ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়ক খানাখন্দে বেহাল, ক্ষোভ
Published: 23rd, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়কের পাশে নওধার গ্রামে সাবেক সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বাড়ি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে টানা তিনবার এমপি হওয়ার পরও নিজ বাড়িতে যাওয়ার সড়কটি চলাচলের উপযোগী করে যেতে পারেননি তিনি।
ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ঠাসা। ফলে প্রতিদিনই এ সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহন উল্টে ঘটছে দুর্ঘটনা।
সম্প্রতি সড়কটি সরেজমিন পরিদর্শনের সময় কথা হয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে। এ সময় এমপি রতনের প্রতি ক্ষোভ জানিয়ে সৈয়দপুর গ্রামের ব্যবসায়ী রতন মিয়া বলেন, রতন টানা ১৫ বছর এমপি থাকার পরও তাঁর নিজ বাড়ি যাওয়ার সড়কে নির্বিঘ্নে চলাচলের মতো ব্যবস্থা হয়নি।
পাইকুরাটি ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য জিয়া উদ্দিন জানান, সড়কটি সংস্কারের জন্য বারবার এমপির রতনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন তারা। কিন্তু এতে ইতিবাচক কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের অধীনে থাকা ধর্মপাশা-মধ্যনগর সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ২০ কিলোমিটার। ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট সুনামগঞ্জ সওজের যাবতীয় কার্যক্রম নেত্রকোনা সওজের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন থেকে ধর্মপাশা উপজেলার সওজের সব কার্যক্রম নেত্রকোনা সওজের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।
২০১৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে ধর্মপাশা কংস সেতুর উত্তর পাশ থেকে মধ্যনগরের পিঁপাড়াকান্দা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ করা হয়। দুর্বল কাজের কারণে কিছুদিন যেতে না যেতেই আবারও সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গলইখালী থেকে মধ্যনগর পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থান ভাঙনের কবলে পড়ে হাওরে বিলীন হয়েছিল। বন্যাও ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কটি। গত বছর গাছতলা বাজার থেকে মধ্যনগর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার হলেও ধর্মপাশা থেকে গাছতলা বাজার পর্যন্ত বাকি অর্ধেক সড়ক সংস্কার হয়নি। কোথাও কোথাও সড়কটি ভেঙে সরু হয়ে গেছে। ফলে যানবাহন পাশ কাটাতে গিয়ে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজটের। এ সড়কের বিজয় ২৪ চত্বর, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স-সংলগ্ন এলাকা, সৈয়দপুর ও মাটিকাটা গ্রামের সামনে এবং বাদশাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ ও সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের সামনে সৃষ্টি হয়েছে ছোটবড় গর্তের। এসব গর্তে বৃষ্টির পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। এতে নিয়মিত দুর্ঘটনা ঘটছে।
বাদশাগঞ্জ বাজারের ব্যবসায়ী সাকিন শাহ বলেন, এ সড়কের ওপর সুনামগঞ্জের কর্তৃত্ব নেই। ফলে সড়কটি অবহেলার শিকার। যা কাম্য নয়।
বৌলাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুন রশিদ ও থানুরা পাছাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এনামুল হক বলেন, জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা উচিত।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জুলফিকার আলী ভুট্টো বলেন, ঢাকা-মোহনগঞ্জ রুট ব্যবহার করে যেসব পর্যটক টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করেন, তাদের বাধ্য হয়ে এ সড়ক দিয়েই যেতে হয়। ফলে তাদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
ধর্মপাশা ইউএনও জনি রায় আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, জরুরি কাজে মাঝেমধ্যে এই সড়ক দিয়ে যেতে হয়। কিন্তু ভাঙাচোরা আর খানাখন্দের কারণে দুর্ভোগে পড়তে হয়। দ্রুত এ সড়কটি সংস্কারের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত।
নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল নূর সালেহীন বলেন, সড়কটির বাকি অংশ সংস্কারের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় মেরামতের অংশ হিসেবে সড়কের খানাখন্দ দ্রুত মেরামত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক ন ত রক ন র সড়ক র সওজ র এ সড়ক
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ–সংলগ্ন সড়ক সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ–সংলগ্ন সড়ক সংস্কারে অনিয়মের অভিযোগ তুলে দ্রুত সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন স্থানীয় লোকজন। এক সপ্তাহের মধ্যে সংস্কার না করা হলে সড়ক অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় শহরের মেসলেমা একাডেমির সামনে এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
২ ও ৩ নম্বর ওয়ার্ড এলাকাবাসীর ব্যানারে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন সাতক্ষীরা পৌরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি শফিকুল ইসলাম, সেক্রেটারি হাফেজ বেলাল হুসাইন, ৩ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সভাপতি ইব্রাহিম হোসেনসহ স্থানীয় বাসিন্দারা।
বক্তারা বলেন, এই সড়ক জেলার সবচেয়ে বড় বিদ্যাপীঠ সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ–সংলগ্ন। এই কলেজে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৭ হাজারের বেশি। এ ছাড়া এই সড়কের পাশে পল্লী মঙ্গল স্কুল ও কলেজ, মোসলেমা একাডেমি, সমাজসেবা অফিস, জেলা সমবায় অফিস, টেলিফোন অফিস, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের অফিস, জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অফিস, জাতীয় নিরাপত্তা অফিস (এনএসআই), ডাকঘরসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি অফিস রয়েছে। প্রতিদিন এই সড়কে অনেক মানুষ যাতায়াত করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে সড়কটির বেহাল দশার কারণে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি হচ্ছে। সড়কটি খানাখন্দে ভরা। বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলার কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী, রোগী পরিবহন ও সাধারণ যাত্রীদের জন্য এ পথে চলাচল বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। পুরাতন সাতক্ষীরা থেকে সরকারি কলেজ পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের অংশ হিসেবে তিন মাস আগে সড়কের পিচ তুলে ফেলার পাশাপাশি দুই ধারে ইট বসানোর জন্য গর্ত করা হয়। এর পর থেকে সড়কে আর কাজ হয়নি।
সাতক্ষীরা পৌরসভা প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সিআরএম প্রকল্পের আওতায় ও জার্মানভিত্তিক সংস্থা কেএফডব্লিউর অর্থায়নে ১৭ কোটি ৪৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা ব্যয়ে পৌরসভার সরকারি কলেজ–সংলগ্ন সড়কসহ ১০টি সড়ক নির্মাণের জন্য দরপত্রের ভিত্তিতে কাজটি পান পটুয়াখালীর ঠিকাদার কহিনুর এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিজানুর আলম। কাজের কার্যাদেশ দেওয়া হয় চলতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি। কাজ শেষ করার কথা ২০২৬ সালের ২০ এপ্রিল।
সাতক্ষীরা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী নাজমুল করিম বলেন, সাতক্ষীরা পৌরসভা থেকে দরপত্রের মাধ্যমে ১০টি সড়কের কাজ চলছে। সড়কগুলোর দৈর্ঘ্য ৯ দশমিক ১৭৬ কিলোমিটার। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় দুই কিলোমিটার। এ সড়কের প্রস্থ হবে ১৯ দশমিক ৪৪ ফুট। কলেজের কাছের সড়কটি শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হওয়ার এ কাজ আগে করার জন্য ঠিকাদারকে অনুরোধ করা হয়েছে।
কহিনুর এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক শিহাবুজ্জামান বলেন, সরকারি কলেজ–সংলগ্ন সড়কের কাজ ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। সড়ক নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান বালুর দুষ্প্রাপ্যতার পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। চাহিদামতো বালু পাওয়া গেলে ও বৃষ্টি না হলে সড়কের বাকি অংশ চলাচল উপযোগী করতে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। আর বৃষ্টি শেষে নভেম্বরে রাস্তায় পিচের কাজ হবে।