পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক স্বল্পস্থায়ী অথচ গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অসাধারণ নেতৃত্ব ও দেশের পক্ষে অবদানের জন্য তাঁকে এই মর্যাদাপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।

ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, শেষবার প্রায় ৬৬ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের কোনো সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শালের পদে আসীন হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাবিনেট তৎকালীন সেনাপ্রধান আইয়ুব খানকে সেই সম্মানজনক পদ দিয়েছিল।

আইয়ুব খান ব্রিটিশ রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে সামরিক জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং পরে ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

ফিল্ড মার্শাল: ইতিহাস–উৎপত্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

ফিল্ড মার্শাল পদটি মূলত পাঁচ তারকাবিশিষ্ট সর্বোচ্চ সামরিক পদ। পুরোনো জার্মান ভাষায় এর অর্থ রাজার ঘোড়ার তত্ত্বাবধায়ক বা অধিনায়ক। এই পদের ইতিহাস প্রায় ৮৪০ বছরের পুরোনো। ১১৮৫ সালে ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ অগাস্তাস জেনারেল আলবারিক ক্লেমেন্টকে বিশ্বের প্রথম ফিল্ড মার্শাল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।

জেনারেল ক্লেমেন্ট তৃতীয় ক্রুসেডে (জেরুজালেম দখলের যুদ্ধ) রাজা ফিলিপের সঙ্গে ছিলেন। তিনি ১১৯১ সালে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন। এরপর বিভিন্ন দেশে শত শত ফিল্ড মার্শাল নিযুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্যে ১৪১ জন এবং রুশ সাম্রাজ্যে ৬৪ জন ফিল্ড মার্শাল নিয়োগ পেয়েছিলেন।

ভারতের প্রথম ফিল্ড মার্শাল ছিলেন জেনারেল স্যাম মানেকশ। তিনি ১৯৭৩ সালে এই পদে উন্নীত হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। পরে এ যুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হয়।

ফ্রান্সে ১৭৯৩ থেকে ১৮০৪ সাল পর্যন্ত এই পদটি বিলুপ্ত অবস্থায় ছিল। তবে পরে এই পদটি আবার প্রবর্তন করা হয় এবং খোদ নেপোলিয়ন নিজেই ফিল্ড মার্শাল হন। জার্মানিতে এই পদটি চালু হয় ১৬৩১ সালে। জার্মানির প্রথম ফিল্ড মার্শাল ছিলেন জেনারেল হান্স বয়েটজেনবুর্গ।

১৭০০ সালে রাশিয়ার কাউন্ট গোলভিন ফিল্ড মার্শাল হন। ১৭৩৬ সালে ব্রিটেনের জেনারেল জর্জ হ্যামিল্টন এই পদে ভূষিত হন। ‘এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’ ও ‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি’ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

মর্যাদাপূর্ণ এই পদ বহু দেশের সামরিক বাহিনীতে দেখা গেছে। যেমন গ্রেট ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তান, চীন, ফিনল্যান্ড, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, ইতালি, ব্রুনেই, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস, জাপান, তুরস্ক, সৌদি আরব, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, সুইডেন, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, ব্রাজিল, ওমান, দক্ষিণ ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, জায়ার, নেপাল, মঙ্গোলিয়া, ইথিওপিয়া, মিসর, বেলারুশ, বাহরাইন, ইয়েমেন, ফিলিপাইন, পেরু, উত্তর কোরিয়া, ঘানা, যুগোস্লাভিয়া, ভেনেজুয়েলা, উগান্ডা, জর্ডান, ইরান, ইরাক, লাইবেরিয়া, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক, তিউনিসিয়া, সুদান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সার্বিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি দেশ।

জেনারেল স্যাম মানেকশ ১৯৭৩ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে ফিল্ড মার্শালের পদে উন্নীত হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাঁর নেতৃত্বে তখন ভারতীয় বাহিনী ১৯৭১ সালে যুদ্ধে অংশ নেয়।

ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান স্যাম মানেকশ ফিল্ড মার্শাল হয়েছিলেন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র প রথম

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ