ইসির নিবন্ধন চেয়ে প্রায় দেড় শ আবেদন, বাহারি যত নাম
Published: 23rd, June 2025 GMT
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত হওয়ার জন্য আবেদন জমা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) ১৪৭টি দল। বাহারি সব নামের বিভিন্ন দল ইসির নিবন্ধন পেতে আগ্রহ দেখিয়েছে। নিবন্ধন চাওয়া এসব দলের মধ্যে রয়েছে নাকফুল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সলুশন পার্টি, বাংলাদেশ সংগ্রামী ভোটার পার্টি ও বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস)।
দুই দফায় নিবন্ধনের আবেদন জমা দেওয়া দলগুলোর নামের তালিকা আজ সোমবার প্রকাশ করেছে ইসি। গত ১০ মার্চ আগ্রহী নতুন দলের কাছ থেকে নিবন্ধনের আবেদন আহ্বান করে ইসি। ২০ এপ্রিল পর্যন্ত ৬৫টি দল আবেদন করে।
পরে এনসিপিসহ কিছু দলের অনুরোধে নিবন্ধনের আবেদনের সময়সীমা দুই মাস বাড়ানো হয়। এই সময়সীমা গতকাল রোববার শেষ হয়। শেষ দুই মাসে আবেদন জমা পড়ে ৮২টি। এর মধ্যে রোববার শেষ দিনেই আবেদন জমা পড়ে ৪২টি। ইসির নিবন্ধন পেলে এসব দল নিজস্ব মার্কায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।
বাহারি কিছু নাম
ইসির কাছে দুই দফায় যেসব দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে, সেগুলোর মধ্যে চারটি দলের নামে ‘বেকার’ শব্দটি রয়েছে। এগুলো হলো বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস) ও বাংলাদেশ বেকার সমাজ।
নিবন্ধন চেয়েছে বাংলাদেশ বেস্ট পলিটিক্যাল পার্টি, নাকফুল বাংলাদেশ, ইসলামী গণতান্ত্রিক পার্টি (আইজিপি), বাংলাদেশ নাগরিক কমান্ড, বাংলাদেশ জনগণের দল, বাংলাদেশ একাত্তর পার্টি, বাংলাদেশ দেশপ্রেমিক প্রজন্ম, বাংলাদেশ ছাত্রজনতা পার্টি, বাংলাদেশ সলুশন পার্টি, বাংলাদেশ সংগ্রামী ভোটার পার্টি ও বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণময় পার্টির মতো দল।
নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করা দলগুলোর তালিকা.pdfডাউনলোড
বাংলাদেশ জনপ্রিয় পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ জনগণের দল (বাজদ), জনতার কথা বলে, বাংলাদেশ শান্তির দল, বাংলাদেশ মাতৃভূমি দল, বাংলাদেশ পাক পাঞ্জাতন পার্টি (বিপিপি), বাংলাদেশ জনমত পার্টি, বাংলাদেশি জনগণের পার্টি, বাংলাদেশ জাগ্রত পার্টি (বাজপ), বাংলাদেশ সর্ব–স্বেচ্ছা উন্নয়ন দল নামেও নিবন্ধন চাওয়া হয়েছে।
চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাংবাদিক শওকত মাহমুদের নেতৃত্বাধীন নতুন দল জনতা পার্টি বাংলাদেশ, ডেসটিনি গ্রুপের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, গেল সপ্তাহে আত্মপ্রকাশ করা দল বাংলাদেশ রিপাবলিক পার্টিও (বিআরপি) ইসির কাছে নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন বন ধ
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়মের অভিযোগ আমলে নেওয়া হোক
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় মধুমতী নদীর ডান তীর সংরক্ষণ বাঁধের একাংশ ধসে যাওয়ার ঘটনাটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নদীর তীরবর্তী এলাকার মানুষের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের ‘মধুমতী নদী ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের অধীন এই বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। কিন্তু নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই বাঁধের ৩০ মিটার অংশ ধসে পড়া নির্মাণকাজের গুণগত মান নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তৈরি করেছে।
বাঁধ ধসে পড়ার ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয় অনেক বাসিন্দা ধারদেনা করে নতুন করে বাড়িঘর তৈরি করেছিলেন, এখন তাঁদের আশ্রয় হারানোর ভয় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের উদ্বেগ সম্পূর্ণ যৌক্তিক। যখন একটি সরকারি প্রকল্প জনগণের জানমাল রক্ষার জন্য বাস্তবায়িত হয়, তখন তার মান নিয়ে কোনো আপস করা উচিত নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী যদিও বলছেন, নদীর স্রোতোধারার পরিবর্তনের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে এবং কাজের গুণগত মান ভালো ছিল, তবে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ ভিন্ন। তাঁদের মতে, তদারকি ব্যবস্থার দুর্বলতা এবং যথাযথ ডাম্পিং ছাড়াই সিসি ব্লক বসানোর কারণে বাঁধটি ভেঙেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রুত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে জরুরি মেরামতের কাজ শুরু করলেও এটি কেবল একটি সাময়িক সমাধান। দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষার জন্য বাঁধটি সঠিকভাবে ও মজবুতভাবে পুনর্নির্মাণ করা জরুরি।
৪৮১ কোটি টাকার বিশাল এই প্রকল্পের আওতায় নির্মিত বাঁধটির এই দশা প্রমাণ করে, কেবল বাজেট বরাদ্দ করাই যথেষ্ট নয়; প্রকল্পের প্রতিটি স্তরে কঠোর তদারকি ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা না হলে জনগণের অর্থে নির্মিত এমন বহু অবকাঠামোই অকালে ধসে পড়বে। সরকারের উচিত এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা এবং দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া। পাশাপাশি যত দ্রুত সম্ভব বাঁধটি এমনভাবে মেরামত করা, যাতে তা ভবিষ্যতে নদীর প্রবল স্রোতকেও প্রতিরোধ করতে পারে। মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের এবং এই দায়িত্ব পালনে কোনো গাফিলতি কাম্য নয়।
দেশে নদীভাঙন দিন দিন বাড়ছে। এ সমস্যা এখন আর্থসামাজিকভাবে আরও বড় বড় সংকট তৈরি করছে। সচ্ছল মানুষ এক রাতেই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। ঘরবাড়ি, জায়গাজমি, দোকানপাট, ব্যবসা–বাণিজ্য হারানোর ফলে কর্মসংস্থানহীন হচ্ছে অনেক মানুষ। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিয়েও তৈরি হচ্ছে অনিশ্চয়তা। নদীভাঙা মানুষের চাপ বাড়ছে শহরগুলোয়। অপরিকল্পিত নগরায়ণেও এর প্রভাব পড়ছে। কিন্তু নদীভাঙন রোধ করতে গতানুগতিক প্রকল্প গ্রহণ, ঠিকাদার নিয়োগ, অর্থ খরচ হয়, তা নিয়ে বরাবরের মতোই সমালোচনা বিদ্যমান।
নদীশাসনের আধুনিক পদ্ধতি গ্রহণ, বাঁধ নির্মাণের আগে এর বৈজ্ঞানিকভাবে কার্যকারিতা, সম্ভাব্যতা যাচাইকরণ ও জনস্বার্থ রক্ষার বিষয়গুলো এখানে উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। আমরা আশা করব, সরকারের নীতিনির্ধারকেরা এ ব্যাপারে মনোযোগী হবেন।