লোভা নদীর পাড়েই ‘বাগিচাবাজার’। শত বছর আগে হাতে বাওয়া নৌকায় পাল উড়িয়ে নানা জায়গা থেকে এখানে বণিকেরা আসতেন। তাঁদের কাছে থাকত হরেক মালামাল। আশপাশের গ্রাম-জনপদ থেকে সেসব কিনতে আসতেন শত শত মানুষ। তবে ব্রিটিশ আমলের ডাকসাইটে জনাকীর্ণ এ বাজার এখন শ্রীহীন। বিপুল ঐতিহ্যের স্মৃতি নিয়ে তিনটি মাত্র স্থায়ী দোকানের এ বাজার এখন টিকে থাকার যুদ্ধে কোনোরকমে লড়াই করছে।

শতবর্ষী বাগিচাবাজারের অবস্থান সিলেটের কানাইঘাট উপজেলায়। এখানে তিনটি স্থায়ী দোকান আছে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বাজার চালু থাকে। তিন দোকানের দুটিতে চা, পান, শিঙাড়া, নিমকি, গজা, ছোলা, চিপস, চানাচুরসহ নানান খাদ্যপণ্য বিক্রি করা হয়। অন্যটিতে এসব পণ্যের পাশাপাশি কিছু ভুসিমালও বিক্রি করা হয়। এর বাইরে ওই বাজারের এক বাসিন্দা তাঁর ঘরে ছোট পরিসরে জ্বালানি তেল বিক্রির পাশাপাশি দরজির কাজ করেন।

স্থানীয় লোকজন বলেন, লোভাছড়া চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্যই মূলত হাটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। চা-শ্রমিকদের পাশাপাশি নিহালপুর, আসামপাড়া, নোয়াখান, লালমাটি গ্রামের বাসিন্দারাও বাজার-সওদা করতে আসেন। সপ্তাহে প্রতি রোববার এখানে ঘটা করে হাট বসে, ওই দিনকে স্থানীয় লোকজন বলেন ‘হাটবার’। সেদিন কানাইঘাট উপজেলা সদর থেকে কিছু ব্যবসায়ী চাল, ডাল, লবণ, তেল, মরিচ, মাছসহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্য বিক্রি করতে আসেন। একসময় মানুষে গিজগিজ করতে থাকা এ বাজারে এখন প্রতি হাটবারে ২০০ থেকে ২৫০ জন আসেন। তবে সপ্তাহের অন্য দিনগুলোয় হাটটি থাকে প্রায় জনশূন্য।

বাগিচাবাজারের স্থায়ী তিনটি দোকানের মধ্যে একটির স্বত্বাধিকারী দীপক চন্দ্র দাস (৪৭)। তাঁর আদি বাড়ি হবিগঞ্জ। ৩০ বছর আগে বিয়ে করে এখানকার বাসিন্দা হয়ে দোকানটি চালু করেন। দীপক বলেন, একটা সময়ে তাঁর দোকানে প্রচুর বেচাকেনা হতো। গত ছয় থেকে সাত বছর আগে বাগিচাবাজারের কিছুটা উজানে চিন্তারবাজার নামে একটি হাট চালু হয়। তুলনামূলকভাবে যাতায়াতের সুবিধা বেশি থাকায় বাজারটি জমজমাট হতে থাকে। ধীরে ধীরে এখানকার ব্যবসায়ীরাও স্থানান্তরিত হয়ে চিন্তারবাজারে চলে যান।

তিনটি মাত্র স্থায়ী দোকান আছে এই বাজারে। সেখানে জড়ো হয়ে আড্ডা দেন আশপাশের মানুষজন.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নিজের উদ্যোগে ধনী হচ্ছেন নারীরা, বেশিরভাগ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের

বিশ্বজুড়ে নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সময়টা এখন সবচেয়ে অনুকূল, অন্তত পরিসংখ্যান তা-ই বলছে। অনেক নারী এখন নিজের উদ্যোগে ধনী হচ্ছেন। তাঁরা এখন আর কেবল স্বামী বা বাবার সম্পদের উত্তরাধিকার হয়ে ধনী হচ্ছেন না।

গ্লোবাল এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ মনিটরের (জিইএম) তথ্য অনুযায়ী, এখন বিশ্বজুড়ে ৬৫৮ মিলিয়ন বা ৬৫ কোটি ৮০ লাখ নারী উদ্যোক্তা ও কোম্পানি মালিক আছেন। যদিও পুরুষ উদ্যোক্তার সংখ্যা এখনো বেশি—৭৭২ মিলিয়ন বা ৭৭ কোটি ২০ লাখ। এ ক্ষেত্রে নারীরা দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছেন। আশার কথা হলো, নারী উদ্যোক্তাদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশই তাঁদের পথচলার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে আছেন—এবং পুরুষদের তুলনায় অনেক বেশিসংখ্যক নতুন উদ্যোগে হাত দিয়েছেন তাঁরা। খবর ফোর্বস ম্যাগাজিনের

নিজ উদ্যোগে শতকোটিপতি হওয়া শীর্ষ ৫০ জন নারীর তালিকা করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন। এই নারীদের প্রায় অর্ধেক—২৪ জনই—এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের। এরপর আছে উত্তর আমেরিকা, সেখান থেকে আছেন ২০ জন আর ইউরোপের ৬ জন।

দেশভিত্তিক হিসাবে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ১৮ জন; কানাডা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও যুক্তরাজ্যের দুজন করে এবং অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, ইতালি, রাশিয়া ও ভিয়েতনামের একজন করে।

জিইএমের নারীবিষয়ক প্রতিবেদনের লেখক অ্যামান্ডা এলাম বলছেন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে ঘাটতি হ্রাসে নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে কার্যকর নীতিগত সমাধান নিয়ে আসছেন। নারীরা এমন সব ব্যবসার নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেসব উদ্যোগ বসবাসের জন্য অনুকূল পরিবেশ গড়ে তোলার কাজ করছে; এমন পরিবেশেই বড় কোম্পানিগুলো কাজ করতে চায়।

স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো ক্ষেত্রে ঘাটতি হ্রাসে নারী উদ্যোক্তারা সবচেয়ে কার্যকর নীতিগত সমাধান নিয়ে আসছেন।

এই অগ্রযাত্রাকে স্বীকৃতি জানাতে প্রথমবারের মতো ফোর্বস প্রকাশ করেছে ‘বিশ্বের ৫০ জন সবচেয়ে স্ব-উদ্যোগী ধনী নারীর তালিকা’। তালিকায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁরা কেউ কোলাজেনের ব্যবসা করেন, কেউ কয়লার খনিতে, কেউ আবার প্রযুক্তি বা ফ্যাশন জগতে নিজেদের ভাগ্য গড়েছেন। ১৩টি দেশ ও ৪টি মহাদেশ থেকে তাঁরা এই তালিকায় উঠে এসেছেন, যদিও এই তালিকায় এখনো আফ্রিকা বা দক্ষিণ আমেরিকার নারী নেই।

সব মিলিয়ে এই ৫০ জন নারীর সম্মিলিত সম্পদ ২৭৬ বিলিয়ন বা ২৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলার—গড় হিসাবে প্রায় ৫ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৫৫০ কোটি ডলার করে।

তালিকার শীর্ষে আছেন সুইজারল্যান্ডের জাহাজ ব্যবসায়ী রাফায়েলা অ্যাপনটে-ডায়ামান্ট। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ৩৮ দশমিক ৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার। স্বামী জিয়ানলুইজি অ্যাপনটের সঙ্গে মিলে তিনি গড়ে তুলেছেন মেডিটেরানিয়ান শিপিং কোম্পানি (এমএসসি)—বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিপিং কোম্পানি। মাত্র ২ লাখ ডলারের ঋণ নিয়ে শুরু হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠান।

দ্বিতীয় স্থানে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডায়ান হেনড্রিক্স—যিনি ছাদ ও বাড়ির বাইরের নির্মাণসামগ্রীর অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবিসি সাপ্লাইয়ের সহপ্রতিষ্ঠাতা। তাঁর সম্পদের পরিমাণ ২২ দশমিক ৩ বিলিয়ন বা ২ হাজার ২৩০ কোটি ডলার। তালিকায় থাকা মার্কিন নারীদের মধ্যে আছেন অপরাহ উইনফ্রে, শেরিল স্যান্ডবার্গ প্রমুখ।

এ তালিকায় স্থান পেতে হলে হলে কমপক্ষে ২ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ২১০ কোটি ডলারের সম্পদ থাকতে হয়। সেই হিসাবে গুইন শটওয়েল সেলিব্রিটি কিম কার্ডাশিয়ান কিংবা টেইলর সুইফট এখনো সেই মানদণ্ড অর্জন করতে পারেননি।

এ তালিকায় যুক্তরাষ্ট্রের মতো চীনেরও ১৮ জন নারী আছেন। শীর্ষে আছেন ঝোং হুইজুয়ান, তিনি একসময় রসায়নের শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি হানশ ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেন। এই কোম্পানি এখন ফুসফুস ক্যানসার, সংক্রমণ ও অটোইমিউন রোগের ওষুধ তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। বার্ষিক আয় প্রায় ১ দশমিক ৭ বিলিয়ন বা ১৭০ কোটি ডলার।

চীনে নারী উদ্যোক্তারা অনেক আগে থেকেই অগ্রণী। ইউনিভার্সিটি অব ভার্জিনিয়ার অধ্যাপক মিং জার চেন লিখেছেন, চীনা সংস্কৃতিতে নারী বরাবরই ক্ষমতার জায়গায় থেকেছেন। এমনকি চীনা ভাষায় ‘স্ত্রী’ আর ‘সমান’ শব্দ দুটি সমার্থক—‘চি’।

প্রযুক্তিতে নারীদের দাপট

তালিকার ৫০ জন নারীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্পদ পুঞ্জীভূত আছে প্রযুক্তি খাতে—১৪ জন নারী এই খাতে সফলতা পেয়েছেন। তাঁদের মধ্যে শীর্ষে ঝোউ কুনফেই; তাঁর প্রতিষ্ঠান লেন্স টেকনোলজি এখন অ্যাপল, স্যামসাং ও টেসলার মতো কোম্পানির জন্য টাচস্ক্রিন সরবরাহ করে। একসময় তিনি ছিলেন সাধারণ শ্রমিক। এখন তাঁর কোম্পানির বার্ষিক আয় ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন বা ৯৫০ কোটি ডলার।

সবচেয়ে কম বয়সী উদ্যোক্তা হলেন অস্ট্রেলিয়ার মেলানি পারকিনস (৩৮)। ২০১৩ সালে তিনি ক্যানভা নামের ডিজাইন সফটওয়্যার কোম্পানি শুরু করেন। দ্বিতীয় সর্বকনিষ্ঠ রাশিয়ার তাতিয়ানা কিম (৪৯), একসময় ইংরেজি পড়াতেন, এখন দেশটির সবচেয়ে বড় অনলাইন খুচরা প্রতিষ্ঠান ওয়ারইল্ডবেরিস পরিচালনা করেন।

ফোর্বস–এর সংবাদে বলা হয়েছে, নারীরা এগিয়েছে ঠিক; কিন্তু বাস্তবতা হলো, নারী ও পুরুষ ধনীদের মধ্যে ব্যবধান এখনো অনেক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • একসময় হতাশায় ডুবে যাওয়া নাবিলা যেভাবে ডিঅ্যান্ডএডি পেনসিল অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন
  • ট্রাম্পের ‘গ্রেট’ আমেরিকা কি ‘চীনপন্থী’ হয়ে যাচ্ছে
  • নিজের উদ্যোগে ধনী হচ্ছেন নারীরা, বেশিরভাগ চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের