মানবিক করিডোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে: সেনাপ্রধান
Published: 22nd, May 2025 GMT
সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে মানবিক করিডোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত একটি নির্বাচিত সরকার থেকেই আসতে হবে। এটি হতে হবে বৈধ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে। করিডোরের ব্যাপারে জাতীয় স্বার্থ দেখতে হবে। রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়ও এখানে যুক্ত। পাশাপাশি শিগগিরই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন সেনাপ্রধান। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের ব্যাপারে নিজের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। এ ছাড়া জাতীয় নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের নিরলস ভূমিকা ও প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেন ওয়াকার-উজ-জামান। সেনা কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলা ও আনুগত্য বজায় রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার সকালে সেনা কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত এক সভায় (অফিসার্স অ্যাড্রেস) সেনাবাহিনী প্রধান এই দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে রাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এ বিষয়ে কোনো সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দেয়নি। পরে যোগাযোগ করা হলে আইএসপিআর কোনো মন্তব্য করবে না বলে জানায়।
ঢাকা সেনানিবাসে অনুষ্ঠিত এ সভায় ঢাকার বাইরের বিভিন্ন ইউনিটের কর্মকর্তারা ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, অফিসার্স অ্যাড্রেসে প্রথমে সেনাপ্রধান বক্তব্য রাখেন। এরপর বিভিন্ন ইউনিট থেকে যেসব কর্মকর্তা যুক্ত ছিলেন তাদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন সেনাপ্রধান।
সেনাপ্রধান বলেন, আগস্ট থেকে সেনাবাহিনীর ধারাবাহিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কিছু মহল তাঁকে ও বাহিনীকে অন্যায্যভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে।
ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, সার্বভৌমত্বের জন্য ক্ষতিকর– এমন কোনো কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কখনও যুক্ত হবে না। কাউকে তা করতেও দেওয়া হবে না। এই বাস্তবতায় সব পর্যায়ের সেনাসদস্যকে নিরপেক্ষ থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি। আগামীতে নির্বাচনী দায়িত্ব সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পালনের নির্দেশ দেন সেনাপ্রধান।
জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারকে আমরা সহযোগিতা করছি। সহযোগিতা করে যাব। সামনে ঈদ। মানুষ যেন নিরাপদে ঈদ উদযাপন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা করতে হবে।
বাংলাদেশ নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, এ বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কথা বলা হয়নি। আমাদের কোনো মতামত নেওয়া হয়নি।
নির্যাতিতদের অধিকারের পক্ষে দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর কথা বলেছেন সেনাপ্রধান। জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের বক্তব্যের পর এক ঘণ্টাব্যাপী প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। একজন কর্মকর্তা বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্ত সেনাসদস্যদের অপরাধের বিষয়গুলো আইএসপিআরের মাধ্যমে প্রকাশ করার কথা জানান।
মব ভায়োলেন্স, সাম্প্রতিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, জুলাই-আগস্টে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড বিষয়ে জাতিসংঘের তথ্য অনুসন্ধান প্রতিবেদন, অন্তর্বর্তী সরকারের চলমান সংস্কারসহ নানা প্রশ্নের উত্তর দেন সেনাপ্রধান। তিনি বলেন, মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বন্দর নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে জেনারেল ওয়াকার বলেন, এখানে স্থানীয় মানুষ ও রাজনৈতিক নেতাদের মতামত প্রয়োজন হবে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত রাজনৈতিক সরকারের মাধ্যমে। সংস্কার নিয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কী সংস্কার হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছে– এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত ন বল ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের প্রস্তাবিত নীতিতে ইন্টারনেটের দাম ২০% বাড়বে: আইএসপিএবি
সরকারের প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিভিন্ন ফি ও চার্জ আরোপের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার খরচ আরও অন্তত ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে বলছেন দেশের ইন্টারনেট সেবাদাতারা।
ইন্টারনেটের দাম বাড়ার বিষয়টি দায়িত্বশীল নেতৃত্বের হাতে ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সেবাদাতারা।
আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসপিএবি) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানায়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডারদের (এফটিএসপি) জন্য একটি গাইড লাইনের খসড়া করেছে। এ নিয়ে আপত্তি তুলেছে আইএসপিএবি।
নতুন গাইডলাইনে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার এবং সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিলের জন্য ১ শতাংশ দিতে হবে। এ ছাড়া এফটিএসপি অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বাড়বে।
আইএসপিএবির সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, টেলিযোগাযোগ খাত নিয়ে সরকার তার উদ্দেশ্য থেকে বেরিয়ে এসেছে এবং জনগণের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না। সরকার ভুল পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমিনুল হাকিম বিদ্যমান নীতির সঙ্গে প্রস্তাবিত নীতির তুলনামূলক উপস্থাপনা তুলে ধরে বলেন, বিদ্যমান নীতিতে সরকার এই খাত রেভিনিউ শেয়ারিং, সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল এবং ভ্যাটসহ ২১ দশমিক ৪৫ শতাংশ পায় কিন্তু নতুন নীততে তা ৪০ দশমিক ২৫ শতাংশ হবে। সরকারি নীতিতে শহর ও গ্রামে বৈষম্য বাড়বে।
আমিনুল হাকিম বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসা সরকার বৈষম্য উপহার দিচ্ছে। সরকার একদিকে ইন্টারনেটের দাম কমানোর কথা বলছে, অন্যদিকে নিজেরা দাম বাড়াচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্টারলিংকের জন্য সরকার লাইসেন্স ফি ধরেছে ১০ হাজার ডলার অর্থাৎ ১২ লাখ টাকা। কিন্তু দেশের আইএসপিদের জন্য তা ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, স্টারলিংককে এত সুবিধা দেওয়ার কারণ কি?
সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবি বলেছে, প্রস্তাবিত খসড়া গাইডলাইনে মোবাইল অপারেটরদের ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস এবং লাস্ট মাইল ফাইবার সংযোগের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেওয়ার স্পষ্ট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যা দেশীয় এবং নিজস্ব বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আইএসপিগুলোর জন্য চরম অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে। এ ছাড়া বড় প্রভাব পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপর।