বিওএফ সম্প্রসারণে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর হচ্ছে জলিল টেক্সটাইল
Published: 28th, July 2025 GMT
বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) সম্প্রসারণের জন্য চট্টগ্রামের জলিল টেক্সটাইল মিলস সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় উপস্থাপন করা হবে।
চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ফৌজদারহাট এলাকায় ১৯৬১ সালে স্থাপন করা হয় ব্যক্তি মালিকানাধীন মেসার্স জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড। ১৯৭২ সালে রাষ্ট্রপতির আদেশে মিলটি জাতীয়করণ করা হয়। এটি পরিচালনার দায়িত্ব বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশনের (বিটিএমসি) অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এ টেক্সটাইল মিলের জমির পরিমাণ ৫৪.
১৯৮২ সালের ১৫ ডিসেম্বর সরকার, বিটিএমসি ও জলিল টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের দ্বিপাক্ষিক ও ত্রিপাক্ষিক চুক্তি অনুযায়ী কোম্পানির অথরাইজড ডিরেক্টর ব্যারিস্টার সুলতান আহমেদ চৌধুরী এবং নুরুন নাহার চৌধুরীর (মরহম এম এ লতিফ চৌধুরীর স্ত্রী) কাছে মিলটি হস্তান্তর করা হয়। মিল কর্তৃপক্ষ হস্তান্তর চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করায় ১৯৯৯ সালের ৩০ ডিসেম্বর মিলটি পুনরায় অধিগ্রহণ করা হয়। একই দিনে চেয়ারম্যান নুরুন নাহার চৌধুরী এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুস সেলিম চৌধুরীর মধ্যে সম্পাদিত চুক্তি অনুযায়ী মিলটি পুনঃহস্তান্তর করা হয়। নতুন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ মিল বন্ধ রাখা, সরকারি পাওনা পরিশোধ না করা এবং শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ না করায় ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি পুনরায় মিলটি পুনরায় অধিগ্রহণ করা হয় এবং বিটিএমসির অধীনে ন্যস্ত করা হয়। এ মিলে সরকারের কোনো শেয়ার নেই।
জলিল টেক্সটাইল মিলস পুনঃগ্রহণ আদেশের বিরুদ্ধে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবদুস সেলিম চৌধুরী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ এবং বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের দ্বৈত বেঞ্চ গত ১২ জানুয়ারি সেটি ডিসচার্জ করেন অর্থাৎ বিটিএমসির পক্ষে রায় হয়। পরে মো. আবদুস সেলিম চৌধুরী আপিল বিভাগে সিভিল পিটিশন ফর লিভ টু আপিল দায়ের করেন। ওই সিভিল পিটিশন ফর লিভটু আপিল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে গত ২৯ জুন শুনানি হয়। এতেও রিট পিটিশনটি ডিসমিস হয়েছে মর্মে সরকার পক্ষের আইনজীবী প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
২০২৪ সালের ৩১ অক্টোবর সেনা সদরের কিউএমজি শাখা বাংলাদেশ অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি (বিওএফ) সম্প্রসারণের জন্য জলিল টেক্সটাইল মিলটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরের অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তরের জন্য গত বছরের জুন বিশেষজ্ঞ দলসহ সেনাপ্রধান মিলটি পরিদর্শন করেন। মিলটি চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থিত হওয়ায় এবং নিকটবর্তী সীমান্ত থেকে ৮২ কিলোমিটার দূরে অবস্থান হওয়ায় মিলের জমিতে বিওএফের সম্প্রসারিত শাখা প্রতিষ্ঠার জন্য ৫৪.৯৯ একর জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুকূলে প্রদানের বিষয়ে সেনাবাহিনী প্রধান প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা ও মৌখিক সম্মতি গ্রহণ করেছেন। এছাড়াও মিলের জমিসহ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি, যাবতীয় পাওনা, আইনগত এবং অন্যান্য বিষয়াদি নিরসন করে প্রতীকী মূল্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুকূলে হস্তান্তরের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
বিটিএমসির হিসাব অনুযায়ী, জলিল টেক্সটাইল মিলের কাছে ইউটিলিটি বিলসহ অনেক টাকা পাওনা আছে। এসব পাওনা পরিশোধ ছাড়া সেনাবাহিনী যে উদ্দেশ্যে মিল চাচ্ছে, সে কাজে ব্যবহার করা সম্ভব হবে না। এছাড়া, হস্তান্তর চুক্তি অনুযায়ী সরকারি পাওনা এবং ২০২০-২০২১ সালের অডিট হিসাব অনুযায়ী পাওনা পরিশোধ করা প্রয়োজন। অন্যদিকে, মিলের ৫৪.৯৯ একর জমির মধ্যে ৪৬.৯৩ একর জমির মৌজা মূল্য ৬০ কোটি ৯৭ লাখ ৮৩ হাজার ৯৬৫ টাকা এবং ৮.০৬ একর জমির (আবাসিক) মৌজা মূল্য ৫০ কোটি ৪৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬৯০ টাকা।
সেনা সদরের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জলিল টেক্সটাইল মিলের ৫৪.৯৯ একর জমি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অনুকূলে ১৭ কোটি ৪ লাখ ৭৪ হাজার টাকা (কম/বেশি) বিটিএমসিকে দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে।
ঢাকা/হাসনাত/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস থ ব ট এমস অন য য় পর শ ধ র জন য সরক র গ রহণ
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৬০ দিন পর শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা, উৎসবের আমেজ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) দীর্ঘ ১৬০ দিন পর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে টানা বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে এসেছেন। সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে বইছে উৎসবের আমেজ।
সকালে কুয়েট ক্যাম্পাসে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস। ছাতা মাথায় দল বেঁধে ছুটছেন ক্লাসরুমের দিকে। কখনো এক ছাতার নিচে দু-তিনজন। কারও সঙ্গে অভিভাবকও এসেছেন। সকাল নয়টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি শিক্ষাবর্ষের প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী ক্লাসে যোগ দেন। নতুন উপাচার্য অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে শ্রেণি কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ করেন।
ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (ইসিই) বিভাগের ২২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক সেমিস্টার নষ্ট হয়ে গেছে। এই সময়টা খুব অস্বস্তিতে কেটেছে। ক্ষতি যা হওয়ার হয়েছে, তবে এখন আবার ক্লাস শুরু হওয়াটা ইতিবাচক দিক। আমরা আশাবাদী।’ একই ব্যাচের শিক্ষার্থী আম্মান বলেন, ‘অনেক দিন জীবনটা থেমে ছিল। আজকের দিনটা বিশেষ মনে হচ্ছে। ঠিক যেন স্কুলজীবনের প্রথম দিনের মতো। সব হতাশা কাটিয়ে আমরা অনেকটা নতুন করে শুরু করছি।’
হুমায়ুন কবির নামের এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার ছেলে বিল্ডিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পড়ে। পাঁচ মাস ধরে ক্লাস বন্ধ থাকায় ও মানসিকভাবে খুব চাপের মধ্যে ছিল। একসময় অসুস্থও হয়ে পড়ে। কুয়েটে এমন পরিস্থিতি আগে দেখিনি। কর্তৃপক্ষ দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করলে হয়তো আগেই খুলে যেত। তারপরও এখন অন্তত খুলেছে, এটা বড় স্বস্তি।’
কুয়েটের ছাত্র পরিচালক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার বলেন, আজ থেকে কুয়েটে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে এখনো সব শিক্ষার্থী আসেননি। যাঁদের কেবল ক্লাস রয়েছে, তাঁরা অংশ নিচ্ছেন। যাঁদের পরীক্ষা ছিল, তাঁরা প্রস্তুতির জন্য কিছুটা সময় চেয়েছে। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন হবে ১৪ আগস্ট, ক্লাস শুরু ১৭ আগস্ট।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ওই রাতেই তৎকালীন উপাচার্য ও কয়েকজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ ওঠে। এরপর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২৬ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ ও সহ-উপাচার্য অধ্যাপক শরিফুল আলমকে অব্যাহতি দেয়। ১ মে চুয়েটের অধ্যাপক হজরত আলীকে অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার দাবিতে ৪ মে থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বর্জনের ঘোষণা দেয় শিক্ষক সমিতি। এরপর কোনো শিক্ষকই ক্লাসে ফেরেননি। শিক্ষক সমিতির বিরোধিতার মুখে হজরত আলী দায়িত্ব পালন করতে না পেরে ২২ মে পদত্যাগ করেন।
এরপর ১০ জুন নতুন উপাচার্য নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় সরকার। সেই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী। পরদিন শুক্রবার তিনি খুলনায় এসে দায়িত্ব নেন। দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেন। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শিক্ষক সমিতির সাধারণ সভায় আন্দোলন কর্মসূচি তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে ক্লাসে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার ক্লাস শুরুর নোটিশ জারি করা হয়।