এবারের গ্রীষ্মকালে টোকিওতে পানির বিল মওকুফ, এসি কেনার পরামর্শ
Published: 21st, May 2025 GMT
জাপানের রাজধানী টোকিও এবারের গ্রীষ্মে প্রচন্ড গরমের প্রভাব কমানোর লক্ষ্যে বাসিন্দাদের পানির বিল মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক্ষেত্রে ভর্তুকির জন্য প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ইয়েন (২৫০ মিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ করা হয়েছে , যা চার মাস ধরে কার্যকর থাকবে।
স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে বুধবার (২১ মে) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
আরো পড়ুন:
কথা ছাড়াই স্ত্রীর সঙ্গে ২০ বছর কাটিয়ে দিলেন যে ব্যক্তি
টেকসই ও কার্যকর হলে মানবিক করিডরের উদ্যোগ ভালো: জাপানের রাষ্ট্রদূত
টোকিওর জনস্বাস্থ্য ব্যুরো জানিয়েছে, গত গ্রীষ্মে টোকিওতে হিটস্ট্রোকে রেকর্ড ২৬৩ জন মারা গেছেন। অনেক ভুক্তভোগীর এয়ার কন্ডিশনিং ছিল না অথবা উচ্চ খরচের কারণে এটি ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।
টোকিওর গভর্নর ইউরিকো কোইকে বলেছেন, “আমরা উদ্বিগ্ন যে, মানুষ তাদের এয়ার কন্ডিশনার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে পারে কারণ তারা জীবনযাত্রার ব্যয় নিয়ে চিন্তিত। তাদের বিল পরিশোধে সহায়তা করার জন্য আমরা কী করতে পারি তা বিবেচনা করছি।”
তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করতে চাই, যেখানে এই গ্রীষ্মে আমরা যে প্রচণ্ড গরমের মুখোমুখি হব বলে ধারণা করা হচ্ছে, তাতেও টোকিওর সকল বাসিন্দা শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন।”
পানির বিল মওকুফের মাধ্যম, জাপান সরকার রাজধানীর বাসিন্দাদের এয়ার কন্ডিশনারের মতো অন্যান্য শীতল পদ্ধতি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করার লক্ষ্য নিয়েছে।
জাপান টাইমসের মতে, গত গ্রীষ্মে হিটস্ট্রোকে ৬০ শতাংশের বেশি মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে ঘরের ভেতরে, ক্ষতিগ্রস্তরা এয়ার কন্ডিশনিং চালু করেননি।
টোকিওতে গড়ে প্রতি মাসে পানির প্রাথমিক বিল ৮৬০ ইয়েন (৬ ডলার) থেকে ১,৪৬০ ইয়েন (১০ ডলার) পর্যন্ত হয়, যা পরিবারের পানি খরচের ওপর নির্ভর করে। নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে অতিরিক্তি পানি ব্যবহারে মূল বিলের সঙ্গে আলাদা ফি যুক্ত হয়।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, টোকিওতে ৭০ লাখেরও বেশি পরিবার এবং ১৪ লাখেরও বেশি জনসংখ্যা রয়েছে।
জাপান গত বছরের গ্রীষ্মে দেশটির ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপদাহ রেকর্ড করেছে।
গত বছরের জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে, টোকিওতে প্রায় ৮ হাজার মানুষ হিটস্ট্রোকের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। দেশটিতে এটিও একটি রেকর্ড।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’
ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।
এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’
ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।
কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?
কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা