বাংলাদেশে জিওটেক্সটাইলের ব্যাপক প্রয়োগ হচ্ছে। যেমন মাটির ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ, উপকূলীয় ক্ষয় রোধ, রাস্তা নির্মাণ, নদী ও খাল খনন, পাহাড় ধসে পড়া রোধ, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন, মিঠামইনের হাওরে রাস্তা তৈরি, সেন্টমার্টিনের মতো কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি বাড়ানো ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা। তবে কুয়াকাটা ও কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে এটি ব্যর্থও হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অ্যাপ্লিকেশন অব জিওটেক্সটাইল ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়। রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) ভবনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে। আইইবির কাউন্সিল হলে সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইইবির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। টেক্সটাইল বিভাগের সেক্রেটারি প্রকৌশলী মো.

মোস্তাফা-ই জামান সেলিমের পরিচালনায় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল হক।

সেমিনারে বলা হয়, বিভিন্ন ভূ-প্রযুক্তিগত প্রকৌশল প্রয়োগে জিওটেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের সিভিল নির্মাণ প্রকল্পে মাটি ফিল্টার, স্থিতিশীল, শক্তিশালীকরণ, পৃথকীকরণ, নিষ্কাশন এবং বিচ্ছিন্নকরণের জন্য। তাছাড়া জিওটেক্সটাইল প্রাকৃতিক সমষ্টিগত নির্মাণ উপকরণ প্রতিস্থাপন বা হ্রাস করতে পারে, যা অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত উভয় সুবিধা প্রদান করে। সেজন্য আমাদের জিওটেক্সটাইল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করতে হবে যার মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের জিওটেক্সটাইল উৎপাদন। পাটভিত্তিক জিওটেক্সটাইল নিয়ে পড়ালেখা ও গবেষণা করতে হবে। 

এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পাটের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদনকারী দেশ। যা শতভাগ জৈব অবচনযোগ্য। অনেক ক্ষেত্রে জিওটেক্সটাইল অল্প সময়ের জন্য প্রয়োজন। রপ্তানির বিশাল সুযোগ রয়েছে। আমরা নারিকেলের ছোবড়াও প্রধান উৎপাদক দেশ। গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত প্রাকৃতিক তন্তুর মধ্যে নারিকেলের ছোবরা দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে। দৃঢ়ভাবে মনে করি যে, জিও-ব্যাগের পিছলে যাওয়া রোধ করতে ছোবড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল হক কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, কৃত্রিম ভূমি এবং দ্বীপ তৈরির জন্য জিওটেক্সটাইল নিয়ে কাজ শুরু করার জন্য আমরা সরকারি সহায়তা চাই। আমরা টেকনাফের মাঝামাঝি বা সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি কিছু জমি তৈরি করার চেষ্টা করব। প্রবালের জীবনকে ব্যাহত না করে সেন্টমার্টিনের এলাকা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। যদি কোনও কৌশলগত সমস্যা থাকে তবে আমরা টেকনাফ এলাকায় কাজ করব। ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পে আরও অনেক জায়গা ফোকাস করার আছে। কিছু সিন্থেটিক ফাইবার ক্ষয় নিয়ন্ত্রণে জিওটেক্সটাইল হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, স্থানীয়ভাবে সেই ফাইবারগুলো তৈরির চেষ্টা করা যেতে পারে। 

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশলী শেখ আল আমিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, (এইচআরডি) আইইবি, অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. সাব্বির মোস্তফা খান, সম্মানী সাধারণ সম্পাদক, আইইবি।  আরও বক্তব্য দেন পিডব্লিউডির প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার, আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ আল আমিন, আইইবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী সাব্বির মোস্তফা খান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. সায়েদুর রহমান, প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, প্রকৌশলী নিয়াজ উদ্দিন ভূইয়া, প্রকৌশলী এটিএম.তানভির-উল হাসান (তমাল), প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুব আলম, প্রকৌশলী মো. নূর আমিন, প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদ ওসমানী, প্রকৌশলী মুহাম্মদ আহসানুল রাসেল, প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন তালুকদার, প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান, প্রকৌশলী মুহাম্মদ কামরুল হাসান খান সাইফুল, প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবু হোসেন হিটলু, প্রকৌশলী মো. ফারুকুল ইসলাম জনি, অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. জুলহাস উদ্দিন, প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন মিয়া, অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী এসএম মোমিনুল আলম (ডালিম), প্রকৌশলী এসএম ফারহানা ইকবাল, প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, প্রকৌশলী কাজী মো. ইলিয়াস, প্রকৌশলী সুমায়েল মো. মল্লিক, প্রকৌশলী মঈদুল ইসলাম, প্রকৌশলী মানিক দাস প্রমুখ। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ আইইব র ম হব ব র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

সেমিনারে বক্তারা

জিও টেক্সটাইল প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্বীপ তৈরি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রয়োজন। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সেন্ট মার্টিনের প্রবালের কোনো ধরনের ক্ষতি না করে দ্বীপটির আয়তন বৃদ্ধি করা সম্ভব। এছাড়া টেকনাফসহ দেশের অন্যান্য এলাকায়ও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা যাবে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রমনায় অবস্থিত ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) শহীদ প্রকৌশলী ভবনের কাউন্সিল হলে ‘অ্যাপ্লিকেশন অব জিও টেক্সটাইলস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক আয়োজিত এক সেমিনারে এই তথ্য উঠে আসে। আইইবির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এ আয়োজন করে।

আইইবির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ সেলিমের সভাপতিত্বে সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আইইবির সহসভাপতি (হিউম্যান রিসোর্সেস ডেভেলপমেন্ট) প্রকৌশলী শেখ আল আমিন, সম্মানী সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. সাব্বির মোস্তফা খান, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সম্পাদক প্রকৌশলী মো. মোস্তফা–ই–জামান প্রমুখ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল হক। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইইবির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. সায়েদুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে শামীম আখতার বলেন, জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার ব্যাপক। নদী রক্ষায় এই প্রযুক্তি অনেক কার্যকর। এছাড়া সেতুর গোড়ায় মাটির ক্ষয় রোধে জিও টেক্সটাইল ব্যবহার হচ্ছে। পুরকৌশলে জিও টেক্সটাইল নতুন এক মাত্রা যোগ করেছে। মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ও সিভিল ইঞ্জিনিয়াররাও এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। 

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পানি উন্নয়ন বোর্ডে জিও টেক্সটাইলের ব্যাপক ব্যবহার হয়। এটি প্রকৌশল ক্ষেত্রে আশীর্বাদস্বরূপ। তাই এই প্রযুক্তির উন্নয়ন প্রয়োজন। কিন্তু জিও টেক্সটাইলের উন্নতি নিয়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই। জিও টেক্সটাইল নিয়ে প্রচুর গবেষণা করা প্রয়োজন। 

মূল প্রবন্ধে মাহবুবুল সড়ক নির্মাণ, ড্রেনেজ সিস্টেম, উপকূলীয় মাটি ক্ষয় রোধ, কৃষি, ড্রেজিং, নদীর পাড় রক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার ও কার্যকারিতা সম্পর্কে আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, জিও টেক্সটাইল একদিকে যেমন টেকসই ও পরিবেশবান্ধব, অন্যদিকে এর খরচও তুলনামূলকভাবে কম। এছাড়া সুয়েজ ব্যবস্থাপনা, নদীর পাড় রক্ষা এবং পাহাড় ধস রোধেও এই প্রযুক্তি কার্যকর। পাহাড়ের ঢালে পাটের কার্পেট দিয়ে ঢেকে দিলে সেখানে বৃষ্টির কারণে মাটি ক্ষয় হবে না। এছাড়া সেখানে কার্পেটের সঙ্গে সঙ্গে গাছও লাগানো হয়। এতে করে পাহাড় ধস রোধ করা সম্ভব। 

মাহবুবুল বলেন, নদীর পাড়ে ভূমির উপরিভাগের আকার অনুযায়ী জিও ব্যাগ ব্যবহার করলে নদীর পাড় রক্ষায় তা কার্যকরী ভূমিকা রাখবে। এ সময় তিনি জিও টেক্সটাইল নিয়ে গবেষণার ওপর জোর দেন। বিশেষ করে নারকেলের খোসা নিয়ে আলাদা একটি গবেষণা ইনস্টিটিউট স্থাপনেরও সুপারিশ করেন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সেমিনারে বক্তারা