চট্টগ্রাম নগরের হিজড়া খালে পড়ে ছয় মাস বয়সী শিশু আনাবিয়া মেহেরিন সেহরীশের মৃত্যু হয়েছে আট কারণে—এমনটাই জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) গঠিত তদন্ত কমিটি।

ঘটনার তিন মাস পর গতকাল রোববার চসিকের মেয়র মো. শাহাদাত হোসেনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। বিষয়টি আজ সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে জানাজানি হয়।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেহরীশের মৃত্যুর পেছনে মূল কারণগুলো হলো—অরক্ষিত খাল, অদক্ষ রিকশাচালক ও বেপরোয়া গতি, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত না থাকা, অপ্রশস্ত সড়ক, বৃষ্টিপাতে পানিতে সড়ক ডুবে যাওয়া, খাল ও নালায় বর্জ্য জমে থাকা, উদ্ধার তৎপরতার জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জামের অভাব এবং জনসচেতনতাহীনতা।

তদন্ত কমিটির প্রধান ও চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ১১ সদস্যের কমিটিতে সেবা সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন। প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও দেওয়া হবে।

কী ঘটেছিল সেদিন

গত ১৮ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম নগরের কাপাসগোলা এলাকার নবাব হোটেল–সংলগ্ন রাস্তায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের হিজড়া খালে পড়ে যায়। রিকশাটিতে ছিলেন ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরীশ, তার মা উম্মে সালমা এবং দাদি বিবি আয়েশা। মা ও দাদি রক্ষা পেলেও খালের স্রোতে তলিয়ে যায় শিশু সেহরীশ। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর চাক্তাই খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

তদন্তে উঠে এসেছে, ঘটনার সময় ভারী বৃষ্টিতে খালের পানি রাস্তা পর্যন্ত উঠে আসে। এতে খাল আর রাস্তার পার্থক্য বোঝা যাচ্ছিল না। রিকশাচালককে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে যেতে বারবার অনুরোধ করেছিলেন উম্মে সালমা। কিন্তু চালক তা উপেক্ষা করেন এবং খালের পাশ দিয়ে রিকশা চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে রিকশাটি খালে পড়ে যায়। চালক নিজে রিকশার ওপর ভর দিয়ে উঠে পালিয়ে যান। যাত্রীদের উদ্ধারের কোনো চেষ্টা করেননি।

খালে পড়ার সময় উম্মে সালমা অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁর কোল থেকে ছিটকে যায় শিশু সেহরীশ। তিনজনই ভেসে যান। স্থানীয় লোকজন উম্মে সালমা ও বিবি আয়েশাকে উদ্ধার করলেও সেহরীশকে পাননি।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজড়া খালের যেই অংশে রিকশাটি পড়ে, সেখানে আগে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। কিন্তু চসিকের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের জন্য তা খুলে ফেলা হয়। পরে সেটি আর পুনঃ স্থাপন করা হয়নি। খালের পাশের সড়কটি সরু ছিল এবং পাশের ভবনগুলোও ভবন নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে প্রতিবেদনে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।

আগেও ঘটেছে এমন দুর্ঘটনা

সেহরীশের মতো খাল বা নালায় পড়ে চট্টগ্রাম শহরে গত ছয় বছরে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫ সালে ২ জন, ২০২৪ সালে ৩ জন, ২০২৩ সালে ৩ জন, ২০২১ সালে ৫ জন এবং ২০২০ সালে ২ জন। সর্বশেষ ৯ জুলাই নগরের হালিশহরের আনন্দপুর এলাকায় নালায় পড়ে তিন বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়।

এর আগে এত মৃত্যুর পরও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কিংবা চসিক কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। তবে সেহরীশের মৃত্যুর পর ব্যাপক আলোচনার মুখে চসিক ২২ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করে।

চার মেয়াদে সুপারিশ

তদন্ত কমিটি তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি—এই চার পর্যায়ে সুপারিশ দিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে সেখানে নিরাপত্তাবেষ্টনী ও প্রতিবন্ধকতা স্থাপন, স্বল্প মেয়াদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ, খাল পুনঃখনন ও সংরক্ষণ, বালুর ফাঁদ নির্মাণ, স্মার্ট ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, মধ্য মেয়াদে খালগুলোতে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা ও ফুটপাতে ছিদ্রযুক্ত ঢালাই স্ল্যাব বসানো, আর দীর্ঘ মেয়াদে নগর সরকার বাস্তবায়ন, সমন্বিত নগর পরিকল্পনা, দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার, ফুটপাত সংস্কার ও পাহাড় কাটা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আবার ‘লাস্ট মিনিট শো’, জন্মদিনের রাতে স্লটকে জয় উপহার ফন ডাইকের

লিভারপুল ৩–২ আতলেতিকো মাদ্রিদ

জন্মদিনের রাতে এর চেয়ে ভালো উপহার আর কী হতে পারে!

রেফারি শেষ বাঁশি বাজাতেই মাঠে ঢুকে পড়লেন আর্নে স্লট। লিভারপুলের সমর্থকেরা তাঁকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে থাকলেন, দল জেতায় অভিনন্দনও জানালেন। মুখে চওড়া হাসি নিয়ে হাত নেড়ে স্লট সেই অভিবাদনের জবাব দিলেন।   

ভার্জিল ফন ডাইকের সঙ্গে আলিঙ্গনের সময় স্লটকে একটু বেশিই খুশি মনে হলো। কারণ, লিভারপুল অধিনায়ক ফন ডাইক ত্রাতার ভূমিকায় আবির্ভূত না হলে তাঁর বিশেষ রাতটা যে অনেকটাই পানসে হয়ে যেত!

২০২৫–২৬ মৌসুমে শেষ মুহূর্তে জয়সূচক গোল করাকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছে লিভারপুল। যেটিকে বলা হচ্ছে লাস্ট মিনিট শো, কয়েকটি সংবাদমাধ্যম নাম দিয়েছে স্লট টাইম।

এবার সেই শো–এর নায়ক ফন ডাইক। যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে তাঁর হেডারেই আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ড্রয়ের পথে থাকা ম্যাচটা ৩–২ গোলে জিতে চ্যাম্পিয়নস লিগে শুভসূচনা করল লিভারপুল।

এ নিয়ে এই মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে টানা পাঁচ ম্যাচ জিতল লিভারপুল। সবকটি ম্যাচে অলরেডরা জয়সূচক গোল করল ৮০ মিনিটের পর; এর তিনটিই যোগ করা সময়ে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ