মানিকগঞ্জের দৌলতপুরে সরকারি মতিলাল ডিগ্রি কলেজে সম্মান কোর্স চালুর দাবিতে মানববন্ধন
Published: 28th, July 2025 GMT
মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলায় সরকারি মতিলাল ডিগ্রি কলেজে স্নাতক (সম্মান) কোর্স চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। আজ সোমবার দুপুরে কলেজের প্রধান ফটকে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
কলেজ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭২ সালে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সরকারি মতিলাল ডিগ্রি কলেজে স্নাতক কোর্স চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন উপজেলাবাসী। ২০১৪ সালের ১৯ মে কলেজ পরিচালনা কমিটির এক সভায় হিসাববিজ্ঞান ও রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক কোর্স খোলার সিদ্ধান্ত হয়। এর পরিপেক্ষিতে ২০১৫ সালে ২২ ডিসেম্বর জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি বিধি অনুযায়ী ওই দুটি বিষয়ে প্রভাষক নিয়োগের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
২০১৬ সালে ১ সেপ্টেম্বর নিয়োগ কমিটির সুপারিশ ও পরিচালনা পরিষদের অনুমোদনক্রমে ১৪ জন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হয়। কলেজ কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্নাতক কোর্স চালু করার অধিভুক্তির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি পরিদর্শক দল গঠন করে। তবে এরপর স্নাতক কোর্স চালুর ব্যাপারে আর কোনো অগ্রগতি নেই। কলেজে শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে আদালতে মামলা চলমান।
কলেজটিতে স্নাতক কোর্স চালুর দাবিতে আজ বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কলেজের প্রধান ফটকে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। এতে বক্তব্য দেন কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী শেখ কায়ছার নাঈম, একাদশ শ্রেণির মারুফ হোসেন, দিশান মিয়া প্রমুখ। এ দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সাবেক জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক রমজান মাহমুদ, জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সাইফুল ইসলাম, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মোবারক হোসেন, স্থানীয় চকমিরপুর ইউনিয়ন যুবদলের সদস্যসচিব আবদুল হামিদ প্রমুখ।
সাইফুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় প্রায় দুই লাখ লোকের বসবাস। উপজেলায় যমুনা নদীর দুর্গম এলাকায় পাঁচটি ইউনিয়ন রয়েছে। নদীভাঙন ও দুর্গম চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের উচ্চশিক্ষার সুযোগ পেতে সরকারি মতিলাল ডিগ্রি কলেজে স্নাতক কোর্স চালুর দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকাবাসী। তবে দীর্ঘদিনেও এই দাবি পূরণ হয়নি।
কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সত্যজিত দত্ত বলেন, প্রায় এক বছর আগে তিনি এই কলেজে যোগদান করেছেন। কলেজে স্নাতক কোর্স চালুর বিষয়ে তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। স্নাতক কোর্স না থাকায় এ উপজেলার অনেক শিক্ষার্থী জেলা সদরসহ দূরদূরান্তের বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে পড়াশোনা করছেন। এতে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় হচ্ছে। স্নাতক কোর্স চালু হলে এ উপজেলায় শিক্ষার মানোন্নয়ন পাশাপাশি এলাকায় আর্থসামাজিক উন্নয়নও ঘটবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মত ল ল ড গ র উপজ ল য় কল জ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন ভুক্তভোগী নারী, হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন
পূর্বশত্রুতার জেরে প্রতিবেশী কয়েকজনের মারধর ও জখমের শিকার হন নীলা রানী (৪৪)। এতে তাঁর চোখের ভ্রুর ওপর পাঁচটি সেলাই দিতে হয়েছে, ভেঙে গেছে একটি দাঁত। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারধরের ব্যথায় দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শয্যায় কাতরাচ্ছেন ওই নারী।
গত বুধবার মারধরের ঘটনার পর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই দিন সন্ধ্যায় নীলা রানীর ছেলে বাদী হয়ে বোচাগঞ্জ থানায় চারজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেন। পুলিশ একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। পরে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
এদিকে হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার দুপুরে দিনাজপুর প্রেসক্লাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় লোকজন। ভুক্তভোগী নীলা রানী বোচাগঞ্জ উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের প্রয়াত অনিত্র চন্দ্র রায়ের স্ত্রী।
মামলার আসামিরা হলেন উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের মনিপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল ইসলাম (৫৫), শরিফুল ইসলাম (৪০), তরিকুল ইসলাম (৪২) ও মুন্না ইসলাম। ঘটনার দিন রাতেই পুলিশ আসামি বাবুলকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠান। পরদিন শুনানি শেষে আদালত তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী নীলা রানী ও আসামিরা পরস্পরের প্রতিবেশী। পূর্বশত্রুতার জেরে ঝগড়া লেগেই থাকে। বুধবার সন্ধ্যায় আসামিরা বাড়ির পাশে মনিপুর মসজিদের সামনে নীলার পথ রোধ করে তাঁকে মারধর করেন। পরে নীলাকে সঙ্গে নিয়ে ছেলে এনাফ চন্দ্র থানায় অভিযোগ করার উদ্দেশে রওনা করেন। এ সময় দ্বিতীয় দফায় আসামিরা তাঁদের ওপরে লাঠিসোঁটা ও দেশি অস্ত্র নিয়ে হামলা করেন। আসামিদের আঘাতে নীলা রানীর বাঁ চোখের ভ্রুর ওপরে গুরুতর জখম হয়। পরে তাঁকে প্রথমে বোচাগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাঁকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মায়ের পাশে বসে বড় ছেলে হৃদয় চন্দ্র বলেন, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী শেফালী রানীর সঙ্গে পাওনা টাকা নিয়ে তাঁর মায়ের ঝগড়া চলছিল। পরে সামান্য বিষয়ে তাঁর মায়ের সঙ্গে শেফালীর কথা–কাটাকাটি ও ঝগড়া হয়। এ নিয়ে শেফালী রানী বিচার দেন সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল ইসলামের কাছে। পরে সালিস ডাকেন বাবুল ইসলাম। কিন্তু সেখানে কোনো ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য উপস্থিত না থাকায় তাঁরা উপস্থিত হননি। তখন বাবুল তাঁদের ওপর ক্ষিপ্ত হন। এর জেরে সন্ধ্যায় তাঁর মায়ের পথ রোধ করেন তাঁরা। কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে হামলা করে গুরুতর জখম করেন। তিনি বলেন, পুলিশ আসামি ধরার পর ছাড়া পেয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা চিন্তিত।
বোচাগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান জাহিদ সরকার বলেন, ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৩০৭ ধারাসহ বিভিন্ন ধারায় মামলা করা হয়। আসামির জামিন দেওয়ার এখতিয়ার আদালতের। আদালত উভয় পক্ষের শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ হাসান বলেন, ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছেন। দ্রুত থানা কর্তৃপক্ষকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছেন। আসামি গ্রেপ্তারও হন। শুনেছেন তিনি পরে জামিন পেয়েছেন। ঘটনা যেহেতু জমিসংক্রান্ত, তাই সহকারী কমিশনারসহ (ভূমি) দুই সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাঁরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধননীলা রানীর ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। আজ দুপুরে বোচাগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে সচেতন নাগরিকদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। মানববন্ধনে বিধান দত্ত, বিপ্লব কুমার সিংহ, উত্তম কুমার, শ্রীকান্ত রায়সহ স্থানীয় লোকজন উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, নীলা রানীর ওপর দেশি অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গুরুতর জখম করা হয়। বর্তমান তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করলেও তিনি জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। বর্তমানে নীলার পরিবারকে এলাকা ছাড়ার কথাসহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। তাঁরা তদন্তসাপেক্ষে আসামিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।