আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ১৪৭টি দল। বাহারি সব নামের বিভিন্ন দল ইসির নিবন্ধন পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে। নিবন্ধন চাওয়া এসব দলের মধ্যে রয়েছে নাকফুল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সলুশন পার্টি, বাংলাদেশ সংগ্রামী ভোটার পার্টি ও বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস)।

দুই দফায় নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়া দলগুলোর নামের তালিকা আজ সোমবার প্রকাশ করেছে ইসি। গত ১০ মার্চ আগ্রহী নতুন দলের কাছ থেকে নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে ইসি। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি দল আবেদন করে।

পরে এনসিপিসহ কিছু দলের অনুরোধে নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ানো হয়। এই সময়সীমা গতকাল রোববার শেষ হয়। শেষ দুই মাসে আবেদন জমা পড়ে ৮২টি। এর মধ্যে রোববার শেষ দিনেই আবেদন জমা পড়ে ৪২টি। ইসির নিবন্ধন পেলে এসব দল নিজস্ব মার্কায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।

বাহারি কিছু নাম

ইসির কাছে দুই দফায় যেসব দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে, সেগুলোর মধ্যে চারটি দলের নামে ‘বেকার’ শব্দটি রয়েছে। এগুলো হলো বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস) ও বাংলাদেশ বেকার সমাজ।

নিবন্ধন চেয়েছে বাংলাদেশ বেস্ট পলিটিক্যাল পার্টি, নাকফুল বাংলাদেশ, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি (আইজিপি), বাংলাদেশ নাগরিক কমান্ড, বাংলাদেশ জনগণের দল, বাংলাদেশ একাত্তর পার্টি, বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক প্রজন্ম, বাংলাদেশ ছাত্রজনতা পার্টি, বাংলাদেশ সলুশন পার্টি, বাংলাদেশ সংগ্রামী ভোটার পার্টি ও বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টির মতো দল।

নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করা দলগুলোর তালিকা.

pdfডাউনলোড

বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ জনগণের দল (বাজদ), জনতার কথা বলে, বাংলাদেশ শান্তির দল, বাংলাদেশ মাতৃভূমি দল, বাংলাদেশ পাক পাঞ্জাতন পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশি জনগণের পার্টি, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি (বাজপ), বাংলাদেশ সর্ব–স্বেচ্ছা উন্নয়ন দল নামেও নিবন্ধন চাওয়া হয়েছে।

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাংবাদিক শওকত মাহমুদের নেতৃত্বাধীন নতুন দল জনতা পার্টি বাংলাদেশ, ডেসটিনি গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, গেল সপ্তাহে আত্মপ্রকাশ করা দল বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টিও (বিআরপি) ইসির কাছে নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন বন ধ

এছাড়াও পড়ুন:

ঔপনিবেশিক রীতিনীতি ও অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা

সরকারি কর্মচারীদের বলা হয় পাবলিক সার্ভেন্ট, যদিও চর্চাটি ঠিক এর উল্টো। সার্ভেন্টরা তো মাস্টারদেরই ‘স্যার’ বা ‘মহোদয়’ সম্বোধন করবেন, কিন্তু দেখা যায় প্রতিটি দপ্তরে সেবা নিতে আসা নাগরিককে উল্টো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘স্যার’ সম্বোধন করতে হয়। ব্রিটিশরা নেটিভদের যা শিখিয়েছে তা নিজেদের দেশে তারা চর্চা করে না, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও বিলেতি-মার্কিনি কেউই শিক্ষকদেরও ‘স্যার’ সম্বোধন করেন না। নাম ধরেই ডাকেন। আমাদের দেশে অনেক সম্বোধনই অতিরঞ্জিত। এ পর্যন্ত যা শুনে এসেছি ‘মহামান্য’ কিংবা নাটক-সিনেমায় আদালতের দৃশ্যে যা দেখে এসেছি ‘ধর্মাবতার’, ‘মি লর্ড’– এ সবই ঔপনিবেশিক যুগের ‘হিজ এক্সেলেনসি’, ‘হার ম্যাজেসটি’ কিংবা ‘হার রয়্যাল হাইনেস’ এসব সম্বোধনের অনুরণন। এগুলো টিকে আছে কমনওয়েলথের ছায়ায়, কোথাও কোথাও কূটনৈতিক শিষ্টাচারের চর্চায়। আমাদের দেশে রাজতন্ত্র যেমন নেই, নেই অত্যাচারের প্রতীক জমিদারি-তালুকদারিও। উপনিবেশও নেই, রয়ে গেছে উপনিবেশের ভূত অথবা প্রেতাত্মা। 

কেবল পদ-পদবির কারণে এ দেশে জনগণ ও জনসেবকদের মধ্যে প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়। ১৭৭২ খ্রিষ্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস সৃষ্ট ডিস্ট্রিক্ট কালেক্টর, তৎপরবর্তী ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট, ডেপুটি কমিশনার পদবিগুলো নিঃসন্দেহে ঔপনিবেশিক। অনেকে তীব্র আপত্তি তুলেছেন ডেপুটি কমিশনারের বাংলা কী করে হয় ‘জেলা প্রশাসক’? 

সার্বিক রাষ্ট্র পরিচালনার একটি অংশ হচ্ছে আইন ও বিচার ব্যবস্থা। সেখানে এখনও কোনোই সংস্কার হয়নি। বিগত সরকারের ১৫ বছরে এবং তারও আগে ঔপনিবেশিক ধারার অনুকরণে একটার পর একটা নিবর্তনমূলক আইন (বিশেষ নিরাপত্তা আইন, সন্ত্রাস দমন আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন ইত্যাদি) প্রণীত হয়েছে। এই আইনগুলো প্রণীত হয়েছিল রাষ্ট্রের সন্দেহজনক নাগরিকদের দমন করার উদ্দেশে। এইসব নিবর্তনমূলক আইন যাতে সরকারগুলো বানাতে না পারে তার কোনো সাংবিধানিক ব্যবস্থা না থাকায় এটি সম্ভব হয়েছিল।

যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে সরকারগুলো ক্ষমতায় আসে তা বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ মধ্যবর্তী সময়ে দেখা না গেলে সে সরকারকে জবাবদিহির আওতায় আনার আইনগত বিধান সংবিধানে থাকা জরুরি। এমন ব্যবস্থা ছিল না বলে হাসিনা সরকার চরম কর্তৃত্ববাদী সরকারে পরিণত হতে পেরেছিল। আমরা ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণের শিকার হয়ে তার জন্য যে ব্রিটিশকে এ যাবৎকাল সমালোচনা করে এসেছি, সেই ব্রিটেনেও জনগণ তাদের ক্ষমতা উপভোগ করতে পারে– যা আমাদের দেশের জনগণ চিন্তাও করতে পারে না। এ জন্যই বরিস জনসনের সরকারকে মধ্যবর্তী সময়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। 

ঔপনিবেশিক শাসন পাততাড়ি গোটালেও তার চর্চা রয়ে গেছে সর্বত্র, যার পুরো ফায়দা লুটছেন দেশের আমলারা। বাংলাদেশের সংবিধানে আইন আগাগোড়াই প্রণীত হওয়ার কথা পার্লামেন্ট তথা নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা। কিন্তু সংবিধানের ৬৫ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে নির্বাহী বিভাগের ওপর যে আদেশ-বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন বা আইনগত কার্যকারিতাসম্পন্ন অন্যান্য চুক্তিপত্র (এস.আর.ও) প্রণয়নের ক্ষমতা অর্পণ করা হয়েছে, তার বলে সরকারি কর্মকর্তারা শাসক হওয়ার সুযোগটি নিশ্চিত করে নিয়েছেন। তাই রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তারাই সবকিছু নির্ধারণ করেন, যাতে অবলীলায় তাদের দায়মুক্তিরও সুযোগ রয়েছে। এই অবস্থায় অনিচ্ছাকৃত ভুল কিংবা কারও কারও ইচ্ছাকৃত ভুলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করা সম্ভব হয় না। এই পার্থক্য নির্ণয়ের হাতিয়ার তাদের হাতেই থাকে বলে অপরাধ চিহ্নিত হলেও ভুল হিসেবে চালিয়ে দেওয়া যায়। সংসদে যে আইনগুলো বানানো হয়, সেসবের খসড়াও প্রণীত হয় আইন মন্ত্রণালয়ের ড্রাফটিং উইংয়ে, গৎবাঁধা ভাষায়। ব্রিটিশ আমলে প্রচলিত একই ভাষা পাকিস্তানি শাসনামল পেরিয়েও এখন পর্যন্ত চলমান। সংসদে প্রণয়নযোগ্য আইনের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও হয় না। বাংলাদেশের সংসদের ইতিহাসে এমনও নজির আছে, মাত্র ৬ মিনিটে দুটি আইন পাস হয়েছিল। প্রভু বা শাসকের স্তুতি করা যেখানে মুখ্য, সেখানে উন্নয়ন আলোচনা বা নেতার প্রশংসাই অধিবেশনের বিপুল সময় দখল করে নেয়। বিগত সরকারের আমলে পার্লামেন্ট অধিবেশন এমন প্রশংসা আলোচনা ছাড়াও সংগীতের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছিল। 

জনগণকে স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বসবাসের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ঔপনিবেশিক ধ্যান-ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতেই হবে। এটিই অভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট। স্পিরিটের সঙ্গে গতি বা স্পিডকেও যুক্ত করতে হবে (যতটা সম্ভব)। কারণ রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর উপর্যুপরি চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে এবং নির্বাচনের একটি সম্ভাব্য সময়ও আদায় করে নিয়েছে, তাতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের সুযোগ হাতছাড়া হয় কিনা, সে শঙ্কাও তৈরি হয়েছে।

দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন যে প্রতিবেদন ড. ইউনূস সরকার বরাবর পেশ করা হয়েছিল, তাতে স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, ‘দেশের প্রশাসন সংস্কারের লক্ষ্যে বিগত ৫৩ বছরে দুই ডজনের বেশি কমিশন ও কমিটি গঠিত হয়েছিল এবং বিভিন্ন কমিশন গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছিল। সেগুলো প্রধানত দুটি কারণে পুরোপুরি বাস্তবায়ন ও টেকসই হয়নি। প্রথমত, রাজনৈতিক নেতৃত্ব সব সুপারিশ গ্রহণ করেননি এবং যেসব সুপারিশ গ্রহণ করেছিলেন তার বাস্তবায়নে তারা আন্তরিক বা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন না। দ্বিতীয়ত, স্বার্থগত দ্বন্দ্বের জন্য সংশ্লিষ্ট আমলারা তা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করেননি (অধ্যায় চার, জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের আচরণগত ও দৃষ্টিভঙ্গির সংস্কার)।’ জুলাই অভ্যুত্থান ডাক দিয়ে যায়– রাজনীতিবিদ, আইনপ্রণেতা ও আমলারা জনমুখী, জনবান্ধব এবং জনগণের সেবক হয়ে উঠুন, যে প্রতিশ্রুতি আপনারা দিয়ে থাকেন রাজনীতির মাঠে কিংবা পরীক্ষা-

প্রশিক্ষণ-দপ্তরের সুশোভিত কক্ষে ও হলরুমে। দেশটা যে আপনাদের, আমাদের সবারই 
অন্নদাতা জনগণের! 
এ জনগণকে প্রকৃত গণতন্ত্রের স্বাদ দিতে যে অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল ৫ আগস্ট, ২০২৪-এ, তার বদৌলতেই রাজনীতিবিদরা খোলামেলা রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছেন, বৈষম্য নিরসনার্থে সরকারি কর্মকর্তারা অকল্পনীয়ভাবে ফিরে পেয়েছেন তাদের হারানো চাকরি এবং নজিরবিহীনভাবে অবসরোত্তর ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি। 

গোলাম শফিক: কথাসাহিত্যিক
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জনগণের হতে পারলেই পুলিশের কলঙ্ক মুছে যাবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ইরানে বিক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে জনগণ, অংশ নিলেন প্রেসিডেন্টও
  • জনগণের আস্থা অর্জনই পুলিশের সবচেয়ে বড় অর্জন
  • পুলিশ জনগণের শাসক নয়, সেবক: সিএমপি কমিশনার
  • যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প: আরাঘচি
  • সরাসরি: ‘আমেরিকার জনগণ আর কোনো অন্তহীন যুদ্ধ চায় না’
  • ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতায় সম্মত ঢাকা-বেইজিং-ইসলামাবাদ
  • ঔপনিবেশিক রীতিনীতি ও অভ্যুত্থানের প্রত্যাশা
  • অযত্নে অচল ১৮ আইসিইউ শয্যা