‘মব সন্ত্রাসের’ মতো ঘটনা এখন আর নতুন কিছু নয়। অনেক মাস ধরেই এ ধরনের অপরাধ দেখা যাচ্ছে। ক্ষমতাহীন মানুষ, নারী থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ—বিভিন্ন গোষ্ঠী এসব সহিংসতার শিকার হচ্ছে। এটি উদ্বেগজনক। আমরা একটি ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছি। নানা ধরনের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রতিকূলতার মধ্যে আছি। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা দাবি করার অধিকার রয়েছে।

বর্তমান প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্ষমতা আগের চেয়ে কিছুটা সীমিত হতে পারে, কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে একটি স্পষ্ট অবস্থান নেওয়া জরুরি যে তারা কোনোভাবেই ‘মব সন্ত্রাসকে’ সমর্থন করে না। আমরা এটি শুনতে চাই, সরকার মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে এসব অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা স্পষ্টভাবে জনসমক্ষে উপস্থাপন করা উচিত। ন্যূনতম জবাবদিহির ব্যবস্থা না থাকলে বিচারবহির্ভূত আচরণের সংস্কৃতি আরও বাড়ার আশঙ্কা আছে। একই সঙ্গে আজ অবধি যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেসব বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে, সে বিষয়েও পরিষ্কারভাবে বলা উচিত।

গণ-অভ্যুত্থানের প্রায় ১০ মাস হতে চললেও হয়রানিমূলক গ্রেপ্তার-মামলার খবর গণমাধ্যমে প্রায়ই দেখছি। এগুলো উদ্বেগজনক। অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়ার ক্ষেত্রে আমরা দেখলাম, তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে আবার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই জামিন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই অল্প সময়ে একবার তাঁকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলো। এ ধরনের ঘটনায় যদি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে মনে হবে কোনো ক্ষেত্রে টনক নড়ে আর কোনো ক্ষেত্রে হয়রানি চলতেই থাকে। এতে বোঝা যায় না, সবার জন্য একই মানদণ্ড প্রযোজ্য হচ্ছে কি না।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু যেভাবে হয়রানিমূলক মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনা ঘটছে, তাতে আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে যে বিচারব্যবস্থা আসলে কী নিয়ে ব্যস্ত? বিচারপ্রক্রিয়ায় ভুক্তভোগীদের মতামত ও অংশগ্রহণ করা যেমন জরুরি, তেমনি রাজনৈতিক ব্যক্তিদের বিচারপ্রক্রিয়ায় হস্তক্ষেপ বন্ধ করাও সমানভাবে প্রয়োজন।

আমরা ক্রান্তিকালীন অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এটি আমলে নিয়ে এই সংকটময় সময়ে সরকারের উচিত জনসাধারণকে স্পষ্টভাবে জানানো, বর্তমানে কী হচ্ছে, কেন হচ্ছে এবং সামনে কী হবে। কিন্তু সরকারের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগে স্বচ্ছতায় ঘাটতি আছে বলেই মনে হচ্ছে। মানুষের মধ্যে যে আশঙ্কা-সংশয়, সেগুলোকে সরাসরি স্বীকার করে জনগণকে জানানো দরকার। অভিযোগ ও উদ্বেগ জানানোর জন্য একটি নির্ভরযোগ্য কাঠামোও থাকা জরুরি।

লেখক: সারা হোসেন, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ধরন র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ