নিষিদ্ধ না করে ভোট হলে জাতীয় পার্টি রূপে ফিরবে আওয়ামী লীগ: গণ অধিকার পরিষদ
Published: 28th, July 2025 GMT
গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন বলেছেন, জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ না করে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে আওয়ামী লীগ জাতীয় পাার্টি রূপে ফিরে আসবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোনো সহযোগীও অংশ নিতে পারবে না। আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে দলের আয়–ব্যয় বিবরণী জমা দেওয়ার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
রাশেদ খাঁন বলেন, জনগণের মধ্যে দ্বিধা আছে যে আওয়ামী লীগের নেতারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবে কি না। তবে এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দীন তাঁদের আশ্বস্ত করেছেন, আওয়ামী লীগের পদে থাকা কেউ স্বতন্ত্রভাবেও অংশগ্রহণ করতে পারবে না। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে গণ অধিকার পরিষদ জানতে চেয়েছে যে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে যারা সংসদ সদস্য ছিলেন, আওয়ামী লীগের কোনো পদে নেই, কিন্তু ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা কায়েমে কাজ করেছেন, তাঁরা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি না।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন বলে জানান রাশেদ খাঁন। তিনি বলেন, সিইসিকে তাঁরা জানিয়েছেন, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলও তো এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা তৈরিতে প্রধান সহযোগী ছিল। তাদের নিবন্ধন কেন আওয়ামী লীগের মতো স্থগিত হবে না, সেটাও জানতে চেয়েছেন।
গণ অধিকার পরিষদ তাদের আয়–ব্যয়ের হিসাবে জানিয়েছে, গত বছর তাদের আয় ছিল ৪৬ লাখ ৯ হাজার ৩০০ টাকা। এর বিপরীতে ব৵য় ছিল ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৮৮ টাকা।
রাশেদ খাঁনের সঙ্গে আয়–ব্যয়ের হিসাব বিবরণী জমা দেওয়ার প্রতিনিধিদলে ছিলেন গণ অধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ ও উচ্চতর পরিষদ সদস্য মাহবুব জনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।