যান্ত্রিক পদ্ধতিতে বেড়েছে ধানের ফলন, খুশি কৃষক
Published: 20th, May 2025 GMT
কুমারখালীর বুজরুখ বাঁখই মাঠে স্থানীয় বাসিন্দা মোক্তার হোসেন প্রায় তিন বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেন। এবার যান্ত্রিক পদ্ধতিতে আবাদ করেছেন তিনি। তাঁর ভাষ্য, এভাবে চাষাবাদে চারা কম লেগেছে, পরিশ্রমও কম হয়েছে। ফলন আগের চেয়ে বেড়েছে। এখন থেকে যন্ত্র দিয়েই চাষাবাদ করবেন তিনি। তাঁর মতো অনেকে বুজরুখ বাঁখই মাঠে প্রথমবারের মতো আধুনিক ও যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধানের আবাদ করে লাভবান হয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় ১৫০ বিঘা জমিতে ১২৮ জন কৃষক সমলয় চাষাবাদ করেছেন। এ পদ্ধতিতে কম খরচে গতবারের তুলনায় বিঘাপ্রতি ফলন বেড়েছে ৮ থেকে ৯ মণ। কৃষক বাবুল হোসেন জানান, গত বছর সনাতন পদ্ধতিতে ব্রিধান-২৯ আবাদ করে বিঘাপ্রতি ১৮ থেকে ২০ মণ ফলন পেয়েছিলেন। এবার যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ব্রিধান-৯২ আবাদ করে একই জমিতে বিঘাপ্রতি ফলন হয়েছে ২৭ থেকে ২৯ মণ।
সম্প্রতি বুজরুখ বাঁখই মাঠে সরেজমিনে দেখা যায়, কম্বাইন হারভেস্টার যন্ত্রের সাহায্যে ধান কাটছেন কৃষক। সেখানে রয়েছেন কৃষক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.
যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণের কারণে জমির অপচয় হয়নি বলে জানান কৃষক মিঠুন। তিনি বলেন, গাছ ভালো হয়েছে, ফলনও ভালো। প্রচলিত চাষের চেয়ে যান্ত্রিক চাষ সহজ। কষ্ট ও খরচ কম। তাঁর ভাষ্য, গত বছর বীজ, চারা, জমি ভাড়া, পরিচর্যাসহ প্রতি বিঘায় খরচ হয়েছিল প্রায় ১৬ হাজার টাকা। ১৯ মণ ধান এবং দুই হাজার টাকার বিছালি পেয়েছিলেন। এবার হিসাব করে প্রতি বিঘায় খরচ পড়েছে প্রায় ১০ হাজার টাকা। আর ধান পেয়েছেন ২৯ মণ।
কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুফি মো. রফিকুজ্জামানের ভাষ্য, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চাষাবাদে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, সমলয়ে চাষাবাদে কম খরচে অধিক লাভ হয়। উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রণোদনা কর্মসূচি চালু রাখা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ন স গ রহ ব দ কর
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’
ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।
এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’
ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।
কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?
কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা