ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম বিএনপিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, ‘আপনারা বলছেন পিআর পদ্ধতি খায় না মাখে, পিআর পদ্ধতি খায়ও না মাথায়ও দেয় না। আপনারা পিআর পদ্ধতি বোঝেন না, তো রাজনীতি করতে আসেন কেন? আপনাদের রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না।’

সোমবার বিকেলে চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখা আয়োজিত গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে রেজাউল করিম এ কথা বলেন। প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন এবং দেশ ও ইসলামবিরোধী সব ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রতিবাদে এই গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘৫ আগস্টের পর এই দেশে একটা সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিবেশে যদি আমরা দেশটাকে সুন্দরভাবে গঠন করতে না পারি, ইতিহাস আমাদের ক্ষমা করবে না। ৫৪ বছর ধরে কিছু ব্যক্তি, গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি ছিল এই দেশ। বাংলাদেশের সংবিধান নিজেদের স্বার্থে ছোট পুস্তিকার মতো তৈরি করা হয়েছে। যখন–তখন পরিবর্তন করা হয়েছে।’

নির্বাচনপদ্ধতি পরিবর্তন করার এখনই সুযোগ উল্লেখ করে রেজাউল করীম জানান, বিশ্বের ৯১টি দেশে পিআর পদ্ধতির নির্বাচন চলছে। বিএনপির নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, দলটি আসলে বোঝে তো সবই, কিন্তু পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে দেশের টাকা বিদেশে পাচার করে ৩০০-৩৫০-৬০০ বাড়ি তৈরি করা যায় না। এ পদ্ধতিতে হাজার হাজার ভাইকে মিথ্যা মামলায় দমন করা যায় না। তাঁদের সংসারবিহীন করা যায় না। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে ফয়জুল করীম আরও বলেন, ‘পিআর পদ্ধতি নির্বাচনের কথা শুনে একটি দল আর ঘুমাতে পারছে না। আসুন, ফ্যাসিস্ট খুনি টাকা পাচারকারীদের বর্জন করি।’

রেজাউল করীম অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, পিআর পদ্ধতি নির্বাচন হতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কার করতে হবে এবং টাকা পাচারকারী ও খুনিদের বিচার করতে হবে। বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে ইসলামী আন্দোলনের এই নেতা বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এক ঘণ্টা আগেও জানত না হেলিকপ্টার চড়ে প্রতিবেশী দেশে পালাতে হবে। আল্লাহ যখন এত বড় খুনিকে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আমাদের দেশকে স্বাধীন করেছে, আরেক ফ্যাসিস্ট ক্ষমতায় আসবে, চাঁদাবাজ ক্ষমতায় আসবে, খুনি ক্ষমতায় আসবে, আমরা তা গ্রহণ করব না।’

গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা-উপজেলার নেতারা ছাড়াও আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এবং সমমনা ইসলামী দলগুলোর জেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁরা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেন এবং তাঁদের দাবিদাওয়াগুলো মেনে নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

বেলা তিনটার দিকে নেতারা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। এর আগে বেলা একটা থেকেই চুয়াডাঙ্গা টাউন ফুটবল মাঠ দলীয় নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে সমাবেশ শুরু হয়। এরপর প্রতিবাদী শিল্পীগোষ্ঠী ও ইশারা শিল্পীগোষ্ঠীর সদস্যরা ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেন। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান সজীব।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির আব্দুল আওয়াল বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন ক্ষমতায় যেতে চায় না, ইসলামকে ক্ষমতায় নিয়ে যেতে চায়। ইসলাম যদি ক্ষমতায় না যায়, তাহলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হতে পারে না। ইসলাম যদি ক্ষমতায় না যায়, দেশ কোনো দিন সুখ–শান্তির দেশে পরিণত হতে পারে না।’ বিশেষ অতিথি দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ইসলামি সম্ভাবনা দলগুলো এক হওয়ায় চাঁদাবাজ সন্ত্রাসীদের খুব জ্বলছে।

আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আমির মো.

রুহুল আমিন, সহকারী সেক্রেটারি মাসুদ পারভেজ, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা আব্দুস সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান গওহরী, ওলামা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মুফতি মোস্তফা কামাল কাসেমী, জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার প্রধান সমন্বয়কারী খাজা আমিরুল বাশার (বিপ্লব), বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মুফতি সোয়াইব হোসাইন কাসেমী, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জেলা শাখার সাবেক আহ্বায়ক মোহাম্মদ আসলাম হোসেন এবং জাতীয় ওলামা মাশায়েখ ও আইম্মা পরিষদ জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা মোহাম্মদ আলী।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার সভাপতি মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের সভাপতিত্বে জেলা নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য দেন দলের সহসভাপতি জহুরুল ইসলাম আজিজী ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ তুষার ইমরান। ইসলামিক শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা শাখার সভাপতি নাজিম উদ্দিন, জাতীয় শিক্ষক ফোরাম জেলা শাখার সভাপতি হাসানুজ্জামান, ইসলামী যুব আন্দোলনের জেলা শাখার সভাপতি মীর শফিউল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশ জেলা শাখার সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম হ ম মদ ক ষমত য ল কর ম ইসল ম ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে

জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির চরমোনাই পীর সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম। তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের গণহত্যাসহ উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলোকে জুলাই সনদে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

আজ সোমবার বিকেলে ঢাকার জুরাইন রেলগেট–সংলগ্ন বিক্রমপুর প্লাজা চত্বরে এক গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির এ কথা বলেন।

পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন, প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার ও জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রদান এবং অপরাধী ও খুনিদের দৃশ্যমান বিচারের দাবিতে এই গণসমাবেশের আয়োজন করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কদমতলী-শ্যামপুর থানা।

সমাবেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির রেজাউল করীম বলেন, পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ এখন পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চায়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার উদ্দেশে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, ‘নতুনভাবে আবার এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে আপনি কী মেসেজ দিতে চান? আবার সেই স্বৈরাচার আসবে? আবার সেই চাঁদাবাজ আসবে? আবার সেই মায়ের কোলগুলো খালি হবে? দেশের টাকা বিদেশে পাচার হবে? আয়নাঘর তৈরি হবে? পিলখানা হত্যা হবে?’ তিনি বলেন, ‘এটা বাংলাদেশের মানুষ আমরা আর দেখতে চাই না। পরিবর্তন করতে হবে, সংস্কার করতে হবে।’

বিভিন্ন মৌলিক সংস্কারে বিএনপির নোট অব ডিসেন্ট দেওয়ার (দ্বিমত পোষণ করার) বিষয়ে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, সরকার গঠনের পরে দুই বছরের ভেতরে সংস্কার করার কথা বলা হচ্ছে। অন্ধকে হাইকোর্ট দেখিয়ে লাভ নেই। হাইকোর্ট এখন সবাই চেনে।

একটি রাজনৈতিক দল জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা এখনো বুঝতে পারেনি উল্লেখ করে সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দলটির কলঙ্ক রচিত হয়েছে। সামনে নির্বাচনেও বাংলাদেশের মানুষ একই কলঙ্ক রচনা করবে। বাংলাদেশের ভেতরে তারা মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।

সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টি করে দলগুলোকে নির্বাচনমুখী করার পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারছে না।

জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল বলেন, ‘সবাই বলেছে, জুলাই সনদকে আইনি ভিত্তি দিতে হবে। একটি বড় দল বলেছে সংবিধানের সংশোধন, আইনি ভিত্তি দেওয়ার এই কাজগুলো এখন হবে না। নির্বাচনের পরে যে সংসদ আসবে, তারাই এসে নাকি সেই কাজগুলো করবে। তাহলে কেন জুলাই সনদের জন্য দুই মাস সময় নষ্ট করা হলো? এর পেছনে নিশ্চয়ই অসৎ উদ্দেশ্য আছে।’

মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, পিআর পদ্ধতি ছাড়া বাংলাদেশে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষ দুটিতেই পিআর মানতে হবে, তা না হলে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলন অব্যাহত থাকবে। দেশবাসীকে আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

গণসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী। সঞ্চালনা করেন দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা কে এম শরীয়াতুল্লাহ ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক মাওলানা আবদুর রাজ্জাক। সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নির্বাচনের আগেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে