একসময়ের জনাকীর্ণ বাজারটি এখন শ্রীহীন
Published: 3rd, July 2025 GMT
লোভা নদীর পাড়েই ‘বাগিচাবাজার’। শত বছর আগে হাতে বাওয়া নৌকায় পাল উড়িয়ে নানা জায়গা থেকে এখানে বণিকেরা আসতেন। তাঁদের কাছে থাকত হরেক মালামাল। আশপাশের গ্রাম-জনপদ থেকে সেসব কিনতে আসতেন শত শত মানুষ। তবে ব্রিটিশ আমলের ডাকসাইটে জনাকীর্ণ এ বাজার এখন শ্রীহীন। বিপুল ঐতিহ্যের স্মৃতি নিয়ে তিনটি মাত্র স্থায়ী দোকানের এ বাজার এখন টিকে থাকার যুদ্ধে কোনোরকমে লড়াই করছে।
শতবর্ষী বাগিচাবাজারের অবস্থান সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায়। এখানে তিনটি স্থায়ী দোকান আছে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাজার চালু থাকে। তিন দোকানের দুটিতে চা, পান, শিঙাড়া, নিমকি, গজা, ছোলা, চিপস, চানাচুরসহ নানান খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। অন্যটিতে এসব পণ্যের পাশাপাশি কিছু ভুসিমালও বিক্রি করা হয়। এর বাইরে ওই বাজারের এক বাসিন্দা তাঁর ঘরে ছোট পরিসরে জ্বালানি তেল বিক্রির পাশাপাশি দরজির কাজ করেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, লোভাছড়া চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্যই মূলত হাটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চা-শ্রমিকদের পাশাপাশি নিহালপুর, আসামপাড়া, নোয়াখান, লালমাটি গ্রামের বাসিন্দারাও বাজার-সওদা করতে আসেন। সপ্তাহে প্রতি রোববার এখানে ঘটা করে হাট বসে, ওই দিনকে স্থানীয় লোকজন বলেন ‘হাটবার’। সেদিন কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে কিছু ব্যবসায়ী চাল, ডাল, লবণ, তেল, মরিচ, মাছসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করতে আসেন। একসময় মানুষে গিজগিজ করতে থাকা এ বাজারে এখন প্রতি হাটবারে ২০০ থেকে ২৫০ জন আসেন। তবে সপ্তাহের অন্য দিনগুলোয় হাটটি থাকে প্রায় জনশূন্য।
বাগিচাবাজারের স্থায়ী তিনটি দোকানের মধ্যে একটির স্বত্বাধিকারী দীপক চন্দ্র দাস (৪৭)। তাঁর আদি বাড়ি হবিগঞ্জ। ৩০ বছর আগে বিয়ে করে এখানকার বাসিন্দা হয়ে দোকানটি চালু করেন। দীপক বলেন, একটা সময়ে তাঁর দোকানে প্রচুর বেচাকেনা হতো। গত ছয় থেকে সাত বছর আগে বাগিচাবাজারের কিছুটা উজানে চিন্তারবাজার নামে একটি হাট চালু হয়। তুলনামূলকভাবে যাতায়াতের সুবিধা বেশি থাকায় বাজারটি জমজমাট হতে থাকে। ধীরে ধীরে এখানকার ব্যবসায়ীরাও স্থানান্তরিত হয়ে চিন্তারবাজারে চলে যান।
তিনটি মাত্র স্থায়ী দোকান আছে এই বাজারে। সেখানে জড়ো হয়ে আড্ডা দেন আশপাশের মানুষজন.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দূষণ শুষে নেওয়া পদ্ম ফুল কেন হারিয়ে যাচ্ছে
পদ্ম জলাভূমিতে শোভা ছড়ায়, এর ফুল মধু বিকোয়, কিছু খাদ্যমূল্যও আছে। তবে বিজ্ঞানী, উদ্ভিদবিদ ও জলবায়ুবিশেষজ্ঞরা বলছেন, বহুগুণে সমৃদ্ধ পদ্ম বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন উদ্ভিদের একটি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য দায়ী কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণে অন্যান্য জলজ উদ্ভিদের তুলনায় পদ্ম অনেক বেশি সক্ষম।
শুধু কার্বন শোষণ নয়, সিসা, তামা, ফ্লোরাইড কিংবা নাইট্রেটের মতো ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতাও রাখে পদ্ম। পানির মান কতটা ভালো হতে পারে, তার নির্ণায়ক পদ্ম। বৈশ্বিক নানা গবেষণায় দেখা গেছে, যে জলাশয়ে পদ্মের উপস্থিতি থাকে, সেখানে দ্রবীভূত অক্সিজেন (ডিও) ভালো থাকে। খাবার, ওষুধ ও কসমেটিক–সামগ্রী হিসেবে পদ্মের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। পদ্মের বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
কার্বনসহ ভারী ধাতু শোধনের ক্ষমতা রাখে পদ্ম। পানির মান নির্ণায়ক পদ্ম। এর বিশ্ববাজার এখন ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় তাঁর ‘কেউ কথা রাখেনি’ কবিতায় প্রেমিকা বরুনার জন্য ‘বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে’ ১০৮টা নীলপদ্ম আনার কথা বলেছিলেন। সম্প্রতি আমরাও পদ্ম আর পদ্মবিলের খোঁজে বেরিয়েছিলাম। মাঝশরতের সকাল পেরিয়ে দুপুর। টাঙ্গাইলের নানা স্থানে পদ্মবিলের খ্যাতি আছে। একসময় কালিহাতীর বিলগুলোয় ‘পদ্ম’ ফুটত। আমাদের উদ্দেশ্য, পদ্মশোভিত বিল দেখা। তপ্ত রোদ আর গরম উপেক্ষা করে ঘুরে বেড়ালাম পাইকড়া বিল, চারাণ বিল, নকীল বিল, কুমার বিল, সিংগুলি বিলসহ আরও কত বিল। কোথাও পদ্ম ফুলের দেখা পাওয়া গেল না। কচুরিপানায় ভরা বিলগুলোর একটির নাম সাতবিল। একটি ছোট নৌকার মাঝি মজনু শাহ বলেন, এ বিলে আগে পদ্ম থাকলেও এখন নেই।
ঘুরতে ঘুরতে জানতে পারলাম, কালিহাতীর নাগবাড়ী ইউনিয়নের ধানগড়া গ্রামের নান্দাই বিলে পদ্মফুল থাকতে পারে। কচুরিপানা আর হরেক রকম জলজ উদ্ভিদ ভেদ করে মাঝ বিলে গিয়ে দেখলাম, পদ্মপাতা ভাসছে। কিন্তু ফুল খুব কম। নৌকাচালক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘বিলে মাছে ছাষ অয়। আগে তো ম্যালা জায়গায় পদ্ম হইত। এহন এহানেই টিক্যা আছে। মাছের চাষ করতে গিয়্যা পদ্ম উডাইয়া ফেলে।’
আন্ধাশুরা বিলে ফুটে আছে পদ্ম। একসময় এ বিলে অনেক পদ্ম ফুটত। এখন তা কমে গেছে