নারায়ণগঞ্জে ৬ মাসে ৪০ হত্যাকান্ড, বেড়েই চলছে অপরাধ প্রবণতা
Published: 23rd, June 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জে অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে। গত ৬ মাসে হত্যাকান্ডই ঘটেছে ৪০টি। এরমধ্যে তিনটি নৃসংশ হত্যাকান্ড ঘটেছে। ওই তিনজনকে হত্যার পর লাশ খন্ড বিখন্ড করে বস্তায় ভরে ইটের সুরকির নিচে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল।
চুরি-ডাকাতি, ছিণতাইয়ের পাশাপাশি একের পর এক হত্যাকান্ডের ঘটনায় উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ। আইনশৃংখলাবাহিনীর সক্রীয় তৎপরতার ঘাটতির কারণে অপরাধ প্রবনতা বেড়ে চলছে বলে মত দিয়েছেন সচেতন নাগরিকরা।
তবে প্রশাসন বলছেন, অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন থানা এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর রয়েছি।
পুলিশ ও ভিকটিম পরিবারের সূত্র মতে, গত ১২ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৯ জুন পর্যন্ত রাজধানী লঘোয়া এই জেলায় ৩৮ জন খুনের শিকার হয়েছে।
এরমধ্যে ২১ জুন রাতে বন্দরের শাহি মসজিদ এলাকায় নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর আবুল কাউছার আশা ও হান্নান সরকারের মধ্যে অটো স্ট্যান্ড ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে ও গণপিটুনীতে কুদ্দুস মিয়া (৬০) ও মেহেদী (২৫) নামে দুইজন নিহত হয়েছে।
গত ১৯ জুন রাত ১০ টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনারগাঁয়ের মোগরাপাড়া ছোট সাদিপুর এলাকার একটি ঝোপের ভেতর থেকে এক নারীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
গত ১৭ জুন দুপুরে ফতুল্লার পূর্ব শিহাচর লালখাঁ এলাকার সড়কের পাশের ড্রেন থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় জনি সরকার (২৫) নামে এক যুবকের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গত ১৬ জুন ভোররাতে বন্দরের দক্ষিণ লক্ষণখোলা এলাকায় গণপিটুনিতে অজ্ঞাত এক ডাকাত (৩৩) নিহত হয়েছে।
মাদক ব্যবসার পাওনা টাকা না পেয়ে ১৪ জুন বাসা থেকে ডেকে নিয়ে স্বপন মোল্লা (৩৫)কে ফতুল্লার উত্তর নরসিংপুর চিতাখোলার পাশে পিটিয়ে হত্যা করে প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা। নিহত স্বপন মোল্লা সদর উপজেলার গোপচর এলাকার মৃত সাহাদ আলী মোল্লার ছেলে।
সোনারগাঁয়ে নিখোঁজের একদিন পর ১২ জুন দুপুরে সাদীপুর বড়িবাড়ী এলাকার এশিয়ান হাইওয়ের রাস্তার পাশ থেকে ব্যবসায়ি সবুজ মিয়ার (৩৫) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত সবুজ মিয়া আড়াইহাজারের কাইমপুর এলাকার নুর মোহাম্মদ মিয়ার ছেলে।
গত ১০ জুন রূপগঞ্জের মাঝিপাড়া এলাকায় ছাত্রলীগ নেতাকে ছাড়াতে জনতার উপর জেলা ছাত্রদলের সাবেক প্রচার সম্পাদক জায়েদুল ইসলাম বাবুর এলোপাতাড়ি গুলিতে প্রাণ যায় সিলিন্ডার ব্যবসায়ী মামুনের।
৩ জুন বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী নয়াপাড়া ভান্ডারীপুর এলাকায় একটি বন্ধ দোকানের ভেতর থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় অটো রিকশা চালক দেলোয়ার হোসেনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নৃসংশভাবে তাকে হত্যার পর লাশ দোকানের ভেতর রেখে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে ঘাতকরা পালিয়ে যায়। নিহত দেলোয়ার চাঁদপুরের উত্তর মতলব ফরাজীকান্দি বড় হলুদিয়ার মো: মোহন বেপারীর ছেলে।
গত ২৩ মে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইলের ধনকুণ্ডা আব্দুল্লাহ খান রায়হান পায়েল (১৬) নামে এক কিশোরকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয়। সে সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল ধলকুন্ডা এলাকার মো.
গত ২০ মে বন্দরের দক্ষিণ কলাবাগ খালপাড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে নিজ মেয়ের হাতেই পিটুনি খেয়ে মারা যান বৃদ্ধ নাসির উদ্দিন দাদন (৬৫)। একইদিন রূপগঞ্জে পারিবারিক কলহের জেরে ভাতিজার ইটের আঘাতে চাচা মো: কালাম (৪৮) মারা যান। নিহত মো. কালাম উপজেলার পাড়াগাঁও এলাকার বাসিন্দা আব্দুল গফুরের ছেলে।
গত ১৯ মে ফতুল্লার রেলস্টেশন এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে স্ত্রী লাকি আক্তার (২৬)কে শ্বাসরোধে হত্যা করে স্বামী। সে পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার শ্বানেম্বর গ্রামের সাত্তার হাওলাদারের মেয়ে।
গত ১৪ মে নারায়ণগঞ্জ শহরের জিমখানা এলাকায় সিটি পার্কের গেইটের সামনে একদল দুর্বৃত্তের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান শাহাদাত (২৫) নামের এক যুবক। তিনি নতুন জিমখানা এলাকার বাসিন্দা গিয়াসউদ্দিন মিয়ার ছেলে। গত ১ মে ফতুল্লায় পশ্চিম শিয়াচর নুর মসজিদের সামনের ড্রেন থেকে এক মিশুক চালক আমিনুল ইসলামের (৫৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে সিদ্ধিরগঞ্জের পাঠানটুলী এনায়েত নগরের হাজী কাদির বেপারীর বাড়ির ভাড়াটিয়া।
গত ৩০ এপ্রিল বন্দরের দক্ষিণ বারপাড়া এলাকায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনিতে রহিম (২৩) নামে এক যুবক নিহত হয়। সে বন্দরের মুছাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ বারপাড়া এলাকার বাসিন্দা। গত ২৩ এপ্রিল আড়াইহাজারের হাইজাদী ইউনিয়নের নারান্দী গ্রামে ঝগড়ার এক পর্যায়ে গৃহবধূ সুলেখা আক্তার (৪৫)কে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে স্বামী। নিহত সুলেখা আক্তার কলাগাছিয়া নয়াপাড়া গ্রামের আব্দুলের মেয়ে।
গত ১১ এপ্রিল সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকায় পুকুরের পাড় থেকে গৃহবধূ লামিয়া (২২), তার আড়াই বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ ও তার বড় বোন মানসিক প্রতিবন্ধি স্বপ্নার বস্তিবন্দি খন্ড-বিখন্ড লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লামিয়ার স্বামী ইয়াছিন তাদের হত্যা করে লাশ টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে ইটের সুরকির নিচে চাপা দিয়ে রাখে।
গত ৩১ মার্চ ফতুল্লায় পঞ্চবটী-মুক্তারপুর রোডের কাশিপুর এলাকায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে পাভেল (৩৯) নামে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করা হয়। নিহত পাভেল কাশিপুর মধ্যপাড়ার হাসমত উল্লাহর ছেলে।
গত ১৯ মার্চ ফতুল্লার লামাপাড়ার দরগাহ মসজিদ এলাকায় ব্যাটারি চুরি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছুরিকাঘাতে এক কিশোর নিহত হয়। কিশোরের নাম জিহাদ (১৭)। সে পটুয়াখালী জেলার সদর থানার আউলিয়াপুর এলাকার জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে। একইদিন রূপগঞ্জের চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসিব নামের এক যুবদল কর্মী নিহত হোন। নিহত যুবদল কর্মী হাসিব চনপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের ছেলে।
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার দাপা ইদ্রাকপুর এলাকায় মুক্তিপণের দাবিতে বাইজিদ আকন (৯) নামের এক শিশুকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। নিহত শিশু ফতুল্লা রেলস্টেশন এলাকার শাহানাজের বাড়ীর ভাড়াটিয়া সাইফুল আকনের ছেলে। গত ১০ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ শহরের টানবাজার এলাকায় ফ্ল্যাটে ডাকাতির উদ্দেশ্যে উৎপল রায় (৬২) নামের এক ব্যক্তিকে গলাকেটে হত্যা করা হয়।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার ফজিলপুর এলাকায় পারিবারিক কলহের জেরে গৃহবধূ অন্ত বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। সে ওই এলাকার জসিম উদ্দিনের মেয়ে। একইদিন ফতুল্লার পূর্বলালপুর রেললাইন এলাকায় ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহবায়ক মামুন হোসাইনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। সে ওই এলাকার দূত সমন আলী বেপারীর ছেলে।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি রূপগঞ্জের তারাবো পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের পুরান বাজার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার ও মাদক নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় ছুরিকাঘাতে ২ যুবক নিহত হয়। নিহত যুবকরা হলেন, উপজেলার তারাব দক্ষিণপাড়া এলাকার আমির হোসেনের ছেলে রাশেদুল ইসলাম (২২) ও এলাকার রাজু মিয়ার ছেলে হৃদয় (২২)।
গত ১৮ জানুয়ারি আড়াইহাজারের কালাপাহাড়িয়া ইউনিয়নের রাধানগর এলাকায় জমি সংক্রান্ত বিরোধে মিলন মিয়া (৫০) নামে এক ট্রলার চালককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত মিলন রাধানগর এলাকার মৃত নোয়াব আলীর ছেলে। একইদিন সোনারগাঁয়ের দাড়িকান্দি ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে নিখোঁজ অটোরিক্সা চালক নয়ন মিয়ার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সে ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত জয়নাল আবেদীন মিয়ার ছেলে।
গত ১৪ জানুয়ারি আড়াইহাজারের মাহমুদপুর ইউনিয়নের শালমদীতে পাওনা টাকা ফেরত চাওয়ার জের ধরে মারধর করে নাজিমুদ্দিন (৩৫) নামের এক যুবককে হত্যা করা হয়। নিহত যুবক নাজিমুদ্দিন হলেন একই গ্রামের মৃত আব্দুল হাই এর ছেলে। গত ৬ জানুয়ারি রূপগঞ্জের পূর্বাচল উপশহর থেকে রানী (২৯) নামে এক নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত রানী রাজধানীর মোহাম্মদপুর জেনেভা ক্যাম্পের মো. কাশেমের মেয়ে।
গত ৪ জানুয়ারি আড়াইহাজারের মাহমুদপুর ইউনিয়নের জোগারদিয়া এলাকায় গণপিটুনিতে মকবুল হোসেন মুকুল (৪৫) নামে এক যুবকের মারা যায়। গত ১ জানুয়ারি ফতুল্লায় থার্টি ফার্স্ট নাইটের কনসার্টকে কেন্দ্র করে কিশোরদের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে হৃদয় (২০) নামে এক যুবক মারা যায়। সে পাগলা বউবাজার মাঠা পট্টি এলাকার হাবিবুর রহমান হাওলাদারের ছেলে।
গত ২৭ ডিসেম্বর আড়াইহাজারের হাইজাদী ইউনিয়নের রামনগর এলাকায় ডাকাত সন্দেহে গণপিটুনীতে বিল্লাল (৪৫) নামের এক ব্যক্তি মারা যায়। সে উপজেলার হাইজাদী ইউনিয়নের নারান্দী গ্রামের মজিদের ছেলে। গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর রূপগঞ্জের কাঞ্চন পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে কাঞ্চন পৌর ছাত্রদলের সাবেক আহবায়ক পাভেল মারা যান।
গত ২০ ডিসেম্বর ফতুল্লার শিয়াচর এলাকায় তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তর্কাতর্কির জেরে সিয়াম (১৮) নামের এক কারখানার শ্রমিককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত সিয়াম ফতুল্লার পিলকুনী পাঁচতলা বরিশাল টাওয়ার সংলগ্ন আব্দুল হালিম মিয়ার ছেলে। গত ১৫ ডিসেম্বর ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকায় ছিনতাইকারী আখ্যা দিয়ে কামরুল হাসান (২৪) নামের এক যুবককে গণপিটুনি দেয় এলাকাবাসী। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সে চাদপুরের হাইমচর থানার পশ্চিম কৃষ্টপুর গ্রামের মাইনুদ্দিন পাটোয়ারীর ছেলে।
গত ১৪ ডিসেম্বর শহরের দেওভোগ এলাকায় ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সীমান্ত মো: ওয়াজেদ (২০) মারা যায়। সে দেওভোগ এলাকার পাক্কা রোড এলাকার বাসিন্দা হাজী আলমের ছেলে। গত ১২ ডিসেম্বর আড়াইহাজারের হাইজাদী ইউনিয়নের সেন্দী এলাকায় নাতনির পরকিয়া প্রেমিকের লাথির আঘাতে শাহিদা বেগম (৬০) মারা যান। তিনি ওই এলাকার ফজলুল করিমের স্ত্রী।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের বেশীর ভাগ হত্যাকান্ডগুলো পারিবারিক ও মাদক ব্যবসায়িদের মধ্যে দ্বন্ধের জেরেই হয়েছে। আমরা জড়িতদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনেছি।
এছাড়া ক্লু-লেস হত্যাকান্ডগুলোও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রহস্য উদঘাটন করেছি। অপরাধীদের গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন থানা এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। অপরাধ দমনে ও অপরাধীদের গ্রেপ্তারের জন্য আমাদের অভিযান ও টহল জোরদার করা হয়েছে।
এবার ঈদেরও আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ছুটি বাতিল করা হয়েছে অফিসারদের। এরফলে ঈদের পর অপরাধ প্রবনতা অনেকটাই কমে আসছে। সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধপরিকর রয়েছি।
তথ্যসূত্র : মানবজমিন
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: হত য ন র য়ণগঞ জ অপর ধ প র ব র ক কলহ র জ র এল ক র ব স ন দ স দ ধ রগঞ জ র ন র য়ণগঞ জ প র এল ক র ন ম র এক য হত য ক ন ড ক ন দ র কর প র এল ক য় র পগঞ জ র গণপ ট ন ত র হ ইজ দ এল ক র ম ড স ম বর এল ক য় প উপজ ল র অপর ধ দ অপর ধ প ন হত হ স ঘর ষ ন হত স ব যবস র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
বন্দরে জোড়া খুন : নেপথ্যে আবুল কাউসার আশা?
নারায়ণগঞ্জে একের পর এক হত্যাকাণ্ড আর সন্ত্রাসের ঘটনায় জনমনে যখন তীব্র আতঙ্ক, তখন বন্দর এলাকার সাম্প্রতিক জোড়া খুনের ঘটনায় অভিযোগের তীর সরাসরি স্থানীয় বিএনপি নেতা আবুল কাউসার আশার দিকে।
রাজনৈতিক আধিপত্য, মাদক ব্যবসা ও অটোস্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে ঘটা এই সহিংসতায় আশার জড়িত থাকার জোরালো অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর মতে, তার বেপরোয়া কর্মকাণ্ডই বন্দরকে সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত করেছে।
গত শনিবার বন্দরে মাত্র আড়াই ঘণ্টার ব্যবধানে আব্দুল কুদ্দুস ও মেহেদী হাসান নামে দুজন নির্মমভাবে খুন হন। এই হত্যাকাণ্ডের মূলে রয়েছে আশার অনুসারী হিসেবে পরিচিত রনি-জাফর গ্রুপ এবং হান্নান সরকারের সমর্থক বাবু-মেহেদী গ্রুপের দীর্ঘদিনের দ্বন্দ্ব।
স্থানীয় সূত্র বলছে, উভয় গ্রুপই আদতে আশার নিয়ন্ত্রণে। হান্নান সরকারও আশার পিতা আবুল কালামের ছত্রছায়ায় রাজনীতি করে। এই নৃশংস ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী পর্যন্ত মোতায়েন করতে হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই আশা ও তার বাহিনী বন্দরে বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ফেলে যাওয়া বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, অটোস্ট্যান্ড, হাট-বাজার দখলের মিশনে নামে সে।
খান মাসুদ, আজমেরী ওসমানের মতো বিতর্কিত ও সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতদের গুন্ডা বাহিনী ও অনুসারী নিয়ে আশার আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা বন্দরের শান্ত পরিবেশকে বিঘ্নিত করছে বলে মনে করছেন অনেকে। সর্বশেষ অটোস্ট্যান্ড দখলের জেরেই এই জোড়া খুনের ঘটনা ঘটে।
নিহত মেহেদীর পরিবার আশার ভয়ে এতটাই তটস্থ যে, তারা মামলা পর্যন্ত করতে সাহস পাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিহতের স্বজনরা জানিয়েছেন, জোড়া খুনের নেপথ্যে থাকায় এবং মামলার ভয়ে আশা বিদেশে পালানোর পাঁয়তারা করছে।
শুধু দখলদারিত্ব আর সন্ত্রাসই নয়, আশার বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমেও নগ্ন হস্তক্ষেপের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগকারীরা জানান, সরকারি নিয়ম ভেঙে নিজের ডিগ্রি/অনার্স পাস স্ত্রীকে মাস্টার্স পাস দেখিয়ে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি বানিয়েছেন তিনি।
এমনকি, এসএসসি ফেল করা এক শিক্ষার্থীর বাবাকেও সেই কমিটির সদস্য করা হয়েছে বলে জানা গেছে, যা শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছে।
এলাকাবাসী বলছে, আশার মতো নেপথ্যের নায়করা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার কারণেই নারায়ণগঞ্জে অপরাধ কমছে না। তারা অবিলম্বে আশাসহ সকল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার এবং কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে সাধারণ মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে এবং অভিযুক্তরা দেশ ছেড়ে পালাতে না পারে।
পুলিশ সুপার আধিপত্য বিস্তারকে হত্যাকাণ্ডের কারণ বললেও, আশার মতো ব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নারায়ণগঞ্জে শান্তি ফিরবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান সাধারণ মানুষ।
এসব বিষয়ে কথা বলতে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগকারী আবুল কাউসার আশার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেন নি।
উল্লেখ্য, শনিবার রাত ৯টার দিকে বন্দর শাহী মসজিদ এলাকায় রনি-জাফর গ্রুপের সমর্থক পারভেজের বাবা আব্দুল কুদ্দুসকে চায়ের দোকান থেকে ডেকে নিয়ে যায় প্রতিপক্ষের লোকজন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, পারভেজকে না পেয়ে তার বাবা আব্দুল কুদ্দুসকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহতের ভাই দুদু মিয়া বলেন, “ভাই বারবার বলেছিল, আমারে জানে মাইরো না। কিন্তু ওরা শোনেনি।”
এই হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। কুদ্দুসের স্বজনরা তার মরদেহ নিয়ে মদনগঞ্জ-মদনপুর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এর মধ্যেই রাত সাড়ে ১১টার দিকে রনি-জাফর গ্রুপের লোকজন প্রতিপক্ষের ওপর হামলা চালায়।
এসময় তারা মেহেদী হাসানকে বন্দর সিরাজদৌল্লাহ ক্লাব মাঠের কাছে একা পেয়ে ধরে নিয়ে যায় এবং বেধড়ক পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে শহরের খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।