দেশে জিওটেক্সটাইলের ব্যাপক প্রয়োগ হচ্ছে
Published: 21st, May 2025 GMT
বাংলাদেশে জিওটেক্সটাইলের ব্যাপক প্রয়োগ হচ্ছে। যেমন মাটির ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ, উপকূলীয় ক্ষয় রোধ, রাস্তা নির্মাণ, নদী ও খাল খনন, পাহাড় ধসে পড়া রোধ, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন, মিঠামইনের হাওরে রাস্তা তৈরি, সেন্টমার্টিনের মতো কৃত্রিম দ্বীপ তৈরি বাড়ানো ও বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা। তবে কুয়াকাটা ও কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভে এটি ব্যর্থও হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অ্যাপ্লিকেশন অব জিওটেক্সটাইল ইন বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনারের মূল প্রবন্ধে এ কথা বলা হয়। রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইইবি) ভবনে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ এ সেমিনারের আয়োজন করে। আইইবির কাউন্সিল হলে সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন আইইবির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মহিউদ্দিন আহমেদ। টেক্সটাইল বিভাগের সেক্রেটারি প্রকৌশলী মো.
সেমিনারে বলা হয়, বিভিন্ন ভূ-প্রযুক্তিগত প্রকৌশল প্রয়োগে জিওটেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়। বিভিন্ন ধরনের সিভিল নির্মাণ প্রকল্পে মাটি ফিল্টার, স্থিতিশীল, শক্তিশালীকরণ, পৃথকীকরণ, নিষ্কাশন এবং বিচ্ছিন্নকরণের জন্য। তাছাড়া জিওটেক্সটাইল প্রাকৃতিক সমষ্টিগত নির্মাণ উপকরণ প্রতিস্থাপন বা হ্রাস করতে পারে, যা অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত উভয় সুবিধা প্রদান করে। সেজন্য আমাদের জিওটেক্সটাইল নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম শুরু করতে হবে যার মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের জিওটেক্সটাইল উৎপাদন। পাটভিত্তিক জিওটেক্সটাইল নিয়ে পড়ালেখা ও গবেষণা করতে হবে।
এতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ পাটের অন্যতম বৃহৎ উৎপাদনকারী দেশ। যা শতভাগ জৈব অবচনযোগ্য। অনেক ক্ষেত্রে জিওটেক্সটাইল অল্প সময়ের জন্য প্রয়োজন। রপ্তানির বিশাল সুযোগ রয়েছে। আমরা নারিকেলের ছোবড়াও প্রধান উৎপাদক দেশ। গবেষণায় দেখা গেছে যে সমস্ত প্রাকৃতিক তন্তুর মধ্যে নারিকেলের ছোবরা দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে। দৃঢ়ভাবে মনে করি যে, জিও-ব্যাগের পিছলে যাওয়া রোধ করতে ছোবড়া ব্যবহার করা যেতে পারে।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. মো. মাহবুবুল হক কিছু প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলেন, কৃত্রিম ভূমি এবং দ্বীপ তৈরির জন্য জিওটেক্সটাইল নিয়ে কাজ শুরু করার জন্য আমরা সরকারি সহায়তা চাই। আমরা টেকনাফের মাঝামাঝি বা সেন্ট মার্টিনের কাছাকাছি কিছু জমি তৈরি করার চেষ্টা করব। প্রবালের জীবনকে ব্যাহত না করে সেন্টমার্টিনের এলাকা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। যদি কোনও কৌশলগত সমস্যা থাকে তবে আমরা টেকনাফ এলাকায় কাজ করব। ভূমি উন্নয়ন প্রকল্পে আরও অনেক জায়গা ফোকাস করার আছে। কিছু সিন্থেটিক ফাইবার ক্ষয় নিয়ন্ত্রণে জিওটেক্সটাইল হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, স্থানীয়ভাবে সেই ফাইবারগুলো তৈরির চেষ্টা করা যেতে পারে।
সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রকৌশলী শেখ আল আমিন, ভাইস প্রেসিডেন্ট, (এইচআরডি) আইইবি, অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. সাব্বির মোস্তফা খান, সম্মানী সাধারণ সম্পাদক, আইইবি। আরও বক্তব্য দেন পিডব্লিউডির প্রধান প্রকৌশলী মো. শামীম আখতার, আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট শেখ আল আমিন, আইইবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী সাব্বির মোস্তফা খান, ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. সায়েদুর রহমান, প্রমুখ। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন, প্রকৌশলী নিয়াজ উদ্দিন ভূইয়া, প্রকৌশলী এটিএম.তানভির-উল হাসান (তমাল), প্রকৌশলী মোহাম্মদ মাহবুব আলম, প্রকৌশলী মো. নূর আমিন, প্রকৌশলী সাব্বির আহমেদ ওসমানী, প্রকৌশলী মুহাম্মদ আহসানুল রাসেল, প্রকৌশলী হেলাল উদ্দিন তালুকদার, প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন, প্রকৌশলী কেএম আসাদুজ্জামান, প্রকৌশলী মুহাম্মদ কামরুল হাসান খান সাইফুল, প্রকৌশলী মুহাম্মদ আবু হোসেন হিটলু, প্রকৌশলী মো. ফারুকুল ইসলাম জনি, অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মো. জুলহাস উদ্দিন, প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন মিয়া, অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী এসএম মোমিনুল আলম (ডালিম), প্রকৌশলী এসএম ফারহানা ইকবাল, প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান, প্রকৌশলী কাজী মো. ইলিয়াস, প্রকৌশলী সুমায়েল মো. মল্লিক, প্রকৌশলী মঈদুল ইসলাম, প্রকৌশলী মানিক দাস প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ আইইব র ম হব ব র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’
ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।
এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’
ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।
কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?
কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা