কক্সবাজার মেডিকেল কলেজে ৫০০ শয্যার হাসপাতালের অনুমোদন, এলাকাবাসীর উচ্ছ্বাস
Published: 21st, May 2025 GMT
কক্সবাজার সরকারি মেডিকেল কলেজে একটি ৫০০ শয্যার হাসপাতালের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি। কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর গতকাল মঙ্গলবার হাসপাতালটির চূড়ান্ত অনুমোদন হয়। এতে কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি খুশি কক্সবাজারের বাসিন্দারা।
৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের দাবিতে পাঁচ থেকে সাত বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন বিভিন্ন নাগরিক সংগঠন ও কলেজটির শিক্ষার্থীরা। সর্বশেষ গত ১৩ মার্চ দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কলেজের শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি শেষে একই দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপিও পাঠানো হয়।
ইন্টার্ন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন কক্সবাজারের সভাপতি মো.
২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ। কলেজটির অধ্যক্ষ সোহেল বক্স প্রথম আলোকে বলেন, ‘জেলার মানুষ খুবই উচ্ছ্বসিত। আমরা দ্রুত হাসপাতালটির নির্মাণকাজ শুরু করতে চাই।’
কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, ক্যাম্পাসে ৫০০ শয্যার হাসপাতালটি নির্মিত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, প্রশিক্ষিত নার্স ও অন্যান্য পদের সৃষ্টি হবে। হাসপাতালকে কেন্দ্র করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আবাসন–সুবিধাও বাড়বে। মানুষও স্বল্প খরচে মানসম্মত চিকিৎসার সুযোগ পাবেন।
কক্সবাজার-৩ (সদর, রামু ও ঈদগাঁও) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী–বিষয়ক সম্পাদক লুৎফর রহমান বলেন, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত জাতীয় কমিটির সভায় হাসপাতালের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়ার খবরে জেলার সর্বস্তরের মানুষ উচ্ছ্বসিত। কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা হলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি কয়েক লাখ রোহিঙ্গা ও পর্যটকেরাও স্বাস্থ্যসেবা পাবেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ড ক ল কল জ কল জ র শ ক ষ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
উদীচীর ফাটলে সিপিবি ভাঙনের রেখা?
দেশের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও সর্ববৃহৎ সাংস্কৃতিক সংগঠন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর ভাঙন সম্ভবত আর ঠেকানো যাচ্ছে না। অগ্নিযুগের বিপ্লবী ও সাহিত্যিক-সংগঠক সত্যেন সেনের গড়া এবং সাংবাদিক-সাহিত্যিক রণেশ দাশগুপ্ত ও শহীদুল্লা কায়সারের স্মৃতিবাহী এ সংগঠনের ২৩তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে। সেখানে নেতৃত্ব নির্বাচন নিয়ে বিরোধ হাতাহাতিতেও গড়ায়। দু’পক্ষই নিজের মতো সম্মেলনের সমাপ্তি ঘোষণা এবং কমিটি গঠন করে সংগঠনের নামে কার্যক্রম চালিয়ে যায়। দেশ-বিদেশের শুভানুধ্যায়ীরা এতে হতাশ হন। এক পর্যায়ে তাদের চাপে দু’পক্ষই ঐক্যবদ্ধ অভিন্ন কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি দেয়; কিন্তু দু’পক্ষের কাদা ছোড়াছুড়ি চলতে থাকে। এ প্রেক্ষাপটেই মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে একপক্ষ ঘোষণা দিয়েছে, তারা সংগঠনের ‘অসমাপ্ত’ সম্মেলনটি সমাপ্ত করতে চলেছে আগামী ২০ জুন। অপরপক্ষ এ ঘোষণাকে সংগঠনের গঠনতন্ত্রবিরোধী আখ্যা দিয়ে বলেছে, সংবাদ সম্মেলনকারীদের ব্যাপারে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সামাজিক মাধ্যমেও দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে হুঙ্কার বিনিময় শুরু হয়ে গেছে।
প্রসঙ্গত, উদীচীর একপক্ষ মনে করে, অপরপক্ষ ক্ষমতাচ্যুত সরকারের সমর্থক এবং গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে তাদের কোনো ভূমিকা ছিল না। ওই পক্ষের পাল্টা অভিযোগ, তাদের বিরোধীরা বিএনপি-জামায়াতের এজেন্ট এবং বিদেশি সাহায্যপুষ্ট হয়ে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে নেমেছিল। মুক্তিযুদ্ধ ও বাঙালি সংস্কৃতির প্রশ্নে আপসহীন সংগঠনটির দু’পক্ষের বিরোধের শিকড় যে বেশ গভীরে প্রোথিত, তা নিশ্চয় বোঝা যায়।
রাজনীতি সচেতনরা জানেন, এ দেশে কোনো রাজনৈতিক দলের ভাঙন প্রক্রিয়া শুরু হয় সাধারণত অঙ্গ বা গণসংগঠনের মধ্য দিয়ে। উদীচী ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধসহ এ দেশের প্রতিটি যুগান্তকারী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) অন্যতম গণসংগঠন। তাই উদীচীর সম্ভাব্য ভাঙন মূল দলের অনুরূপ সংকটেরই প্রকাশ বলে অনেকে মনে করেন।
২০২১ সালে সিপিবিরই আরেক গুরুত্বপূর্ণ গণসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন দু’ভাগ হয়েছিল। তখনও উদীচীর মতো ভয়ংকর সব ভাষা ব্যবহার করে ছাত্র ইউনিয়নের একপক্ষ আরেক পক্ষকে আক্রমণ করেছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের সামনের সারির সংগঠকদের নিয়ে ওই বছর প্রতিষ্ঠিত ছাত্র ইউনিয়নের দুর্ভাগ্যজনক বিভাজন এখনও ঘোচেনি। বরং সম্প্রতি একপক্ষের আলাদা সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে আরও পোক্ত হয়েছে। বলে রাখা দরকার, উদীচী ও ছাত্র ইউনিয়নের দু’পক্ষই যে সমশক্তিধারী, তা নয়। যে পক্ষকে আওয়ামী লীগের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে অন্যপক্ষ বহুদিন ধরে অভিযোগ করে আসছে, তারা উভয় সংগঠনেই সংখ্যাগুরু বলে মনে হচ্ছে। কৌতূহলোদ্দীপক হলো, উদীচী ও ছাত্র ইউনিয়নের সংখ্যাগুরু অংশের পৃষ্ঠপোষকরাই সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটিতে সংখ্যাগুরু। অর্থাৎ সিপিবির সংখ্যালঘু অংশ ওই দুই সংগঠনেও সংখ্যালঘু। উপরন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নেতৃত্বাধীন দলের সংখ্যাগুরু অংশকেও দলের সংখ্যালঘু অংশ ওই দুই গণসংগঠনের বিদ্রোহী অংশেরই ভাষায় আওয়ামী লীগের বি টিম বলতে কসুর করে না। আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের মূল্যায়ন নিয়ে দু’পক্ষের মত প্রায় পরস্পরবিরোধী।
গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সমকালে প্রকাশিত আমার নিবন্ধে উদীচীরই সম্ভাব্য ভাঙন ঘিরে আলোচনা করতে গিয়ে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলেছি। সেখানে ৩ অক্টোবর প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদনকে ভিত্তি করে বলেছিলাম, গত ১০ আগস্ট সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনকে ‘চরম প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর ক্যু’ হিসেবে দেখালে অন্য অংশ আপত্তি জানায়। সেই সভাটি ওই অবস্থায়ই শেষ হয়। এর পর বহুবার দেশের প্রধান বাম দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠক করেছে। কিন্তু ওই বিভাজন ঘোচেনি। দু’পক্ষই বরং দলের কংগ্রেস এগিয়ে এনে সেখানেই বিষয়টির ফয়সালা করতে একমত হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সিপিবির কংগ্রেস ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি বা কাছাকাছি সময়ে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও তা অনুষ্ঠিত হবে আগামী জুলাই মাসে।
নিবন্ধটি প্রকাশ হওয়ার পর সিপিবির বহু নেতাকর্মীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাদের মতো দলটির অনেক সাবেক নেতাও তখন বলেছিলেন, উদীচীর বিভক্তি অন্তত কংগ্রেস পর্যন্ত চলবে। তারা বলেছিলেন, ইতোমধ্যে যদি উদীচী ঐক্যবদ্ধ কমিটি করে তাহলে বুঝতে হবে, দলের দুই অংশের বিরোধ কমে এসেছে। আর তা না হলে যতই বেদনাদায়ক হোক, আগামী কংগ্রেসে সিপিবির অভ্যন্তরীণ সংকট চূড়ান্ত পরিণতি পাবে।
প্রতিটা দলেরই গড়ে ওঠার প্রক্রিয়ায় এক প্রকার ব্যক্তিত্ব গড়ে ওঠে। সিপিবি এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। দলটির ওই নেতাকর্মীর মতে, ওই ব্যক্তিত্বের সুরক্ষা প্রশ্নে আগামী কংগ্রেসেও দলের বর্তমান সংখ্যাগুরুরাই জয় পেতে পারেন। তখন দলের ভাঙন অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে। এ কারণেই দলের বিভিন্ন গণসংগঠনে নেতৃত্ব দখলের প্রতিযোগিতা এমনকি অসুস্থ হয়ে উঠছে।
তবে সিপিবির ভাঙন হবে চরম হতাশাজনক। বাম শিবির তো বটেই, দেশের উদারমনা ও অসাম্প্রদায়িক চিন্তার মানুষেরও অসহায়ত্ব তখন বেড়ে যাবে। সিকি শতাব্দীরও বেশি সক্রিয় বাম রাজনীতি করার সুবাদে, সিপিবি ঘরানার কোনো সংগঠন না করলেও তাদের সঙ্গে আমি খুব ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেছি। সমাজের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে দলটির আদর্শ বা তৎপরতার ছাপ পড়েনি। ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর নতুন বাস্তবতার সঙ্গে তাল মেলাতে দলটি নতুন যাত্রা শুরু করলেও কার্যত শতবর্ষেরও আগে জন্ম নেওয়া সিপিবি দীর্ঘ সময় এ দেশের রাজনীতির গতিপথ নির্ধারণ করেছে।
মুক্তিযুদ্ধের ভিত্তি বাঙালি জাতীয়তাবাদের আবেগ-অনুভূতি দ্বি-জাতিতত্ত্বের ঘোর লাগা বাঙালি মুসলমানদের মননে প্রবেশ করাতে সিপিবি ও তার বিভিন্ন গণসংগঠনের ভূমিকা ছিল অতুলনীয়। এ দেশে লাখ লাখ মানুষ আছেন যারা ভোট অন্যত্র দিলেও মননে বামপন্থি-সততা, দেশপ্রেম, বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ও সমাজ গঠন প্রশ্নে আন্তরিক।
আমার বিশ্বাস, বর্তমানে বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের আবেগধারী ও অসাম্প্রদায়িক শিবিরে যে এক প্রকার নেতৃত্বশূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে; সঠিক রাজনীতি ও কর্মকৌশলের মাধ্যমে সিপিবি ওই জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশকে ধারণ করতে পারে। সর্বোপরি যখন গোটা বাম শিবিরের ন্যূনতম কর্মসূচির ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নামার কথা, তখন সিপিবিকে দুর্বল করা হলে ইতিহাসও বিভেদকারীদের ক্ষমা করবে না।
বিস্ময় লাগে, যে সিপিবি দলের মধ্যে ভিন্নমত সামাল দেওয়া এবং নেতৃত্ব পরিবর্তনের এখন পর্যন্ত টেকসই গণতান্ত্রিক পথ দেখিয়েছে, সেই সিপিবি ভিন্নমতকে ভাঙনের দিকে যেতে দেয় কীভাবে? দলটির নেতৃত্বের পাশাপাশি কর্মী-সমর্থকদেরও কাছে আবেদন, এখনও সময় আছে, একটু আত্মানুসন্ধান করুন। আবার প্রমাণ করুন– বিভেদ নয়, ঐক্যেই মুক্তি।
সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল