চট্টগ্রামে গৃহকর আদায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ, নাগরিক সেবার মান নিয়ে প্রশ্ন
Published: 30th, June 2025 GMT
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবার গৃহকর খাতে ২৯৮ কোটি টাকা আদায় করেছে, যা করপোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত অর্থবছরের তুলনায় আদায় বেড়েছে ১০০ কোটি টাকা। গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ শতাংশ পূরণ হয়েছে এবার।
গৃহকর আদায় বেড়েছে মূলত সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া কর আদায়ের ফলে। তবে কর আদায় বাড়লেও নাগরিক সেবা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে নগরবাসীর। ভাঙাচোরা রাস্তা, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিয়ন্ত্রণ—এই তিন খাতে চসিকের সেবার মান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।
বন্দর থেকে মিলেছে ১৪০ কোটি টাকাচসিকের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে গৃহকর খাতে ৩৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। আদায় হয়েছে ২৯৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ১৯৮ কোটি টাকা।
সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট দাবি ছিল ২২৯ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দিয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। বেসরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকা।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে চসিক বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য গৃহকর নির্ধারণ করেছিল ১৬০ কোটি টাকা। তবে আগের প্রশাসনের আমলে তা কমিয়ে ৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন আবারও উচ্চহারে গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ নেন। আলোচনার মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৪০ কোটি টাকা পরিশোধে রাজি হয়।
রাজস্ব বেড়েছে, সেবা প্রশ্নবিদ্ধচসিকের মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে যা ছিল ৩৬১ কোটি টাকা। গৃহকর ছাড়াও ট্রেড লাইসেন্স, ভূমি হস্তান্তর কর, সাইনবোর্ড ফি, যানবাহন ফি, প্রমোদ কর, বিজ্ঞাপন করসহ ১০টি খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়।
তবে নাগরিকেরা বলছেন, কর দিলেও সেবা মিলছে না তেমনভাবে। নগরের বিভিন্ন সড়ক ভেঙে গেছে, যত্রতত্র ময়লা জমে থাকে, মশার ওষুধ ছিটানো হয় না নিয়মিত। নগরের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব কাঠগড় এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘নিয়মিত গৃহকর দিই, কিন্তু এলাকায় মশা মারার ওষুধ বা ময়লা নেওয়ার বিন দেখি না।’
১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী বলেন, ‘সড়কবাতি লাগানো হয়েছে, রাস্তাঘাট কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। নিয়মিত বর্জ্য সরানো হয় না।’
সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সেবামূলক কার্যক্রম এখনো গৎবাঁধা। রাস্তায় গর্ত, সড়কবাতির অভাব, মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’
চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নগরকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও স্বাস্থ্যকর করতে কর বৃদ্ধি নয়, বরং করদাতাদের কর প্রদানে উৎসাহিত করা হয়েছে। কর আদায়ের আওতা বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের অর্থ সেবার মান বাড়াতে ব্যবহার করা হবে। রাস্তাঘাট মেরামত, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধনে ইতিমধ্যে কার্যক্রম চলছে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ হকর
এছাড়াও পড়ুন:
কুলাউড়া পৌরসভায় ৭০ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা
মৌলভীবাজারের কুলাউড়া পৌরসভার ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের সংশোধিত ও ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে প্রস্তাবিত ৭০ কোটি ৭ লাখ ১৯ হাজার ১২৪ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। আজ সোমবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে পৌর মিলনায়তনে পৌরসভার বাজেট ঘোষণা করেন পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন।
পৌর প্রশাসক মো. মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বাজেট উপস্থাপন করেন পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা শরদিন্দু রায়।
প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ১২ লাখ ১২ হাজার ৮৭৪ টাকা। উন্নয়ন খাতের আয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ৩১ লাখ ৮১ হাজার ৯২৫ টাকা। আর উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭০ কোটি ৭ লাখ ১৯ হাজার ১২৪ টাকা। বাজেটে উদ্ধৃত্ত রয়েছে ২৪ লাখ ৬২ হাজার ৮০১ টাকা। চলতি অর্থবছরে উদ্ধৃত্ত উন্নয়ন তহবিল থেকে ১ কোটি ৩৫ লাখ ৮২ হাজার ১৪১ টাকা আগামী অর্থবছরের জন্য স্থানান্তর করা হয়েছে।
বাজেট অধিবেশনে সমাপনী বক্তব্যে পৌর প্রশাসক মো. মহিউদ্দিন বলেন, পৌরসভার নিজস্ব তহবিল ও বিভিন্ন প্রকল্প সহায়তা থেকে পৌর এলাকার ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন রাস্তাঘাট, ড্রেন, কালভার্ট নির্মাণ, যানজট নিরসনে ফুটপাত নির্মাণ, যানবাহন নিয়ন্ত্রণ, সড়ক-উপসড়ক প্রশস্তকরণ, পাবলিক টয়লেট, বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণ, হাটবাজার উন্নয়ন, পৌর এলাকায় কসাইখানা নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া পৌর এলাকার শিক্ষার মানোন্নয়নে পৌরসভার সার্বিক তত্ত্বাবধানে একটি মানসম্মত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করার প্রস্তাব করা হয়েছে।