ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে টানা দুদিন ধরে দীর্ঘ যানজট
Published: 20th, May 2025 GMT
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৩৪ কিলোমিটার অংশে টানা দুই দিন ধরে থেমে থেমে দীর্ঘ যানজট চলছে। আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে হবিগঞ্জের মাধবপুর এলাকা পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকায় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ছয়টা পর্যন্ত থেমে থেমে এ যানজট চলছে। বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরে বড় বড় আকারের গর্ত এ যানজটের প্রধান কারণ।
সড়ক ও জনপথ, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ নৌবন্দর থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় হয়ে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৯১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫০ দশমিক ৫৮ কিলোমিটার মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ কাজ চলছে ধীরগতিতে। কাজটি করছে ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। ছয় বছর ধরে তারা ধীরগতিতে কাজটি করছিল।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের পর ভারতীয় ঋণে চলমান প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফকনস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তারা কাজ ফেলে দেশে ফিরে যান। তিন মাস পর তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে এসে আবার কাজ শুরু করেন। এর মধ্যে তাঁদের অনেক মালামাল খোয়া গেছে। ৫ আগস্টের পর কাজের গতি আরও কমে যায়।
আরও পড়ুনসরাইলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে দিনভর যানজট, ভোগান্তি চরমে১৯ মে ২০২৫সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর এলাকায় কোনো সংস্কারকাজ না করায় ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়। কয়েক দিনের বৃষ্টিতে এ গর্ত আরও বড় আকার ধারণ করে। বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বরের চারপাশে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহন মহাসড়কের গোলচত্বর এলাকায় এসে চলতে হচ্ছে ১ থেকে ৫ কিলোমিটার গতিতে। এসব গর্ত অতিক্রম করতে পণ্যবাহী যানবাহনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পরপর এসব গর্তে যানবাহন আটকে যাচ্ছে। গোলচত্বরের তিন–চতুর্থাংশ চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গোলচত্বর অতিক্রম করার জন্য যানবাহনকে থেমে যেতে হচ্ছে। চালকদের অধিক সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, রোববার দিবাগত রাত দুইটা থেকে বিশ্বরোড মোড় গোলচত্বর থেকে যানজট সৃষ্টি হয়। সোমবার সকাল ১০টার পর থেকে যানজট বাড়তে থাকে। সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে সরাইল উপজেলার বেড়তলা, বিশ্বরোড মোড় ও কুট্টাপাড়া মোড় হয়ে বাড়িউরা পর্যন্ত ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার এলাকা পর্যন্ত যানজট ছড়িয়ে পড়ে। সোমবার সন্ধ্যার পর জেলার আশুগঞ্জ গোলচত্বর থেকে হবিগঞ্জের মাধবপুর পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজটের বিস্তৃতি ঘটে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সময়ে দেখা গেছে, মহাসড়কের সরাইল বেড়তলা বাজার থেকে বাড়িউরা বাজার পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার এলাকায় যানজট স্থায়ী আকার ধারণ করে। বাকি অংশে থেমে থেমে যানজট চলতে থাকে। গত দুই দিনে কয়েকবার কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়ক ও সরাইল-নাসিরনগর-লাখাই আঞ্চলিক মহাসড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। শত শত নারী-পুরুষকে হেঁটে গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে। মঙ্গলবার দিনভর মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ব্যক্তিগত গাড়ি কম চলাচল করতে দেখা গেছে। জেলার অভ্যন্তরীণ এবং দূরপাল্লার যানবাহনের হাজারো নারী-পুরুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।
হবিগঞ্জ থেকে যশোরগামী পণ্যবাহী ট্রাকচালক মামুন মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমরা কারও কাছে জিম্মি হয়ে আছি। সামান্য একটু জায়গা ঠিক করে দিলে আমরা ভালো করে চলতে পারি, কিন্তু তা হচ্ছে না।’ ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রাকের চালক সেলিম মিয়া বলেন, ‘সব ঠিক আছে, শুধু এইখানে আসলেই আমাদের ঝামেলা হয়।’
মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে সরাইল থানার পুলিশ ও সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার পুলিশকে মাঠে থাকতে দেখা গেছে। এর আগে সোমবার দিনভর মাঠে ছিলেন সেনাবাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য।
সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
গর্ত ভরাটের উদ্যোগ
মঙ্গলবার শেষ বিকেলে গর্ত ভরাট করতে মাঠে নামেন সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএওন) মো. মোশারফ হোসাইন, সরাইল থানার ওসি মো. রফিকুল হাসান, সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. মামুন রহমান, ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের কর্মকর্তারা। বিকেল পাঁচটার দিকে তাঁরা গর্তে খোয়া মিশ্রিত বালু ফেলার কাজ শুরু করেন।
ইউএওন মো. মোশারফ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা জরুরিভাবে গর্ত ভরাটের জন্য ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে রাজি করিয়েছি। প্রতিদিন বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি থামলে অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ল ম ট র এল ক কর মকর ত র এল ক য় স মব র প রথম সড়ক র য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
ইলন মাস্ককে রাজনীতি বাদ দিয়ে ব্যবসায় মন দিতে বললেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী
নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেওয়ার একদিন পর ইলন মাস্ককে রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে বলেছেন মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট। তিনি বলেন, মাস্কের বরং নিজের কোম্পানিগুলো পরিচালনায় মনোযোগ দেওয়া উচিত।
টেসলা ও স্পেসএক্সের প্রধান ইলন মাস্ক গত শনিবার ঘোষণা দেন যে, তিনি ‘আমেরিকা পার্টি’ নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের করছাড় ও ব্যয় বিলের প্রতিক্রিয়ায় মাস্ক এ ঘোষণা দিয়েছেন। এই বিল যুক্তরাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দেবে বলে মনে করছেন তিনি।
রোববার সিএনএনের ‘স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন’ অনুষ্ঠানে স্কট বেসেন্ট বলেন, মাস্কের কোম্পানিগুলোর (টেসলা ও স্পেসএক্স) পরিচালনা পর্ষদ সম্ভবত চাইবে, তিনি যেন রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন।
বেসেন্ট আরও বলেন, ‘আমার ধারণা, পরিচালনা পর্ষদগুলো মাস্কের (রাজনৈতিক দল গঠনের) ওই ঘোষণা পছন্দ করেনি। রাজনীতি নয়, বরং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে মনোযোগ দিতে পর্ষদ মাস্ককে উৎসাহিত করবে।’
বেসেন্ট বলেন, মাস্কের নেতৃত্বে থাকা সরকারি দক্ষতা বিভাগ (ডিওজিই) ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তা পেলেও মাস্ক নিজে ততটা জনপ্রিয় নন।
বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান আজোরিয়া পার্টনার্স মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি টেসলার সঙ্গে নতুন একটি যৌথ তহবিল চালু করার পরিকল্পনা করেছিল। কিন্তু মাস্কের রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণার পর তারা এ উদ্যোগ স্থগিত করেছে। কারণ, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা টেসলার সিইও হিসেবে মাস্কের পূর্ণকালীন দায়িত্ব পালনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
আরও পড়ুনইলন মাস্ক কেন নতুন দল গঠন করছেন, কী করতে চান তিনি৬ ঘণ্টা আগেআজোরিয়ার সিইও জেমস ফিশব্যাক বলেছেন, মাস্কের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং কোম্পানির পরিচালনায় তার দায়িত্বের মধ্যে সামঞ্জস্য আছে কি না তা পরিচালনা পর্ষদকে দ্রুত যাচাই করতে হবে।
মাস্কের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, সেটাকে চ্যালেঞ্জ করতেই নতুন দল গঠন করেছেন তিনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘যখন অপচয় ও দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের দেশকে দেউলিয়া করার কথা আসে, তখন আমরা গণতন্ত্র নয়, বরং একদলীয় ব্যবস্থার মধ্যে বাস করছি। আপনাদের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আজ আমেরিকা পার্টি গঠন করা হলো।’
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করার ঘোষণা দিলেন ইলন মাস্ক ২১ ঘণ্টা আগেদল ঘোষণার এক দিন আগে শুক্রবার এক্সে একটি জরিপ চালিয়েছিলেন ইলন মাস্ক। দিনটি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস। ওই জরিপে মাস্ক অনুসারীদের কাছে জানতে চান, দুই দলের (কেউ কেউ বলবেন ইউনিপার্টি) ব্যবস্থা থেকে তাঁরা স্বাধীনতা চান কি না? দুই দল বলতে রিপাবলিকান পার্টি ও ডেমোক্রেটিক পার্টিকে বুঝিয়েছেন তিনি। প্রায় দুই শতাব্দী ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে আধিপত্য ধরে রেখেছে দল দুটি।
এখন যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিদলীয় এই ব্যবস্থার বিরোধিতা করলেও ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছিলেন মাস্ক। ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে বিপুল অর্থ দিয়েছিলেন তিনি। নির্বাচিত হওয়ার পর মাস্ককে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) দায়িত্ব দেন ট্রাম্প। পরে সেই দায়িত্ব থেকে সরে যান তিনি। এর পর থেকে ক্রমেই দুজনের সম্পর্ক তিক্ত হয়েছে।
আরও পড়ুন‘বিগ বিউটিফুল বিলে’ সই করলেন ট্রাম্প০৫ জুলাই ২০২৫