ঢাকার অনুরোধে সাড়া নেই, ২৪৬১ জনকে ফেরতে দিল্লির চিঠি
Published: 22nd, May 2025 GMT
দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে চলতি মাসে ভারত রোহিঙ্গাসহ অন্তত সাড়ে ৩০০ ব্যক্তিকে বাংলাদেশে ‘পুশ ইন’ (ঠেলে পাঠানো) করেছে। এ ঘটনায় নিন্দা ও উদ্বেগ জানিয়ে বাংলাদেশ অন্তত চারবার চিঠি দিয়েছে ভারতকে। চিঠিতে পুশ ইনের পুনরাবৃত্তি বন্ধের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের এসব অভিযোগকে প্রত্যাখ্যান করে ভারত বলেছে, তারা বাংলাদেশিসহ অবৈধ বিদেশিদের বিষয়টি স্থানীয় আইন ও রীতি অনুযায়ী মোকাবিলা করছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে গতকাল বুধবার দেওয়া এক চিঠিতে ভারত এ দাবি করে। পাশাপাশি দ্রুত পরিচয় যাচাই করে ২ হাজার ৪৬১ ব্যক্তিকে ফেরত নিতে ভারতের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এ তথ্য জানায়।
আরও পড়ুনভারত থেকে এভাবে ‘পুশ–ইন’ সঠিক নয়: খলিলুর রহমান০৭ মে ২০২৫চার দফার চিঠিতে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে বলেছে, পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে।বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) স্থানীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ মাসে দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে ভারত অন্তত ৩৭০ জনকে বাংলাদেশে পুশ ইন করেছে। গতকাল বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে উপদেষ্টা মো.
পুশ ইনের বিষয়ে দিল্লিকে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং এটি বন্ধে বাংলাদেশ যোগাযোগ করছে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, ‘দিল্লির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত আছে এবং আমরা চেষ্টা করছি নিয়মের বাইরে যেন কিছু না ঘটে।’
আরও পড়ুনপুশ ইন বা পুশ ব্যাক কোনো আইনসম্মত পদ্ধতি নয়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা১৭ মে ২০২৫বাংলাদেশের পাঠানো প্রথম চিঠির জবাবে ভারত ১৫ মে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, কোনো প্রমাণ ছাড়া বাংলাদেশ যে অভিযোগ করছে, তা ভারত প্রত্যাখ্যান করে।ঢাকার চার চিঠিতে সাড়া নেইভারত ৪ ও ৭ মে দেশের কয়েকটি জেলার সীমান্ত দিয়ে প্রায় ২০০ ব্যক্তিকে পুশ ইন করে। এর পর থেকে বিষয়টি সুরাহার জন্য বাংলাদেশ অন্তত চারবার ভারতকে কূটনৈতিক পত্র দেয়। যদিও পুশ ইন থামেনি।
৮, ১৩, ১৫ ও ২০ মে পাঠানো চার দফার চিঠিতে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে বলেছে, পুশ ইনের পদক্ষেপগুলো গভীর উদ্বেগের, যা চূড়ান্তভাবে সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতির ওপর প্রভাব ফেলছে এবং জনমনে নেতিবাচক মনোভাবও তৈরি করছে। পুশ ইনের ওই পদক্ষেপগুলো ১৯৭৫ সালের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের জন্য যৌথ ভারত-বাংলাদেশ নির্দেশিকা, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (সিবিএমপি) ২০১১ এবং বিজিবি-বিএসএফ মহাপরিচালক পর্যায়ের আলোচনায় দুই পক্ষের পারস্পরিক সম্মত সিদ্ধান্তের পরিপন্থী।
ভারতের কাছে পাঠানো চিঠিতে আরও বলা হয়, কোনো ব্যক্তির নাগরিকত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর বিদ্যমান প্রক্রিয়া মেনে বাংলাদেশ তাঁদের ফেরত নেবে। এর ব্যত্যয় হলে দুই দেশের বোঝাপড়ার মধে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে। একইভাবে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের বাংলাদেশের পরিবর্তে তাঁদের আদি নিবাস মিয়ানমারেই ফেরত পাঠানো উচিত ভারতের। কোনোভাবে ভারতীয় নাগরিকদের জোর করে বাংলাদেশে পুশ ইন করাটা উচিত হবে না। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে শান্তি ও স্থিতিশীলতার স্বার্থে এ ধরনের পুশ ইন অগ্রহণযোগ্য এবং তা পরিহার করা উচিত।
চিঠিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারতকে পুশ ইনের পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে বলেছিল বাংলাদেশ। পাশাপাশি পুশ ইনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছিল।
আরও পড়ুন‘পুশ ইন’ ঠেকাতে ভারতকে বার্তা দেবে বাংলাদেশ০৯ মে ২০২৫ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে ইতিপূর্বে পাঠানো ২ হাজার ৪৬১ ব্যক্তির পরিচয় যাচাইয়ের বিষয়টি ঝুলে আছে। অবিলম্বে বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় যাচাইপ্রক্রিয়া শেষ করা জরুরি।শেষ চিঠিতে যা বলেছে দিল্লিবাংলাদেশের পাঠানো প্রথম চিঠির জবাবে ভারত ১৫ মে একটি চিঠি দেয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, কোনো প্রমাণ ছাড়া বাংলাদেশ যে অভিযোগ করছে, তা ভারত প্রত্যাখ্যান করে।
বাংলাদেশ ২০ মে আবার পুশ ইন বিষয়ের সুরাহার জন্য চিঠি দেওয়ার পর ২১ মে পাল্টা কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে ভারত। দেশটি আবার বাংলাদেশের বক্তব্য এবং অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। উল্টো ভারতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কাছে ইতিপূর্বে পাঠানো ২ হাজার ৪৬১ ব্যক্তির পরিচয় যাচাইয়ের বিষয়টি ঝুলে আছে। অবিলম্বে বাংলাদেশের নাগরিকদের পরিচয় যাচাইপ্রক্রিয়া শেষ করা জরুরি।
বিষয়টি নিয়ে উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তারা তাদের অবস্থান কিছুটা জানিয়েছে। আমরা আমাদের অবস্থান তাদের কাছে ব্যাখ্যা করেছি, এভাবে দেওয়াটা (ঠেলে পাঠানো) ঠিক না, এটা আমরা তাদের বোঝাচ্ছি। আমরা বলছি যে আমাদের একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর (মানসম্মত পরিচালনা ব্যবস্থা) আছে। সেই প্রসিডিওর অনুযায়ী আমরা যাব। তারা তালিকা দিয়েছে। আমরা সেই তালিকাগুলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরীক্ষা করছি।’
আরও পড়ুনঅনতিবিলম্বে সীমান্তে ‘পুশ ইন’ বন্ধ চায় ঢাকা, দিল্লিকে চিঠি ১৩ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প শ ইন র প পদক ষ প উপদ ষ ট র ব ষয়ট অন র ধ ভ রতক
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে নৌপরিবহন উপদেষ্টাকে অবাঞ্ছিতের ঘোষণায় শোকজ, পরে ক্ষমা প্রার্থনা
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনকে চট্টগ্রাম বন্দরে অবাঞ্ছিত করার ঘোষণা দেওয়ার পর ক্ষমা চেয়েছেন সাবেক সিবিএ নেতা হুমায়ুন কবীর।
নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ হয়ে গত ২৮ জুন চট্টগ্রাম বন্দর অকশন শেড সংলগ্ন শ্রমিক দলের কার্যালয়ে এক কর্মীসভায় ওই সাবেক সিবিএ নেতা উপদেষ্টাকে নিয়ে এমন অসৌজন্যমূলক বক্তব্য দেন। তবে পরে এমন বক্তব্য ভুলবশত, অনিচ্ছাকৃত এবং অজ্ঞতাবশত বলে উল্লেখ করেন তিনি। এমন অসৌজন্যমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করে উপদেষ্টার কাছে এক কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন হুমায়ুন কবীর।
ওই সাবেক সিবিএ নেতার এমন বক্তব্যের কারণ জানতে চেয়ে গত ১ জুলাই কারণ দর্শানো নোটিশ ইস্যু করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে ৩ কর্মদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে তাকে এর উত্তর জানানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে নোটিশের জবাবে হুমায়ুন কবীর ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
মো. হুমায়ুন কবীর চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা ও পরিদর্শন বিভাগের সুপারিন্টেনডেন্ট অডিট হিসেবে কর্মরত। তিনি চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের (সাবেক সিবিএ) প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক। এনসিটি বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তার নেতৃত্বে দীর্ঘদিন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছে চট্টগ্রাম বন্দর জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল। সর্বশেষ এক কর্মসূচিতে উপদেষ্টাকে নিয়ে বক্তব্যের মাধ্যমে নতুন করে আলোচনায় আসেন তিনি।