চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) এবার গৃহকর খাতে ২৯৮ কোটি টাকা আদায় করেছে, যা করপোরেশনের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। গত অর্থবছরের তুলনায় আদায় বেড়েছে ১০০ কোটি টাকা। গৃহকর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার ৭৬ শতাংশ পূরণ হয়েছে এবার।

গৃহকর আদায় বেড়েছে মূলত সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে বকেয়া কর আদায়ের ফলে। তবে কর আদায় বাড়লেও নাগরিক সেবা নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে নগরবাসীর। ভাঙাচোরা রাস্তা, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিয়ন্ত্রণ—এই তিন খাতে চসিকের সেবার মান নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে।

বন্দর থেকে মিলেছে ১৪০ কোটি টাকা

চসিকের রাজস্ব বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে গৃহকর খাতে ৩৯০ কোটি ৩৬ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছিল। আদায় হয়েছে ২৯৮ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরে আদায় হয়েছিল ১৯৮ কোটি টাকা।

সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে মোট দাবি ছিল ২২৯ কোটি টাকা, আদায় হয়েছে ১৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দিয়েছে ১৪০ কোটি টাকা। বেসরকারি হোল্ডিংয়ের বিপরীতে আদায় হয়েছে ১০২ কোটি ২১ লাখ টাকা।

সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে চসিক বন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য গৃহকর নির্ধারণ করেছিল ১৬০ কোটি টাকা। তবে আগের প্রশাসনের আমলে তা কমিয়ে ৫০ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর বর্তমান মেয়র শাহাদাত হোসেন আবারও উচ্চহারে গৃহকর নির্ধারণের উদ্যোগ নেন। আলোচনার মাধ্যমে বন্দর কর্তৃপক্ষ ১৪০ কোটি টাকা পরিশোধে রাজি হয়।

রাজস্ব বেড়েছে, সেবা প্রশ্নবিদ্ধ

চসিকের মোট রাজস্ব আয় হয়েছে ৪৪৪ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। গত অর্থবছরে যা ছিল ৩৬১ কোটি টাকা। গৃহকর ছাড়াও ট্রেড লাইসেন্স, ভূমি হস্তান্তর কর, সাইনবোর্ড ফি, যানবাহন ফি, প্রমোদ কর, বিজ্ঞাপন করসহ ১০টি খাত থেকে রাজস্ব আদায় হয়।

তবে নাগরিকেরা বলছেন, কর দিলেও সেবা মিলছে না তেমনভাবে। নগরের বিভিন্ন সড়ক ভেঙে গেছে, যত্রতত্র ময়লা জমে থাকে, মশার ওষুধ ছিটানো হয় না নিয়মিত। নগরের ৪০ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব কাঠগড় এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, ‘নিয়মিত গৃহকর দিই, কিন্তু এলাকায় মশা মারার ওষুধ বা ময়লা নেওয়ার বিন দেখি না।’

১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের বাসিন্দা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মুহাম্মদ আলী আরশাদ চৌধুরী বলেন, ‘সড়কবাতি লাগানো হয়েছে, রাস্তাঘাট কিছুটা উন্নত হয়েছে। তবে পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে ঘাটতি রয়েছে। নিয়মিত বর্জ্য সরানো হয় না।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের সেবামূলক কার্যক্রম এখনো গৎবাঁধা। রাস্তায় গর্ত, সড়কবাতির অভাব, মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।’

চসিক মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘নগরকে পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও স্বাস্থ্যকর করতে কর বৃদ্ধি নয়, বরং করদাতাদের কর প্রদানে উৎসাহিত করা হয়েছে। কর আদায়ের আওতা বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব আয়ের অর্থ সেবার মান বাড়াতে ব্যবহার করা হবে। রাস্তাঘাট মেরামত, পরিচ্ছন্নতা, মশক নিধনে ইতিমধ্যে কার্যক্রম চলছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গ হকর

এছাড়াও পড়ুন:

কৃষকদের ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে ব্যাংকগুলো 

চলতি ২০২৫-২০২৬ অর্থবছরে কৃষকদের ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছর কৃষি ঋণের লক্ষ্য ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা। 

কৃষি খাতের গুরুত্ব বিবেচনা করে এ খাতে পর্যাপ্ত ঋণ দিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে জিডিপির প্রবৃদ্ধি অর্জন এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে এবার ঋণ বিতরণের লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) নতুন অর্থবছরের জন্য কৃ‌ষি ও পল্লী ঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। এ সময় কৃষি ঋণ বিভাগের কর্মকর্তাসহ বি‌ভিন্ন বা‌ণি‌জ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীরা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ও বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোর জন্য ১৩ হাজার ৮৮০ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ও বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ২৫ হাজার ১২০ কোটি টাকা কৃষি ও পল্লী ঋণ বিতরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকদের সহায়তা নিশ্চিত করতে এ বছর লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য।

নীতিমালায় নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে—প্রাণিসম্পদ খাতে বরাদ্দ ২০ শতাংশ করা, সেচ ও কৃষিযন্ত্র খাতে বরাদ্দ ২ শতাংশ করা, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের সিআইবি সার্ভিস চার্জ মওকুফ, কন্ট্রাক্ট ফার্মিং ও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতা বৃদ্ধি; খিরা, কচুর লতি, বিটরুট, কালোজিরা, আদা, রসুন, হলুদ, খেজুর গুড় ইত্যাদি নতুন ফসল ঋণ নীতিতে অন্তর্ভুক্ত করা এবং অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদন সম্ভাবনা অনুযায়ী ঋণ বিতরণের নির্দেশনা।

বাংলাদেশ ব্যাংক আশা করছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় বৃদ্ধি ও টেকসই অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কৃষি ও পল্লী খাতে যথাসময়ে পর্যাপ্ত অর্থের যোগান একান্ত প্রয়োজন। দেশের কৃষিপণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং গ্রামীণ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধিসহ সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা ও টেকসই উন্নয়নে এ নীতিমালা ও কর্মসূচি কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

ঢাকা/নাজমুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১২ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি
  • ১৬০ কোটি টাকার গৃহকর নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে যৌথ কমিটি
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ক্রয়াদেশ অনেক পোশাক কারখানায়
  • অর্ধবার্ষিকে মুনাফা থেকে লোকসানে এসকে ট্রিমস
  • ১২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এল ১০৫ কোটি ডলার
  • উড়োজাহাজে ব‍্যবহৃত তেলের দাম আবার বাড়ল
  • রপ্তানি-প্রবাসী আয় ও রিজার্ভ বৃদ্ধি পাওয়ায় স্বস্তি এসেছে
  • কৃষিঋণের ২০ শতাংশ দেওয়া হবে প্রাণিসম্পদ খাতে
  • আরো ৭ দেশে ব্র্যান্ড বিজনেস সম্প্রসারণ ওয়ালটনের
  • কৃষকদের ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে ব্যাংকগুলো