‘ও পাখিরে কোন ভুলে তুই শুকনো ডালে বেঁধেছিস এই বাসা,/ ঝড়ে ডাল ভাঙিল বাসাও গেল সবই হলো দুরাশা,’ আপন খেয়ালে এই গান গেয়ে যাচ্ছেন আর হাতে মুরগি সাফ করছেন দোকানের কর্মচারী আবদুর রকিব উদ্দিন। মুরগির ক্রেতা-দোকানি সবাই তাঁর গান শুনছেন। মুরগি নিতে এসে কেউ হাঁ করে তাকিয়ে আছেন তাঁর দিকে। তাঁর কিন্তু কোনো দিকে নজর নেই। শুধু হাত আর কণ্ঠের কাজে মনোযোগ। সুর ভেসে যাচ্ছে মুরগিপট্টি থেকে মাছপট্টিতে। তিনি গাইছেন যাত্রাপালার বিবেকের গান। পাশ থেকে একজন এসে যাত্রার সংলাপের মতো কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘দূর হয়ে যা পাগল।’ মুহূর্তেই মনে হলো, রকিবের মুরগির দোকান যেন যাত্রামঞ্চ হয়ে উঠেছে।
রাজশাহীর বাঘা উপজেলার গোচর গ্রামে আবদুর রকিব উদ্দিনের বাড়ি। উপজেলার আড়ানী বাজারের মুরগিপট্টিতে আয়নালের দোকানে ২০ বছর ধরে কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর কাজ, জবাই করা মুরগি চামড়া সাফ করে কেটেকুটে ক্রেতার ব্যাগে ভরে দেওয়া। কাজের ফাঁক পেলেই মনের সুখে গান ধরেন। মুরগিপট্টির সঙ্গে মাছপট্টি। দুই বাজারের দোকানিরা সবাই তাঁর গানের ভক্ত। সেখানেই পাওয়া গেল এলাকার যাত্রা-নাটকের মাস্টার জামাল মণ্ডলকে। তিনি বলেন, ‘ছেলেটা আমার শিষ্য। খুব ভালো গানের গলা। যাত্রায় পাগলের পাঠ করত। ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন যাত্রাপালায় বিবেকের গান গাওয়ার জন্য ওর ডাক পড়ত। গানের সুর করা না থাকলে নিজেই সুর করে নেয়।’

ওস্তাদ কে—জানতে চাইলে রকিব উদ্দিন জানান, কোনো ওস্তাদ নেই। যেখানেই গান শোনেন—রেডিওতে হোক, টেলিভিশনে হোক অথবা সামনাসামনি কারও মুখে একবার শুনলেই গলায় সেই সুর তুলে নিতে পারেন। এখন আর যাত্রাপালা হয় না। কোথাও তাঁর ডাক পড়ে না। কিন্তু মন মানে না। তিনি গান গেয়েই যান। তাঁর ভাষায়, ‘মুন গেলেই গান গাই। বাড়িত গাই, রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে গাই, দোকানে গাই; যে যেকেনে বুলে, সেকেনেই গাই।’

আবদুর রকিব উদ্দিন। ছবি: প্রথম আলো.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বিনা মূল্যে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাস শনাক্তকরণ কর্মসুচি

ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্কিত নিবন্ধ