জাতীয় পর্যায়ে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার এবং জলবায়ু সহনশীলতা সংশ্লিষ্ট নীতিতে তরুণ জনগোষ্ঠীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষে শুরু হয়েছে ‘ইয়ুথ ক্যাটালিস্ট প্রজেক্ট’। এটি একটি যুব-নেতৃত্বাধীন উদ্যোগ। গত মঙ্গলবার স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। 

ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের এই প্রকল্পটি সুইডিশ উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা সিডা’র অর্থায়নে এবং সিরাক-বাংলাদেশ এর নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে। প্রকল্পটি বিশেষভাবে প্রান্তিক ও জলবায়ু-সংবেদনশীল তরুণ জনগোষ্ঠীর প্রজনন স্বাস্থ্যসেবা ও জলবায়ু সহনশীলতা সংশ্লিষ্ট জাতীয় নীতিমালায় পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে কাজ করবে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব ডা.

মো. সারোয়ার বারী’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও জাতিসংঘের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, গবেষক, এবং উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন। 

বক্তব্যে ডা. বারী- স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জলবায়ু ও সামগ্রিক সামাজিক উন্নয়নের মধ্যে সংযোগ তৈরি করে যুব-কেন্দ্রিক ও আন্তঃখাত নীতিগত সংস্কারের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘এটি আমাদের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি সংস্কারের পথে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এখনই সময়, তরুণদের সক্রিয়ভাবে নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার। তাদের কণ্ঠ, চাহিদা ও স্বপ্নকে নীতিমালার কেন্দ্রে রাখতে হবে। কারণ যুবশক্তিকে ক্ষমতায়ন মানেই ইতিবাচক পরিবর্তনের পথ তৈরি।’

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আশরাফী আহমেদ বাল্য বিবাহ ও কিশোরী গর্ভধারণের সমস্যা সমাধানে জরুরি পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে বলেন, সকল শ্রেণি ও জনগোষ্ঠীর তরুণদের কাছে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সঠিক ও সহজলভ্য তথ্য নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ইউএনএফপিএ বাংলাদেশের চিফ অব হেলথ ড. ভিভাবেন্দ্র সিং রঘুবংশী প্রকল্পটির সূচনা প্রক্রিয়ার বিবরণ দেন এবং সরকারের সক্রিয় সম্পৃক্ততা ও সিডা-র দৃঢ় অংশীদারিত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি জানান, বিভাগীয়, জেলা এবং জাতীয় পর্যায়ে পরামর্শমূলক সভার মাধ্যমে একটি জাতীয় যুব পজিশন পেপার তৈরি করা হবে।

সুইডেন দূতাবাসের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফেলিক্স হেলগেসন বলেন, এসআরএইচআর এবং জলবায়ু ন্যায়বিচার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো এগিয়ে নিতে যুব নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ, এবং এই প্রকল্পের লক্ষ্য সুইডেনের পররাষ্ট্র নীতি ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক যুব আন্দোলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সদস্য ড. হালিদা হানুম আখতার, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়-সিসিএইচপিইউ এর প্রফেসর ড. ইকবাল কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম এবং পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. সুলতান আহম্মেদ। 

সভায় সিরাক-বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম সৈকত প্রকল্পের রোডম্যাপ উপস্থাপন করেন এবং তৃণমূলের যুব কণ্ঠস্বর ও জাতীয় অঙ্গীকারসমূহের মধ্যে শক্তিশালী সেতুবন্ধন তৈরির বিষয়ে এ প্রকল্পটি কাজ করবে বলে জানান।

ইউএনএফপিএ-র এসআএইচআর বিশেষজ্ঞ ডা. এএসএম হাসান বলেন, ‘নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় যুব অংশগ্রহণ আর ঐচ্ছিক নয়; বরং এটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ভবিষ্যত-নির্ভর স্বাস্থ্য ও জলবায়ু অভিযোজন প্রক্রিয়ার জন্য অপরিহার্য।’

এসময় অন্যান্য বক্তারা যুব-সংশ্লিষ্ট, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রমাণভিত্তিক নীতিনির্ধারণের প্রয়োজনীয়তা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তরুণদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

অনুষ্ঠানে ‘বাংলাদেশ ইয়ুথ হেলথ অ্যাকশন নেটওয়ার্ক' এবং 'ইয়ুথ কোয়ালিশন ফর ক্লাইমেট জাস্টিস’ নামে দুটি জাতীয় যুব অ্যাডভোকেসি প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়। এই দুটি প্ল্যাটফর্ম তরুণদের সক্রিয় সম্পৃক্ততা এবং নেতৃত্বকে আরও সুসংগঠিত ও প্রভাব বিস্তারকারী করে তুলবে। বিশেষ করে, জাতীয় জনসংখ্যা নীতি, পরিবার পরিকল্পনা কৌশল পরিকল্পনা (২০২৪-২০৩০), জাতীয় কিশোর স্বাস্থ্য কৌশল (২০১৭-২০৩০), এবং জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা (২০২৩-২০৫০)-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ নীতিমালায় যুবদের অবদানকে দ্রুততর ও কার্যকর করতে এই প্ল্যাটফর্মগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সিনিয়র সহকারী সচিব সাইনী আজিজ-এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উন্মুক্ত সংলাপ-এ সারা দেশে থেকে আসা যুব প্রতিনিধিরা নানা গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু তুলে ধরেন। যেমন পোশাক খাতে মাসিক স্বাস্থ্যসুরক্ষা, দুর্যোগকালে সেবা বিঘ্নতা, প্রতিবন্ধী যুবদের প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রাপ্তি, ও আশ্রয়কেন্দ্রে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ইত্যাদি। এই আলোচনার ফলাফলসমূহ জাতীয়, যুব-নেতৃত্বাধীন একটি পজিশন পেপার তৈরিতে প্রতিফলিত হবে, যা বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও জলবায়ু সহনশীলতা নীতিতে যুব-নীতি সংলাপের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করবে।
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রকল প প রজনন স ব স থ য ন শ চ ত কর প রকল প ও জলব য পর ব র পর চ ল অন ষ ঠ প রক র গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

আড়াইহাজারে মেঘনা নদী থেকে ২ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ

ইলিশের প্রজনন মৌসুমে নির্বিঘ্ন প্রজনন নিশ্চিত করতে নারায়ণগঞ্জ জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের উদ্যোগে মেঘনা নদীতে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত আড়াইহাজার উপজেলার মেঘনা নদীর বিশনন্দী, দয়াকান্দা, চৈতেনকান্দা, খাগকান্দা ও কালাপাহাড়িয়া এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযানে আরও উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মল্লিকা রানী মন্ডল, আড়াইহাজার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জেসমিন আক্তার এবং খাগকান্দা নৌ- পুলিশের একটি টিম।

অভিযান চলাকালে প্রায় ২ লাখ মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল জব্দ করে জনসম্মুখে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। এছাড়া উদ্ধারকৃত ১০ কেজি ইলিশ মাছ স্থানীয় এতিমখানায় বিতরণ করা হয়।

এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, “ইলিশের প্রজনন নির্বিঘ্ন রাখতে মৎস্য অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

কেউ আইন অমান্য করে ইলিশ আহরণ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আজ অভিযানের সময় জেলেরা জাল ফেলে পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে দেশে বিড়ালের সংখ্যা মানুষের চেয়ে বেশি
  • আড়াইহাজারে মেঘনা নদী থেকে ২ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ
  • শেষ হলো বাকৃবিতে কৃষিতে বালাই ব্যবস্থাপনা-বিষয়ক প্রশিক্ষণ