Samakal:
2025-11-02@06:46:37 GMT

শোলাকিয়া: সময় থাকতে সাধন হোক

Published: 20th, May 2025 GMT

শোলাকিয়া: সময় থাকতে সাধন হোক

দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ঈদের জমায়েতের ধারাবাহিকতায় মাঠটি এখন কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এর খ্যাতি ছড়িয়েছে অনেক আগেই। 
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব পাশের রেললাইন অতিক্রম করে অল্প দূরে অবস্থিত মাঠটিতে সবুজ গাছপালা আর ঘাসের গালিচায় মোড়ানো গ্রামীণ আবহ ও আমেজ ছড়িয়ে আছে। পাশের নরসুন্দা নদী অবশ্য বিলীয়মান।
বিশাল জমায়েতে লাখ লাখ মানুষের কাতারে শামিল হতে দেশের দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা আসেন। শহর বা শহরতলির পাড়া-মহল্লা থেকে মধ্যরাত বা শেষ রাতে মাঠে পৌঁছে নামাজের স্থান করে নেন। 

দুই.


কথায় আছে– মক্কার মানুষ হজ পায় না। ইংরেজিতে বলা হয়– ‘নেয়ারেস্ট টু দ্য চার্চ, ফার্দেস্ট টু দ্য গড’। বাড়ির কাছে তীর্থ থাকলে সবারই আলস্য। শোলাকিয়া ঈদগাহও এর ব্যতিক্রম নয়। কিশোরগঞ্জের স্থানীয় মুসল্লি অনেকেই শহীদ-ই-মসজিদসহ অন্যান্য মসজিদে নামাজ আদায় করে থাকেন। এটা স্রেফ আলস্য, আয়েশি ভাব আর বৈরী  আবহাওয়ার ঝুঁকি এড়ানো। তারা শহরের সুবিধামতো স্থানে ঈদের জামাতে শরিক হন। অথচ এ ধরনের ঈদগাহের ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়টি শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে না; প্রয়োজন দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে জেলাবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। 

তিন.
শোলাকিয়ার মাঠের ভেতরে বিক্ষিপ্ত বেশ কিছু নতুন-পুরোনো বৃক্ষ রয়েছে। এগুলো মূলত ছায়াদানকারী বৃক্ষ। নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের উদ্দেশে লাগানো। দূর থেকে অনেকটা কলকাতার গড়ের মাঠের মতো দেখতে। এক সময় কলকাতার গড়ের মাঠেও ঈদের নামাজ পড়ানো হতো। ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ও কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ গড়ের মাঠে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ঈদের জামাতে একাধিকবার ইমামতি করেছেন বলে জনশ্রুতি আছে। বর্তমানে এই মাঠ ঘিরে কলকাতার নাগরিক জীবনের আধুনিক শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন, ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গ বিকশিত হয়ে চলেছে। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্মারক হিসেবে মাঠটি টিকে আছে।   

চার.
কিশোরগঞ্জের মানুষ হিসেবে আমারও শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। শৈশব-কৈশোরে সম্ভব হয়নি বাড়ি থেকে ট্রেনযাত্রায় সমঝদার সঙ্গীর অভাবে। মনে পড়ে, বর্ষাকালে ভাটি অঞ্চলের শত শত মানুষ নৌকায় এসে আমাদের রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে শোলাকিয়ায় যেত। নৌকাগুলো আমাদের বাড়ির সামনের গাছের সঙ্গে বেঁধে মাঝিসহ সবাই শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে অংশ নিত। নামাজ শেষে শহর দর্শন করে তারা সন্ধ্যার ট্রেনে ফিরে আসত। বড় হয়ে দীর্ঘ সময় ঢাকায় পড়াশোনা এবং তারপর বিভিন্ন জেলায় সরকারি চাকরির ব্যস্ততা, সুবিধামতো সময় হাতে না পাওয়া, সিদ্ধান্তহীনতা– নানা কারণে শোলাকিয়ায় আর নামাজ আদায় হয়ে ওঠেনি। অথচ কিশোরগঞ্জ শহরে অবস্থিত গুরুদয়াল সরকারি কলেজে পড়াশোনা, শহরেই অসংখ্য আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, শ্বশুরালয় রয়েছে। হয়তো শহরেই ঈদ করেছি। শহীদ-ই-মসজিদে নামাজ আদায় করেছি। অথচ সবান্ধব মাঠটি দেখতে গিয়ে এর সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটেছি বহুবার।

পাঁচ. 
আমাদের শোলাকিয়ার ঈদগাহ নিয়ে কেবল স্থানীয় নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও চিন্তাভাবনা হোক। এর উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও মুসল্লিবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে জেলাবাসী এগিয়ে আসুক। প্রয়োজনে সরকারি নির্দেশনা নিয়ে তা করা যায় কিনা, তা এখনই  বিবেচনায় আনা যায়। সময় থাকতেই সাধন হোক।

হোসেন আবদুল মান্নান: 
গল্পকার; সাবেক সচিব

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ র জ ম ত ক শ রগঞ জ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ক্যারিবীয় জাহাজে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের হামলা, নিহত ৩

ক্যারিবীয় সাগরে একটি জাহাজে আবারো হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী। এতে জাহাজটিতে থাকা অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ। 

রবিবার (২ নভেম্বর) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।

আরো পড়ুন:

নাইজেরিয়ায় হামলার হুমকি ট্রাম্পের

কানাডার সঙ্গে আলোচনায় না বসার ঘোষণা ট্রাম্পের

শনিবার গভীর রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে হেগসেথ বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে এই অভিযান পরিচালিত হয়েছে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই জাহাজটিকে অবৈধ মাদক চোরাচালানে জড়িত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছিল।”

তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক জলসীমায় পরিচালিত এই হামলার সময় জাহাজটিতে ‘তিনজন পুরুষ মাদক-সন্ত্রাসী’ ছিলেন। তিনজনই নিহত হয়েছেন।” 

শনিবারের এই হামলার আগে গত বুধবার ক্যারিবীয় সাগরে আরো একটি জাহাজে মার্কিন বাহিনীর হামলায় চারজন নিহত হন। গত সোমবার মার্কিন হামলায় নিহত হন ১৪ জন।

মাদক পাচারের অভিযোগ তুলে সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই অঞ্চলে সামরিক অভিযান শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অভিযানে এখন পর্যন্ত ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার নাগরিকসহ ৬২ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। এছাড়া ১৪টি নৌযান এবং একটি সাবমেরিন ধ্বংস হয়েছে।

তবে নৌযানগুলো মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ যুক্তরাষ্ট্র এখনও দেয়নি।  ফলে হামলার বৈধতা নিয়ে ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। কিছু আইনজীবী যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছেন। কলম্বিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো প্রতিবেশী দেশগুলো এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে।

ভেনেজুয়েলা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র দেশটির বিরুদ্ধে ‘অঘোষিত যুদ্ধ’ শুরু করেছে। ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, দেশটি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে লড়াই করবে।

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে সাতটি যুদ্ধজাহাজ, একটি সাবমেরিন, ড্রোন এবং যুদ্ধবিমান মোতায়েন করেছে এবং মেক্সিকো উপসাগরে মোতায়েন করেছে আরেকটি যুদ্ধজাহাজ।

ট্রাম্প প্রশাসন মাদক চোরাচালানকারী নৌযানের ওপর তাদের হামলাকে ‘আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। 

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের নৌযান সাধারণত আটক করা হয় ও ক্রুদের গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুরো নৌকা ধ্বংস করা হচ্ছে। জাতিসংঘ-নিযুক্ত মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা এই অভিযানগুলোকে ‘বিচারবহির্ভূত মৃত্যুদণ্ড’ হিসাবে বর্ণনা করেছেন।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ