দেশজুড়ে বৈরী আবহাওয়া, চার জেলায় বন্যার শঙ্কা
Published: 21st, May 2025 GMT
থেমে থেমে ভারী বৃষ্টি এবং সীমান্ত নদীতে পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের বিভিন্ন এলাকায় বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে নদনদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এমন পরিস্থিতিতে শেরপুর, নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বন্যার শঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। এ মাসের শেষ দিকে একটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।
জ্যৈষ্ঠের শুরুতে দু-তিন দিন ধরে ঢাকায় দফায় দফায় বৃষ্টি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানেও কমবেশি বৃষ্টিপাত হচ্ছে। তবে আজ বুধবার থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে গতকাল দিনভর বৃষ্টিতে বোরো ধান, আম ও লিচুর ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়াবিদ শাহানাজ সুলতানা বলেন, বুধবার থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসবে; রোদের দেখা মিলবে। এর পর ২৭ বা ২৮ মে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।
গতকাল দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ হয়েছে সিলেটে, ১৯২ মিলিমিটার। সিলেট ছাড়াও অতি ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে রংপুর ও কুড়িগ্রামের রাজারহাটে; এর মধ্যে রংপুরে ১৪৬ মিলিমিটার, রাজারহাটে ১২২ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে। এ ছাড়া মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ৬৪ মিলিমিটার এবং ঢাকায় ২৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত নথিবদ্ধ করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বেসরকারি আবহাওয়াবিষয়ক ওয়েবসাইট আবহাওয়া ডটকমের প্রধান আবহাওয়াবিদ মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শেরপুর, নেত্রকোনা, সিলেট ও সুনামগঞ্জের বিভিন্ন নদীতে পাহাড়ি ঢল শুরুর আশঙ্কা রয়েছে। আগামী ২৭ মে লঘুচাপ, ২৮ মে নিম্নচাপ ও গভীর নিম্নচাপ এবং ২৯ মে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা করা যাচ্ছে।
গতকাল ভারতের মেঘালয় ও আসামে টানা ভারী বর্ষণের কারণে সিলেটের সীমান্তবর্তী নদীগুলোতে ঢল নেমেছে। বিশেষ করে সীমান্তের গোয়াইনঘাট উপজেলার পিয়াইন ও ডাউকি নদীতে পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পিয়াইনের পানি উপচে প্রবেশ করছে লোকালয়ে। সুরমা নদীর কানাইঘাট সীমান্ত এলাকার অবস্থাও একই।
আবহাওয়া অফিসের তথ্য বলছে, গতকাল সকাল ৬ থেকে ৯টা পর্যন্ত সিলেট অঞ্চলে ১০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। ৯ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬৮ ও ১২ থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৪ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
গোয়াইনঘাট ইউএনও রতন কুমার অধিকারী জানান, নিম্নাঞ্চলের মানুষের আগেই সতর্ক করা হচ্ছে। জানমাল রক্ষায় বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
দু’দিনের প্রবল বর্ষণ এবং উজানের পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের বিভিন্ন নদনদীর পানি বাড়ছে। পাহাড়ি নদী চেল্লাখালীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। মহারশির নদীর দিঘিরপাড় বাঁধের কিছু অংশ ভেঙে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পাউবোর আশঙ্কা, বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার সব পাহাড়ি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।
কুড়িগ্রামেও গত তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণ এবং উজানের ঢলে তিস্তা, জিঞ্জিরাম, দুধকুমার ও ব্রহ্মপুত্র নদে পানি বেড়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তার চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বাদাম, পাট, বোরো ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ফসলি জমি ডুবে গেছে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাপারের পাঁচগাছি, গাবেরতল, দলদলিয়া, থেতরাই, বেগমগঞ্জ, মোল্লারহাট, সরিষাবাড়ী ও বিদ্যানন্দ এলাকায়।
ভারী বর্ষণে রংপুর নগরীর শ্যামাসুন্দরী খাল উপচে আশপাশের বাড়িঘরে পানি প্রবেশ করেছে। গত সোমবার রাতভর বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় নগরীর অন্তত ২০টি মহল্লা এক থেকে দেড় ফুট পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, জেলা সদর, গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলায় ৮৪ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষেত জলমগ্ন হয়েছে।
দুই ঘণ্টার ভারী বৃষ্টিতে গতকাল ময়মনসিংহ শহরের বেশির ভাগ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। জেলা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল সকালে ময়মনসিংহে ৩৬ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
সমকালের কলকাতা প্রতিনিধি জানান, ফেব্রুয়ারি মাসের পর আবার মাত্র চার মাসের ব্যবধানে ভেঙে গেল আত্রেয়ী নদীর বাঁধ। মঙ্গলবার সকালে পানিতে তোড়ে ভেঙে যায় আত্রাই ড্যামের ভারতীয় অংশ। উত্তরের আত্রেয়ী নদী বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করে আবার বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়েছে।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যুরো ও প্রতিনিধি)
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বন য প ল ব ত হয় ত হয় ছ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান
সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।
ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।
আরো পড়ুন:
আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য
আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান
এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।
যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।
লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।
বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।
ঢাকা/আমিনুল