দেশের জেলা–উপজেলা সদর হাসপাতালগুলো সঠিক ব্যবস্থাপনায় স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারলে বিভাগীয় ও বড় শহরের হাসপাতালগুলোর ওপর চাপ অনায়াশেই কমে আসে। এ জন্য সদর হাসপাতালগুলোর শয্যাসংকট ঘোচানো জরুরি। অনেকগুলো হাসপাতালে সে কাজটি করা গেলেও সামগ্রিক চিত্র কোনোভাবেই সন্তোষজনক বলা যাবে না। এর মধ্যে যদি কোনো হাসপাতালের ভবনের নির্মাণকাজ ফেলে রেখে ঠিকাদার পালিয়ে যান, তা আরও বেশি হতাশাজনক। লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ক্ষেত্রে সেটিই ঘটেছে।
একটি প্রকল্পের শুরুতে সম্ভাব্যতা যাচাই, সময় ও ব্যয় নির্ধারণ, বরাদ্দ অনুমোদন, ঠিকাদার নির্বাচন—সবকিছুই একটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ঘটলেও আমরা দেখতে পাই নানা কারণে ঠিকই সময় ও ব্যয় বেড়ে যায়। যৌক্তিক কারণ ছাড়াও এখানে এমন কলাকৌশল খাটানো হয় যে সময় ও ব্যয়বৃদ্ধি ছাড়া যেন প্রকল্পটি শেষ করাই সম্ভব নয়। আর ঠিকাদারসহ নানাজনের পকেট ভারী করতে সেটিই যেন করতে হবে। দেশের প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন করুণ বাস্তবতা কোনোভাবে অগ্রাহ্য করার সুযোগ নেই।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুসারে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ২০১৮ সালের জুন মাসে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালকে ১০০ থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার জন্য ৯ তলা ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। কিন্তু বারবার কাজের মেয়াদ ও খরচ বাড়ানোর কারণে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে এখন স্থবিরতা নেমে এসেছে। সর্বশেষ এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান রুপালি জি এম সন্স কনসোর্টিয়াম এই ভবন নির্মাণকাজের দায়িত্ব পায়। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকাদার ইস্কান্দার মির্জা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাগনে। গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে তিনি আত্মগোপনে। এ কারণে ভবনের শেষ সময়ের কাজ ঝুলে গেছে। ভবনটি পুরোপুরি কার্যকর হলে সদর হাসপাতালের শয্যাসংকট অনেকটাই নিরসন হতো। কিন্তু আজও ভবনের রং, রেলিং, দরজা, পানির সংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো অসম্পূর্ণ। নতুন ভবনটি এখনো বুঝে না পাওয়ায় শত শত রোগী প্রতিদিন হাসপাতালের মেঝেতে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
ঠিকাদারকে বারবার চিঠি পাঠানো হলেও তাঁর কোনো সাড়া নেই। অন্যদিকে লোকজন ভবন চালুর জন্য মানববন্ধন করেছেন হাসপাতালের সামনে। এখন উপায় কী? গণপূর্ত বিভাগ ও স্বাস্থ্য বিভাগকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে ঠিকাদারকে কীভাবে ফিরিয়ে এনে কাজটি পুরোপুরি শেষ করা যায়। সেটা না হলে নতুন ঠিকাদারের মাধ্যমে বাকি কাজটা শেষ করা প্রয়োজন। আমরা মনে করি, শুধু ঠিকাদার নয়, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী, তদারক কমিটি এবং দায়িত্বপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদেরও এখানে দায় আছে। সংকট নিরসনের তাঁদেরকে সক্রিয় হতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প
এছাড়াও পড়ুন:
করাচিতে পাঁচতলা ভবন ধসে নিহত ১৪
পাকিস্তানের বন্দরনগরী করাচির লিয়ারি এলাকার বাগদাদি মহল্লায় একটি পুরোনো পাঁচতলা আবাসিক ভবন ধসে পড়েছে। এতে এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন আটকা পড়ে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শনিবার (৫ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে জিও নিউজ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, করাচির লিয়ারি এলাকায় স্থানীয় সময় গতকাল শুক্রবার বিকেলের দিকে দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আরো পড়ুন:
রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির এক যুগ: বিচার-পুনর্বাসন আর কবে?
বরগুনায় সেতুর সংযোগ সড়কে ধস, ঝুঁকি নিয়ে চলাচল
পাকিস্তানের দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করেছেন তারা এবং এ পর্যন্ত ভবনটির ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৪ জনের মরদেহ তারা উদ্ধার করতে পেরেছেন। ধ্বংসস্তূপের তলায় এখনও কমপক্ষে ২৫ থেকে ৩০ জন চাপা পড়ে থাকায় সামনে মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
ঘটনাস্থল এবং উদ্ধার তৎপরতা পরিদর্শন করতে গিয়েছিলেন করাচি’র মেয়র মুর্তাজা ওয়াহাব। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ধসে পড়া ভবনটি ১৯৭৪ সালে নির্মাণ করা হয়েছিল এবং কয়েক বছর আগে ভবনটিকে ‘বিপজ্জনক’ বলে ঘোষণা করেছিল নগর প্রশাসন কর্তৃপক্ষ।
দুর্যোগ মোকাবিলা দপ্তরের কর্মীরা তাদের ক্লান্তি নিয়েই ঘণ্টার পর ঘণ্ট ধরে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। উদ্ধার পরিষেবার নেতৃত্বদানকারী আবিদ জানিয়েছেন, উদ্ধারকাজ সম্পন্ন হতে আরো আট থেকে ১২ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
দক্ষিণ করাচির জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা আরিফ আজিজ জানিয়েছেন, ভবনটিতে ১০০ জনেরও বেশি মানুষ বসবাস করছিলেন।
লায়ারিতে ভবন ধসের ঘটনায় ইতোমধ্যে শোক জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি, প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ, পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির স্পিকার আয়াজ সাদিক। প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ সিন্ধ প্রাদেশিক সরকারকে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
ভবন ধসের ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সিন্ধ প্রাদেশিক সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রী সাঈদ গনি। আগামী ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ