সাগরে মাছ ধরার ওপর ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা চলছে। এর এক মাসের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারি খাদ্য সহায়তার চাল পাননি লক্ষ্মীপুরের জেলেরা। জেলার পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চার উপজেলায় সমুদ্রগামী নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ১৫ জন। তাদের জন্য ১ হাজার ১২০ টন চাল বরাদ্দ হয়েছে। প্রশাসনিক জটিলতায় তা হাতে না পৌঁছায় চরম অনিশ্চয়তা ও কষ্টে দিন পার করছেন এসব জেলে। 

বুধবার জেলার রায়পুর উপজেলার চরবংশী, সদর উপজেলার চর রমণীমোহন, কমলনগরের চর লরেন্স, পাটোয়ারিরহাট, মাতাব্বরহাট ও নাসিরগঞ্জ; রামগতির চর আলেকজান্ডার ও বিবিরহাট ঘুরে দেখা গেছে, সাগরে নামতে না পারায় অলস বসে আছেন শত শত জেলে।

কেউ কেউ ফিশিং বোট থেকে জালসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিচ্ছেন। আবার কেউ বোট মেরামত করছেন। সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা মেনেই তীরে ফিরে এসেছেন। এখন মাছ ধরতে না পারায় তাদের ঘরে চালও নেই। সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। প্রতি বছরই নিষেধাজ্ঞার সময় তারা খাদ্য সহায়তা পান। এ বছর নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে ১৫ এপ্রিল। এর এক মাস সাত দিন হলেও তাদের ঘরে পৌঁছায়নি সরকারি চাল।

এমন অবস্থায় তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালাতে ধারদেনায় ডুবতে বসেছেন চর লরেন্সের আবু সাঈদ (৪৫)। তিনি বলেন, ‘জেলে কার্ড আছে, নামও আছে তালিকায়; কিন্তু চাল পাই না। সরকার যে সহায়তার কথা বলে, তা কবে আসবে আমরা জানি না। ধারদেনা করে সংসার চালাই। তাও আর কত?’

‘সরকারের কাছ থেকে এখনও কিছুই পাইনি। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে। বাচ্চাদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছি না।’ বলতে বলতে একই এলাকার জেলে মো.

জহিরের স্ত্রী বিবি লাইজুর কণ্ঠে অসহায়ত্ব ধরা পড়ে। তাঁর ছেলে রাব্বি (১৮) ও নাহিদ (১৫) দু’জনই বাবার সঙ্গে মাছ ধরার পেশায় আছে ছোটবেলা থেকে। এক মাস পরও চাল না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিবি লাইজু বলেন, ‘কীভাবে সংসার চালাব বুঝে উঠতে পারছি না। পানি বাদে সব কিছুই কিনে খেতে হয়। কাজ না করলে টাকাও মেলে না, এদিকে মাছ ধরা বন্ধ। 

নিষেধাজ্ঞার ৫৮ দিনের মধ্যে ৩৫ দিনের বেশি পার হয়েছে; কিন্তু কিছুই জুটল না।’

হারুন মাঝি নামের আরেক জেলে বলেন, আগে বন্ধের কয়েক দিনের মধ্যেই চাল পেতেন। এখন ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞার অর্ধেকের বেশি কেটে গেছে। এখনও কিছুই পাননি। খুব কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন। সঙ্গে জেলে আজগর মাঝি যোগ করেন, ঈদ আসছে সামনে। হাতেও কোনো টাকা নেই।

সরকার যদি দ্রুত চাল না দেয়, তাহলে না খেয়ে মরতে হবে– বলেন কমলনগরের জেলে সিরাজ মাঝি। কিন্তু কবে সে চাল পাবেন, সে খবরও নেই কারও কাছে। সব জেলেকেই তাঁর মতো সংসার চালাতে বেগ পেতে হচ্ছে বলেও জানান। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, রায়পুর, রামগতি, কমলনগর ও সদরে সমুদ্রগামী নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ২০ হাজার ১৫ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১৭ হাজার ৮৬০ জনের বাড়িই রামগতিতে। এ ছাড়া কমলনগরের ১ হাজার ৮১৫ জন, রায়পুরে ২২০ জন ও সদরে ১২০ জন আছেন তালিকায়। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বলেন, জেলেদের জন্য এবার ১ হাজার ১২০ টন খাদ্য সহায়তা বরাদ্দ হয়েছে। কিছু প্রশাসনিক কারণে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। ঈদুল আজহার আগেই বিতরণের আশা করছেন। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: লক ষ ম প র উপজ ল সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

গাছে অটোরিকশার ধাক্কা, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ও ব্যবসায়ী নিহত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের গাছে ধাক্কা লেগে স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা রফিকুল ইসলাম রফিক (৩৮) ও ব্যবসায়ী ওসমান গণি (৫০) নিহত হয়েছেন। তারা অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন।

মঙ্গলবার (২০ মে) সকালে উপজেলার করইতলা বাজার এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ সময় রিজভী ও আকাশ নামে দুইজন আহত হয়।

নিহত রফিক ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ও কমলনগর উপজেলার চরফলকন গ্রামের নুরুল আমিনের ছেলে। অপর নিহত ওসমান একই উপজেলার কাদিরপন্ডিতের হাট এলাকার হাজী নোয়াব আলীর ছেলে ও পেশায় মুরগি ব্যবসায়ী। আহত রিজভী চরফলকন গ্রামের ওমর ফারুকের ছেলে ও আকাশ নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে।

আরো পড়ুন:

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ৬ লেনে উন্নীত করার দাবিতে মানববন্ধন

ঢাকা-টাঙ্গাইল যমুনা সেতু মহাসড়কে যানজট নিরসনে মতবিনিময়

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, রফিক বাড়ির উদ্দেশে ঢাকা থেকে বাসযোগে এসে লক্ষ্মীপুরের ঝুমুর এলাকায় নামেন। সেখান থেকে অটোরিকশাযোগে তিনিসহ অন্য যাত্রীরা কমলনগর উপজেলার হাজিরহাট রওয়ানা দেন। পথে অটোরিকশাটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে-মুচড়ে যায়। আহত অবস্থায় রফিকসহ তিনজনকে সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতাল নিলে রফিককে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। অপরজন ওসমান গণিও ঢাকা থেকে আসেন। তিনি একই অটোরিকশার যাত্রী ছিলেন। তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান।

ওসমানের মৃত্যুর বিষয়টি তার মামাত ভাই মোস্তাফিজুর রহমান টিপু নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ওসমান ঢাকায় হার্নিয়া অপারেশন করতে যান। দুর্ঘটনায় তিনি মারা গেছেন।

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মহসিন কবীর স্বপন জানান, রফিক ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ছিলেন। তিনি বাড়ি যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তিনি হাসপাতালের গিয়ে রফিকের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। 

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল জানান, সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত রফিক নামে একজনকে হাসপাতাল আনা হয়। হাসপাতালে আনার আগেই তিনি মারা গেছেন। 

কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম জানান, অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের পাশের গাছের সঙ্গে গিয়ে ধাক্কা লাগে। এতে দুই জন মারা গেছেন। এরমধ্যে একজনের মরদেহ সদর হাসপাতালের মর্গে আছে। দুর্ঘটনা কবলিত অটোরিকশা আটক করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
 

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/বকুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাছে অটোরিকশার ধাক্কা, স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা ও ব্যবসায়ী নিহত