চট্টগ্রাম একটি দ্রুত বর্ধনশীল মহানগরী। প্রতিদিন এ শহরে উৎপন্ন হয় বিপুল পরিমাণ গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক ও শিল্প বর্জ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি পর্যাপ্ত পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠেনি। সঠিক সময়ে বর্জ্য অপসারণ, বর্জ্য পৃথককরণ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান ও পুনঃচক্রায়নের ঘাটতি রয়েছে। ইপসা দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেবল নগরের সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং এটি নাগরিক স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও ইউনিলিভারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ইপসা পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। ইপসা মনে করে, উৎসে বর্জ্য পৃথককরণ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটবে। প্রতিটি বাসাবাড়ি, দোকান ও প্রতিষ্ঠানকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদাভাবে সংরক্ষণের জন্য সচেতন করতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহে সময়ানুবর্তিতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ করে ডিজিটাল ম্যাপিং, জিপিএস ট্র্যাকিং, ওয়ার্কফ্লো অটোমেশন ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ আরও কার্যকর করা সম্ভব। পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্যকে অর্থনৈতিক সম্পদে রূপান্তর-রিসাইক্লিং এবং কম্পোস্টিং প্লান্ট স্থাপন ও সম্প্রসারণে বিনিয়োগ প্রয়োজন।
ইপসা গত জুন ২০২২ সাল থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কাজ করছে। বিশেষ করে জনসম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বাড়ানো– স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশ শিক্ষা ও স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বিশেষ করে গত তিন বছরে তিন হাজার জন বর্জ্য সংগ্রহকারী ও ২০০ জন ভাঙারিওয়ালার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যার ৭০ শতাংশ হলো সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক। প্রতি কেজি সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক সংগ্রহের জন্য বর্জ্য সংগ্রহকারীদের দুই টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে; যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া এক হাজার ৮২৭ জন বর্জ্য সংগ্রহকারীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনা হয়েছে। 
প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এর রিসাইকেল ভ্যালু রয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি। ওই প্রক্রিয়ায় বর্জ্য সংগ্রহকারী থেকে রিসাইকেলার পর্যন্ত একটা ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে উঠলে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন সহজ ও গতিশীল হবে। 
আমরা আশাবাদী, নাগরিক সমাজ, প্রশাসন, এনজিও এবং উন্নয়ন অংশীদারদের সম্মিলিত উদ্যোগে চট্টগ্রামকে একটি পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব শহরে রূপান্তর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ইউনিলিভারের মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বৃত্তাকার অর্থনীতি শক্তিশালী এবং নগরের পরিবেশ উন্নত করা। v

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মত মত র ব যবহ র পর ব শ

এছাড়াও পড়ুন:

থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্র অপরাধীদের হাতে

চট্টগ্রাম নগরে থানা-ফাঁড়ি থেকে লুট হওয়া অনেক আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি। এসব অস্ত্র-গুলি ডাকাতি, ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহৃত হচ্ছে। লুট হওয়া অস্ত্র কেনাবেচায় পুলিশেরও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন গত বছরের ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম নগরের আটটি থানা ও আটটি ফাঁড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। সে সময় ৮১৩টি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৪৪ হাজার ৩২৪টি গুলি লুট হয়। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, বেশির ভাগ অস্ত্র-গুলি এখনো উদ্ধার হয়নি।

জানতে চাইলে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) মাহমুদা বেগম সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেননি। তবে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলছে বলে জানান তিনি।

গত ২১ জুলাই নগরের চান্দগাঁওয়ে ‘সন্ত্রাসী’ ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পো ও শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইসার বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়। পরে পুলিশ বহদ্দারহাট কাঁচাবাজার এলাকায় সন্ত্রাসী শহিদুলের আস্তানার সন্ধান পায়। সেখানে লুট হওয়া দুটি গুলি ও গুলির খোসা পাওয়া যায়।

চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, শহিদুলের দখল করা একটি ফ্ল্যাট থেকে গুলি ও দেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। ফ্ল্যাটটি টর্চার সেল হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

গত বছরের ২৯ আগস্ট নগরের বায়েজিদ-হাটহাজারী থানার সীমানাসংলগ্ন কুয়াইশ এলাকায় মাসুদ কায়সার ও মো. আনিস নামে দুই ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পাঁচটি গুলির খোসা (শটগানের কার্তুজ) উদ্ধার করা হয়। সেগুলোও লুট করা গুলির খোসা বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

নিহত আনিসের স্ত্রী শামিম আকতারের অভিযোগ, সন্ত্রাসী সাজ্জাদ পুলিশের গুলি ব্যবহার করে তাঁর স্বামীসহ দুজনকে খুন করেছেন। তবে সাজ্জাদ কারাগারে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

এদিকে ৩ মার্চ সাতকানিয়ায় পিটুনিতে দুজনের মৃত্যুর পর ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ যে পিস্তল উদ্ধার করে, সেটিও থানা থেকে লুট হওয়া।

১৭ এপ্রিল নগরের ডবলমুরিং থানার বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে আরিফ হোসেন নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁর আস্তানা থেকে একটি পিস্তল ও ৫০টি গুলি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে আরিফ স্বীকার করেন, এসব অস্ত্র-গুলি থানা থেকে লুট করা। তিনি অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি ও ছিনতাই করেন।

গত ২৫ জানুয়ারি ডবলমুরিং থানার ঝরনাপাড়ায় পুলিশ অভিযান চালিয়ে ১৬টি গুলি, ১টি রাবার বুলেটসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ছাড়া ১৫ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানার চৌমুহনী এলাকার চারিয়াপাড়ায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ অস্ত্রসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানায়, এসব অভিযানে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র-গুলি লুট হওয়া এবং গ্রেপ্তার ছয়জনই ছিনতাইকারী।

১৭ জুন নগরের মেরিন সড়ক থেকে পিস্তল-গুলিহ মো. রুবেল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পিস্তলটি থানা থেকে লুট হওয়া বলে পুলিশ নিশ্চিত করেছে। এদিকে পিস্তলটি বিক্রির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২১ মার্চ মো. রিয়াদ নামের পুলিশের এক কনস্টেবলসহ ছয়জনকে পতেঙ্গা ও বাকলিয়া থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে রিয়াদসহ তিনজন আদালতে অস্ত্র কেনাবেচায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, অস্ত্র, গুলি উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা না করলে কিংবা মনোযোগ না দিলে জননিরাপত্তা এবং সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলা হুমকির মুখে পড়বে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ