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিন মাস ধরে বেতন পাই না। ঠিকমতো বাড়ি ভাড়া না দিতে পারায় বাড়িওয়ালা বাসা ছেড়ে দিতে বলেছে।’ বেতন–বোনাস আদায় না করে ফিরবেন না বলে জানান তিনি।
টিএনজেড গ্রুপের পোশাক কারখানায় তিন বছর কাজ করেন লিপি আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বেতন–বোনাস না দিয়ে কোনোরকম ঘোষণা ছাড়াই কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাওনা বুঝে পাওয়া ছাড়া রাস্তা ছাড়বেন না। যত দিন লাগুক, ঝড়বৃষ্টি যত আসুক, সিদ্ধান্ত নিয়ে তারপর এখান থেকে ফিরবেন।
টিএনজেড গ্রুপের বকেয়া বেতন–বোনাসের দাবি আদায়ের শ্রমিক আন্দোলনের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার সহকারী একান্ত সচিব শাব্বীর আহমদের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁর কাছে বেতন–বোনাসের বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টাকে বিষয়টি জানাবেন।
আন্দোলন কখন শেষ হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা আমাদের বেতন–বোনাসের বিষয়ে সমাধান পাচ্ছি, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চলমান থাকবে।’
টিএনজেড গ্রুপের কাছে শ্রমিকদের পাওনা ৫৪ কোটি টাকা। গত ঈদুল ফিতরের আগে শ্রমিকদের আন্দোলনের মুখে ৩ কোটি টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও ২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা দেওয়া হয়। প্রতিজন শ্রমিক ৯ হাজার ১০০ টাকা করে পান। বাকি বেতন, ঈদবোনাস, নোটিশ পে, সার্ভিস বেনিফিটসহ যাবতীয় পাওনার দাবিতে ১১ মে থেকে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিক-কর্মচারীরা শ্রম ভবনের সামনে আন্দোলন করে আসছেন।
গত ৮ এপ্রিল আরএমজিবিষয়ক ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ পরিষদের (আরএমজি-টিসিসি) ২০তম সভায় টিএনজেড গ্রুপের চারটি কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।
আরও পড়ুনবকেয়া পাওনার দাবিতে শ্রম ভবনের সামনে টিএনজেড গ্রুপের শ্রমিকেরা১২ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট এনজ ড গ র প র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিএনপির চার নেতা বহিষ্কার
গাজীপুর মহানগর বিএনপির চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজিসহ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থি কর্মকাণ্ডের অভিযোগে রোববার সন্ধ্যায় চার নেতাকে বহিষ্কার করা হয়।
বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।
বহিষ্কৃত চার নেতা হলেন- গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাকিব উদ্দিন সরকার (পাপ্পু), গাজীপুর মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব আবদুল হালিম মোল্লা, গাজীপুর মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য জিয়াউল হাসান (স্বপন) ও টঙ্গী পূর্ব থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম (সাথী)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সুস্পষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ধরনের কার্যকলাপ দলীয় শৃঙ্খলা এবং দলের নীতি, আদর্শ ও সংহতি পরিপন্থি। সুতরাং এসব কর্মকাণ্ডের জন্য তাদের বিএনপির প্রাথমিক সদস্যসহ সব পর্যায়ের পদ থেকে নির্দেশক্রমে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃত সব নেতাকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পৃথক চিঠি দিয়ে বহিষ্কারের কথা জানিয়েছেন।