পৃথিবীতে কীভাবে ‘ফিল্ড মার্শাল’ পদটি এল, কারা এই পদ পেয়েছিলেন
Published: 22nd, May 2025 GMT
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল সৈয়দ আসিম মুনিরকে ফিল্ড মার্শাল হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক স্বল্পস্থায়ী অথচ গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধে অসাধারণ নেতৃত্ব ও দেশের পক্ষে অবদানের জন্য তাঁকে এই মর্যাদাপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।
ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, শেষবার প্রায় ৬৬ বছর আগে, অর্থাৎ ১৯৫৯ সালে পাকিস্তানের কোনো সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শালের পদে আসীন হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সিয়াল ক্যাবিনেট তৎকালীন সেনাপ্রধান আইয়ুব খানকে সেই সম্মানজনক পদ দিয়েছিল।
আইয়ুব খান ব্রিটিশ রয়্যাল মিলিটারি একাডেমি স্যান্ডহার্স্ট থেকে সামরিক জীবন শুরু করেছিলেন। তিনি ১৯৫৮ সালের অক্টোবরে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন এবং পরে ১৯৬৫ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
ফিল্ড মার্শাল: ইতিহাস–উৎপত্তি এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
ফিল্ড মার্শাল পদটি মূলত পাঁচ তারকাবিশিষ্ট সর্বোচ্চ সামরিক পদ। পুরোনো জার্মান ভাষায় এর অর্থ রাজার ঘোড়ার তত্ত্বাবধায়ক বা অধিনায়ক। এই পদের ইতিহাস প্রায় ৮৪০ বছরের পুরোনো। ১১৮৫ সালে ফ্রান্সের রাজা ফিলিপ অগাস্তাস জেনারেল আলবারিক ক্লেমেন্টকে বিশ্বের প্রথম ফিল্ড মার্শাল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
জেনারেল ক্লেমেন্ট তৃতীয় ক্রুসেডে (জেরুজালেম দখলের যুদ্ধ) রাজা ফিলিপের সঙ্গে ছিলেন। তিনি ১১৯১ সালে যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হন। এরপর বিভিন্ন দেশে শত শত ফিল্ড মার্শাল নিযুক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্যে ১৪১ জন এবং রুশ সাম্রাজ্যে ৬৪ জন ফিল্ড মার্শাল নিয়োগ পেয়েছিলেন।
ভারতের প্রথম ফিল্ড মার্শাল ছিলেন জেনারেল স্যাম মানেকশ। তিনি ১৯৭৩ সালে এই পদে উন্নীত হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাঁর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। পরে এ যুদ্ধে পাকিস্তান পরাজিত হয়।
ফ্রান্সে ১৭৯৩ থেকে ১৮০৪ সাল পর্যন্ত এই পদটি বিলুপ্ত অবস্থায় ছিল। তবে পরে এই পদটি আবার প্রবর্তন করা হয় এবং খোদ নেপোলিয়ন নিজেই ফিল্ড মার্শাল হন। জার্মানিতে এই পদটি চালু হয় ১৬৩১ সালে। জার্মানির প্রথম ফিল্ড মার্শাল ছিলেন জেনারেল হান্স বয়েটজেনবুর্গ।
১৭০০ সালে রাশিয়ার কাউন্ট গোলভিন ফিল্ড মার্শাল হন। ১৭৩৬ সালে ব্রিটেনের জেনারেল জর্জ হ্যামিল্টন এই পদে ভূষিত হন। ‘এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’ ও ‘অক্সফোর্ড ডিকশনারি অব ন্যাশনাল বায়োগ্রাফি’ সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
মর্যাদাপূর্ণ এই পদ বহু দেশের সামরিক বাহিনীতে দেখা গেছে। যেমন গ্রেট ব্রিটেন, ভারত, পাকিস্তান, চীন, ফিনল্যান্ড, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন, রাশিয়া, অস্ট্রিয়া, ইতালি, ব্রুনেই, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, নিউজিল্যান্ড, গ্রিস, জাপান, তুরস্ক, সৌদি আরব, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, সুইডেন, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, ব্রাজিল, ওমান, দক্ষিণ ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, জায়ার, নেপাল, মঙ্গোলিয়া, ইথিওপিয়া, মিসর, বেলারুশ, বাহরাইন, ইয়েমেন, ফিলিপাইন, পেরু, উত্তর কোরিয়া, ঘানা, যুগোস্লাভিয়া, ভেনেজুয়েলা, উগান্ডা, জর্ডান, ইরান, ইরাক, লাইবেরিয়া, রোমানিয়া, ক্রোয়েশিয়া, কম্বোডিয়া, মধ্য আফ্রিকান রিপাবলিক, তিউনিসিয়া, সুদান, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, সার্বিয়া, সিরিয়া ইত্যাদি দেশ।
জেনারেল স্যাম মানেকশ ১৯৭৩ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে ফিল্ড মার্শালের পদে উন্নীত হন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাঁর নেতৃত্বে তখন ভারতীয় বাহিনী ১৯৭১ সালে যুদ্ধে অংশ নেয়।
ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান স্যাম মানেকশ ফিল্ড মার্শাল হয়েছিলেন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহের ১১টি সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল
ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ১১টি সংবাদপত্রের ডিক্লেয়ারেশন বাতিল করেছে জেলা প্রশাসন। সোমবার (১৩ অক্টোবর) বিকেলে ময়মনসিংহ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট উম্মে হাবিবা মীরা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) ১১টি সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল করে সম্পাদক ও প্রকাশককে চিঠি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
ডিক্লারেশন বাতিল হওয়া পত্রিকাগুলো হলো- মো. শামসুল আলম খান সম্পাদিত দৈনিক আজকের ময়মনসিংহ; এফ এম এ ছালাম সম্পাদিত দৈনিক দেশের খবর; এন বি এম ইব্রাহীম খলিল রহিম সম্পাদিত দৈনিক বিশ্বের মুখপত্র; মরহুম আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার সম্পাদিত দৈনিক ঈষিকা; নাসির উদ্দিন আহমেদ সম্পাদিত দৈনিক অদম্য বাংলা; আ ন ম ফারুক সম্পাদিত দৈনিক আলোকিত ময়মনসিংহ ও দৈনিক দিগন্ত বাংলা; শেখ মেহেদী হাসান নাদিম প্রকাশিত দৈনিক জাহান; ওমর ফারুক সম্পাদিত দৈনিক কিষানের দেশ; ফরিদা ইয়াসমীন রত্না সম্পাদিত হৃদয়ে বাংলাদেশ; বিকাশ রায় সম্পাদিত সাপ্তাহিক পরিধি ও ওমর ফারুক সম্পাদিত দৈনিক কিষানের দেশ।
চিঠিতে বলা হয়েছে, গত ১০ ও ১৩ এপ্রিল ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত ১১টি সংবাদপত্রের ২য় ও ৩য় পাতায় হুবহু একই সংবাদ ও তথ্যচিত্র প্রকাশ করা হয়েছে এবং উল্লিখিত সংখ্যাসমূহ অনুমোদিত ছাপাখানা হতে মুদ্রিত হয়নি। এ ঘটনায় ১৬ এপ্রিল ১৩ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। ২১ এপ্রিল ভুল স্বীকার করে ঘটনাটিকে সম্পূর্ণভাবে বাহ্যিক ছাপাখানার দায়িত্বহীনতা ও নিজস্ব মুদ্রণ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণে সৃষ্ট একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি মর্মে ব্যাখ্যাসহ জবাব দাখিল করেছেন। যা যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হয়নি।
গত ১৮ মে জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে একজন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সরেজমিন তদন্তেও প্রমাণিত হয়েছে যে প্রকাশিত ১১টি সংবাদপত্র অনুমোদিত ছাপাখানা হতে মুদ্রিত হচ্ছে না। যা ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধিকরণ) আইন, ১৯৭৩-এর ৪ ও ৭ ধারার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ঘোষণাপত্র ছাপাখানা ও প্রকাশনা (ঘোষণা ও নিবন্ধিকরণ) আইন, ১৯৭৩-এর ১০ ধারায় ১১টি সংবাদপত্রের ডিক্লারেশন বাতিল করা হলো।
ঢাকা/মিলন/রাজীব