ইসরায়েলকে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও কানাডার হুঁশিয়ারি; গাজায় কি পরিবর্তন আসছে
Published: 22nd, May 2025 GMT
ইংল্যান্ড বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করে পশ্চিম তীরের ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। ইউরোপীয় নেতারা ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন গাজায় তাদের সামরিক অভিযান বন্ধ করতে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সম্প্রসারণের বিরুদ্ধে ‘দৃঢ়ভাবে বিরোধিতা’ করেছেন। হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে যদি ইসরায়েল তাদের আক্রমণ বন্ধ না করে এবং ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে সাহায্য সরবরাহের ওপর বিধিনিষেধ না তুলে নেয়, তাহলে তারা ‘কঠোর পদক্ষেপ’ নেবে।
সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ওমানুয়েল মাখোঁ এবং কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বলেছেন যে তাঁরা অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণের বিরোধিতা করেন। পশ্চিম তীরে বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতা বেড়েছে। ইসরায়েলি অভিযানে প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এই বিবৃতি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন নেদারল্যান্ডস ইউরোপীয় ইউনিয়নকে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনা করার আহ্বান জানিয়েছে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নেতানিয়াহুর সরকারের গাজায় ধ্বংসাত্মক অভিযান শুরু করে। পশ্চিমা দেশগুলো তখন ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের পক্ষে সমর্থন জানিয়েছিল। সেই অভিযানে ৫৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতির প্রধান কায়া কাল্লাস বলেছেন যে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকার আছে, কিন্তু তাদের বর্তমান কার্যক্রম আত্মরক্ষার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।
তাহলে পশ্চিমা দেশগুলো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নিতে পারে। ইসরায়েলের সাম্প্রতিক গাজা আক্রমণ কি তাদের অবস্থান পরিবর্তনে বাধ্য করেছে?
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডা কী বলেছেএই তিন দেশের নেতারা ইসরায়েলের নতুন করে গাজা অভিযানের সমালোচনা করেছেন। ফিলিস্তিনিদের ‘মানবিক দুর্ভোগ’কে ‘অসহনীয়’ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁরা আরও বলেছেন যে ‘যদি ইসরায়েল এই নতুন সামরিক অভিযান বন্ধ না করে এবং মানবিক সাহায্যের ওপর তাদের বিধিনিষেধ না তুলে নেয়, তবে আমরা প্রতিক্রিয়ায় আরও কঠোর পদক্ষেপ নেব।’ তাঁরা ইসরায়েলি সরকারের সম্প্রতি ব্যবহৃত জঘন্য ভাষার নিন্দা জানিয়েছেন। বলেছেন যে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতি আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন।
এই তিন পশ্চিমা নেতা বলেছেন যে তাঁরা ৭ অক্টোবর হামাসের আক্রমণের পর ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারের সমর্থন করলেও, ইসরায়েলের প্রতিক্রিয়া সীমা ছাড়িয়ে গেছে, ‘নেতানিয়াহুর সরকার এই গুরুতর কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, তখন আমরা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকব না।’
মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য গাজা যুদ্ধের কারণে ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। এটি পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা সমর্থনকারী বসতি স্থাপনকারীদের এবং সংগঠনগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধ এবং অবৈধ বসতিগুলোর প্রতি সরকারের সমর্থন ‘আপনার (ইসরায়েল) সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করছে,’ বলেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি।
তীব্র আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে সোমবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গাজায় নয়টি সাহায্য ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে। ইসরায়েল সেখানে খাদ্য , ওষুধ কিছুই ঢুকতে দিচ্ছে না। তবে জাতিসংঘের ত্রাণপ্রধান টম ফ্লেচার সামান্য কয়েকটি ত্রাণের ট্রাক ঢুকতে দেওয়াকে ‘সমুদ্রের তুলনায় একটি ফোঁটা’ বলে অভিহিত করেছেন।
মঙ্গলবার ফ্লেচার সতর্ক করেছেন যে যদি সাহায্য না পৌঁছায়, তাহলে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ফিলিস্তিনি শিশু মারা যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। গাজার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ; অর্থাৎ প্রতি পাঁচজন ফিলিস্তিনির মধ্যে একজন ইসরায়েলি অবরোধের কারণে অনাহারের মুখোমুখি। ক্ষুধার জ্বালায় অনাহারে থাকা ফিলিস্তিনিরা পশুর খাদ্য এবং বালু মেশানো ময়দা খেতে বাধ্য হচ্ছেন।
ইউরোপের এসব প্রতিক্রিয়ার পর ইসরায়েল গাজায় প্রবেশের জন্য প্রায় ১০০টি অতিরিক্ত ট্রাক অনুমোদন করেছে।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা বলেছেন যে তাঁরা ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণের সব চেষ্টার বিরোধিতা করেন। কারণ, এ রকম চেষ্টা ‘অবৈধ এবং একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্ভাবনা এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের উভয়ের নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন করে’। ‘আমরা আরও পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করব না। তার মধ্যে নিষেধাজ্ঞাও থাকতে পারে’, তাঁরা বলেছেন।
কিন্তু এ কথাও সত্য যে ইসরায়েলকে ধমক দেওয়া এই দেশগুলো কেউই ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেনি। গত ১৯ মাসে যুক্তরাজ্য থেকে ইসরায়েলে কত অস্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রতিদিন প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে।
সুইডেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনারগার্ড মঙ্গলবার বলেছেন যে গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ না নেওয়ার কারণে তাঁর দেশ ইসরায়েলি মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞার জন্য চাপ দেবে। এ কথা বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে।
এদিকে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো বলেছেন যে ইসরায়েলের ‘অন্ধ সহিংসতা’ এবং মানবিক সহায়তার অবরোধ শেষ হওয়া উচিত।
সোমবার ২৪টি দেশ, যেগুলোর বেশিরস ভাগই ইউরোপীয়, একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে যে গাজায় বাধাহীন মানবিক সহায়তা পুনরায় শুরু হওয়া উচিত। এটি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, জাপান, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্যসহ দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের সঙ্গে ইসরায়েল অ্যাসোসিয়েশন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি পর্যালোচনা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁরা আল–জাজিরাকে বলেছেন যে নেদারল্যান্ডস এই মাসের শুরুতে অ্যাসোসিয়েশন চুক্তির পর্যালোচনা চেয়েছিল। বিশেষ করে চুক্তির উভয় পক্ষকে মানবাধিকার সম্মান রক্ষার অংশটি। এই পদক্ষেপ বেলজিয়াম, ফ্রান্স, পর্তুগাল, সুইডেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্র সমর্থন করেছে।
আল–জাজিরা থেকে নেওয়া ইংরেজির সংক্ষেপিত অনুবাদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পরর ষ ট রমন ত র পদক ষ প ন বল ছ ন য র ইসর য ইসর য় ল সরক র র ইউন য ন ইউর প য রক ষ র কর ছ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে অপসারণ
রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে বিচারক পদ থেকে অপসারণ করেছেন।
এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ গতকাল বুধবার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে সচিব শেখ আবু তাহেরের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা (৬) মোতাবেক সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে বিচারক পদ থেকে ২১ মে অপসারণ করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবারর সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক নিউজ আপডেটে বলা হয়, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের প্রতিবেদন অনুসারে রাষ্ট্রপতি সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৯৬–এর দফা (৬) মোতাবেক খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে বিচারক পদ থেকে অপসারণ করেছেন।
খোন্দকার দিলীরুজ্জামান ২০১৮ সালের ৩১ মে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হন। ২০২০ সালের ৩০ মে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খিজির হায়াতকে বিচারক পদ থেকে অপসারণ করেন। সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের দফা (৬) অনুযায়ী তাঁকে অপসারণ করা হয়। এ বিষয়ে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগ গত ১৮ মার্চ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
খিজির হায়াত ২০১৮ সালের ৩১ মে হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারক হন। ২০২০ সালের ৩০ মে তিনি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হন।