Samakal:
2025-07-07@00:33:10 GMT

শোলাকিয়া: সময় থাকতে সাধন হোক

Published: 20th, May 2025 GMT

শোলাকিয়া: সময় থাকতে সাধন হোক

দুই শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ঈদের জমায়েতের ধারাবাহিকতায় মাঠটি এখন কিংবদন্তিতে পরিণত হয়েছে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে এর খ্যাতি ছড়িয়েছে অনেক আগেই। 
কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব পাশের রেললাইন অতিক্রম করে অল্প দূরে অবস্থিত মাঠটিতে সবুজ গাছপালা আর ঘাসের গালিচায় মোড়ানো গ্রামীণ আবহ ও আমেজ ছড়িয়ে আছে। পাশের নরসুন্দা নদী অবশ্য বিলীয়মান।
বিশাল জমায়েতে লাখ লাখ মানুষের কাতারে শামিল হতে দেশের দূরদূরান্ত থেকে মুসল্লিরা আসেন। শহর বা শহরতলির পাড়া-মহল্লা থেকে মধ্যরাত বা শেষ রাতে মাঠে পৌঁছে নামাজের স্থান করে নেন। 

দুই.


কথায় আছে– মক্কার মানুষ হজ পায় না। ইংরেজিতে বলা হয়– ‘নেয়ারেস্ট টু দ্য চার্চ, ফার্দেস্ট টু দ্য গড’। বাড়ির কাছে তীর্থ থাকলে সবারই আলস্য। শোলাকিয়া ঈদগাহও এর ব্যতিক্রম নয়। কিশোরগঞ্জের স্থানীয় মুসল্লি অনেকেই শহীদ-ই-মসজিদসহ অন্যান্য মসজিদে নামাজ আদায় করে থাকেন। এটা স্রেফ আলস্য, আয়েশি ভাব আর বৈরী  আবহাওয়ার ঝুঁকি এড়ানো। তারা শহরের সুবিধামতো স্থানে ঈদের জামাতে শরিক হন। অথচ এ ধরনের ঈদগাহের ঐতিহ্য রক্ষার বিষয়টি শুধু সরকারের ওপর নির্ভর করে না; প্রয়োজন দল-মতের ঊর্ধ্বে উঠে জেলাবাসীর ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস। 

তিন.
শোলাকিয়ার মাঠের ভেতরে বিক্ষিপ্ত বেশ কিছু নতুন-পুরোনো বৃক্ষ রয়েছে। এগুলো মূলত ছায়াদানকারী বৃক্ষ। নামাজ আদায়কারী মুসল্লিদের উদ্দেশে লাগানো। দূর থেকে অনেকটা কলকাতার গড়ের মাঠের মতো দেখতে। এক সময় কলকাতার গড়ের মাঠেও ঈদের নামাজ পড়ানো হতো। ভারতের প্রথম শিক্ষামন্ত্রী ও কংগ্রেসের প্রভাবশালী নেতা মওলানা আবুল কালাম আজাদ গড়ের মাঠে লাখো মানুষের অংশগ্রহণে ঈদের জামাতে একাধিকবার ইমামতি করেছেন বলে জনশ্রুতি আছে। বর্তমানে এই মাঠ ঘিরে কলকাতার নাগরিক জীবনের আধুনিক শিল্প-সংস্কৃতি, খেলাধুলা, চিত্তবিনোদন, ইতিহাস-ঐতিহ্যের নানা অনুষঙ্গ বিকশিত হয়ে চলেছে। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের স্মারক হিসেবে মাঠটি টিকে আছে।   

চার.
কিশোরগঞ্জের মানুষ হিসেবে আমারও শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। শৈশব-কৈশোরে সম্ভব হয়নি বাড়ি থেকে ট্রেনযাত্রায় সমঝদার সঙ্গীর অভাবে। মনে পড়ে, বর্ষাকালে ভাটি অঞ্চলের শত শত মানুষ নৌকায় এসে আমাদের রেলস্টেশন থেকে ট্রেনে শোলাকিয়ায় যেত। নৌকাগুলো আমাদের বাড়ির সামনের গাছের সঙ্গে বেঁধে মাঝিসহ সবাই শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে অংশ নিত। নামাজ শেষে শহর দর্শন করে তারা সন্ধ্যার ট্রেনে ফিরে আসত। বড় হয়ে দীর্ঘ সময় ঢাকায় পড়াশোনা এবং তারপর বিভিন্ন জেলায় সরকারি চাকরির ব্যস্ততা, সুবিধামতো সময় হাতে না পাওয়া, সিদ্ধান্তহীনতা– নানা কারণে শোলাকিয়ায় আর নামাজ আদায় হয়ে ওঠেনি। অথচ কিশোরগঞ্জ শহরে অবস্থিত গুরুদয়াল সরকারি কলেজে পড়াশোনা, শহরেই অসংখ্য আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, শ্বশুরালয় রয়েছে। হয়তো শহরেই ঈদ করেছি। শহীদ-ই-মসজিদে নামাজ আদায় করেছি। অথচ সবান্ধব মাঠটি দেখতে গিয়ে এর সবুজ ঘাসের ওপর দিয়ে হেঁটেছি বহুবার।

পাঁচ. 
আমাদের শোলাকিয়ার ঈদগাহ নিয়ে কেবল স্থানীয় নয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও চিন্তাভাবনা হোক। এর উন্নয়ন, আধুনিকায়ন ও মুসল্লিবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে জেলাবাসী এগিয়ে আসুক। প্রয়োজনে সরকারি নির্দেশনা নিয়ে তা করা যায় কিনা, তা এখনই  বিবেচনায় আনা যায়। সময় থাকতেই সাধন হোক।

হোসেন আবদুল মান্নান: 
গল্পকার; সাবেক সচিব

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঈদ র জ ম ত ক শ রগঞ জ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দরে নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে অবাঞ্ছিতের ঘোষণায় শোকজ, পরে ক্ষমা প্রার্থনা

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে চট্টগ্রাম বন্দরে অবাঞ্ছিত করার ঘোষণা দেওয়ার পর ক্ষমা চেয়েছেন সাবেক সিবিএ নেতা হুমায়ুন কবীর। 

নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ হয়ে গত ২৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দর অকশন শেড সংলগ্ন শ্রমিক দলের কার্যালয়ে এক কর্মীসভায় ওই সাবেক সিবিএ নেতা উপদেষ্টাকে নিয়ে এমন অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেন। তবে পরে এমন বক্তব্য ভুলবশত, অনিচ্ছাকৃত এবং অজ্ঞতাবশত বলে উল্লেখ করেন তিনি। এমন অসৌজন্যমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করে উপদেষ্টার কাছে এক কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন হুমায়ুন কবীর। 

ওই সাবেক সিবিএ নেতার এমন বক্তব্যের কারণ জানতে চেয়ে গত ১ জুলাই  কারণ দর্শানো নোটিশ ইস্যু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে তাকে এর উত্তর জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে নোটিশের জবাবে হুমায়ুন কবীর ক্ষমা প্রার্থনা করেন।

মো. হুমায়ুন কবীর চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পরিদর্শন বিভাগের সুপারিন্টেনডেন্ট অডিট হিসেবে কর্মরত। তিনি চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের (সাবেক সিবিএ) প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। এনসিটি বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। সর্বশেষ এক কর্মসূচিতে উপদেষ্টাকে নিয়ে বক্তব্যের মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ