বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ
Published: 21st, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম একটি দ্রুত বর্ধনশীল মহানগরী। প্রতিদিন এ শহরে উৎপন্ন হয় বিপুল পরিমাণ গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক ও শিল্প বর্জ্য। দুঃখজনক হলেও সত্য, এখনও আমাদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি পর্যাপ্ত পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠেনি। সঠিক সময়ে বর্জ্য অপসারণ, বর্জ্য পৃথককরণ ও পুনর্ব্যবহারযোগ্য উপাদান ও পুনঃচক্রায়নের ঘাটতি রয়েছে। ইপসা দীর্ঘদিন ধরে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে কাজ করে আসছে। আমরা বিশ্বাস করি, উন্নত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কেবল নগরের সৌন্দর্য বাড়ায় না, বরং এটি নাগরিক স্বাস্থ্য, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা এবং টেকসই উন্নয়নের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও ইউনিলিভারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ইপসা পরিবেশ সুরক্ষায় সচেতনতা সৃষ্টি ও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে কাজ করছে। ইপসা মনে করে, উৎসে বর্জ্য পৃথককরণ পদ্ধতি বাস্তবায়ন হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন ঘটবে। প্রতিটি বাসাবাড়ি, দোকান ও প্রতিষ্ঠানকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদাভাবে সংরক্ষণের জন্য সচেতন করতে হবে। বর্জ্য সংগ্রহে সময়ানুবর্তিতা ও প্রযুক্তির ব্যবহার বিশেষ করে ডিজিটাল ম্যাপিং, জিপিএস ট্র্যাকিং, ওয়ার্কফ্লো অটোমেশন ইত্যাদি প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ আরও কার্যকর করা সম্ভব। পুনর্ব্যবহারযোগ্য বর্জ্যকে অর্থনৈতিক সম্পদে রূপান্তর-রিসাইক্লিং এবং কম্পোস্টিং প্লান্ট স্থাপন ও সম্প্রসারণে বিনিয়োগ প্রয়োজন।
ইপসা গত জুন ২০২২ সাল থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকার প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উন্নয়নে কাজ করছে। বিশেষ করে জনসম্পৃক্ততা ও সচেতনতা বাড়ানো– স্কুল, কলেজ, মসজিদ ও স্থানীয় পর্যায়ে পরিবেশ শিক্ষা ও স্বেচ্ছাসেবক কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। বিশেষ করে গত তিন বছরে তিন হাজার জন বর্জ্য সংগ্রহকারী ও ২০০ জন ভাঙারিওয়ালার মাধ্যমে প্রায় সাড়ে ২৪ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যার ৭০ শতাংশ হলো সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক। প্রতি কেজি সিঙ্গেল ইউজড প্লাস্টিক সংগ্রহের জন্য বর্জ্য সংগ্রহকারীদের দুই টাকা করে অনুদান দেওয়া হচ্ছে; যা তাদের জীবনমান উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া এক হাজার ৮২৭ জন বর্জ্য সংগ্রহকারীকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও জীবনমান উন্নয়নের জন্য স্বাস্থ্যবীমার আওতায় আনা হয়েছে।
প্লাস্টিক বর্জ্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য। এর রিসাইকেল ভ্যালু রয়েছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন জরুরি। ওই প্রক্রিয়ায় বর্জ্য সংগ্রহকারী থেকে রিসাইকেলার পর্যন্ত একটা ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে উঠলে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়ন সহজ ও গতিশীল হবে।
আমরা আশাবাদী, নাগরিক সমাজ, প্রশাসন, এনজিও এবং উন্নয়ন অংশীদারদের সম্মিলিত উদ্যোগে চট্টগ্রামকে একটি পরিচ্ছন্ন, স্বাস্থ্যসম্মত ও পরিবেশবান্ধব শহরে রূপান্তর করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ইউনিলিভারের মতো অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর এগিয়ে আসা প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্যমাত্রা প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বৃত্তাকার অর্থনীতি শক্তিশালী এবং নগরের পরিবেশ উন্নত করা। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মত মত র ব যবহ র পর ব শ
এছাড়াও পড়ুন:
রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সংস্কারের প্রতি প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে
বিশ্বজুড়ে গণতন্ত্রের অবনতির পর্বে, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। এ জন্য সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।
চলতি মাসে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকারবিষয়ক উপকমিটির প্রতিবেদনে এ মন্তব্য করা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ফ্রান্সের স্ত্রাসবুর্গে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দপ্তরে প্রতিবেদনটি পেশ করা হয়েছে। প্রতিবেদন উপস্থাপনের বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সফরে আসা প্রতিনিধিদলের প্রধান মুনির সাতোরি।
মুনির সাতোরি বলেন, ‘আমাদের সফরের দুটি উদ্দেশ্য ছিল। একটি হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কার্যক্রম পর্যালোচনা করা ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে মানবাধিকারের গুরুত্ব তুলে ধরা। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, প্রায় বিস্মৃত হতে যাওয়া রোহিঙ্গাদের পাশে থাকা। রোহিঙ্গা সংকট যাতে হারিয়ে না যায়, সে জন্য এটি ইইউর রাজনৈতিক এজেন্ডায় আবারও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।’
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারকাজ নিয়ে মুনির সাতোরি বলেন, ‘এখনো কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। এ ক্ষেত্রে আমরা সহযোগিতার প্রস্তাব করেছি।’
প্রতিনিধিদলের সদস্য ইজাবেল উইসেলার-লিমা বলেন, যখন বিশ্বে নাটকীয়ভাবে গণতন্ত্র অবনতির পথে, তখন বাংলাদেশ পথ পরিবর্তন করে দেখিয়েছে যে গণতন্ত্রের পথে যাওয়া যায়। তারা চেষ্টা করছে গণতন্ত্রের দিকে যাওয়ার। আর এ জন্য সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এটা আশা করা জরুরি যে সামনে নির্বাচন হবে এবং তা প্রতিযোগিতামূলক হবে, যা হওয়া উচিত। অন্তর্বর্তী সরকার এ জন্য চেষ্টা করছে।
রোহিঙ্গাদের প্রসঙ্গে ইজাবেল বলেন, ‘কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির। সম্প্রতি ইউক্রেন যুদ্ধ এবং গাজা সংকটের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি মানুষ ভুলে যাচ্ছে। এ সংকট আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয়। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠেছে। কারণ, মিয়ানমার তাদের দায়িত্ব নিচ্ছে না। আর বাংলাদেশও দরিদ্র দেশ। বাংলাদেশের নিজেরই বিশাল জনসংখ্যা রয়েছে। ফলে রোহিঙ্গাদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে নিয়ে নেওয়া তাদের জন্য সম্ভব নয়। রোহিঙ্গা সংকটের এখনকার চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশ বর্তমানে গণতন্ত্রের পথে উত্তরণে অবস্থায় রয়েছে।’
প্রতিনিধিদলের আরেক সদস্য আরকাদিউজ মুলারজিক বলেন, ‘রোহিঙ্গা শিবিরে সবচেয়ে বেশি মানবিক অনুদান আসে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলো থেকে, যদিও আগে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা দিত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতি প্রতিশ্রুতি খুবই নগণ্য, এটি আশ্চর্যজনক এবং গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বদলে অনেক দূরে থাকা ইউরোপের রাষ্ট্রগুলোকে এর দায়িত্ব নিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর বড় অংশগ্রহণকারী হওয়া উচিত ছিল। বিষয়টি নিয়ে ভারতের সঙ্গেও কথা বলা উচিত। কারণ, বর্তমানে আমরা ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি নিয়ে দর–কষাকষি করছি।’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিনিধিদলের সদস্য ক্যাটারিনা ভিয়েরা বলেন, এটি পরিষ্কার যে বাংলাদেশ ইতিহাসে দেশটি বর্তমানে একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এটি একটি সুযোগ সত্যিকারের অগ্রগতির। শিগগিরই হয়তো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশের ভেতরে গ্রহণযোগ্য গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সবাই নির্বাচনটি স্বচ্ছ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দেখতে চায়। এ বিষয়গুলো শুধু রাজনৈতিক নেতৃত্বের থেকে আসেনি, এসেছে নাগরিক সমাজ, ছাত্র ও যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকেও, যাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করেছি। তারা নিজেদের মধ্যে সংলাপের মধ্যে রয়েছে। যদিও অনুতাপের বিষয় হচ্ছে ধর্মীয়, লিঙ্গ ও নৃতাত্ত্বিক সংখ্যালঘু এবং নারীদের এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ নেই। ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের সমাজ গঠনে এখানে উন্নয়নের সুযোগ রয়েছে।
আরকাদিউজ আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে সংস্কারে উৎসাহ, যারা সংস্কারে কাজ করছেন, তাঁদের প্রতি সংহতি প্রকাশ ও গণতান্ত্রিক কাঠামোয় গঠনমূলক সহযোগিতা করে ইইউ ভূমিকা রাখতে পারে। বিশ্ব যখন গণতন্ত্রের উল্টো পথে যাত্রা করছে, তখন বাংলাদেশ নিয়ে আমাদের আশা করার অবকাশ রয়েছে। গণতন্ত্রের পথে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় বাংলাদেশ সামনে দিকে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেবে বলে মনে করি। এটি এখন নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারের প্রতি শান্তিপূর্ণ উপায়ে প্রতিশ্রুতি দেখাতে হবে।’
১৬ থেকে ১৮ সেপ্টেম্বর ইউরোপীয় পার্লামেন্টের মানবাধিকার উপকমিটির পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ সফর করে। এ সময়ে তারা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক দল, বেসরকারি সংস্থা, নাগরিক সমাজ সংগঠন, শ্রমিক প্রতিনিধি এবং মাঠপর্যায়ে কর্মরত বহুপক্ষীয় সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে।
এ ছাড়া প্রতিনিধিদলটি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরও পরিদর্শন করে।