হত্যাসহ একাদিক মামলার আসামি হিসেবে মানিকগঞ্জের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়েছে সাবেক সংসদ সদস্য ও কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগমকে।

বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাজিপুর জেলার কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পুলিশের প্রিজনভ্যানে করে মমতাজ বেগমকে আদালতে আনা হয়।

আদালত পুলিশের ওসি আবুল খায়ের জানান, ২০১৩ সালে সিঙ্গাইর উপজেলার গোবিন্দল এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিলে পুলিশের গুলিতে চারজন নিহত হন। এ ঘটনায় মমতাজ বেগমকে তিন নম্বর আসামি করে ২০২৪ সালে ২৫ অক্টোবর উপজেলার গোবিন্দল গ্রামের মো.

মজনু মোল্লা বাদী হয়ে সিঙ্গাইর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এছাড়া তার নির্বাচনী এলাকা হরিরামপুর থানায় হামলা, মারধর ও ভাঙচুরের অভিযোগে আরেকটি মামলা রয়েছে। গত ২৯ অক্টোবর হরিরামপুর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. দেলোয়ার হোসেন মামলাটি দাযের করেন।

ওসি আরও জানান, আজ সকাল সাড়ে ১১টায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-১ এর বিচারক মুহম্মদ আব্দুন নূর ও ৩ এর বিচারক আইভি আক্তারের আদালতে মমতাজ বেগমের শুনানি হবে।
এর আগে ঢাকায় বেশ কিছু থানায় দায়ের করা হত্যা মামলায় মমতাজ বেগম চার দিনের রিমান্ডে ছিলেন। রিমান্ড শেষে মমতাজ বেগমকে কাশিমপুর কারাগারে রাখা হয়েছিল।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মমত জ ম ন কগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

এলোমেলো ক্রিকেট, দুরবস্থা মানসিকতাতেও

ডেভ হোয়াটমোর তখন বাংলাদেশ দলের কোচ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের করুণ পরাজয়। চট্টগ্রামের দর্শকরা তখন দলের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি ও দর্শকদের চাওয়া-পাওয়া সম্পর্কে খুব ভালোভাবে জানতেন ডেভ। শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপ জেতানো এই কোচ সেদিন বাংলাদেশ দলকে এক ভিন্নধর্মী ‘শাস্তি’ দিয়েছিলেন।

তিনি পুরো দলকে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের গ্যালারির সামনে এক সারিতে দাঁড় করিয়ে রাখেন। আর উপস্থিত দর্শকরাই তখন প্রকাশ করেন তাদের ক্ষোভ। সেই ঘটনাকেই পরবর্তীতে ‘শাস্তি’ হিসেবে অভিহিত করেন তৎকালীন অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন।

গতকাল শারজাহ স্টেডিয়ামে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাংলাদেশের অসহায় পারফরম্যান্স দেখে গ্যালারির দর্শকরাও ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দুয়োধ্বনি দেন, অকথ্য ভাষায় কথা বলেন। খেলোয়াড়দের নিবেদন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। অধিকাংশ ক্রিকেটার তা মেনে নিলেও, শামীম হোসেন পাটোয়ারী তা সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেন।

আরো পড়ুন:

রিশাদকে উড়িয়ে নিলো লাহোর

নজিরবিহীন পরিণতির শিকার দিল্লি

কিন্তু শুধু প্রতিবাদ করলেই কি সমাধান হয়? মাঠের পারফরম্যান্সই কি আসল নয়? বাংলাদেশের এলোমেলো ক্রিকেট দীর্ঘদিন ধরেই সংকটের মধ্যে আছে। এই ফরম্যাটে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার আরেক সহযোগী দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে ২–১ ব্যবধানে সিরিজ হার— নিঃসন্দেহে বড় এক লজ্জা।

আইসিসির সহযোগী দেশগুলোর বিপক্ষে আগেও হেরেছে বাংলাদেশ। তবে এবার সিরিজ হারের মাধ্যমে সেই লজ্জার তালিকায় যুক্ত হলো নতুন অধ্যায়। নির্দিষ্ট দিনে যেকোনো দল ভালো খেললে জয় পেতেই পারে, এটাই ক্রিকেট। কিন্তু হার কোন দলের বিপক্ষে, কীভাবে হারল, কেন হারল; এসবও বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে।

বাংলাদেশের অবস্থা এতটাই দুর্বল যে, আমিরাতের বিপক্ষে হারের কারণ হিসেবে অধিনায়ক লিটন দাস ম্যাচের সময়সূচি ও টসের অজুহাত দেন। তিন ম্যাচেই পরে বল করায় দল সুবিধা পায়নি বলে দাবি করেন তিনি। অথচ প্রতিপক্ষ দলে ছিল পাঁচজন নতুন ক্রিকেটার, যারা এই সিরিজেই অভিষেক করেন। অভিজ্ঞতা আর সামর্থ্যে পিছিয়ে থাকা দলের কাছে আত্মসমর্পণ করে দিল বাংলাদেশের অভিজ্ঞ দল।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে নির্দিষ্ট ছকে আধিপত্য বিস্তার করতে হয়। আধুনিক ক্রিকেটের ধারার সঙ্গে তাল মিলিয়ে খেলতে হয়। কিন্তু এখনও বাংলাদেশ এই ফরম্যাটে নিজের ব্র্যান্ড দাঁড় করাতে পারেনি। পরিকল্পনার অভাবের পাশাপাশি মানসিক প্রস্তুতিতে রয়েছে বড় ঘাটতি। আধুনিক ক্রিকেট যেখানে পৌঁছেছে, সেখানে বাংলাদেশের অবস্থান যেন এখনও তলানিতে।

পরিসংখ্যানও বাংলাদেশের পক্ষে নয়। ১৮৫টি টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের জয় মাত্র ৭২টি, হেরেছে ১০৯টি ম্যাচে। এমন হতশ্রী পারফরম্যান্সই বলে দেয়, ছোট ফরম্যাটে বাংলাদেশ এখনও নিয়মিত নাকানিচুবানি খাচ্ছে। কখনো-সখনো যে ক’টি সাফল্য আসে, সেগুলোর ধারাবাহিকতা থাকে না।

চোটের কারণে এ সিরিজে ছিল না তাসকিন আহমেদ। মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম ম্যাচে খেললেও পরে দল ছেড়ে চলে যান আইপিএলে খেলতে। যখন দেশের পারফরম্যান্স হোঁচট খাচ্ছে, তখন আইপিএল খেলতে যাওয়া এবং বিসিবির অনুমতি দেওয়া—এটা বড় প্রশ্নের জন্ম দেয়। তবে এ ধরনের ঘটনা মোস্তাফিজ এর আগেও করেছেন।

সফরের শুরু থেকেই ছিল অস্থিরতা। দেশের একমাত্র টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতা বিপিএলে দারুণ পারফর্ম করে টুর্নামেন্ট সেরা হন মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু সেই মিরাজকে এই সিরিজে উপেক্ষা করেছেন নির্বাচকরা। বিষয়টি নিয়ে মিরাজও আফসোস প্রকাশ করতে দ্বিধা করেননি।

দল নির্বাচন, এলোমেলো পারফরম্যান্স, ঢিলেঢালা মানসিকতা—সব মিলিয়ে দেশের ক্রিকেটে চলছে চরম দুরবস্থা। ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, যার স্পষ্ট প্রতিফলন দেখা যায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে। প্রশ্ন উঠছে—এই বিপর্যয় কাটাতে কি কারো কাছে কোনো উপায় আছে?

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ