Risingbd:
2025-09-18@04:57:50 GMT

আশির দশকের কৃষি

Published: 22nd, May 2025 GMT

আশির দশকের কৃষি

আশির দশকের কৃষি ব্যবস্থায় উৎপাদন থেকে শুরু করে সবকিছুতে কৃষক ছিল প্রায় স্বনির্ভর। গৃহস্থের বাড়িতে নতুন ধান আসার পরে মাড়াই শেষে হৃষ্ট, পুষ্ট দানা দেখে বীজ সংগ্রহ করা হতো। বিভিন্ন সিজনে বিভিন্নরকম ধান উঠতো। প্রত্যেক সিজনে ভালো ধান থেকে বীজ আলাদা করে, শুকিয়ে পরিষ্কার মাটির পাতিলে সংরক্ষণ করা হতো। পরবর্তী বীজ রোপণ করা পর্যন্ত একজন নারী দক্ষতার সঙ্গে বীজ সংরক্ষণের কাজটি করতেন। তবে পুরুষেরা এই কাজে একজন নির্দেশক হিসেবে কাজ করতেন।

বীজ বা ধান সংরক্ষণের জন্য আলাদা ঘর থাকতো। ধান রাখার ঘরকে বলা হতো গোলাঘর। মাচা তৈরি করে বাঁশের ডোল বা বেঁড়ি অথবা মাটির মটকাতেও বীজ রাখা হতো। বীজ রেখে পাত্রের মুখটা পাতলা সুতি কাপড় দিয়ে আটকে রাখা হতো। যাতে ময়লা বা পোকামাকড় না ঢোকে। একই প্রক্রিয়ায় তখন ধান, সবজি কিংবা ফলের বীজ সংগ্রহ করা হতো। তখন বাজার থেকে বীজ সংগ্রহ করতে দেখা যেত না।

সবজির ক্ষেত্রেও বীজ সংগ্রহ করার জন্য সেরা সবজিটি নির্বাচন করা হতো। যেমন লাউয়ের জাংলায় ভালো ভালো লাউ ‘বস হিসেবে’ রাখা হতো বীজের জন্য। অন্যান্য ফল বা সবজির ক্ষেত্রেও দেখা যেতো একই নিয়ম। গৃহস্থের বাড়িতে নিজস্ব বাগানের ফল, ক্ষেতের ফসল থেকে বীজ সংগ্রহ করা হতো। যেটা এখন বহুজাতিক কোম্পানি প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে থাকে। 

বাড়ির একটা কোণায় একটু গর্ত করে জৈব সার উৎপাদন করার ব্যবস্থা ছিল। প্রত্যেক বাড়িতে গরু থাকতো, সেই গরুর গোবর এবং রান্নার উচ্ছিষ্ট গর্তে জমা করা হতো। পঁচন ধরলে সেখান থেকে জৈব সারা উৎপাদন করা হতো। অনেক সময় পালানেও জৈব সার উৎপাদনের ব্যবস্থা থাকতো।

ক্ষেতের ধান কাটার পরে যে নাড়া থাকতো সেগুলো পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া হতো। যা জৈব সার হিসেবে কাজ করতো। এ ছাড়া বিভিন্ন ধরণের শেওলা বা জলজ উদ্ভিদ বর্ষার মৌসুমে জমিতে জন্মাতো, সেগুলো আবার বর্ষা শেষে আগুনে পুড়িয়ে ছাই বানানো হতো। তারপর সেই ছাই জমিতে ছিটিয়ে দেওয়া হতো। এভাবে জমির উর্বরতা বাড়ানো হতো।

বর্ষায় বা বন্যায় প্রচুর পলি আসতো, এভাবেও জমিতে উর্বরতা বাড়তো। সে সময় সত্যিকার অর্থে সেভাবে রাসায়নিক সারা ব্যবহার করা হতো না। এরপরে যখন সেচভিত্তিক ইরি চাষ শুরু হলো তখন রাসায়নিক সার-ইউরিয়া, পটাশ, সালফারের ব্যবহার বাড়তে শুরু করলো। ধীরে ধীরে জৈব সার ব্যবহার কমে আসলো। চাষাবাদ ছিল গরু ও লাঙ্গলভিত্তিক। লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করা হতো। যে মাটি অনেক শক্ত ছিল সেই মাটির ঢেলা ভাঙতে ‘ইটা মুগুড়’ ব্যবহার হতো। গরু টানা লাঙল দিয়ে হাল চাষ করে পরে মই দিয়ে মাটি সমান করা হতো।

সেচভিত্তিক যে পদ্ধতি ছিল সেটা হলো ‘দোন ব্যবস্থা’। ধরা যাক, একটি পুকুর, নদী বা খাল আছে সেখানে কাঠের এক ধরণের ছোট নৌকা ডুবিয়ে সেই পানি ড্রেনের মাধমে জমিতে ছড়িয়ে দেওয়া হতো। স্বাধীনতার পর পর সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় সেচ ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। রাশিয়ার সহযোগিতায় দেশে গভীর নলকূপ স্থাপিত হয়েছিল। যেগুলো পল্টন নামে ডাকা হতো। এ ছাড়া হাতের সাহায্যে ‘টিনের সেউতি’ দিয়ে জমিতে পানি দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এরপরে ধীরে ধীরে স্যালো মেশিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পেতে থাকলো। ধীরে ধীরে ইলেকট্রিক পাম্পও আসলো। ফলে দোন ব্যবস্থা বা পল্টন ব্যবস্থা বিলোপ হলো।

ওই সময় সাধারণত দুই ফসল হতো। যার ফলে জমি কিছুটা বিশ্রাম পেতো। এখন কোনো কোনো জায়গায় তিনটা থেকে চারটা ফসল তোলার চেষ্টা করছি। একটা সময় মাটি তার উর্বরতা হারিয়ে ফেলতে পারে। কৃষিতে বিবর্তনের আরেকটা বড় সমস্যা হচ্ছে ইট ভাটা। ফসলি জমির উপরিভাগের মাটি দিয়ে ইট বানানো হচ্ছে। ফলে মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের অবকাঠামোগত উন্নয়নের কারণে প্রতি বছর কৃষি জমির পরিমাণ কমে আসছে। এই অবস্থায় আমরা যদি মাটির উর্বরতা রক্ষার দিকে মনোযোগ না দেই তবে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটতে পারে, উৎপাদনশীলতার ক্ষমতা হারাতে পারে মাটি।

হাল চাষে এখন যান্ত্রিকীকরণ হয়ে গেছে। গরু দিয়ে হাল চাষ হয় না, এজন্য পাওয়ার টিলার আর ফসল কাটার জন্য হারভেস্টার মেশিন ব্যবহার হচ্ছে। ফসল মাড়াইয়ের জন্য প্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া হচ্ছে এতে কাজের গতি বেড়েছে। এসব প্রযুক্তি না এলে কৃষিতে অনেক রকম সংকট তৈরি হতো। যেহেতু কৃষি শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে। আগে পোকামাকড়ের আক্রমণে ফসল নষ্ট হয়ে যেত, কৃষক এক রকম আত্মসমর্পণ করতো। সেই অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। 

আগে কৃষক সমন্বিত ব্যবস্থায় খাদ্যশস্য, ফল, মশলা, ওষুধী উৎপাদন করতো। এখন আর এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে না। এখন যে মশলা উৎপাদন করছে সে মশলা উৎপাদনই করছে, যে ফলের বাগান করছে সে ফলের বাগানই করছে এখন সমন্বিত কৃষি দেখা যায় না। এতে কৃষকের পরনির্ভরশীলতা বেড়েছে, স্বনির্ভরতা কমেছে। আমার মনে হয় সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থার দিকে মনোযোগ হওয়ার আবার সময় এসেছে।

ঢাকা/লিপি

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ ব যবহ র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ