গুগল আই/ও সম্মেলনে জেমিনির হালনাগাদ সংস্করণের পাশাপাশি চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য এআই টুল, অ্যাসিনক্রোনাস এআই কোডিং এজেন্টসহ এআইভিত্তিক বিভিন্ন পণ্য ও প্রযুক্তি দেখিয়েছে গুগল। গত মঙ্গলবার শুরু হওয়া দুই দিনের এ সম্মেলনে গুগল সার্চের এআই মোড, ডিপ রিসার্চ, ক্যানভাস, জিমেইল, গুগল মিটসহ ইমাজেন ৪, ভিও ৩ এবং লিরিয়া ২ এআই মডেল ও টুলের নতুন সংস্করণও প্রদর্শন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। আই/ও সম্মেলনে প্রদর্শন করা নতুন প্রযুক্তি ও সুবিধাগুলো জেনে নেওয়া যাক।

জেমিনি ২.

৫ ফ্ল্যাশ ও প্রো

সম্মেলনে এআই মডেল জেমিনি ২.৫ ফ্ল্যাশ ও প্রোতে নতুন সুবিধা যুক্তের ঘোষণা দিয়েছে গুগল, যার মধ্যে অন্যতম হলো ‘ডিপ থিঙ্ক’। বিশ্লেষণধর্মী সুবিধাটি এআই ব্যবহারকারীদের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার আগে একাধিক সম্ভাব্য উত্তর তৈরি করে রাখতে পারে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা চাইলে বিভিন্ন কাজের উপযোগী প্রয়োজনীয় উত্তর জানতে পারবেন। প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট কিছু ব্যবহারকারী জেমিনি এপিআইয়ের মাধ্যমে সুবিধাটি ব্যবহারের সুযোগ পাবেন। এ সুবিধার পাশাপাশি নেটিভ অডিও আউটপুট ও উন্নত নিরাপত্তাব্যবস্থাও যুক্ত করা হয়েছে জেমিনির নতুন মডেলগুলোয়।

চলচ্চিত্র নির্মাণের এআই টুল ‘ফ্লো’

‘ফ্লো’ নামের নতুন এআই টুলটি সিনেমার কৃত্রিম দৃশ্য ও ক্লিপ তৈরি করতে পারে। এটি গুগলের উন্নত এআই মডেল ভিও, ইমাজেন ও জেমিনির মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের নির্দেশমতো সিনেমার দৃশ্য তৈরি করে দেবে। শুধু তা–ই নয়, ব্যবহারকারীরা চাইলে কৃত্রিমভাবে তৈরি সিনেমার দৃশ্যগুলো সম্পাদনা, ক্যামেরা অ্যাঙ্গেল নিয়ন্ত্রণ ও ভিজ্যুয়াল ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন।

ভিও ৩, ইমাজেন ৪ এবং লিরিয়া ২

ভিও ৩ হলো গুগলের নতুন টেক্সট-টু-ভিডিও জেনারেটর। লেখা থেকে ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম ভিডিও জেনারেটরটির মাধ্যমে এবার রাস্তায় চলা গাড়ির শব্দ, পাখির ডাক যুক্তের পাশাপাশি বিভিন্ন চরিত্রের মুখে সংলাপ শোনা যাবে। অন্যদিকে ইমাজেন ৪ এখন ২কে রেজল্যুশনের ছবি তৈরি করতে পারবে এবং তাতে সূক্ষ্ম বিষয়বস্তু যেমন পানির ফোঁটা বা পশুর লোমও স্পষ্ট দেখা যাবে। এ ছাড়া মিউজিক জেনারেটর লিরিয়া ২–এর মাধ্যমে ইউটিউব শর্টস তৈরি করতে পারবেন নির্মাতারা।

নতুন কোডিং এজেন্ট ‘জুলস’

জেমিনি ২.৫ প্রো–নির্ভর ‘জুলস’ মূলত একটি এআই কোডিং এজেন্ট, যা নিজে থেকে কোড পড়ে বুঝতে পারার পাশাপাশি নতুন কোডও লিখতে পারে। এর ফলে ব্যবহারকারীরা কোডিং এজেন্টটির মাধ্যমে কোডিংয়ের বিভিন্ন তথ্য জানার পাশাপাশি নিজে থেকেই ত্রুটি শনাক্ত করতে পারবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করায় কোডিংয়ের ব্যাখ্যা, পরিকল্পনা ও পরিবর্তিত কোডের বিবরণও জানাতে পারে জুলস।

জেমিনিতে নতুন সুবিধা

জেমিনি লাইভ অপশনে নতুন করে ক্যামেরা ও স্ক্রিন শেয়ার সুবিধা যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে ফোনের পর্দায় বা ক্যামেরায় দেখা ছবির বিষয়ে জেমিনির সঙ্গে সরাসরি কথা বলা যাবে। এ ছাড়া জেমিনির ডেস্কটপ সংস্করণ আনারও ঘোষণা দিয়েছে গুগল। প্রাথমিকভাবে এসব সুবিধা শুধু যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এআই প্রো ও আলট্রা গ্রাহকদের জন্য উন্মুক্ত করা হবে।

গুগল সার্চে এআই মোড

গুগল তাদের সার্চ ইঞ্জিনকে সম্পূর্ণভাবে এআইভিত্তিক করার ঘোষণা দিয়েছে। এর ফলে ব্যবহারকারীদের সার্চ অভিজ্ঞতা বর্তমানের তুলনায় আরও উন্নত হবে। এআই মোড মূলত একধরনের পরিপূর্ণ এআই সার্চ সুবিধা, যার মাধ্যমে যেকোনো বিষয়ের ফলোআপ প্রশ্ন করার পাশাপাশি ওয়েব লিংক বিশ্লেষণ এবং ব্যবহারকারীর ধরন অনুযায়ী অনুসন্ধান করা যাবে।

এআই মোডে ভার্চ্যুয়াল কেনাকাটা

এআই মোডে পণ্য খোঁজার সময় ব্যবহারকারীদের সামনে ‘শপিং গ্রাফ’ নামে নতুন একটি প্যানেল প্রদর্শন করবে গুগল। এর ফলে গুগলে বর্তমানের তুলনায় আরও বেশি পছন্দ অনুযায়ী ছবি ও তথ্য দেখা যাবে। পছন্দের পোশাক কেনার আগে ভার্চ্যুয়াল ট্রাই-অন সুবিধাও পাওয়া যাবে, যা কাজে লাগিয়ে পোশাকটি মানাবে কি না, তা ভার্চ্যুয়ালি পরখ করা যাবে।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র এআই ট ল এআই ম ড ক ত কর র নত ন

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ