রাস্তায় খড় ছড়িয়ে শুকানো এবং জননিরাপত্তার হুমকি
Published: 22nd, May 2025 GMT
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ, যেখানে ধান চাষ অন্যতম প্রধান ফসল হিসেবে পরিচিত। ধান কাটার মৌসুমে দেশের বহু অঞ্চলে এক পরিচিত দৃশ্য হয়ে দাঁড়ায় রাস্তায় খড় ছড়িয়ে দেওয়া, যাকে স্থানীয়ভাবে ‘নাড়া’ বলা হয়। খড় শুকিয়ে তাতে থাকা অবশিষ্ট ধান সংগ্রহ করা কৃষকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, এই চর্চা এখন সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হয়ে উঠেছে।
নাড়া বা খড় শুকানো কীভাবে হয়?
ধান কাটার পর অবশিষ্ট খড় মাঠ থেকে সংগ্রহ করে রোদে শুকানোর প্রয়োজন হয়, যাতে তাতে লেগে থাকা ধান সহজে খসে পড়ে এবং সংরক্ষণযোগ্য হয়। গ্রামে সাধারণত খোলা জায়গার অভাবে কৃষকেরা পাকা রাস্তাকে এই কাজের জন্য ব্যবহার করেন। কারণ, রাস্তায় রোদ সরাসরি পড়ে এবং সমতল থাকার কারণে খড় সহজে শুকিয়ে যায়।
কিন্তু রাস্তা ব্যবহার করার ফলে একদিকে যেমন যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, অন্যদিকে দেখা দেয় গুরুতর দুর্ঘটনার ঝুঁকি।
সরাসরি প্রভাব ও জনদুর্ভোগ১.
সড়কে স্লিপ করার ঝুঁকি
খড় শুকানো অবস্থায় রাস্তার ওপর ছড়িয়ে থাকে। যানবাহন খড়ের ওপর দিয়ে চললে চাকা হঠাৎ করে স্লিপ করতে পারে, বিশেষ করে ব্রেক প্রয়োগের সময়। দুই চাকা যানবাহনের জন্য এটা সবচেয়ে বিপজ্জনক। অনেক সময় হঠাৎ গতি কমাতে গিয়ে গাড়ি উল্টে যায়, ঘটে বড় দুর্ঘটনা।
২. জরুরি যান চলাচলে বাধা
অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস বা পুলিশের গাড়ির জন্য খড় ছড়ানো রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক সময় খড় সরানোর জন্য গাড়ি থামাতে হয়, যা সময়মতো পৌঁছানোর পথে বড় বাধা সৃষ্টি করে।
৩. ধুলাবালি ও পরিবেশ দূষণ
খড় শুকানোর সময় বাতাসে প্রচুর ধুলাবালি ছড়িয়ে পড়ে, যা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও চর্মরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রাস্তার পাশে বসবাসকারী বা পথচারীর জন্য এটা চরম স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনে।
৪. রাতের বেলা বিপদ দ্বিগুণ
রাতে হেডলাইটের আলোয় খড় অনেক সময় ঠিকমতো দেখা যায় না। ফলে চালক আচমকা খড়ের স্তূপে গাড়ি চালিয়ে দেন এবং নিয়ন্ত্রণ হারান। দূরপাল্লার বাস বা ট্রাক চালকদের জন্য এটি বড় হুমকি।
প্রশাসনের উদাসীনতাযদিও সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এবং স্থানীয় প্রশাসন নিয়ম অনুযায়ী সরকারি রাস্তা দখল বা ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে, তবে খোলা মাঠ বা চাতালের অভাবে এই নিয়ম বাস্তবায়ন হয় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারি নেই বললেই চলে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও অনেক সময় কৃষকের প্রতি সহানুভূতি দেখিয়ে বিষয়টি উপেক্ষা করেন, অথচ একই সঙ্গে তারা জানেন এর ঝুঁকি কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
সমাধানের বাস্তবমুখী প্রস্তাবনা১. বিকল্প চাতাল স্থাপন
প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারিভাবে খড় শুকানোর জন্য নির্দিষ্ট চাতাল বা খোলা জায়গা বরাদ্দ দেওয়া যেতে পারে, যেখানে কৃষকেরা বিনা মূল্যে খড় শুকাতে পারবেন।
২. সচেতনতা কার্যক্রম
কৃষি বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন এবং ইউনিয়ন পরিষদের যৌথ উদ্যোগে কৃষকদের সচেতন করতে হবে—রাস্তা জনসাধারণের চলাচলের জন্য, খড় শুকানোর জায়গা নয়।
৩. শাস্তিমূলক ব্যবস্থা
সুনির্দিষ্ট সময় পরও যদি কেউ রাস্তা দখল করে খড় শুকাতে থাকেন, তাহলে জরিমানা বা সতর্কীকরণ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
৪. মিডিয়ার ভূমিকা
স্থানীয় পত্রিকা, রেডিও বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর ঝুঁকি তুলে ধরে ক্যাম্পেইন চালানো যেতে পারে।
ধান চাষ এবং খড় শুকানো কৃষকের মৌলিক কাজ। তবে রাস্তায় খড় ছড়িয়ে দিয়ে তা শুকানোর ফলে যে জীবনহানির মতো দুর্ঘটনা ঘটছে, তা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। একটি জীবনও মূল্যবান। কৃষিকাজ ও জননিরাপত্তার মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে যথাযথ পরিকল্পনা, সচেতনতা ও প্রশাসনিক তৎপরতার মাধ্যমে। এখনই উদ্যোগ না নিলে, এই মৌসুমি চর্চা ভবিষ্যতে বড় ধরনের সড়ক বিপর্যয়ের রূপ নিতে পারে।
তৌফিক সুলতান
শিক্ষক
বি জে এস এম মডেল কলেজ
মনোহরদী, নরসিংদী।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ক সময় দ র ঘটন র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কারমাইকেল কলেজে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
রংপুরে কারমাইকেল কলেজে একাডেমিক ভবন, অডিটরিয়াম, আবাসিক হল নির্মাণ, শিক্ষক–সংকট সমাধানসহ ৩৭ দফা দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আজ সোমবার সকাল ৯টার দিকে শিক্ষার্থীরা কলেজের সব ভবনের গেটে তালা দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দাবি, গতকাল রোববার তাঁরা রেল ও সড়কপথ অবরোধ করে ২৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, শিক্ষা উপদেষ্টা ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে দাবি পূরণের ঘোষণা দেবেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কারমাইকেল কলেজ ১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে একাদশ থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত এ কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ হাজার। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, কলেজের বেশির ভাগ শ্রেণিকক্ষ জরাজীর্ণ। শ্রেণিকক্ষে ফ্যান, বেঞ্চ ও আলোর স্বল্পতা; মিলনায়তন নেই। ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আবাসিক হলে মাত্র ৮০০ শিক্ষার্থী থাকতে পারেন। শিক্ষক–সংকট কাটছে না।
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, কলেজে পুলিশ বক্স নেই। শিক্ষার্থীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। শিক্ষার্থী পরিবহনের জন্য দুটি বাস আছে, কিন্তু সেগুলো ফিটনেসবিহীন। এ রকম ছোট ছোট সমস্যার অন্ত নেই।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলে বেলা দেড়টা পর্যন্ত। পরে আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৯টায় আবার অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করে প্রশাসনিক ভবনের গেট ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।
ইসলাম শিক্ষা বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী আল মাহামুদ আসাদ বলেন, গতকাল রেল ও সড়কপথ অবরোধ করেছিলেন। তখন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসন (সার্বিক) আশ্বাস দিয়েছিলেন, শিক্ষা উপদেষ্টাকে ক্যাম্পাসে আসার দাবিটি তাঁরা তাঁকে জানাবেন। এখন পর্যন্ত এ রকম কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। দাবি না মানা পর্যন্ত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
জানতে চাইলে কারমাইকেল কলেজের অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে তাঁরা একমত। কিন্তু এসব দাবি বাস্তবায়নে তাঁদের করণীয় খুব সীমিত। কলেজ প্রশাসন থেকে ১৪টি দাবি পূরণে তাঁরা লিখিতভাবে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। শিক্ষা উপদেষ্টার ক্যাম্পাসে আসার জন্য শিক্ষার্থীরা যে দাবি করেছেন, এ বিষয়ে তাঁর একান্ত সচিবের (পিএস) সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।