যশোরের কেশবপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাঁকে ধাওয়া করে পিটুনি দিয়েছে স্থানীয় লোকজন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে গেছে পুলিশ।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার বেলা তিনটার দিকে কেশবপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলামের ভবানীপুরের বাড়ি ঘেরাও করে স্থানীয় ছাত্র–জনতা। পরে তাঁকে ঘর থেকে বেরোনোর আহ্বান জানালে তিনি ঘরের পেছন থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। তারপর লোকজন ধাওয়া করলে তিনি পাশের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা রফিকুলকে মারধর করে। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে কেশবপুর থানায় নিয়ে যায়।

কেশবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, রফিকুল ইসলাম সন্ত্রাসীদের গডফাদার ছিলেন। মধ্যকুল গ্রামের জামাল উদ্দিন নামের এক সন্ত্রাসীর বাড়িতে ৭ মে বোমা বিস্ফোরণ হয়। ওই ঘটনায় করা মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে। ওই জামাল বাহিনীর আশ্রয়–প্রশ্রয় দিতেন রফিকুল ইসলাম।

রফিকুল ইসলাম ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে ছিলেন। সম্প্রতি গোপনে বাড়িতে থাকার খবর জানতে পেরে ছাত্র-জনতা তাঁকে পাকড়াও করে।

রফিকুল ইসলামের বড় ভাই মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, আজ দুপুরের পরে ৫০ থেকে ৬০ জন লোক তাঁদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তাঁর ভাই বাড়িতে ছিলেন। তিনি পালিয়ে গেলে বাড়িতে হামলা চালিয়ে আসবাব ভাঙচুর করা হয়। তিনি বলেন, পুলিশ এসে গ্রেপ্তারের সময় লোকজন তাঁর ভাইয়ের ওপরও হামলা করে। সরকার পতনের পর থেকে রফিকুল আত্মগোপনে ছিলেন। মেয়ের এইচএসসি পরীক্ষা চলার কারণে কয়েক দিন ধরে বাড়িতে আছেন। সেই খবর জানতে পেরে বাড়ি ঘেরাও করা হয়।

কেশবপুরে বিগত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী সমন্বয়কারী মিরাজ হোসেন বিশ্বাস বলেন, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র রফিকুল ইসলাম আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকার সময় ক্ষমতার দাপট দেখাতেন। তিনি জামাল বাহিনী নামে একটি বাহিনী গড়ে তোলেন। তারা কেশবপুরের বিভিন্ন জায়গায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করত এবং মানুষের ওপর নির্যাতন চালাত। তাদের ভয়ে এলাকার মানুষ কোনো কথা বলতে পারত না। রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। এ কারণেই ছাত্র–জনতা তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ ছিল। তিনি দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকার পর বাড়িতে এলে ছাত্র–জনতা গোপনে খবর পেয়ে তাঁকে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ছ ত র জনত ক শবপ র

এছাড়াও পড়ুন:

যুদ্ধ বন্ধে পুতিনের প্রস্তাবের ‘পক্ষে’ ট্রাম্প

যুদ্ধ বন্ধে দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূখণ্ড রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার যে প্রস্তাব রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তুলে ধরেছেন, তাতে সমর্থন দিচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। আলাস্কায় পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের পর ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের আলাপে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। আলাপের বিষয়টি গতকাল শনিবার প্রকাশ্যে আসায় এমনটা জানা যায়।

ট্রাম্প ইউরোপীয় নেতাদের বলেছেন, তিনি মনে করেন, যদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দিতে সম্মত হন, তাহলে একটি শান্তিচুক্তির বিষয়ে সমঝোতা হতে পারে। ইউরোপের জ্যেষ্ঠ দুই কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে নিউইয়র্ক টাইমস এ তথ্য জানিয়েছে। তিন বছর ধরে চলা লড়াইয়ে দনবাস অঞ্চলটি পুরোপুরি দখল নিতে পারেনি রাশিয়া।

আলাস্কায় অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয়ে সরাসরি অবগত দুটি সূত্র গার্ডিয়ানকে জানিয়েছে, যুদ্ধ বন্ধের শর্ত হিসেবে পুতিন দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চল নিয়ে গঠিত দনবাস থেকে ইউক্রেনকে সরে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। বিনিময়ে তিনি যুদ্ধের বাকি সম্মুখভাগে লড়াই বন্ধ রাখার কথা বলেছেন।

যদিও লুহানস্ক প্রায় পুরোপুরি রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তবে ইউক্রেন এখনো দোনেৎস্কের ক্রামাতোর্স্ক ও স্লোভিয়ানস্ক শহরসহ গুরুত্বপূর্ণ অংশ ধরে রেখেছে এবং সেখানে অত্যন্ত সুরক্ষিত অবস্থান বজায় রেখেছে। এই শহরগুলো রক্ষা করতে গিয়ে হাজারো প্রাণহানি হয়েছে।

পুতিন ট্রাম্পকে বলেছেন, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের বিনিময়ে তিনি দক্ষিণ ইউক্রেনের খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে অগ্রসর হওয়া বন্ধ করবেন এবং লড়াইয়ের সম্মুখভাগে স্থিতি বজায় রাখবেন। এ দুটি অঞ্চলে রুশ বাহিনী উল্লেখযোগ্য এলাকা দখল করে আছে।

কয়লা, লোহার আকরিকসহ খনিজসমৃদ্ধ ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল রাশিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে ট্রাম্পের সমর্থনের বিষয়টি এমন সময় এসেছে, যখন তিনি যুদ্ধবিরতির পথে না গিয়ে সরাসরি একটি শান্তিচুক্তির দিকে এগিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। গতকাল শনিবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক পোস্টে ট্রাম্প বলেছেন, যুদ্ধবিরতি ‘প্রায়ই টেকে না’।

দনবাস অঞ্চলকে রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ইউক্রেন ও ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে কথার বরখেলাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তারা এ ধরনের চুক্তির বিরোধিতা করছে।

আরও পড়ুনট্রাম্প–পুতিন বৈঠক নিয়ে ক্ষুব্ধ ইউক্রেনীয়রা, কিন্তু কেন১৬ আগস্ট ২০২৫

ইউক্রেনীয় ও ইউরোপীয় নেতারা আশঙ্কা করছেন, প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি বাদ দিয়ে সরাসরি শান্তিচুক্তিতে গেলে আলোচনায় মস্কো বাড়তি সুবিধা পাবে। আগামীকাল সোমবার ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের সঙ্গে দেখা করার কথা রয়েছে জেলেনস্কির। কর্মকর্তারা নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছেন, ইউক্রেনীয় নেতার সঙ্গে হোয়াইট হাউসে যোগ দিতে ইউরোপীয়দেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

ট্রাম্প শনিবার তাঁর পোস্টে দাবি করেছেন, সরাসরি একটি শান্তিচুক্তির সমঝোতার দিকে যাওয়াটা ভালো হবে বলে ‘সবার মত নিয়ে ঠিক করা হয়েছে’। যদিও ইউরোপীয় নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এটি তাঁদের মত নয়।

ইউরোপীয় নেতাদের একটি যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইউরোপের সহায়তায় একটি ত্রিপক্ষীয় শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে তাঁরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। তবে নিজের ভূখণ্ড নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করবে। আন্তর্জাতিক সীমান্ত শক্তি প্রয়োগ করে পরিবর্তন করা যাবে না।

দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন (বাঁয়ে) ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কা অঙ্গরাজ্যের অ্যাঙ্কোরেজ শহরের এলমেনডর্ফ–রিচার্ডসন সামরিক ঘাঁটিতে, ১৫ আগস্ট ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ