Prothomalo:
2025-08-06@04:33:13 GMT

শক্ত আইনি ব্যবস্থা নিন

Published: 6th, August 2025 GMT

অল্প বয়সী শিক্ষার্থীদের গাইড বইয়ের প্রতি নির্ভরশীল করে তুলে দেশে এক রমরমা ব্যবসা গড়ে উঠেছে। দরিদ্র অভিভাবকদের অসহায়ত্বকে পুঁজি করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত এ ব্যবসা ছড়িয়ে পড়েছে। ভোলার মতো একটি উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যাচ্ছে, একজন মা তাঁর সন্তানের পড়াশোনার খরচ জোগাতে গিয়ে নিজের নাকফুল পর্যন্ত বিক্রি করতে বাধ্য হন, সেখানে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ কতটা নির্লজ্জভাবে সমাজকে গ্রাস করেছে, তা স্পষ্ট হয়।

ভোলায় গাইড বই কেনার জন্য শিক্ষার্থীদের ওপর যে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে, তা কেবল আর্থিক বোঝা তৈরি করছে না, শিক্ষার মূল উদ্দেশ্যকেও ব্যাহত করছে। ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী হজরত আলীর মা শাহিনুর বেগমকে তাঁর প্রয়াত স্বামীর স্মৃতি হিসেবে পাওয়া সামান্য সঞ্চয় থেকে ১ হাজার ৯৫০ টাকা খরচ করে গাইড বই কিনতে হয়েছে। অন্যদিকে হাসিনা বানুকে মেয়ের জন্য গাইড বই কিনতে গিয়ে বিয়ের স্মৃতিচিহ্ন নাকফুল বিক্রি করতে হয়েছে। এ ঘটনাগুলো আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার নৈতিক অবক্ষয়ের করুণ প্রতিচ্ছবি।

শিক্ষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, পাঠ্যবই ও শ্রেণিকক্ষের শিক্ষাই যথেষ্ট। গাইড বইয়ের প্রয়োজন নেই, কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। কিছু শিক্ষকের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও প্রকাশনা সংস্থাগুলোর যোগসাজশে গাইড বই কেনা শিক্ষার্থীদের জন্য এক অলিখিত নিয়মে পরিণত হয়েছে। জানা গেছে, প্রকাশনা সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়ে শিক্ষক সমিতি, প্রধান শিক্ষক ও কতিপয় শিক্ষক অভিভাবকদের ওপর গাইড বই কেনার জন্য চাপ দেন। এমনকি পরীক্ষার প্রশ্নও তৈরি হয় গাইড বই অনুসরণ করে। যেসব শিক্ষক এই অনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত নন, তাঁদের প্রশ্নপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়। এই চিত্র একদিকে যেমন শিক্ষকদের সততা ও নৈতিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মেধার স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মতে, গাইড বই কেনা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তারপরও কেন এ আইন মানা হচ্ছে না? কেন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে না? এই প্রশ্নগুলো সামনে চলে আসে। গাইড বইয়ের ব্যবসা বন্ধে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা একধরনের পরোক্ষ সমর্থনকেই ইঙ্গিত করে।

শিক্ষা কোনো বাণিজ্যিক পণ্য নয়। এটি একটি মৌলিক অধিকার। দরিদ্র পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য গাইড বইয়ের বাড়তি খরচ একপ্রকার শাস্তি। এই অনৈতিক চক্র ভাঙতে হলে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা। শিক্ষকদের লোভ ও প্রকাশনা সংস্থার আগ্রাসী বাণিজ্যিকীকরণের লাগাম টেনে ধরতেই হবে যেকোনো প্রকারে। স্থানীয় প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা অফিস থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে এ ব্যাপারে সতর্কবার্তা পাঠানো হোক। আইন অমান্যকারী ও যোগসাজশকারীদের কোনোভাবেই ছাড় নয়।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

পোর্তোকে চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতানো কিংবদন্তি অধিনায়ক কস্তা আর নেই

পোর্তোয় মৃত্যুর ছোবল চলছেই!

এক মাসের একটু বেশি সময়ের ব্যবধানে নিজেদের সাবেক তিন ফুটবলারকে হারাল পর্তুগিজ ক্লাবটি। গত ৩ জুলাই সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান পোর্তোর সাবেক উইঙ্গার দিয়োগো জোতা। তাঁর ভাই আন্দ্রে সিলভাও মারা যান একই দুর্ঘটনায়। সিলভাও পোর্তোর সাবেক ফুটবলার। কাল ক্লাবটির অনুশীলন সেন্টারে হৃদ্‌রোগে (কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট) আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন তাঁদের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী সাবেক অধিনায়ক জর্জ কস্তা। ৫৩ বছর বয়সী সাবেক এ সেন্টারব্যাকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে পোর্তো।

আরও পড়ুননেইমারের ‘কামব্যাক’ জোড়া গোলে: ব্রাজিল দলে ফিরবেন কবে২০ ঘণ্টা আগে

পোর্তোর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পোর্তোর কিংবদন্তি অধিনায়ক ও বর্তমানে পেশাদার ফুটবল পরিচালক কার্ডিওপালমোনারি অ্যারেস্টের শিকার হয়ে মঙ্গলবার মারা গেছেন।’

ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় পোর্তোয় কাটানো এবং ক্লাবটির হয়ে ২৪টি শিরোপাজয়ী কস্তা মঙ্গলবার সকালে অনুশীলন সেন্টারে অসুস্থ হয়ে পড়েন। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, হাসপাতালে নেওয়ার কিছুক্ষণ পর মারা যান কস্তা।

পর্তুগিজ ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে তিন বছর কাটানোর পর ১৯৯০ সালে মূল দলে সুযোগ পান ‘বিচো’ (অ্যানিমেল) নামে খ্যাতি পাওয়া কস্তা। ২০০৫ সাল পর্যন্ত পোর্তোয় থাকার মাঝে কিছুদিন ধারে খেলেছেন তিনটি ক্লাবে। বেলজিয়ামের স্ট্যান্ডার্ড লিয়েগ ক্লাবের হয়ে খেলে ২০০৬ সালে অবসর নেন কস্তা।

আটবার পর্তুগালের শীর্ষ লিগজয়ী সাবেক এই ফুটবলারের ক্যারিয়ারে সেরা সময় ২০০৪ চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়। জোসে মরিনিও তখন পোর্তোর কোচ। ফাইনালে মোনাকোকে হারিয়ে ১৭ বছর পর পোর্তোকে ইউরোপের সেরা ক্লাব টুর্নামেন্টের শিরোপা এনে দিয়েছিলেন কস্তা-ডেকোরা।

কস্তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে ইনস্টাগ্রামে পর্তুগালের সাবেক মিডফিল্ডার ডেকো লিখেছেন, ‘আজ (কাল) পর্তুগিজ ফুটবল এবং পোর্তো তাদের অন্যতম সেরা প্রতীককে হারাল। জর্জ কস্তা ছিলেন পোর্তোর চেতনার ধারক। একজন কিংবদন্তি অধিনায়ক, যিনি সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তোমার নাম চিরকাল স্মরণ করা হবে।’

আরও পড়ুনঘরের মাঠে আর্জেন্টিনার হয়ে ‘শেষ’ ম্যাচটা খেলতে পারবেন তো মেসি০৫ আগস্ট ২০২৫

পোর্তোর হয়ে ৩২৪ ম্যাচ খেলা কস্তার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তাঁর সাবেক কোচ মরিনিও। বর্তমানে ফেনারবাচে কোচের দায়িত্ব পালন করা এই পর্তুগিজ কোচ সংবাদ সম্মেলনে কস্তার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি, ‘সে এখন আমার সঙ্গে কথা বলতে পারলে এটা বলত, সংবাদ সম্মেলন শেষ করুন, আগামীকালের ম্যাচটা খেলুন এবং জিতুন। আমাকে ভুলে যান। আজ এবং আগামীকাল নিজের কাজটা সারার সেই চেষ্টাই করব আমি। তারপর কাঁদব।’

ফুটবল ছাড়ার পর ১৬টি ক্লাবে কোচের দায়িত্ব সামলেছেন কস্তা। গত মৌসুমে পোর্তোয় ফেরেন ক্লাবটির পেশাদার ফুটবলের পরিচালক হিসেবে। পর্তুগালের হয়ে ৫০ ম্যাচ খেলা কস্তা তাঁর দেশের সোনালি প্রজন্মের ফুটবলার—লুইস ফিগো, রুই কস্তা, রুই বেন্তো ও লুইস মিগুয়েলদের সঙ্গে ১৯৯১ অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি।

কস্তার মৃত্যুতে শোক জানিয়ে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টেনেগ্রোর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখা হয়, ‘এটা ধাক্কা।’ কস্তাকে ‘নিবেদন ও প্রতিশ্রুতির উদাহরণ’ হিসেবে উল্লেখ করেন মন্টেনেগ্রো।

সম্পর্কিত নিবন্ধ