দুধ–চা পানের চিরাচরিত অভ্যাসে অনেকেরই ফাটল ধরেছে। স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে মানুষ এখন রং– চা পানে ঝুঁকছে। নানা উপকরণ মিশিয়ে বিক্রেতারা রং–চায়ে নতুন স্বাদ তৈরি করছেন। রং–চায়ে চিনির ব্যবহারও কমছে। আবার ব্ল্যাক টির পরিবর্তে গ্রিন টি ও নানা ভেষজ চা জায়গা করে নিচ্ছে মানুষের পানের অভ্যাসে। সব মিলিয়ে দুধ–চিনি ছাড়া তৈরি চা পানের প্রবণতা বাড়ছে। তাতে চা–পাতার চাহিদাও আগের তুলনায় কমছে। চা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে।

চা বিপণনে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, বছর দুয়েক ধরে চায়ের চাহিদা কমছে। চায়ের চাহিদা কমার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তাঁরা দেখতে পান, মূলত রং চা পানে ঝোঁক বাড়ায় চাহিদা কমার বড় কারণ। কারণ, প্রতি কাপ দুধ–চা তৈরিতে চার থেকে পাঁচ গ্রাম চা দরকার হলেও রং চা তৈরিতে এক থেকে দুই গ্রাম চা–পাতার দরকার হয়। 

ব্যবসায়ীদের এই যুক্তির প্রমাণ পাওয়া যায় চা বেচাকেনার তথ্যে। তিনটি নিলামকেন্দ্রের মধ্যে মোট চায়ের ৯৭ শতাংশ বিক্রি হয় চট্টগ্রামের নিলামকেন্দ্রে। চট্টগ্রামের নিলামে সদ্য শেষ হওয়া মৌসুমে চা বিক্রি হয়েছে সাড়ে ৮ কোটি কেজি। এর আগে ২০২৩–২৪ মৌসুমে বিক্রি হয়েছিল ৯ কোটি ৪২ লাখ কেজি। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে বেচাকেনা কমেছে ৯১ লাখ কেজি, বা প্রায় ১০ শতাংশ। 

চা ব্যবসায়ীরা জানান, নিলামে চা বেচাকেনা কমার অর্থ হলো চায়ের চাহিদা কম। বাজারে চাহিদা কম থাকলে স্বাভাবিকভাবেই নিলামে অংশ নেওয়া ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চা কেনার আগ্রহ কমবে। গত মৌসুমে ৯ কোটি ৩০ লাখ কেজি চায়ের উৎপাদন হয়েছিল। তবে সব চা নিলামে বিক্রি হয়নি। অবিক্রীত চা নতুন মৌসুমে নিলামে তোলা হবে। 

অভ্যাস পরিবর্তনের কারণ কী

এক দশক আগেও চা পানে অভ্যস্ত ছিলেন ডায়াবেটিসের রোগীরা। শুরুতে চিনি ছাড়া দুধ–চা পানে অভ্যস্ততা থাকলেও ধীরে ধীরে স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে রং–চা পানে ঝুঁকতে থাকেন ডায়াবেটিসের রোগীরা। এ রোগের প্রকোপ বাড়ায় রং–চা পানেও ঝোঁক বাড়ছে। 

ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে ১ কোটি ৩০ লাখ ডায়াবেটিসের রোগী রয়েছেন। যেভাবে ডায়াবেটিসের রোগী বাড়ছে, তাতে ২০৪৫ সালে এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি ২০ লাখের মতো। ২০০১ সালে এ রোগের প্রকোপ ছিল ৫ শতাংশ। বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ।

আবার দুধ–চায়ের চেয়ে রং–চা পানের উপকারিতা নিয়ে গণমাধ্যমে নানা লেখায় স্বাস্থ্যসচেতনতার বিষয়টি তুলে ধরা হচ্ছে। এমন প্রচারণা মানুষকে স্বাস্থ্যসম্মত রং–চা পানে উদ্বুদ্ধ করছে। চা বেচাকেনার ছোট ছোট স্টলের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। যেমন চট্টগ্রাম শহরে পাঁচটি টি–স্টলের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এখনো দুধ–চিনিমিশ্রিত চা বিক্রি হয় বেশি। তবে রং–চা পানের হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে। রং চা যারা পান করে, তাদের বড় অংশই চিনি ছাড়াই তা পান করে।  

রং–চায়ের পাশাপাশি গ্রিন টি ও নানা ভেষজ চা পানেও আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। নিলামে গ্রিন টি বেচাকেনা হয় কম। এরপরও সদ্য শেষ হওয়া নিলাম মৌসুমে আগের তুলনায় গ্রিন টি বিক্রি বেড়েছে। এ সময়ে গ্রিন টি বিক্রি হয়েছে ১৪ হাজার ৬৩৭ কেজি, যা ২০২৩–২৪ মৌসুমের তুলনায় ৪৮ শতাংশ বেশি। 

বৈচিত্র্যময় চা বেচাকেনায় শীর্ষে রয়েছে কাজী অ্যান্ড কাজী টি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক এস এম এম ইব্রাহিম মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, মানুষ এখন আগের তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যসচেতন। স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে তারা স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের সঙ্গে আপস করে না। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষের জন্য কাজী অ্যান্ড কাজী টি নানা বৈচিত্র্যময় চা বাজারজাত করে আসছে। 

বাগানমালিক ও চা কোম্পানিগুলো কীভাবে দেখছে

পরিবর্তনের কারণে ধারাবাহিকভাবে চাহিদা কমলে সরবরাহ বেড়ে নিলামে চায়ের দাম কমে যাওয়ার শঙ্কাও আছে; যদিও নিলামে মূল্য বেঁধে দেওয়ার কারণে গত মৌসুমে কেজিপ্রতি চায়ের গড় দাম বেড়েছে। 

জানতে চাইলে চা–বাগানের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশীয় চা সংসদের সভাপতি কামরান টি রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চায়ের চাহিদা ধারাবাহিকভাবে কমবে কি না, তা এখনো বলা যাবে না। তবে নিলামে দাম বাড়লেও বাগানগুলো লোকসান করছে। উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে চা বিক্রি হচ্ছে। 

চা পানে এই পরিবর্তনের আরেকটি দিক রয়েছে। যেমন পরিবর্তনের কারণে চাহিদা কমলে উদ্বৃত্ত চায়ের পরিমাণ বাড়বে। এই চা রপ্তানি বাজারে নেওয়া যাবে। রং–চায়ের পাশাপাশি গ্রিন টি ও নানা ভেষজ চায়ের ব্যবহার বাড়ায় এ ধরনের চা বেচাকেনার প্রবণতা বাড়বে। 

চা ব্যবসায়ীদের সংগঠন টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টিটিএবি) চেয়ারম্যান শাহ মঈনুদ্দিন হাসান প্রথম আলোকেবলেন, ‘চায়ের চাহিদা কমার কারণ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আমরা দেখেছি, রং–চা পানের হার বাড়ায় চা–পাতার ব্যবহার কমছে। আবার গ্রিন টির চাহিদাও বাড়ছে। ক্রেতাদের স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে চায়ের বাজারে বড় এই পরিবর্তন হচ্ছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য়

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ