যুক্তরাষ্ট্রের সুরক্ষায় ‘গোল্ডেন ডোম’ নির্মাণের ঘোষণা ট্রাম্পের
Published: 21st, May 2025 GMT
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দেশটির আকাশ প্রতিরক্ষা নিশ্চিতে নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা প্রকাশ করেছেন। নতুন এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার নাম দেওয়া হয়েছে ‘গোল্ডেন ডোম’।
অত্যাধুনিক এই প্রতিরক্ষা প্রকল্পের প্রাথমিক খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ বিলিয়ন ডলার, আর মোট সম্ভাব্য ব্যয় হতে পারে প্রায় ১৭৫ বিলিয়ন ডলার।
বুধবার (২১ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আরো পড়ুন:
পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হয়নি: বিক্রম মিশ্রি
ভারতের বিভিন্ন ভ্রমণ সংস্থার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা
প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (২০ মে) হোয়াইট হাউজে দেওয়া বক্তব্যে ট্রাম্প বলেন, “নির্বাচনী প্রচারে আমি আমেরিকান জনগণকে একটি সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। আজ আমি আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, আমরা ‘গোল্ডেন ডোম’ নামের এই সিস্টেমের নকশা নির্ধারণ করে ফেলেছি।”
ট্রাম্পের ভাষ্য অনুযায়ী, একবার পুরোপুরি নির্মাণ শেষ হলে ‘গোল্ডেন ডোম’ বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে, এমনকি মহাকাশ থেকেও ছোড়া ক্ষেপণাস্ত্র আটকাতে পারবে।
তিনি বলেন, “এটি আমাদের দেশের সাফল্য ও এমনকি অস্তিত্বের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
কত দিনের মধ্যে নতুন এই আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নির্মাণ হবে তাও জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। ট্রাম্প বলেন, “আমার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই গোল্ডেন ডোম কার্যকর হওয়া উচিত।”
ট্রাম্প আরো জানান, মার্কিন মহাকাশ বাহিনীর জেনারেল মাইকেল গুয়েটলিন প্রকল্পটির তত্ত্বাবধান করবেন। জেনারেল গুয়েটলিন বর্তমানে স্পেস ফোর্সে মহাকাশ অভিযানের ভাইস চিফ।
চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি দ্বিতীয় মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার সাত দিন পরেই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রতিরক্ষা বিভাগকে এমন একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যা পরবর্তী প্রজন্মের ব্যালেস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রসহ বিমান হুমকি মোকাবিলায় সক্ষম হবে।
মঙ্গলবার হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে ট্রাম্প বলেন, “নতুন ‘গোল্ডেন ডোম’ প্রতিরক্ষা সিস্টেম মহাকাশ-ভিত্তিক সেন্সর ও ইন্টারসেপ্টর সহ স্থল, সমুদ্র এবং মহাকাশ জুড়ে ‘পরবর্তী প্রজন্মের’ প্রযুক্তি স্থাপন করবে।”
ট্রাম্প আরো বলেন, “এই সিস্টেম বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে নিক্ষেপ করা বা মহাকাশ থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকেও প্রতিহত করতে সক্ষম।”
ট্রাম্প জানান, কানাডাও এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ হতে আগ্রহ দেখিয়েছে, কারণ ‘তাদেরও নিরাপত্তা দরকার।’
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন আকাশ প্রতিরক্ষা সিস্টেমটি আংশিকভাবে ইসরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ থেকে অনুপ্রাণিত, যা দেশটি ২০১১ সাল থেকে রকেট এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধ করতে ব্যবহার করে আসছে।
তবে, গোল্ডেন ডোমটি অনেক গুণ বড় হবে এবং বিস্তৃত পরিসরের হুমকি মোকাবিলা করার জন্য নির্মাণ করা হবে, যার মধ্যে রয়েছে শব্দের গতির চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে সক্ষম হাইপারসনিক অস্ত্র এবং ভগ্নাংশীয় অরবিটাল বোমাবর্ষণ ব্যবস্থা - যাকে ফোবও বলা হয় - যা মহাকাশ থেকে ওয়ারহেড সরবরাহ করতে পারে।
ট্রাম্প বলেন, “এগুলো সবই আকাশ থেকে নিক্ষেপ করা হবে। সাফল্যের হার ১০০% এর খুব কাছাকাছি।”
ট্রাম্প জানান, এই প্রকল্পের জন্য প্রাথমিকভাবে ২৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে, যার মোট ব্যয় সময়ের সাথে সাথে ১৭৫ বিলিয়ন ডলার হবে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেশনাল বাজেট অফিস (সিবিও) ধারণা করছে, ২০ বছরের এই প্রকল্পে কেবল মহাকাশভিত্তিক অংশগুলোতেই সরকার শেষ পর্যন্ত ৫৪২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে পারে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন যে, বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সিস্টেমগুলো রাশিয়া এবং চীনের নতুন প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলায় পর্যাপ্ত নয়।
ট্রাম্প মঙ্গলবার ওভাল অফিসে বলেন, “আসলে বর্তমানে আমাদের কোনো প্রতিরক্ষা সিস্টেম নেই। আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও নির্দিষ্ট ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষার কিছু ক্ষেত্র রয়েছে, কিন্তু কোনো সিস্টেম নেই.
মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়, চীন এবং রাশিয়া সক্রিয়ভাবে মার্কিন প্রতিরক্ষায় ‘ফাঁক কাজে লাগানোর জন্য’ ক্ষেপণাস্ত্র আধুনিক করছে।
ঢাকা/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ট র ম প বল ন প রকল প ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কাজাকিস্তানের যাযাবর জাতির করুণ ইতিহাস
বিংশ শতাব্দীর আগে পৃথিবীর মানচিত্রে কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, তাজিকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান নামের এই পাঁচটি দেশ ছিলো না। মূলত ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর এই রাষ্ট্রগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা লাভ করে। পরে চীনের সহায়তায় ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলগুলো বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসেবে পুনরুত্থান হয়েছে। এখন প্রশ্ন করা যেতে পারে, চীন কেন আবারও এই অঞ্চলগুলোকে শক্তিশালী করে তুলছে?
ঐতিহাসিকভাবে মধ্য এশিয়া অঞ্চল সিল্করোডের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিলো। যা চীনকে মধ্যপ্রাচ্য এবং রোমান সভ্যতার সাথে যুক্ত করেছিলো। বীজ গণিতের জনক আল খারিজমি, আবু সিনার মতো বিজ্ঞানীদের জন্ম হয়েছে এখানে। যাদের লেখা বই ইউরোপে শত শত বছর ধরে চিকিৎসা ও নিরাময়ের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। চেঙ্গিস খানও এই অঞ্চলে তার সম্রাজ্যের নিদর্শন রেখে গেছেন। পাশাপাশি ঘোড়ার পিঠে আদিম যাযাবর জীবনের ঐতিহ্যও টিকে আছে এখানে।
আরো পড়ুন:
রাশিয়ার বিরুদ্ধে এবার রোমানিয়ার আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাশিয়ায় ৭.১ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা
রাজনৈতিক প্রভাব ও সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলো রুশরা। উপনিবেশিক শাসন এমনভাবে চালু করেছিলো, যা অনেকটা ব্রিটিশ বা ফরাসি সম্রাজ্যের মতো দেখতে।
রাজ্যগুলোকে শিল্পায়ন ও আধুনিকায়নের ফলে বিশাল পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। এমনকি যাযাবর জাতিকে যুদ্ধ যেতে বাধ্য করা হয়েছিলো। আর যাযাবর জাতিকে বসতি স্থাপনে বাধ্য করা হয়েছিলো। এরপর ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়। ফলে কাজাখ জনগোষ্ঠীর চল্লিশ শতাংশ অর্থাৎ ২৫ শতাংশ মানুষ অনাহারে মারা যায়। এবং যাযাবর জনগোষ্ঠীর যে অর্থনীতি, তা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়। কারণ সোভিয়েত আমলে কাজাখ যাযাবররা যে পশুপালন করতো তার নব্বই শতাংশই মারা যায়। ফলে বাধ্য হয়ে কাজাখদের যাযাবর জীবনযাত্রা ছেড়ে দিতে হয়। বলতে গেলে সোভিয়েত আমলে কাজাখ সভ্যতা ও সংস্কৃতির বেদনাদায়ক পুনর্গঠনের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়।
১৯৯১ সালে সোভিয়েন ইউনিয়নের পতন হয়, সৃষ্টি হয় এই পাঁচটি স্বাধীন দেশের। এই দেশগুলো স্বাধীন হয়েছে ঠিকই কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন পরবর্তী বিশ্বে খাপ খাইয়ে নিতে তাদের ব্যাপক সংগ্রাম করতে হয়। তবে বিগত কয়েক দশক ধরে মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতিগুলো নিজস্ব সীমানার মধ্যে এক অনন্য পরিচয় গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। যদিও তাদের ওপর বাইরের প্রভাবও রয়েছে। তুরস্ক এই অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি আরও বেশি জানান দিচ্ছে। সাংস্কৃতিক, ঐতিহাসিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত মিল আছে। এমনকি শিক্ষাগত কাঠামোতেও মিল রয়েছে। তুরস্ক মধ্য এশিয়ায় রাশিয়ার পণ্য রফতানির একটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবেও বিবেচিত।
জিনজিয়াং প্রদেশে প্রায় এক কোটি উইঘুর বাস করেন। যাদের বেশিরভাগই মুসলিম। এদের নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া উইঘুর পরিচয় মুছে ফেলতে তাদের পুনঃশিক্ষা শিবিরে আটকে রাখার অভিযোগও আছে। যদিও চীন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর চীন মধ্য এশিয়ায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন করছে। এই অঞ্চলটিকে বাণিজ্যিক কেন্দ্রে পরিণত করতে চাইছে, যা অনেকটা সিল্করুটের মতোই।
চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ উদ্যোগের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় প্রাচীন সিল্ক রোড পুনরুজ্জীবিত করার একটি সম্ভবনা দেখা দিয়েছে। এই রোড পুনরুজ্জীবিত হলে রাশিয়া আর চীনের প্রভাব বলয়ে থাকা এই অঞ্চলের ভূ রাজনৈতিক গুরুত্ব কতটা বাড়বে-সেটাও সময় বলে দেবে।
ঢাকা/লিপি