অরক্ষিত খাল, বেপরোয়া গতির অটোরিকশাসহ আট কারণে প্রাণহানি
Published: 28th, July 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের হিজড়া খালে পড়ে ছয় মাস বয়সী শিশু আনাবিয়া মেহেরিন সেহরীশের মৃত্যু হয়েছে আট কারণে—এমনটাই জানিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) গঠিত তদন্ত কমিটি।
ঘটনার তিন মাস পর গতকাল রোববার চসিকের মেয়র মো. শাহাদাত হোসেনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। বিষয়টি আজ সোমবার বিকেলে গণমাধ্যমে জানাজানি হয়।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সেহরীশের মৃত্যুর পেছনে মূল কারণগুলো হলো—অরক্ষিত খাল, অদক্ষ রিকশাচালক ও বেপরোয়া গতি, ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত না থাকা, অপ্রশস্ত সড়ক, বৃষ্টিপাতে পানিতে সড়ক ডুবে যাওয়া, খাল ও নালায় বর্জ্য জমে থাকা, উদ্ধার তৎপরতার জন্য পর্যাপ্ত জনবল ও সরঞ্জামের অভাব এবং জনসচেতনতাহীনতা।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও চসিকের সচিব মোহাম্মদ আশরাফুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, ১১ সদস্যের কমিটিতে সেবা সংস্থার প্রতিনিধি ছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা ছিলেন। প্রতিবেদনটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকেও দেওয়া হবে।
কী ঘটেছিল সেদিনগত ১৮ এপ্রিল রাতে চট্টগ্রাম নগরের কাপাসগোলা এলাকার নবাব হোটেল–সংলগ্ন রাস্তায় একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাশের হিজড়া খালে পড়ে যায়। রিকশাটিতে ছিলেন ছয় মাস বয়সী শিশু সেহরীশ, তার মা উম্মে সালমা এবং দাদি বিবি আয়েশা। মা ও দাদি রক্ষা পেলেও খালের স্রোতে তলিয়ে যায় শিশু সেহরীশ। প্রায় ১৪ ঘণ্টা পর চাক্তাই খাল থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
তদন্তে উঠে এসেছে, ঘটনার সময় ভারী বৃষ্টিতে খালের পানি রাস্তা পর্যন্ত উঠে আসে। এতে খাল আর রাস্তার পার্থক্য বোঝা যাচ্ছিল না। রিকশাচালককে রাস্তার ডান পাশ দিয়ে যেতে বারবার অনুরোধ করেছিলেন উম্মে সালমা। কিন্তু চালক তা উপেক্ষা করেন এবং খালের পাশ দিয়ে রিকশা চালাতে থাকেন। একপর্যায়ে রিকশাটি খালে পড়ে যায়। চালক নিজে রিকশার ওপর ভর দিয়ে উঠে পালিয়ে যান। যাত্রীদের উদ্ধারের কোনো চেষ্টা করেননি।
খালে পড়ার সময় উম্মে সালমা অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁর কোল থেকে ছিটকে যায় শিশু সেহরীশ। তিনজনই ভেসে যান। স্থানীয় লোকজন উম্মে সালমা ও বিবি আয়েশাকে উদ্ধার করলেও সেহরীশকে পাননি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিজড়া খালের যেই অংশে রিকশাটি পড়ে, সেখানে আগে নিরাপত্তাবেষ্টনী ছিল। কিন্তু চসিকের জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের কাজের জন্য তা খুলে ফেলা হয়। পরে সেটি আর পুনঃ স্থাপন করা হয়নি। খালের পাশের সড়কটি সরু ছিল এবং পাশের ভবনগুলোও ভবন নির্মাণ বিধিমালা অনুসরণ করে নির্মিত হয়নি বলে প্রতিবেদনে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়।
আগেও ঘটেছে এমন দুর্ঘটনাসেহরীশের মতো খাল বা নালায় পড়ে চট্টগ্রাম শহরে গত ছয় বছরে অন্তত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২০২৫ সালে ২ জন, ২০২৪ সালে ৩ জন, ২০২৩ সালে ৩ জন, ২০২১ সালে ৫ জন এবং ২০২০ সালে ২ জন। সর্বশেষ ৯ জুলাই নগরের হালিশহরের আনন্দপুর এলাকায় নালায় পড়ে তিন বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়।
এর আগে এত মৃত্যুর পরও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) কিংবা চসিক কোনো তদন্ত কমিটি গঠন করেনি। তবে সেহরীশের মৃত্যুর পর ব্যাপক আলোচনার মুখে চসিক ২২ এপ্রিল তদন্ত কমিটি গঠন করে।
চার মেয়াদে সুপারিশতদন্ত কমিটি তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি—এই চার পর্যায়ে সুপারিশ দিয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান চিহ্নিত করে সেখানে নিরাপত্তাবেষ্টনী ও প্রতিবন্ধকতা স্থাপন, স্বল্প মেয়াদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আধুনিকীকরণ, খাল পুনঃখনন ও সংরক্ষণ, বালুর ফাঁদ নির্মাণ, স্মার্ট ড্রেনেজ নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা, মধ্য মেয়াদে খালগুলোতে নৌযান চলাচলের ব্যবস্থা ও ফুটপাতে ছিদ্রযুক্ত ঢালাই স্ল্যাব বসানো, আর দীর্ঘ মেয়াদে নগর সরকার বাস্তবায়ন, সমন্বিত নগর পরিকল্পনা, দখল হওয়া খাল পুনরুদ্ধার, ফুটপাত সংস্কার ও পাহাড় কাটা বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পায়রা বন্দরসহ দুই প্রকল্পের ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদন
পায়রা বন্দরের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্পে কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি। প্রস্তাব দুটিতে ব্যয় হবে ৪৫০ কোটি ১১ লাখ ১০ হাজার ২৫৪ টাকা।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সচিবালয়ে মন্ত্রি পরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় কমিটির সদস্য ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সভা সূত্রে জানা যায়, পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধাদি নির্মাণ (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট পরিসেবাসহ দুটি শিপ টু শোর ক্রেন সরবরাহ এবং স্থাপন কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে ৪টি প্রতিষ্ঠান দরপ্রস্তাব দাখিল করে। দরপত্রের সব প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) এইচপি এবং (২) এনজে, চায়না প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ১৬২ কোটি ২ লাখ ১১ হাজার ৫৬৮ টাকা।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের ‘নারায়ণগঞ্জের খানপুরে অভ্যন্তরীণ কন্টেইনার এবং বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের প্যাকেজ নম্বর দুইয়ের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। এ জন্য উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে ২টি প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। দরপত্রের সকল প্রক্রিয়া শেষে টিইসি কর্তৃক সুপারিশকৃত রেসপনসিভ সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে (১) স্পেক্ট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স এবং (২) এসএস রহমান ইন্টারন্যানাল লিমিটেড প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। এতে ব্যয় হবে ২৮৮ কোটি ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৬৮৬ টাকা।
ঢাকা/হাসনাত//