নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অলিগলিতে গড়ে উঠেছে সহস্রাধিক ফার্মেসি। বেশির ভাগ ফার্মেসিতেই নেই ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্ট। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই চলছে এসব ওষুধের দোকান।
অভিযোগ রয়েছে, এসব ফার্মেসি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক, নিষিদ্ধ, ভারতীয় নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের নানা প্রকার ওষুধ অবাধে বিক্রি করছে। এ ছাড়া ওষুধের দোকানগুলোতে নেই কোনো প্রশিক্ষিত ফার্মাসিস্ট। ফলে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে আরও জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে রোগী। এতে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে অনেক রোগী ও তাদের পরিবার। হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।
উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, আড়াইহাজার উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ১০টি ইউনিয়নের বাজারে গড়ে উঠেছে ড্রাগ লাইসেন্সহীন শতশত ফার্মেসি। ফলে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় ও অতিরিক্ত চিকিৎসক ফি’র কারণে এ এলাকার মানুষ উপজেলা সদরে বা নিবন্ধিত চিকিৎসকের কাছে যান না। তারা তাদের পার্শ্ববর্তী বাজারে ফার্মেসিগুলোর শরণাপন্ন হন। এ সুযোগকে কাজে লাগায় ওষুধের দোকানগুলো।
উপজেলা সদর, গোপালদী, বগাদী, রাধানগর, কালাপাহাড়িয়া, মানিকপুর, পূর্বকান্দি, জাঙ্গালিয়া, কলাগাছিয়া, রামচন্দ্রদী, কালীবাড়ি, কালীরহাট, ব্রাহ্মন্দী, মারুয়াদী, দুপ্তারা, পাঁচগাও, সাতগ্রাম বাজারসহ ৩০ থেকে ৩৫টি বাজারে কয়েকশ ফার্মেসির ড্রাগ লাইসেন্স ও ফার্মাসিস্টের প্রশিক্ষণ নেই।
এসব ফার্মেসিতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক, ঘুমের বড়ি, যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট, নিষিদ্ধ, ভারতীয়, নকল, মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের নানা প্রকার ওষুধ অবাধে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন ওষুধ ব্যবসায়ীরা হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা, অন্যদিকে সাধারণ ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন।
ওষুধ আইন অনুসারে কোনো ব্যক্তি ওষুধের দোকান বা ফার্মেসি দিতে চাইলে তাকে কমপক্ষে ছয় মাসের ফার্মাসিস্ট কোর্স করে সনদ সংগ্রহ করতে হয়। পরে সংশ্লিস্ট ড্রাগ সুপারের কার্যালয়ে ফার্মাসিস্ট সনদ জমা দিয়ে ড্রাগ লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হয়। ড্রাগ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ অনুযায়ী কোনো খুচরা বিক্রেতা বাংলাদেশ ফার্মেসি কাউন্সিলের কোনো রেজিস্ট্রারের রেজিস্ট্রিভুক্ত ফার্মাসিস্টদের তত্ত্বাবধান ছাড়া কোনো ওষুধ বিক্রি করতে পারবে না। অথচ উপজেলার বেশির ভাগ ওষুধের দোকানে এসব নিয়মকানুনের কোনো বালাই নেই।
গত মঙ্গলবার অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ রাখার দায়ে উপজেলা সদর বাজারের আল আমিন ফার্মেসিকে ৩০ হাজার এবং জামাল ফার্মেসিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়সহ মুচলেকা নেওয়া হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ নঈম উদ্দিনের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত এ অভিযান চালান।
উপজেলা সদরে আল আমিন ফার্মেসিতে ওষুধ কিনতে আসা খাগকান্দা গ্রামের জালাল উদ্দিন জানান, এখন ফার্মেসিতে বিশেষজ্ঞ লোকের দরকার হয় না। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা বলে দেন কোন ওষুধ কখন ও কী কাজে লাগে। সেই অনুযায়ী ওষুধ বিক্রি হয়। এ ছাড়া অনেক ওষুধের দোকানে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা নিম্নমানের ওষুধ বিক্রি করেন। 
গোপালদী এলাকার নিজামউদ্দিন নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রির ক্ষেত্রে ভালো মানের ওষুধের চেয়ে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বেশি কমিশন নেওয়া হচ্ছে। এতে বেশি লাভের আশায় ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধ বিক্রিতে বেশি আগ্রহী হচ্ছে ওষুধ ব্যবসায়ীরা। সাধারণ মানুষও কোন ওষুধটি আসল কোনটি ভেজাল তা চিহ্নিত করতে পারে না। ফলে ভেজাল ও নিম্নমানের ওষুধের বাণিজ্য যেমন দিন দিন জমজমাট হচ্ছে, তেমনি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে সাধারণ মানুষ। 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ফার্মেসির মালিক বলেন, এই উপজেলায় যে যার মতো করে ওষুধের দোকান দিয়েছেন। হাতেগোনা কয়েকজনের ফার্মাসিস্ট সনদ রয়েছে। অনেকেরই ড্রাগ লাইসেন্স নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, এ উপজেলায় অনেক ওষুধের দোকান রয়েছে। তবে হাতেগোনা কয়েকটি ফার্মেসিতে ডিপ্লোমাধারী ফার্মাসিস্ট রয়েছে। ১৯৪৬ সালের ওষুধ বিধিমালা অনুযায়ী ফার্মাসিস্ট ও ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ওষুধ মজুত, প্রদর্শন ও বিক্রি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, ফার্মেসি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। এখানে ড্রাগ লাইসেন্স ও একজন প্রশিক্ষিত ব্যক্তির সার্বক্ষণিক থাকা প্রয়োজন। এসব না থাকলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া অনুমোদনহীন ওষুধ বিক্রি ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণকারীদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ ক ৎসক ব যবস থ উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে ইহুদি জাদুঘরে গুলিবর্ষণ, ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মী নিহত

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে একটি ইহুদি জাদুঘরের বাইরে বন্দুক হামলায় ইসরায়েলি দূতাবাসের দুজন কর্মী নিহত হয়েছেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, ক্যাপিটাল ইহুদি জাদুঘরের একটি অনুষ্ঠান থেকে বেরিয়ে আসার সময় ইসরায়েলি দূতাবাসের দুই কর্মী বন্দুক হামলার শিকার হন। নিহতদের মধ্যে একজন পুরুষ ও একজন নারী রয়েছেন। এই হামলা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

স্থানীয় সময় বুধবার রাত ৯:০৫ মিনিটে তৃতীয় এবং এফ স্ট্রিটস এনডব্লিউ-এর কাছাকাছি গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে, ওই এলাকায় এফবিআইয়ের ওয়াশিংটন ফিল্ড অফিসসহ অসংখ্য পর্যটন স্থান, জাদুঘর এবং সরকারি ভবন রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গুলি চালানোর সময় ইসরায়েলি দূতাবাসের একাধিক কর্মী জাদুঘরের অনুষ্ঠানে ছিলেন।

বিস্তারিত আসছে..

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ