মৎস্য ভবন মোড় অবরোধ, কাকরাইল মোড়ে ইশরাকের হাজারো সমর্থক
Published: 21st, May 2025 GMT
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে বসানোর বিষয়ে তাঁর সমর্থকদের দেওয়া আল্টিমেটামে সাড়া দেয়নি সরকার। এ জন্য নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করার পাশাপাশি মৎস্য ভবন মোড় অবরোধ করেছেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা।
এদিকে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ইশরাক হোসেনের হাজারো সমর্থক কাকরাইল মোড়ে যমুনার প্রবেশপথের কাছাকাছি অবস্থান নেন। এর অন্তত ২০ মিনিট আগে যমুনার দিকে যাওয়ার পথ আটকে দেয় পুলিশ।
আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন ইশরাক হোসেনের পক্ষে চলমান বিক্ষোভ কর্মসূচির সমন্বয়কারী সাবেক সচিব মশিউর রহমান।
মঙ্গলবার বিকেলে ৬ষ্ঠ দিনের অবস্থান কর্মসূচি থেকে মশিউর রহমান বলেন, আমরা বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত অপেক্ষা করব। এর মধ্যে ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত না আসলে আবারও সকাল ১০টায় একত্রিত হয়ে আরও কঠোর কর্মসূচি করব। একই সঙ্গে ঢাকা অচলেরও হুমকি দেন তিনি।
এ সময় এই আন্দোলন এবং দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেন ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বস্তরের কর্মচারী ইউনিয়ন। তারা দাবি মেনে নেওয়া না হলে নাগরিক সেবা বন্ধের হুঁশিয়ারি দেন।
বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আল্টিমেটামে সাড়া না দিলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। এরই অংশ হিসেবে মৎস্য ভবন মোড় অবরোধ করা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল ১০টার কিছু সময় পর মৎস্য ভবন এলাকায় জড়ো হতে থাকেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। ঢাকাবাসীর ব্যানারে তারা এই কর্মসূচি পালন করছেন। সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষোভকারীরা মৎস্য ভবন মোড়ে অবস্থান নিলে এই পথ হয়ে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ১১টার দিকে এই প্রতিবেদন লেখার সময় দেখা গেছে, মৎস্য ভবন মোড় অবরোধ করার কারণে আশপাশের এলাকায় ইতিমধ্যে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রধান কার্যালয় নগর ভবনের সামনেও ইশরাকের পক্ষে বিক্ষোভ হচ্ছে। সেখানকার কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা।
করপোরেশনের কয়েকজন কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজও নগর ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলছে। এ জন্য নাগরিক সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। কর্মকর্তারা অঘোষিত ছুটিতে আছেন। নগর ভবনে স্থানীয় সরকার বিভাগেরও কার্যালয় রয়েছে। সেখানে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়াও অফিস করতেন। গত ১৪ মে ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ শুরুর পর স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যালয়ও বন্ধ রয়েছে। ওই দিন থেকে সেখানে আর যাননি উপদেষ্টা আসিফ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মৎস য ভবন ম ড় অবর ধ ইশর ক হ স ন র নগর ভবন অবস থ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’
ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।
এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’
ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।
কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?
কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা