বৃষ্টি-অবরোধে ঢাকায় তীব্র যানজট, ভোগান্তিতে নগরবাসী
Published: 22nd, May 2025 GMT
রাজধানীতে টানা আধাঘণ্টার প্রবল বৃষ্টিতে সৃষ্ট জলাবদ্ধতা ও কয়েকটি স্থানে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের অবস্থান ও অবরোধ কর্মসূচির কারণে সড়কে তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে। ফলে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষরা।
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে অবিলম্বে শপথ নেওয়ার দাবিতে তার সমর্থকরা সকাল ১০টা থেকে নগর ভবন, হাইকোর্ট মোড়, মৎস্য ভবন ও কাকরাইল মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। ফলে এসব এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও একই সময় সকাল ১০টা থেকে শাহবাগ মোড় ও হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। সংগঠনটির দাবি, তাদের নেতা সাম্যর হত্যাকাণ্ডের বিচার নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতা চলায় তারা এ কর্মসূচি ডেকেছে। এই দুটি এলাকাতে বর্তমানে যানজটে বিপর্যস্ত নগরবাসী।
এর ভেতর টানা আধাঘণ্টার প্রবল বৃষ্টিতে ধানমন্ডির কিছু জায়গা ও নিউমার্কেট এলাকাসহ নানা জায়গায় তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। এতে প্রবল যানজটের কবলে পড়ে নাকাল হচ্ছেন রাজধানীবাসী।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাটা সিগন্যাল এলাকায় যানজটে আটকে থাকা সমকাল সাংবাদিক ওবায়দুর রহমান জানান, বৃষ্টিতে নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব, বাটা সিগন্যাল এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। আশপাশের বিপনীবিতানগুলোতেও পানি ঢুকেছে। তবে জলাবদ্ধতার কারণে সড়কে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। বাটা সিগন্যালে গিয়ে বাস চালকরা সকল যাত্রীদের বাস থেকে নামিয়ে দেন।
উত্তরা থেকে গুলিস্তানগামী এক বাসচালক বলেন, বৃষ্টির কারণে সড়কে পানি জমে গেছে। একই স্থানে ১ ঘণ্টা ধরে আটকে আছি। এমন অবস্থা হলে সারাদিনেও গুলিস্তানে পৌঁছাতে পারব না।
আজিমপুর নিবাসী হাসান নামে এক ব্যবসায়ী বলেন, ব্যবসার কাজের জন্য জরুরি ভিত্তিতে মতিঝিল যাওয়ার দরকার ছিল। দ্রুত যাওয়ার জন্য মোটরসাইকেল নিয়েছিল কিন্তু মৎস্য ভবন এলাকায় আধাঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি।
গুগল ম্যাপ ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অন্যতম গ্রুপ ট্রাফিক অ্যালার্টের মাধ্যমে জানা যায়, অবরোধ আর বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট যানজট এখন রাজধানীর মগবাজার, কারওয়ানবাজার, পান্থপথ, এয়ারপোর্ট রোড, খিলগাঁও, মালিবাগ, রামপুরা, হাতিরঝিল, মহাখালীসহ আরও অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক অবর ধ য নজট এল ক য় অবস থ য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’
ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।
এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’
ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।
কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?
কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা